ঢাকা ২৭ কার্তিক ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

বিশেষ লেখা মুক্ত করো ভয়

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৩ এএম
আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৪ পিএম
মুক্ত করো ভয়
অলংকরণ : নিয়াজ চৌধুরী তুলি

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে ‘মুক্তচিন্তার স্বাধীন দৈনিক’ স্লোগান নিয়ে এক বছর আগে আজকের দিনে খবরের কাগজ-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। যদিও এর প্রকাশনা শুরু হয় তিন মাস আগে ৫ জুলাই ২০২৩ থেকে। আমরা চেয়েছিলাম নির্বাচনের আগেই পত্রিকাটিকে পাঠকের হাতে তুলে দিতে। কিন্তু প্রস্তুতির যে সময় দরকার, তা আমাদের হাতে ছিল না। মাত্র তিন দিনের প্রস্তুতিতে পত্রিকাটি বড় কলেবরে বাজারে আসে। বাংলাদেশের সংবাদপত্রের জগতে এটি বিরল ঘটনা। আর কোনো পত্রিকা এত কম সময়ের প্রস্তুতিতে বাজারে আসেনি। এত কম সময়ে পত্রিকা বের করার দুঃসাহস করছি বলে তখন অনেকেই নিরুৎসাহিত করেছিলেন। কেউ কেউ বলেছিলেন, এত দ্রুত করতে গিয়ে লেজেগোবরে হয়ে যেতে পারে! কিন্তু না। ফল হয়েছে উল্টো। সুহৃদ পাঠকরা আমাদের পরম মমতায় গ্রহণ করেছেন। তাদের ভালোবাসায় পত্রিকাটি অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠে। দিন দিন এর সার্কুলেশন বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে এর গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা। 

শত শত পত্রিকার ভিড়ে খবরের কাগজ কেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাঠকের মন জয় করতে সক্ষম হলো? কী আছে এর নেপথ্যে? আমরা শুরুতেই বলেছিলাম, পত্রিকাটি সম্পূর্ণ সত্যনিষ্ঠ ও পেশাদারত্ব বজায় রাখবে। সাংবাদিকতা পেশার ক্ষয়িষ্ণু ও চাটুকারিতার ধারার বিপক্ষে পেশাগত উৎকর্ষতা অর্জনে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে। কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর লেজুড়বৃত্তি করবে না। ক্ষমতাবানদের রক্তচক্ষুর ভয়ে সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্যের আবরণে ঢাকবে না। সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলবে। সমাজের অবহেলিত, বঞ্চিতদের নির্ভরতার প্রতীক হবে খবরের কাগজ। এক বছর ধরে আমরা সে চেষ্টাই করছি।

একটি কথা না বললেই নয়। আমাদের দেশের মানুষ ভীষণ অসহিষ্ণু। সহনশীলতা নেই বললেই চলে। দেশের রাজনীতির অবস্থা তো আরও শোচনীয়। স্রেফ প্রতিহিংসা আর রেষারেষির রাজনীতির কারণে দেশ আজ খাদের কিনারে। রাজনীতির এই অসুস্থ ধারা প্রবাহিত হয়েছে সমাজের সর্বস্তরে। অসহিষ্ণুতা আমাদের মানবতাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। নিষ্ঠুরতা ও পৈশাচিকতা আমাদের সামাজিক মূল্যবোধকে ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে। দেশের সামগ্রিক এই ভঙ্গুর অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী! অমানিশার অন্ধকারে গ্রাস করা রাষ্ট্র ও সমাজে আলো ফেলবে কে? 

এ ক্ষেত্রে একটি সুস্থ ধারার গণমাধ্যমই ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু সেই গণমাধ্যম যদি ভয়ের মধ্যে থাকে; নানামুখী চাপের মধ্যে থাকে তাহলে কী হবে? আমরা বিগত দেড় দশকে কী দেখেছি? একধরনের ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। সরকারের সমালোচনা করলেই নানা ধরনের চাপে পড়তে হয়েছে। এর ফলে গণমাধ্যমে চাটুকার, মোসাহেব তৈরি হয়েছে। পেশাদার সাংবাদিকরা কোণঠাসা থেকেছেন। শুধু কি তাই? পেশাদার রাজনীতিকরাও হাইব্রিডদের কনুইয়ের ধাক্কায় ছিটকে পড়েছেন। এতে রাজনীতির পরিবর্তে অপরাজনীতি, সুস্থ সংস্কৃতির পরিবর্তে অপসংস্কৃতি স্থান করে নিয়েছে। অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। ব্যবসাক্ষেত্রে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, দ্রুত বড়লোক হওয়ার প্রবণতা মানুষকে পশুতে পরিণত করেছে। 

এ অচলায়তনের বিরুদ্ধেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন লড়াই করেছে। আর তাতে সমর্থন জুগিয়েছে বৈষম্যের শিকার হওয়া সর্বস্তরের মানুষ। সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার হয়েছে; রাস্তায় নেমে এসেছে। অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে একটি আধিপত্যবাদী-ফ্যাসিবাদী সরকারকে হটিয়ে দিয়ে তারাই সরকারে বসেছে। দেশের হাল ধরেছে। তাদের হাত দিয়ে যেন কোনো বৈষম্য না হয়, সেদিকে অনেক বেশি নজর দিতে হবে। 

গণমাধ্যমকে সব ধরনের ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। গণমাধ্যম যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সে জন্য সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে হবে। তাহলেই গণমাধ্যমে পেশাদারত্ব ফিরে আসবে। গণমাধ্যম ভয়মুক্তভাবে কাজ করতে পারলে গণতন্ত্র বিকশিত হবে। আর গণতন্ত্রের সৌন্দর্যই হচ্ছে সমালোচনাকে স্বাগত জানানো। কারও ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করা। সেই মানসিকতা তৈরিতে সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। 

আমরা ভয়মুক্ত পরিবেশে কাজ করতে চাই। সেই পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারের সহযোগিতা চাই। 

বিগত এক বছরে আমাদের সত্য প্রকাশে প্রিয় পাঠক যে সাহস জুগিয়েছেন, সে জন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। 

বিজ্ঞাপনদাতা, হকার, এজেন্ট ও সংবাদপত্রসেবী সবার প্রতি আমাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা।

কমলা হ্যারিস না ডোনাল্ড ট্রাম্প

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৫ পিএম
আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৩ পিএম
কমলা হ্যারিস না ডোনাল্ড ট্রাম্প
অঙ্কণ: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

বিশ্বের সব গণমাধ্যমের চোখ আজ যুক্তরাষ্ট্রে। ১৮৪৫ সাল থেকে নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার দেশটির জনগণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়ে আসছেন। এবার নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার পড়েছে ৫ নভেম্বর। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হয়েছেন কমলা হ্যারিস, রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনি দৌড় থেকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর আকস্মিক ঘোষণার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তার পর থেকে বিশ্ব গণমাধ্যম বিরামহীনভাবে প্রচার করে চলছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খবর। কে হবেন দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট, ট্রাম্প না হ্যারিস? নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জয়লাভ করলে রচিত হবে এক ইতিহাস- প্রথমবারের মতো কোনো নারী হবেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতলে তিনি হবেন প্রথম কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট, যাকে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে বিচার মোকাবিলা করতে হবে।

নির্বাচনের মাঠ থেকে জো বাইডেনের বিদায়ের ঘোষণায় অনেকটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন দলটির নেতা-কর্মীরা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ২০২৪ সালের জুনে অনুষ্ঠিত প্রথম বিতর্কে বেশ বেকায়দায় পড়েন বাইডেন, স্পষ্টতই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে প্রেসিডেন্টের শারীরিক অক্ষমতা। ২১ জুলাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রার্থিতার পক্ষে সমর্থন জানান জো বাইডেন। ৫ আগস্ট ডেমোক্র্যাটিক পার্টি তাকে প্রার্থী করার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে। কমলা হ্যারিস মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর টিম ওয়ালজকে রানিং মেট হিসেবে নির্বাচিত করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প রানিং মেট করেছেন জে. ডি. ভ্যান্সকে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিতর্ক নির্বাচনি আচার-অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রথম বিতর্কে বেশ ভালোভাবেই উতরে যান কমলা হ্যারিস। তবে সময় যত গড়াতে থাকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ততই ঘুরে দাঁড়াতে থাকেন। বিতর্কের পর প্রথম দিকে জনমত জরিপে এগিয়ে থাকেন কমলা হ্যারিস। পরে ক্রমান্বয়ে ব্যবধান ঘুচিয়ে ফেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকসহ বিশ্বের গণমাধ্যমগুলো জটিল এক সমীকরণের সম্মুখীন হয়েছেন- কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট? 

নির্বাচনি জরিপের ফল অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কার্যকর হয়ে থাকে। তবে জরিপে যারা এগিয়ে থাকেন, তারাই যে পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করবেন, তা নিয়ে পুরোপুরি সংশয়মুক্ত নন বিশ্লেষকরা। এখানে পপুলার ভোট ও ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে একটি সমীকরণ রয়েছে। সেই সমীকরণ বুঝতে গেলে সাধারণ পাঠককে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনব্যবস্থা বুঝতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের বেশি ভোট পেয়েও যে কেউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত নাও হতে পরেন। 

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের ফলই শেষ কথা। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের নাগরিকরা সরাসরি যে ভোট দেন তাকে পপুলার ভোট বলে। সে হিসাবে সাধারণ বিবেচনায় কোনো প্রার্থী একটি অঙ্গরাজ্যে সর্বাধিক ভোট পেলেই তাকে সেখানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভারসাম্যনীতি একটি অসাধারণ ব্যতিক্রমী কৌশল। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে আছে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। এই ইলেকটোরাল ভোটই নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৪৮টির জন্য নিয়ম হলো- যিনি পপুলার ভোটে জিতবেন তিনিই সে অঙ্গরাজ্যের সব কটি ইলেকটোরাল ভোট পাবেন, সেখানে পপুলার ভোটের ব্যবধান যতই কম বা বেশি থাকুক না কেন। জাতীয় পর্যায়ে পপুলার ভোট বেশি পেলেও জয়-পরাজয় হিসাব করা হয় ইলেকটোরাল ভোটের ভিত্তিতে। দেশটিতে সব অঙ্গরাজ্য মিলিয়ে ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। আর হোয়াইট হাউসে অবস্থান নিশ্চিত করতে হলে কোনো প্রার্থীকে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হবে।

২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জর্জ ওয়াকার বুশ পেয়েছিলেন ২৭১টি ইলেকটোরাল ভোট। প্রয়োজনীয় সংখ্যার চেয়ে একটি বেশি। তবে পপুলার ভোটে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন আল গোর। ২০১৬ সালের নির্বাচনেও হিলারি ক্লিনটন প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে সাড়ে ২৮ লাখেরও বেশি পপুলার ভোট পেয়েছিলেন। তবে ট্রাম্প ৩০৪টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনেও কমলা হ্যারিস পপুলার ভোট বেশি পাবেন এবং ট্রাম্প ইলেকটোরাল ভোট বেশি পাবেন বলে বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এবার আগাম কোনো নিশ্চিত ধারণা গণমাধ্যমকে দিতে পারছেন না। সবাই বলছেন, যে কেউই নির্বাচনে জিততে পারেন। বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যম লন্ডনের দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকায় সতর্ক করে বলা হয়, ট্রাম্প নির্বাচনে জয়লাভ করলে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বে ঝুঁকি বাড়বে। সেখানে আরও বলা হয়, ইকোনমিস্ট যদি ভোট দিতে পারত, তাহলে কমলা হ্যারিসকেই ভোট দিত। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী এই গণমাধ্যমটি এটাই বোঝাতে চেয়েছে যে পছন্দ করুন আর না করুন, ট্রাম্প হয়তো নানা বিবেচনায় জয়ের দৌড়ে বেশ জোরালো অবস্থানে আছেন।

চার বছর আগে জো বাইডেনের কাছে বেশ ভালোভাবেই পরাজিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন তিনি ছিলেন একজন পরাজিত নেতা। সময়ের পরিক্রমায় আজ তিনি ঘুরে দাঁড়ানো নেতা। জনমত জরিপে কমলা হ্যারিসের সঙ্গে ব্যবধান ঘুচিয়ে আনতে পারায় ট্রাম্প ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচনি প্রচার মাত্রা পাওয়ার পর থেকে এই দুই নেতার ব্যবধান কখনো তিনের বেশি ছিল না।

নিউইয়র্ক টাইমস/সিএনএনের জরিপ অনুযায়ী, একমাত্র গত ৪ আগস্টেই এই দুই নেতা সমান ছিলেন। তখন তাদের দুজনের পয়েন্ট ছিল ৪৭। জনপ্রিয়তার বিবেচনায় জাতীয়ভাবে ৫ আগস্ট থেকে এগিয়ে যান কমলা হ্যারিস। তার পর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত কমলা এগিয়ে আছেন। তবে সেই জরিপ অনুযায়ী কখনো এই ব্যবধান তিনের বেশি বা একের কম হয়নি। অন্য অনেক জরিপে ব্যবধান আরও বেশি ছিল।

নিউইয়র্ক টাইমস/সিএনএনের জরিপে (৩ নভেম্বর) কমলা ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে এক পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। ভোটের চূড়ান্ত ফয়সালা হবে সাত ব্যাটলগ্রাউন্ডে (দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য: পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, মিশিগান, নেভাডা, উইসকনসিন, জর্জিয়া ও অ্যারিজোনা)।

এই সাত ব্যাটলগ্রাউন্ডে ধীরে ধীরে উন্নতি করেছেন ট্রাম্প। নিউইয়র্ক টাইমস/সিএনএনের জনমত জরিপে (৩ নভেম্বর) ব্যাটলগ্রাউন্ডের সাতটি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে চারটিতে এগিয়ে গেছেন ট্রাম্প, দুটিতে কমলা এবং একটিতে উভয়েই সমান অবস্থানে আছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক সূচক কাজ করে। কমলা হ্যারিস দেশের লোকজনকে কী দিতে পারবেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।

আর ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করবেন। ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি। এটি চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিতে হবে, যা দেশটির একবিংশ শতাব্দীর নীতির পরিপন্থি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করেছে। 

অভ্যন্তরীণ যে সূচকগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রভাবিত করে, তার অনেকগুলোতে তুলনামূলক বিচারে এগিয়ে আছেন কমলা হ্যারিস। এর মধ্যে একটি সূচক ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচন। সেই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ভালো ফল করে। ভালো ফলের পরও দলটি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় এই ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছেন ট্রাম্প।

দ্বিতীয় সূচকটি হলো ধারাবাহিকতা। এবারের নির্বাচনে কমলা বা ট্রাম্প- কেউই ধারাবাহিক নন। বাইডেন ছিলেন ধারাবাহিক প্রার্থী। তিনি সরে যাওয়ায় কমলা এসেছেন। আর আগের নির্বাচনে ট্রাম্প পরাজিত হওয়ায় তিনিও ধারাবাহিক প্রার্থী নন। কাজেই এই সূচকে তারা উভয়েই সমান অবস্থানে আছেন। দলীয় প্রার্থিতা অর্জনে ট্রাম্পের তুলনায় কমলা সামান্য এগিয়ে গেছেন। তৃতীয় পক্ষের প্রার্থী রবার্ট এফ জুনিয়র নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে কমলার পক্ষে অবস্থান ঘোষণা করেছেন।

অপর সূচক হলো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। যেহেতু ডেমোক্র্যাট সরকার কোনো মন্দায় পড়েনি এবং ইউক্রেন যুদ্ধে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে যুক্তরাষ্ট্র, তাই ধরে নেওয়া যায় ধকল সত্ত্বেও অর্থনীতিতে পিছিয়ে নেই দেশটি। এই সূচকটি কমলা হ্যারিসের পক্ষে যাবে। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ অপর সূচকে এগিয়ে আছেন কমলা হ্যারিস। প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশটির প্রতি সহযোদ্ধাদের আস্থা বাড়িয়েছে।

এ ছাড়া ইতিবাচক ভাবমূর্তি হয়েছে আরও যে কয়টি ইস্যুতে সেগুলো হলো- চিপস বিল, অবকাঠামো বিল, মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিল। মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা ইস্যুতে কমলা বা ট্রাম্প খুব বেশি দূরত্বে নেই। এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সব রাজনৈতিক দলের অবস্থান প্রায় একই। এই ইস্যুটি আন্তর্জাতিক হলেও যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নানা বিষয় এর সঙ্গে বেশ নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েল সরকারের ব্যক্তিগত সম্পর্ক বেশ গভীর। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দল ও সরকারের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের সম্পর্কও কমবেশি ভূমিকা পালন করে। এক কথায় এটিকে স্থানীয়ভাবে হোয়াইট হাউস কেলেঙ্কারি বলা হয়। এই ইস্যুতে বাইডেন আমলে কোনো ঝামেলায় পড়েনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। সেই বিবেচনায় এগিয়ে আছেন কমলা হ্যারিস। ব্যক্তিগত ক্যারিশমা সূচকে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প।

কমলা তার অনুসারীদের তেমন কোনো ক্যারিশমা দেখাতে পারেননি। অবশ্য দীর্ঘ প্রাইমারি দৌড় শেষ না করে এবার সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চলে আসায় এটি দেখানোর সুযোগও পাননি কমলা। ট্রাম্প এই ইস্যুতে বেশ এগিয়ে আছেন। বাইডেনের আকস্মিক বিদায়ে অবশ্য কমলার রেটিং বেড়েছে। নির্বাচনি দৌড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নেমেই তিনি জনপ্রিয়তার পয়েন্টে ট্রাম্পকে পেছনে ফেলেন চ্যালেঞ্জার হিসেবে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ডেমোক্র্যাট এই প্রার্থীকে কোনোভাবেই উপেক্ষা করতে পারবেন না ট্রাম্প।

শেষ এক সপ্তাহের জরিপে ট্রাম্প এগিয়ে যাওয়ায় নির্বাচন গবেষকদের অনেকেই মনে করছেন, এই মুহূর্তে ট্রাম্পের জয়ের পাল্লা ভারী। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক চন্দ্রশেখর পুচ্চা বলেছেন, তিনি ৯৭ শতাংশ নিশ্চিত, নির্বাচনে ট্রাম্প জয়লাভ করবেন। আধুনিক প্রায়োগিক ব্যবস্থাপনার আওতায় গাণিতিক সব সূত্র ব্যবহার করে পাওয়া ফলের ভিত্তিতে তিনি এই মন্তব্য করেছেন। নির্বাচনি প্রচারের পুরো সময় কমলা হ্যারিস এগিয়ে থাকলেও শেষ এক সপ্তাহে প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। 

নির্বাচনের প্রায় ছয় মাস আগে গত ৩০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের টাইম সাময়িকীতে এক সাক্ষাৎকারে এরিক কোর্টেলিসকে ট্রাম্প বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি অবৈধ অভিবাসীদের জন্য বন্দিশিবির নির্মাণ করবেন। কথা না শুনলে অ্যাটর্নি জেনারেলকে বরখাস্ত করার অভিপ্রায়ের কথাও সাংবাদিককে বলেন ট্রাম্প। এমনকি তিনি এও বলেছেন, তিনবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য তিনি সংবিধান সংশোধনের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান একজনকে দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ দেয় না।

ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হলে মুক্ত চিন্তা থেকে মুক্ত গণমাধ্যম, গর্ভপাত থেকে অস্ত্রনিরাপত্তা- সব ইস্যুই হুমকির মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জীবনে চরম ডানপন্থার উত্থান ঘটতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে পত্রিকাটিতে। আর অভিবাসন তো আছেই। অভিবাসীদের দিয়ে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসনবিরোধী হলে তা সে দেশের মানবিক মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এমনকি ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে ট্রাম্প সেনা হস্তক্ষেপের হুমকিও দিয়ে রেখেছেন। গণহারে অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কার ব্যাপক সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। ট্রাম্প লিঙ্গান্তর বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। একই সঙ্গে সমকামীদের নানা অধিকার খর্ব করা হবে বলে আগাম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। জলবায়ু ইস্যুতে আবারও তিনি বিশ্ব উদ্যোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন।

দ্য গার্ডিয়ানের মূল্যায়নে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের গরিব জনগোষ্ঠী এই সময়ে আরও গরিব হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আর পররাষ্ট্রনীতিতে ইউরোপসহ বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা আবারও নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে পারে। অন্যদিকে কমলা হ্যারিস জয়লাভ করলে ট্রাম্প-ঘোষিত প্রতিটি ইস্যুতে বিশ্ববাসী বিপরীত চিত্র দেখতে পারেন। গত কয়েক মাসের নির্বাচনি প্রচারাভিযানে কমলা ট্রাম্পকে একজন অস্থির ব্যক্তি ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলে বর্ণনা করেছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল জানতে আমাদের দেশের পাঠকদের কমপক্ষে কাল দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে বরাবরের মতো এবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে শেষ হয়েছে নির্বাচনি প্রচার। লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।

ভোটারদের আগ্রহের কেন্দ্রে অর্থনীতি

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪২ পিএম
আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৩ পিএম
ভোটারদের আগ্রহের কেন্দ্রে অর্থনীতি
খবরের কাগজ ইনফো গ্রাফিকস

এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে আলোচিত দুই ইস্যু হচ্ছে অর্থনীতি ও অভিবাসন। কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, আবাসনসংকট ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে বেকায়দায় আছে বাইডেন প্রশাসন। এর সুযোগ নিয়ে ট্রাম্প তার নির্বাচনি ক্যাম্পেইনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানোর এবং সুদিন ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। অন্যদিকে অর্থনীতি নিয়ে কমলাও জনগণকে শোনাচ্ছেন আশার বাণী। অর্থনীতির সংস্কারে তিনি ঘোষণা করেছেন ‘সুযোগ অর্থনীতি’ নামের এক রূপরেখা। দেখে নেওয়া যাক অর্থনীতি সম্পর্কিত ইস্যুগুলোতে কে কেমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছেন।

কমলা হ্যারিসের অর্থনীতিসম্পর্কিত নীতি

মুদ্রাস্ফীতি: যদিও সাম্প্রতিক কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির চিত্র তুলনামূলকভাবে উজ্জ্বল হয়েছে। তবুও কমলা দেশবাসীকে বলছেন, নিত্যপণ্যের দাম যেটুকু কমেছে তা যথেষ্ট নয়। এবং এর কারণে গত কয়েক বছরের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মুদ্রাস্ফীতি। হ্যারিস আমেরিকার জনগণকে এই বলে আশ্বস্ত করছেন যে, তিনি তার ঘোষিত রূপরেখা ‘সুযোগ অর্থনীতির’ মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে গড়ে তুলবেন। তার অর্থনৈতিক সংস্কার আবর্তিত হবে মধ্যবিত্ত, নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই, প্রথমবার আবাসন ক্রেতাদের প্রণোদনা এবং অভিভাবকদের জন্য ট্যাক্স ক্রেডিটের সময়সীমা বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে।

কর: কমলা যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের কর কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কর মওকুফের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি টিপসের ওপর থেকে কর বাদ দেওয়া সংক্রান্ত ট্রাম্পের একটি প্রস্তাবকে সমর্থন করেন।

বাণিজ্য: এই ব্যাপারে কমলা বাইডেন প্রশাসনের নীতি ধরে রাখবেন বলে মনে হচ্ছে। শুল্ক এবং রপ্তানিকে নিয়ন্ত্রণ করে চীনের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির যে পলিসি বাইডেন প্রশাসন নিয়েছে, কমলা সেটিই অনুসরণ করবেন বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। তিনি অবকাঠামো এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বাইডেন প্রশাসনের উচ্চাভিলাষী বিনিয়োগ ধরে রাখবেন বলে জানিয়েছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনীতিসম্পর্কিত নীতি

মুদ্রাস্ফীতি: ট্রাম্প তেল এবং গ্যাস উত্তোলন এবং এর নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে জ্বালানির মূল্য কমানোর মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার রূপরেখা সামনে এনেছেন। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের আমদানি পণ্যে অতিরিক্ত শুল্কারোপ এবং গণনির্বাসন নীতি বাস্তবায়িত হলে জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে। আর অভিবাসীদের গণনির্বাসনে পাঠালে সস্তা শ্রমিক কমে যাবে। শ্রমের মূল্য বাড়লে পণ্যের দাম বাড়বে। এ ছাড়া উচ্চ সুদ আরোপের জন্যও ট্রাম্প সমালোচিত ছিলেন।
 
কর: ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হলে যেসব কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে পণ্য তৈরি করে তাদের করপোরেট কর ১৫ থেকে ২১ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। কমলা এই নীতির সমালোচনা করে ট্রাম্পকে ‘ধনীদের প্রেসিডেন্ট’ বলে তিরস্কার করেছিলেন। ২০১৭ সালেই এমন একটি আইনে স্বাক্ষর করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া তিনি সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা ও টিপস থেকে কর অব্যাহতির ঘোষণা দিয়েছেন।

বাণিজ্য এবং শুল্ক: দেশটির ঝিমিয়ে পড়া অটোমোবাইলশিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং শিশু লালনপালনের অতিরিক্ত ব্যয় কমিয়ে আনাসহ বিভিন্নভাবে ট্রাম্প অগনিত অর্থনৈতিক সমস্যার সংস্কারক হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তিনি নিজেকে ‘ট্যারিফ ম্যান’ বলে অভিহিত করেছেন। এ ছাড়া সব আমদানি করা পণ্যের ওপর ১০ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন। চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর এই হার বাড়বে ৬০ শতাংশ বা তারও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করে, এমন দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক বৃদ্ধি করতে কংগ্রেসের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন এখন অপেক্ষা শুধু ফলাফলের

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৭ পিএম
এখন অপেক্ষা শুধু ফলাফলের
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন

সতেরো বছরের নভোদীপ কাউর নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের একটি বিউটি পারলার ওর মায়ের অবর্তমানে সামলাচ্ছিল। এখনো সে ভোটার হয়নি। তবে নিশ্চিত জানে, মা-বাবা একদম ৫ তারিখেই ভোট দিতে যাবেন এবং কমলা হ্যারিসই সেই ভোট পাবেন। 

নভোদীপের মায়ের এই সাঁলোতে মাস দুই আগে আমি একবার এসেছিলাম। তখন যে হিজাব পরা পাকিস্তানি নারীকে কাজ করতে দেখেছি, তাকে এবার দেখলাম না। তবে ভারতের পাঞ্জাবের অমৃতসর থেকে আসা নভোদীপের মামাতো দিদিও এই দোকানে কাজ করছে। সে গ্রিনকার্ড পেয়েছে। 

‘কমলা এলে ওর সিটিজেনশিপ হয়ে যাবে। ডেমোক্র্যাটরা এলে অভিবাসীরা ভালো থাকে,’ বেশ হাসি হাসি মুখে জানায় নভোদীপ। 

এই পারলারে শ্বেতাঙ্গ কাস্টমার দুই দিনের এক দিনও দেখিনি। তবে গতকাল একটি কালো (আফ্রো-আমেরিকান) মেয়েকে দেখলাম ঢুকেছে। নাম জিজ্ঞাসা করায় সে বলল তার নাম ‘ডেইজি’। ডেইজি ভোট দিতে যাবে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে চুপ করে থাকায় নভোদীপই আমার দিকে তাকিয়ে এবার ইংরেজির বদলে হিন্দিতে বলে, ‘আভি কাস্টমারকো সাথ ইলেকশন কি বাত মাত কিজিয়ে!’ (এখন কাস্টমারের সঙ্গে ভোট নিয়ে কথা বলবেন না)

মনে মনে বললাম, দূর... ‘ইলেকশন কি বাত’ করার জন্যই তো রাস্তা পার হয়ে এই সাঁলোতে এলাম। এখানেও আলাপ করা যাবে না? এক দিন পরেই যে ভোট। 

প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাটদের সংকট
এলাম পাশের স্টারবাকস কফিশপে। কিন্তু কেউ প্রেম করছে, কেউ একমনে ল্যাপটপে গভীর মনোযোগের সঙ্গে কাজ করছে দেখে থমকে গেলাম। তার চেয়ে ঠিক অ্যাপার্টমেন্টের সামনের রাস্তায় নেমে জনে জনে পথচারীকে ধরে জিজ্ঞাসা করাই ভালো ছিল বোধ হয়। সারা সন্ধ্যার ‘অর্জন’ হলো কিনা নভোদীপদের সাঁলোতে একের পর এক পাঞ্জাবি ‘ভাংরা’ গান শোনা!

এবারের মার্কিনি নির্বাচনটি একটু ভিন্নধর্মী এ কারণে যে, চিরদিনের ‘প্রগতিশীল’ ডেমোক্র্যাটরাই এবার গাজা-ইসরায়েল এবং রুশ-ইউক্রেন নামক দু-দুটো যুদ্ধের এবং বিশেষত গাজায় এক বছরে ৪২ হাজার মানুষের মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রেই মুসলিম অভিবাসী থেকে উদারনীতিকরা চিন্তিত। অন্যদিকে ‘ফার রাইট’-এর প্রতীক ট্রাম্প হয়ে উঠেছেন ‘যুদ্ধবিরোধী’ আহ্বানেরও প্রবক্তা। আবার কদিন আগে যে ফিলিস্তিনি-মার্কিনি তরুণী সাবিহার সঙ্গে কথা বলেছিলাম,  তিনি ডেমোক্র্যাট সমর্থক হলেও একজন মার্কিনি হিসেবে মনে করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অন্য দেশের কোনো কাজে টাকা-পয়সা খরচ করার বদলে মার্কিন নাগরিকদের স্বাস্থ্য, শিক্ষাতেই সব টাকা খরচ করা উচিত।

‘আমরা মার্কিনিরা কেন অন্যদের দেশে অন্যদের সাহায্য করতে যাব? এদিক থেকে ডেমোক্র্যাটদের বদলে রিপাবলিকানদের নীতিই সঠিক- যদিও আমি ডেমোক্র্যাট সমর্থক,’ সাবিহা বলছিল। সাবিহা অবশ্য মায়ের দিক থেকে পুয়ের্তো রিকান আর আরব বাবার অমতে সম্প্রতি বিয়ে করেছেন ডমিনিকান রিপাবলিকের এক ছেলেকে। গর্ভপাত এবং সংখ্যালঘু নাগরিকের অধিকার প্রশ্নে সাবিহা ডেমোক্র্যাটদের সমর্থক হলেও গত চার বছরে মার্কিন অর্থনীতির হাল প্রচণ্ড খারাপ হয়ে পড়েছে বলেও তিনি মনে করেন। মোদ্দা কথা হলো এবারের নির্বাচনে ‘প্রগতিশীল-রক্ষণশীল’ বিষয়গুলো কেমন এ ওর সঙ্গে দলা পাকিয়ে গেছে!

শেষের কবিতা 
এখানকার গণমাধ্যমগুলো নির্বাচনি খবরে মুখর। অনেকে নির্বাচনি প্রচারণা নিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত। কিন্তু উপায় কী! এই এক জায়গায় এখানকার গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে আছে। তবে বিচিত্র জনগোষ্ঠী-অধ্যুষিত যুক্তরাষ্ট্রে বড় বড় জরিপ ছাড়া নির্বাচনে কে জিতবে বলা অসম্ভব। কেননা এখানে এক এক জায়গার ভোটারদের নিজস্ব হিসাব আছে। সেটা জাতি-ধর্ম-বর্ণ-অঞ্চল-লিঙ্গভেদে আলাদা। আপনি লাতিনো-অধ্যুষিত এলাকায় গেলে এক রকম হাওয়া দেখবেন, আরবদের মধ্যে অন্য রকম। নারীদের ভাবনা- তাও বিচিত্র পেশার বিচিত্র বয়সের নারীদের হিসাব আলাদা। তরুণ-তরুণী ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ভাবনাতেও কোনো মিল পাওয়া যায় না। পুরো সমাজটা হোমোজেনিক নয় বলেই ভোট নিয়ে বিচিত্র ভাবনা আর বিচিত্র বর্ণচ্ছটা। তবে দিন শেষে তাদের জীবন কতটা সহজ ও সুন্দর হতে পারে; কীভাবে বাঁচবে সেই ভাবনাই তাদের তাড়িত করে। এই জায়গাতেও সব দেশের সব ভোটারের মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে একটা বিষয়ে বাংলাদেশের ভোটের গতিপ্রকৃতির সঙ্গে মিল পাওয়া যাবে না। সেটা হলো, ভোট দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা নিয়ে তাদের বিন্দুমাত্র উদ্বেগ নেই। না দেওয়ার কথাটা তারা ভাবতেই পারেন না। এ নিয়ে আমি তাই কাউকে প্রশ্নও করিনি। 

গতকাল শেষ হয়েছে এই বহু বর্ণিল ভোট নিয়ে নানান জরিপ, পূর্বাভাসের বিচিত্র প্রবাহ। এখন অপেক্ষা শুধু ফলাফলের।

কমলা হ্যারিস আপনাকে অভিনন্দন। ডোনাল্ড ট্রাম্প আপনাকেও অভিনন্দন। যিনিই জিতুন, এই নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে। অভিবাদন মার্কিন জনগণকে।

ট্রাম্প জিতলে ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতি কী হবে?

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৬ পিএম
ট্রাম্প জিতলে ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতি কী হবে?
ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে প্রায় আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে। এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির কিংবা যুদ্ধ বন্ধের কোনো কার্যকর সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও আর্থিক সহায়তায় ইউক্রেন এখনো রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের ফ্রন্টলাইন ধরে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধ বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় এখন প্রশ্ন উঠেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে যুদ্ধ বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কি?

হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক ভালো ছিল। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে রাশিয়া কখনোই ইউক্রেনে আক্রমণ করত না। যুদ্ধ শুরুর পর বিভিন্ন সময় জো বাইডেনের কড়া সমালোচনা করেছিলেন ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায়। ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করে দিতে পারতেন। তবে তিনি তার যুদ্ধ বন্ধের পরিকল্পনা ফাঁস করতে রাজি নন। কারণ, তা ফাঁস করে দিলে পরবর্তী সময়ে ফলপ্রসূ নাও হতে পারে। 

এবারের মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে যুদ্ধ দ্রুত বন্ধ হবে বলে মনে করেন যুক্তরাজ্যের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ওয়েন। সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ডেভিড ওয়েন বলেন, ‘ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরে এলে যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতা করবেন এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করবেন।’ 

ট্রাম্প কোন উপায়ে যুদ্ধ বন্ধ করবেন সে বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত না দিলেও তার নির্বাচিত রানিং মেট (ভাইস প্রেসিডেন্ট) জেডি ভান্স যুদ্ধ বন্ধের উপায় সম্পর্কে আভাস দিয়েছেন। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে জানা যায়, সম্প্রতি ভান্স বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনকে অবশ্যই ওই অঞ্চলগুলো ছেড়ে দিতে হবে যেগুলো রাশিয়া দখল করে রেখেছে। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অস্ত্র ও লোকবল কোনোটিই ইউক্রেনের নেই।’ এই বক্তব্য প্রচার হওয়ার পর ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যমগুলোয় এ বক্তব্যের সমালোচনা করতে দেখা যায়। 

ভান্স আরও বলেন, ‘ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। একই সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করে রাশিয়া-ইউক্রেনের সংঘাতময় সীমান্তে একটি নিরপেক্ষ অঞ্চল ঘোষণা করতে হবে এবং সুরক্ষা বেষ্টনী তৈরি করতে হবে, যাতে রাশিয়া পুনরায় ইউক্রেনে আক্রমণ চালাতে না পারে।’

রাশিয়ার পক্ষ থেকে যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনকে যেসব দাবি মেনে নিতে বলা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ছিল ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না এবং একটি সীমিত সামরিক শক্তি রাখবে, যা রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকির কারণ হবে না। ট্রাম্পের রানিং মেটের অভিমত এদিক থেকে রাশিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে। 

ইউক্রেনের দাবি উপেক্ষিত থেকেই যুদ্ধ বন্ধ হবে? 

ইউক্রেনের পক্ষ থেকে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে এগুলোর মধ্যে অন্যতম শর্ত ছিল রাশিয়ার দখল করা ভূমি ছেড়ে দিতে হবে এবং ২০১৪ সালে দখল করা ক্রিমিয়া অঞ্চল ফিরিয়ে দিতে হবে। 

সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ‘বিজয় পরিকল্পনা’ নিয়ে হাজির হয়েছেন পশ্চিমা নেতাদের সামনে। এই পরিকল্পনায় পাঁচটি দাবি জানিয়েছেন তিনি। এগুলো হলো- ১) আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে আমন্ত্রণ জানানো ২) পশ্চিমা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রুশ ভূখণ্ডে আঘাতের অনুমতি ৩) রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রের হুমকি মোকাবিলায় ইউক্রেনকে পরমাণু অস্ত্র ধারণের বৈধতা দেওয়া ৪) ইউক্রেন সীমান্ত সংলগ্ন রুশ ভূখণ্ডে একটি বাফার জোন (নিরপেক্ষ অঞ্চল) তৈরি করা এবং ৫) ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক স্থাপনাগুলোর সুরক্ষা প্রদান। 

ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে ইউক্রেনের এই পরিকল্পনা কাজে আসবে না বলে মনে হচ্ছে এখন পর্যন্ত। দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জেডি ভান্স জানিয়েছেন, যুদ্ধ বন্ধ করতে ইউক্রেনকে সব ধরনের সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করবে ট্রাম্প প্রশাসন। যদি তা-ই হয় তাহলে ইউরোপীয় অস্ত্র সহায়তায় ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে নিতে পারবে না। ফলে ইউক্রেন ট্রাম্পের প্রস্তাবে রাজি হবে। 

যদি কমলা হ্যারিস ক্ষমতায় আসেন তাহলে যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হবে। কারণ, জব্দ করা রাশিয়ান বিদেশি সম্পদ থেকে সম্প্রতি ইউক্রেনকে ৫০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জি সেভেন নেতাদের মধ্যে। ইতোমধ্যে শত বিলিয়ন ডলারের ওপর অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো। 

ডেমোক্র্যাটরা জয়লাভ করলে যুদ্ধের পরিণতি কী হবে সেই সমীকরণ এখনই মিলানো যাবে না। তবে সম্প্রতি মস্কোয় ব্রিটিশ দূতাবাসের অর্থনৈতিক পরামর্শক প্রাউড এ বিষয়ে বলেন, ‘কমলা হ্যারিস মূলত বাইডেন প্রশাসনের নীতি অব্যাহত রাখবেন। অর্থাৎ ইউক্রেনের সরকারের প্রতি দৃঢ় সমর্থন এবং রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নে কোনো নমনীয়তা থাকবে না, যা মূলত মস্কোর সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় না বসা বোঝায়।’ অর্থাৎ যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনাই প্রকট। 

ইসরায়েলের যুদ্ধে কী প্রভাব ফেলবে?

এক বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা চলমান। এই যুদ্ধের মূল অস্ত্র জোগানদাতা যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েল ও ইউক্রেন- এ দুই দেশকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া খুবই ব্যয়বহুল মার্কিন প্রশাসনের পক্ষে। তাই ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে তিনি চাইবেন যুদ্ধের পরিধি কমিয়ে আনতে। তিনি রাশিয়া থেকে যুদ্ধ শেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে মনোযোগ দিতে বেশি আগ্রহী বলে মনে হয়। পাশাপাশি চীনের সঙ্গেও ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্ক বৈরী। তাই ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যাতে রাশিয়ার পক্ষে যেতে পারে যুদ্ধের ফলাফল। 

সূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য গার্ডিয়ান, আল-জাজিরা

নির্বাচনি জরিপগুলো কতটা বিশ্বাসযোগ্য?

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পিএম
নির্বাচনি জরিপগুলো কতটা বিশ্বাসযোগ্য?
কমলা হ্যারিস-ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রাফিকস (সংগৃহীত)

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ইভেন্টগুলোর অন্যতম। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এবং গণতন্ত্রের সূতিকাগারখ্যাত দেশটির নির্বাচনের ওপর নিবিড় দৃষ্টি থাকে বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষের। তাই এই নির্বাচনকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে অসংখ্য জরিপ। যদিও অনেক জরিপ সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠান জরিপ পরিচালনা করে।

তবে সবচেয়ে পরিচিত কিছু নাম হলো গ্যালাপ, পিউ রিসার্চ সেন্টার, ইপসস, ইকেলন ইনসাইটস, অ্যাটলাস ইনটেল, কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটি, রাসমুসেন রিপোর্টস ইত্যাদি। বেশকিছু গণমাধ্যমও জরিপ সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে বা স্বাধীনভাবে কাজ করে। ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউ ইয়র্ক টাইমস, দ্য টাইমস ও রয়টার্স। 

জরিপগুলোর মাধ্যমে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলের ব্যাপারে পূর্ব ধারণা পাওয়া গেলেও জরিপগুলোকে চূড়ান্ত ধরে নেওয়ার সুযোগ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে জরিপগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত নমুনাগুলোর কাছে পৌঁছানো বেশ সহজ হলেও ২০১৬ ও ২০২০ সালের বেশির ভাগ নির্বাচনি জরিপ হতাশ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে ও সংবাদমাধ্যমগুলো ডিজিটাল হওয়ায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে। এর ফলে যেমন সহজে জরিপকাজ পরিচালনা করা যায়, তেমনি ফলাফলও নির্ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রায় শতভাগ।

আগে চিঠি, ফোনকল, ভোটারদের কাছে গিয়ে উপাত্ত সংগ্রহ বা মুখোমুখি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করা হতো। আধুনিক সময়ে পদ্ধতির উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও ইদানীং জরিপের ফলগুলোতে বেশির ভাগ সময় চূড়ান্ত ফলের প্রতিফলন ঘটছে না বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাপী নামকরা জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার।

২০১৬ ও ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকানদের শক্তিমত্তা জরিপগুলোতে অবমূল্যায়িত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। এর ফলে জরিপগুলোর সীমাবদ্ধতা আরও পরিষ্কার হয়েছে। বিশেষত, ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রায় সব জরিপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের জয়ের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। কিন্তু চূড়ান্ত ফলে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হেরে যান তিনি। অবশ্য ৩০ লাখ পপুলার ভোট বেশি পান তিনি।

পিউ রিসার্চ সেন্টার বলছে, এরপর মধ্যবর্তী নির্বাচনগুলোতে জরিপগুলো বেশ ভালো ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। তার পরও আমেরিকার বেশির ভাগ মানুষ বিশ্বাস করে, জরিপগুলো দেশের জনগণের রাজনৈতিক পছন্দের প্রকৃত চিত্র আঁকতে পারে না। 

তবে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে জনমত জরিপের একটি কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। কারণ জরিপগুলোতে শুধু ব্যক্তির পছন্দের প্রার্থীর নাম জানতে চাওয়া হয় না, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কেন তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ভোট দেবেন না বা তার পছন্দের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে সেগুলোও জানতে চাওয়া হয়। ফলে এটি দেশের প্রধান সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে, বিভিন্ন বিষয়ে জনগণ কী ভাবছে তা প্রকাশ করে এবং জনগণের জন্য মঙ্গলজনক বিষয়গুলোকে একত্রিত করে। ফলে এটি ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের এবং যারা ক্ষমতায় আসতে চান তাদের জনগণের চাওয়া সম্পর্কে একটি বিস্তৃত চিত্র তুলে ধরে।

ফলে জরিপকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় একটি চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হিসেবে অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ পায়। তাই জরিপগুলো কাঙ্ক্ষিত ফল দিক বা না দিক, এর ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।