আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, তিনি মাটি থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ, পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছ। আরেক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে। (সুরা রুম, আয়াত ২০-২১)
বিশেষ করে দাম্পত্য জীবন দীর্ঘ ও পুরোনো হয়ে গেলে অনেক স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের জন্য সাজগোজ বা সৌন্দর্য অবলম্বন করেন না। অনেকে মনে করেন, সাজগোজ তো বিয়ের প্রথম দিকের বছরগুলোয় হয় বা যৌবনের দিনগুলোয় হয় অথবা সপ্তাহের বা মাসের নির্দিষ্ট দিনে করতে হয়। অথচ এই সমস্যাটি ধীরে ধীরে বড় হয়ে দাম্পত্য জীবনে বিরাট বিপদ ঘটাতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ এমনটি নয়; বরং তাঁর সুন্নাহ হলো, স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের জন্য সাজগোজ করবে। স্ত্রী সাজবে স্বামীর জন্য এবং স্বামী সৌন্দর্য অবলম্বন করবে স্ত্রীর জন্য। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ‘‘একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন নারী উত্তম?’ তিনি বললেন, ‘যে নারীর দিকে তাকিয়ে স্বামী খুশি হয়ে যায়, যে নারী স্বামীর আদেশ পালন করে এবং নিজের সত্তা ও ধনসম্পদের ব্যাপারে স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যায় না।’’ (আস-সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ি, হাদিস: ৫৩৪৩)
উম্মে আতিয়া (রা.) বলেন, সে সময় নারীরা শুধু মৃত ব্যক্তির শোক পালন করতে গিয়ে সাজগোজ পরিহার করত। এ ছাড়া সব সময় তারা সাজগোজ করে থাকত। উম্মে আতিয়া (রা.) থেকে ইমাম বুখারি (রহ.) বর্ণনা করে বলেন, ‘কোনো মৃত ব্যক্তির জন্য আমাদের তিন দিনের বেশি শোক পালন করা থেকে নিষেধ করা হতো। কিন্তু স্বামীর ক্ষেত্রে ৪ মাস ১০ দিন (শোক পালনের বিধান ছিল)। শোকের দিনগুলোয় আমরা সুরমা লাগাতাম না, সুগন্ধি ব্যবহার করতাম না, ইয়েমেনের তৈরি রঙিন কাপড় ছাড়া অন্য কোনো রঙিন কাপড় পরতাম না।’ (বুখারি, হাদিস: ৩০৭)
স্ত্রীকে খুশি করার জন্য রাসুল (সা.) সৌন্দর্য অবলম্বন করা পছন্দ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরে ঢুকে প্রথমেই মেসওয়াক করে নিতেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৫৩)
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি যত উত্তম সুগন্ধি পেতাম, তা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে মেখে দিতাম। এমনকি সে সুগন্ধির চমক তার মাথায় ও দাঁড়িতে দেখতে পেতাম।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৫৭৯)
আয়েশা (রা.) থেকে আরও বর্ণিত, ‘হায়েজ অবস্থায় আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাথার চুল আঁচড়ে দিতাম।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৫৮১)
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর পুরুষের যেমন অধিকার রয়েছে স্ত্রীদের ওপর, তেমনই যথানিয়মে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষের ওপর।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২৮)। সুতরাং স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের জন্য সাজগোজ করতে হবে, এটি সওয়াবের কাজ।
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক