-1747287330.png)
তালবিয়া হজের এক বিশেষ ধর্মীয় আহ্বান, যা ইহরাম বাঁধার পর মক্কায় পৌঁছানোর আগে অথবা হজের বিভিন্ন কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে মুসলমানরা উচ্চারণ করেন। এটি আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং তাওহিদ বা একত্ববাদের ঘোষণা। এই পবিত্র বাক্য আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা ও আত্মসমর্পণের প্রকাশ।
তালবিয়া আরবি ভাষায় ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ দিয়ে শুরু হয় এবং তা বারবার পাঠ করা হয়। তালবিয়ার বাংলা উচ্চারণ: ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান-নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’
তালবিয়ার অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার ডাকে সাড়া দিচ্ছি, আমি তোমার ডাকে সাড়া দিচ্ছি। তোমার কোনো শরিক নেই, আমি তোমার ডাকে সাড়া দিচ্ছি। নিশ্চয়ই সব প্রশংসা, নিয়ামত ও বাদশাহী তোমারই, তোমার কোনো শরিক নেই।’
তালবিয়া ইহরাম বাঁধার পর থেকে পাঠ করা শুরু হয় এবং হজের বিভিন্ন কার্যক্রমের সময় তা একটানা চলতে থাকে। মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা এবং মক্কা, এসব স্থানেই তালবিয়া পাঠ করা হয়। ইহরাম বাঁধার পর হজযাত্রী যখন মক্কা বা অন্য কোনো স্থানে যান, তখন তারা তালবিয়া পাঠ করেন। মিনায় পৌঁছানোর পর এবং আরাফাতে অবস্থানের সময়ও এর পাঠ অব্যাহত থাকে। কঙ্কর নিক্ষেপের সময়, শয়তানকে প্রতীকীভাবে পাথর ছুড়ে মারার সময় এবং হজের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শনের সময়ও তালবিয়া পাঠ করা হয়। তালবিয়া পাঠের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সম্মানে এবং হজের প্রতি পূর্ণ মনোযোগের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা।
তালবিয়া পাঠের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও একত্ববাদের সাক্ষ্য দেওয়া। এটি মুসলিমদের ঐক্য ও ঈমানের বহিঃপ্রকাশ এবং হজ পালনে তাদের আন্তরিক আগ্রহ ও ধৈর্যের দৃঢ় অঙ্গীকার। হজযাত্রীরা যখন তালবিয়া পাঠ করেন, তখন তারা অনুভব করেন যে তারা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিচ্ছেন এবং তাঁর কাছ থেকে কল্যাণ ও আত্মশুদ্ধি লাভের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।
তালবিয়া পাঠের অনেক আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হজকারী ও ওমরাহকারীকে আল্লাহ বিশেষভাবে তাঁর কাছে আহ্বান করেন এবং তাদের দোয়া কবুল করেন।’ (ইবনে মাজা, ২৮৪৫)
তালবিয়া হজের একটি অপরিহার্য অংশ, যা মুসলমানদের ঐক্য, আনুগত্য ও ঈমানের গভীরতাকে ফুটিয়ে তোলে। এটি কেবল কয়েকটি শব্দ নয়, বরং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণের ও একত্ববাদের ঘোষণা। তালবিয়া পাঠের মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা, রহমত ও বরকত প্রার্থনা করেন। এটি হজযাত্রীদের মধ্যে এক আধ্যাত্মিক শক্তি সঞ্চার করে, যা তাদের জীবনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক