জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের জন্য নির্বাচকরা যে দল ঘোষণা করেছেন, এটিই খুব সম্ভবত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপের দল। এই ধারণা এ কারণেই প্রথম তিন ম্যাচের জন্য যে দল ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই দল থেকে তিনটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। যে তিন পরিবর্তনে দলে আবার ফিরেছেন সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান ও সৌম্য সরকার। এই তিনজনকে জায়গা দিতে বাদ পড়েছেন কোনো ম্যাচ না খেলেই পারভেজ হোসেন ইমন ও আফিফ হোসেন। আর শরিফুল ইসলামকে রাখা হয়েছে বিশ্রামে। বিশ্বকাপের দলে শুধুমাত্র শরিফুলই ডুকবেন। ঘোষিত দল থেকে তখন বাদ পড়বেন একজন। সে ক্ষেত্রে সম্ভাবনা বেশি তানজিম হাসান সাকিব।
দলে যে তিনজন ফিরেছেন সেখানে কোনো চমক নেই। কারণ সাকিব-সৌম্য-মোস্তাফিজের ফেরাটা ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু পারভেজ ইমন ও আফিফ হোসেনের বাদ পড়াটা ছিল অবাক করার মতোই। দুজনে কোনো ম্যাচ না খেলেই বাদ পড়েছেন। আফিফ জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই আসা-যাওয়ার মাঝে আছেন, কিন্তু পারভেজ ইমনের কপাল মন্দই বলা যায়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জাতীয় দলে অভিষেকের পর আর কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। সেই যে এক ম্যাচ খেলে বাদ পড়েছিলেন, পরে আর সুযোগই পাননি। এবার সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই আবার জাতীয় দলে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের চাকা ঘুরেনি। তিনটি ম্যাচের একটিতেও খেলার সুযোগ হয়নি এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে তিনটি সেঞ্চুরি করা এই ব্যাটারের। সৌম্য সরকারকে জায়গা দিতেই তাতে বাদ পড়তে হয়েছে। পারভেজ ইমনের বাদ পড়া নিয়ে নির্বাচক কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘সৌম্য সরকার যেহেতু ইনজুরিতে ছিল। খেলার জন্য এখন ফিট হয়েছে। আমরা চাই যে ওকে ম্যাচ সিচুয়েশনে দেখতে। যে কারণ পরিবর্তনটা করা হয়েছে। পারভেজ ইমন কোনো ম্যাচ পায়নি। কিন্তু সে আমাদের সিস্টেমের মধ্যেই আছে।’ এদিক দিয়ে ভাগ্যবান লিটন দাস। শুধু যে তার বাজে সময় যাচ্ছে, তা কিন্তু নয়; খুবই বাজে ও দৃষ্টিকটু শট খেলেও আউট হচ্ছেন। তার জন্য বিশ্রামে থাকাটা হয়ে উঠেছিল জরুরি। কিন্তু তারপরও তিনি টিকে গেছেন। একটি সূত্রে জানা গেছে, দলে দ্বিতীয় জাকের আলী ছাড়া দ্বিতীয় উইকেটকিপার না থাকাতে লিটন দাসকে বিশেষ বিবেচনায় দলে রাখা হয়েছে। তিনি দলে থাকলেও শেষ দুই ম্যাচ খেলা তার অনিশ্চিত।
এদিকে আফিফকে বাদ পড়তে হয়েছে সাকিব দলে ফেরাতে। সাকিব যে শেষ দুই ম্যাচে দলে ফিরবেন তা অনুমিতই ছিল। কিন্তু আফিফ যে এভাবে না খেলেই বাদ পড়বেন, তা ছিল অবাক করার মতো। আফিফের বাদ পড়া নিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আরেকটা পরিবর্তন হচ্ছে আফিফের ক্ষেত্রে। সাকিবতো ছুটিতে ছিল। ছুটিতে থেকে আসার পর সে প্রিমিয়ার লিগ খেলেছে। আমাদের চিন্তাতেই ছিল বিশ্বকাপের যাওয়ার আগে কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে। তাই শেষ দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের জন্য ওকে আমরা আগে থেকেই চিন্তা করে রেখেছি। আফিফের রিপ্লেসমেন্ট হয়েছে সাকিব।’
সাকিবের মতো মোস্তাফিজও যে শেষ দুই ম্যাচে দলে ফিরবেন তা সবারই জানা ছিল। হয়েছেও তাই। ১ মে আইপিএলের শেষ ম্যাচ খেলে পরের দিন দেশে ফিরে আসেন মোস্তাফিজ। তিনি দেশে ফিরে আসার পর নির্বাচকরা তার সঙ্গে কথা বলেন তার বিশ্রামের ব্যাপারে। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে শুরুতে খেলে বিশ্রামে যাবেন, না কি বিশ্রাম নিয়ে এসে পরে খেলবেন। মোস্তাফিজ নির্বাচকদের জানিয়েছিলেন বিশ্রাম নিয়ে এসে খেলে পরে চলে যাবেন বিশ্বকাপে। সেই অনুযায়ী নির্বাচকরা মোস্তাফিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। মোস্তাফিজ বিশ্রাম নিয়ে ফিরেছেন আর শরিফুলকে পাঠানো হয়েছে বিশ্রামে। এই দুজনের বিষয়ে রাজ্জাক বলেন, ‘শরিফুল ও মোস্তাফিজের ক্ষেত্রে পরিবর্তনটা হচ্ছে, শরিফুল অনেকদিন থেকে ক্রিকেটের মধ্যে রয়েছে, ম্যাচ খেলছে। প্রিমিয়ার লিগ খেলেছে। ওকে একটা ব্রেক দেওয়া হয়েছে, যাতে করে পরিবারকে সময় দিতে পারে। ও একটু রেস্ট পায়। শরীরটাকে রিচার্জ করে ফিরতে পরে। মোস্তাফিজের ব্যাপারটাও একই রকম। ভারত থেকে আসার পর সে অনেকদিন পরিবার থেকে বাইরে আছে। ওর সঙ্গে আমরা কথা বলেই সব করেছি। আমরা চেয়েছি ওকে ছোট্ট একটা রেস্ট দিতে। ওর সঙ্গে আমরা কথা বলেছিলাম আগে রেস্ট নিতে, না পরে রেস্ট নিতে। সে জানাল আগে রেস্ট নিয়ে পরে একবারে খেলে চলে যাবে।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত প্রথম তিন ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে। শেষ দুই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ঢাকায় ১০ ও ১২ মে। ১০ মে খেলা শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। শেষ ম্যাচ শুরু হবে সকাল ১০টায়।
বাংলাদেশ দল: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, তানজিদ হাসান তামিম, সাকিব আল হাসান, তাওহিদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ, জাকের আলী, শেখ মাহেদি হাসান, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, তানজিম হাসান সাকিব, সৌম্য সরকার, তানভির ইসলাম ও মোহাম্মদ মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।