ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ০৩ জুন ২০২৪

মায়ায় জড়ায় না : জাকির হোসেন কামাল

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৩০ এএম
মায়ায় জড়ায় না : জাকির হোসেন কামাল
ছবি : .নুরুজ্জামান সাহেব

মায়ায় জড়ায় না
জাকির হোসেন কামাল 

পাশাপাশি দুই পরিবার দীর্ঘ দিনের বাস,
এক পরিবার ক্রমেই করে আর পরিবার গ্রাস।

এসব দেখে খুব ব্যাথিত ক্ষুব্ধ আমার মন,
শান্তি কোথায়? তাই ভেবেছি ঘুরে আসি বন।

সেদিন গেলাম বনের ভেতর হাজার পাখির ভীড়,
জড়িয়ে আছে ছড়িয়ে আছে শান্তি সুনিবিড়। 

একেকটা গাছ একেক রকম তবুও কেমন মিল,
নরম আলো পাতায় পাতায় আহা কি ঝিলমিল! 

মায়ার পাহাড় ছায়ায় ঢাকা মৌণ ঋষি এক,
পায়ের তলায় জলের ধারা, তোমরা বলো লেক।

লেকের ভেতর কেকের মতো কোমল কমল ঢেউ,
হয়তো এমন আমার মতো আর দোখেনি কেউ। 

কেউ না দেখুক কেউ না লেখুক কেউ না বলুক আহ্,
বলবো আমি বলেই যাবো বেশ মনোরম বাহ্।

বনের পাশে শনের ক্ষেতে শালিক পাখির ছা,
পুচ্ছ তুলে খুঁজছে খাবার রা তো করে না।

গুটগুটিয়া জিয়লবাদি কুরুচ এবং কম,
মিলেমিশে আছে ওরা দৃশ্য মনোরম। 

স্বর্ণলতা অনেক কথা বলতে থাকে বেশ,
সবাই নাকি সবার আপন মধুর পরিবেশ। 

বয়রা এবং হরিতকি কেউ খোঁজে না জাত,
এসব দেখে থমকে দাঁড়ায় চন্দ্রাবতী রাত।

মায়াবতী রাত্রি এলে বৃক্ষ কথা কয়,
জোৎস্নালোকে ঝর্না মেয়ে ভীষণ প্রাণময়।

পাহাড় ও বন ভীষণ আপন আত্মা হরিহর,
জড়িয়ে মায়ায় থাকবে ওরা আসুক যতই ঝড়।

এত্তো কিছু দেখে শুনে ভাবছি আমি যা-
মানুষগুলো এমন কেন মায়ায় জড়ায় না।


জাহ্নবী

আমেরিকার রাস্তাঘাটে আছে চলার ভাও?

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ০১:৫০ পিএম
আমেরিকার রাস্তাঘাটে আছে চলার ভাও?

আমেরিকার নাম শুনলেই কারেন্ট যে কই পাও!
আমেরিকার রাস্তাঘাটে আছে চলার ভাও? 
যাওয়ার দিকে আসার দিকে সাতটা করে লেন!
ধান্ধাটা কী? এইটার ওপর নামাইব নি প্লেন!
এক দৌড়ে ওপার যামু! চিন্তা করন যায়!
গাড়ির তলায় পড়তে বুঝি পাঠাইছে বাপ-মায়!
হাত তুললেই থামব গাড়ি, রাস্তা হমু পার
বাংলাদেশের মতন নিয়ম করবে কবে আর!

আমেরিকার সুনাম কইয়া মুখে ফুটাও খই!
রাস্তাঘাটে ছাত্তি মাথায় ট্রাফিক পুলিশ কই?
কী বুইঝ্যা যে আমেরিকায় আসার করো প্ল্যান!
রিকশা আছে? টেম্পো আছে? এইগুলা নাই ক্যান!
এরা কি আর বুঝতে পারে আমজনতার নিড!
এক্সেলেটর চাইপ্যা ধইরা বাড়ায় শুধু স্পিড!
উল্টা দিকে বইসা গাড়ি চালাইতেছে দেশ!
তোমরা থাকো কারেন্ট লইয়া, আমার কারেন্ট শেষ!

০৫/০৭/২০২৩
হিউস্টন, টেক্সাস

জাহ্নবী

সাইকেল পর্যটক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ০১:৪৮ পিএম
সাইকেল পর্যটক
হেইঞ্জ স্টাক

সাইকেলে করে কি বিশ্ব ঘুরে দেখা সম্ভব? অবশ্যই সম্ভব। আর এই অসম্ভবকে অনেক দেশের অনেক মানুষই সম্ভব করেছেন। সাইকেলে পৃথিবী ঘুরে বেড়ানো তিন পর্যটকের গল্প শোনাচ্ছেন আহমেদ রিয়াজ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সোমেন দেবনাথ। তিনি সাইকেলে করেই চষে বেড়িয়েছেন পৃথিবীর দুই লাখ কিলোমিটার পথ। এই সুদীর্ঘ পথে প্রায় দুই কোটি মানুষের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে।

সোমেনের বাড়ি ভারতের সুন্দরবনের বাসন্তি গ্রামে। এইচআইভি ভাইরাস সম্পর্কে বিশ্বের মানুষকে সতর্ক করার জন্য সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। দিনটা ছিল ২০০৪ সালের ২৭ মে। এর মাত্র দুই দিন আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ওদিকে সর্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ফাইন আর্টসের ওপর একটা কোর্সও শেষ করেছেন।

পুষ্কর শাহ

শুরুতে ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলো, এরপর এশিয়া হয়ে ইউরোপে যান সোমেন। এশিয়ার পর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য তারপর উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং অ্যান্টার্কটিকা ঘুরে অস্ট্রেলিয়া ও আসিয়ান দেশ ভ্রমণ শেষ করেন। এর মধ্যে তালেবানদের হাতে বন্দি হয়ে ১৫ দিন আটকও ছিলেন।
ঠিক ২২ বছর বয়সে ১৯৬২ সালে সাইকেলে চড়ে বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়ে যান জার্মানির হেইঞ্জ স্টাক। পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশ দেখার ইচ্ছে ছিল তার। সে কারণে ১৯৬২ সাল থেকে তিনি সাইকেলে করে ছুটেছেন দেশ থেকে দেশে। এর মধ্যে ১৯৬টা দেশ দেখেছেন। আর সাইকেল চালিয়েছেন ৬ লাখ নয় হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। যে কারণে গিনিস বুক অব রেকর্ডেসে সবচেয়ে বেশি সাইকেল ভ্রমণকারী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। আর এই সুদীর্ঘ পথে নানান বিপদেও পড়তে হয়েছিল তাকে। চিলির আতাকামা মরুভূমিতে ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে পড়েছিলেন। হাইতিতে বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে তাড়া করেছিল। মিসরে সৈন্যরা তাকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে দিয়েছিল। ক্যামেরুণে গুপ্তচরবৃত্তির কারণে সেনাবাহিনী তাকে আটক করেছিল। মোজাম্বিকে একটি নদীতে গোসল করার সময় মৌমাছিরা আক্রমণ করেছিল। ১৯৯৭ সালে সাইবেরিয়ায় তার সাইকেলটি পঞ্চমবারের মতো চুরি হয়। যদিও সেগুলো পরে উদ্ধারও হয়েছিল।

সোমেন দেবনাথ

একটি সাইকেল, ৬০ কেজি ওজনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আর মায়ের কাছ থেকে পাওয়া ১০০ নেপালি রুপি নিয়ে যাত্রা শুরু করেন পুষ্কর শাহ। সময়টা ছিল ১৯৯৮ সালের নভেম্বর। শাহ দোলাখা জেলার ছোট্ট গ্রাম মাকাইবাড়ি থেকে পৃথিবী ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। তিনি নেপাল থেকে শান্তির বার্তা নিয়ে দেশে দেশে ঘুরতে শুরু করেন। আর যে দেশেই যেতেন, সে দেশের জাতীয় পতাকা সংগ্রহ করতেন।

ঘুরতে ঘুরতে নিউজিল্যান্ড গিয়ে স্যার এডমন্ড হিলারির সঙ্গে দেখা করেন পুষ্কর। এই সময় তার সাইকেলটি চুরি হয়ে যায়। বিষয়টা জেনে এডমন্ড হিলারি দুঃখ প্রকাশ করেন এবং একটি নতুন সাইকেল কিনে দেন তাকে। ওদিকে বারবাডোসে গিয়ে আরেক দুর্ঘটনায় পড়েন। ঘুমন্ত পুষ্করের ওপর ছুরি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক ডাকাত। আর মেক্সিকোতে গিয়ে আরও বড় দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন। তাকে অপহরণ করে ১৮০ কিলোমিটার দূরে জঙ্গলের গভীরে তাকে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। কিন্তু সহজে হার মানেননি পুষ্কর। অপহরণকারীদেরই আক্রমণ করে বসেন এবং সুযোগ বুঝে পালিয়ে আসেন।

যাই হোক, ১৫০টি দেশ ঘুরে ২০১০ সালে নেপাল ফিরে আসেন। ওই বছরের ৭ এপ্রিল তিনি ১৫০টি দেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে মাউন্ট এভারেস্টে উঠতে শুরু করেন। ২০১০ সালের ১৭ মে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন পুষ্কর।

জাহ্নবী

এভারেস্ট জয়ের চেয়েও কঠিন তহবিল জোগাড়: বাবর আলী

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৪, ০৩:৩২ পিএম
এভারেস্ট জয়ের চেয়েও কঠিন তহবিল জোগাড়: বাবর আলী
ছবি : খবরের কাগজ

এভারেস্ট ও লুৎসে পর্বত জয়ী বাবর আলী বলেছেন, এভারেস্ট জয় করার চেয়ে কঠিন হলো এর জন্য তহবিল জোগাড় করা। পৃষ্ঠপোষক পাওয়া। 

বুধবার (২৯ মে) চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকায় আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

বাবর আলী বলেন, আগে নিজের সঞ্চয়ের অর্থ দিয়ে পর্বতারোহনের নেশা পূরণ করতাম। এভারেস্টে যাওয়া আমাদের মতো মানুষের জন্য অনেক ব্যয়বহুল। নিজের সঞ্চয়ে থাকা অর্থের পাশাপাশি আমি এবার স্পন্সরের কাছে গেছি। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাংলাদেশের অনেক তরুণ এভারেস্ট জয় করতে পারবে বলে আমি মনেকরি। 

তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশ থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম ১ এপ্রিল। এটা ছিল দুমাসের অভিযান। এক অভিযানে দুইটা পর্বত জয় করা অনেক কঠিন আর চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি সুস্থভাবে ফিরে আসতে পেরেছি, এতেই খুশি।

পর্বত জয়ের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বাবর আলী বলেন, এবার অভিযানে প্রথম থেকেই অনেক বাধা ছিল। আমি ১ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে ১০ এপ্রিল বেস ক্যাম্পে পৌঁছাই। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে এবার সবচেয়ে কম তুষারপাত হয়েছে। কুমু আইসফলের (বরফের প্রপাত) রাস্তা তখনো ওপেন হয়নি। এ সড়কটি অ্যালুমিনিয়ামের সিঁড়ি দিয়ে পার হতে হয়। প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটে। নেপালি একজনকে হেলিকপ্টারে উদ্ধার করতে হয়েছিল। এবার ব্লু আইস বেড়ে যায়। ফলে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি।

বিশ্বের সবচেয়ে উচু পর্বত এভারেস্টের চূড়ায় এক ঘণ্টা ১০ মিনিট ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, এভারেস্টের উচ্চতা বেশি হলেও লোৎসে আরোহন তুলনামূলক কঠিন। লোৎসে আরোহন আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এভারেস্ট ও লোৎসের চূড়া থেকে দেখা নিচের পৃথিবীর দৃশ্য এ জীবদ্দশায় ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে কাজটা কঠিন ছিল, আমার চার কেজি ওজন কমেছে। তবে পর্বতে উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তার উপর আবহাওয়া বিবেচনা করতে হয়। আমি এটা অনুসরণ করতাম। বাংলাদেশের একজন আবহাওয়াবিদ আমাকে দারুণ সহযোগিতা করেছেন।

এ সময় অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান, ভার্টিকাল ড্রিমস ক্লাবের সদস্য ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। 

এর আগে মঙ্গলবার (২৮ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন বাবর আলী। এরপর রাত ৯টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রামে ফেরেন।

বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সেরে রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স টিমের সদস্যরা। 

গত ১৯ মে বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে বিশ্বের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন বাবর আলী। হিমালয়ের শীতিধার চূড়াটি পর্বতের ১৫ হাজার ৫০০ ফুট ওপরে। 

এরপর ২১ মে নেপালের স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে লোৎসে পর্বত শিখর স্পর্শ করেন ৩৩ বছর বয়সী এই যুবক। পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বত ২৭ হাজার ৯৪০ ফুট উচ্চতার মাউন্ট লোৎসের শীর্ষে লাল-সবুজের অলংকার এঁকে করলেন নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে ১১ বছর পর এমন সফলতা বয়ে আনেন তিনি। 

নেপালের স্নোয়ি হরাইজন নামক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই সামিটে বাবরের সঙ্গে ছিলেন তার দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং পর্বতারোহণ গাইড বীর বাহাদুর তামাং।

তারেক মাহমুদ/অমিয়/

বাংলাদেশে নজরুল পর্যটন

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৪, ১২:৩৩ পিএম
বাংলাদেশে নজরুল পর্যটন
মানিকগঞ্জের তেওতা জমিদারবাড়ি। এ প্রাসাদে নজরুল প্রমীলা দেবীর প্রেমে পড়েছিলেন

বাংলাদেশের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামের সম্পর্ক ছিল গভীর। জীবদ্দশায় বর্তমান বাংলাদেশের ২৬টি জেলায় গিয়েছিলেন নজরুল। এবং সেখানে রেখে এসেছেন কিছু না কিছু স্মৃতি। সেসব স্মৃতির সবকিছুই এখন আর নেই।

ঢাকা
১৯৪০ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিওর অনুষ্ঠানে ঢাকায় এসেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তৎকালীন বর্ধমান হাউসে থাকার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে রয়েছে কবির নানা স্মৃতি। ঢাকায় থাকাকালে কবির নিবাস ছিল বর্ধমান হাউসের দোতলার কক্ষটি। বরাবর সেখানেই থাকতেন তিনি। বর্তমানে বাংলা একাডেমির ‘নজরুল কক্ষ’ নামে পরিচিত সেই ঘর। তবে নিচতলায় লেখক ও সাহিত্য জাদুঘরে রয়েছে নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত নানা সংগ্রহ। কাজী নজরুল ইসলামের কিশোর বয়সের ছবি, ধ্রুব চলচ্চিত্রে তার অভিনেতা হিসেবে ছবি। চুরুলিয়া গ্রামের জন্মস্থানের সেই কুটির। নজরুল সম্পাদিত অগ্নিবীণা, লাঙল, বাঁধনহারা পত্রিকার প্রচ্ছদ। ধূমকেতুতে প্রকাশিত রবিঠাকুরের শুভেচ্ছা বাণী। নিষিদ্ধ বইগুলোর নিষেধাজ্ঞা অপসারণের জন্য বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হককে লেখা চিঠি। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রয়েছে নজরুল মঞ্চ। ২০০৩ সালে ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান নির্মিত নজরুলের আবক্ষ মূর্তিটিকে ঘিরে নির্মাণ করা হয়েছে এই মঞ্চটি। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন স্থানে রয়েছে কবির সমাধি। 

কাজীর শিমলা, ত্রিশাল
কাজী রফিজ উল্লাহ্ দারোগা ১৯১৪ সালে আসানসোলের রুটির দোকান থেকে কিশোর কবি নজরুলকে ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাজীর শিমলায় নিজ গ্রামে নিয়ে আসেন। নজরুলকে ভর্তি করিয়ে দেন ত্রিশাল উপজেলা সদরের দরিরামপুর স্কুলে (বর্তমান নজরুল একাডেমি) সপ্তম শ্রেণিতে। কবি নজরুলের সেই বাল্যস্মৃতিকে ধরে রাখতে এই গ্রামেরই বটতলা নামক স্থানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। 

কাজীর শিমলা দারোগাবাড়ি
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল কাজীর শিমলা মোড় থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার পশ্চিমে দারোগাবাড়ি। এখানে রয়েছে দুই তলাবিশিষ্ট নজরুল পাঠাগার ভবন।

দৌলতপুর 


জাতীয় কবি কাজী নজরুল ও তার স্ত্রী নার্গিসের স্মৃতিবিজড়িত স্থান কবিতীর্থ দৌলতপুর। ১৯২১ সালে (বাংলা ২৩ চৈত্র ১৩২৭) নজরুল ইসলাম কুমিল্লা হয়ে মুরাদনগরের দৌলতপুরে আসেন এবং ৭১ দিন অবস্থান করেন। নজরুল দৌলতপুরে বসেই ১৬০টি গান এবং ১২০টি কবিতা রচনা করেন। উল্লেখযোগ্য কবিতাগুলোর মধ্যে- ‘বেদনা-অভিমান’, ‘অবেলা’, ‘অনাদৃতা’, ‘পথিক প্রিয়া’, ‘বিদায় বেলা’ প্রভৃতি।

বিচুতিয়া ব্যাপারীবাড়ি নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র


ত্রিশালের কাজীর শিমলা থেকে দরিরামপুর স্কুলের (ত্রিশাল সরকারি নজরুল একাডেমি) দূরত্ব ছিল বেশ। রোজ সেই স্কুলে আসা-যাওয়া করা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্য কঠিন ছিল। তাই স্কুলের কাছাকাছি একাধিক বাড়িতে জায়গির থাকতে হয়েছিল তাকে। সেখানে বিচুতিয়া ব্যাপারী নামের এক ব্যক্তির বাসায় জায়গির থাকতেন কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। ১৯১৪ সালের শেষে ত্রিশাল ছেড়ে বর্ধমান চলে যান কবি। 

কার্পাসডাঙ্গা 


চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের ভৈরব নদীর তীরে কবির স্মৃতিঘেরা কার্পাসডাঙ্গা। ১৯২৬ সালে বিপ্লবী হেমন্ত কুমার ও মহিম সরকারের আমন্ত্রণে কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থেকে সপরিবারে এই কার্পাসডাঙ্গায় আসেন এবং টানা দুই মাস অবস্থান করেন।

জাহ্নবী

পর্যটন সম্ভাবনাময় সুসং দুর্গাপুর

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ১১:৫৭ এএম
পর্যটন সম্ভাবনাময় সুসং দুর্গাপুর

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। যেখানে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদনদী, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্রসৈকত, প্রাচীন ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো যুগ যুগ ধরে আলোচিত। ফলে ভ্রমণপিপাসু মানুষকে বারবার আকৃষ্ট করে বাংলাদেশ। কেউ কেউ আবার বাংলার সৌন্দর্যে পুলকিত ও মুগ্ধ হন এবং রূপসী বলে আখ্যায়িত করেন। বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্যে প্রতিনিয়ত মুগ্ধ হচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। ফলে দেশে এ শিল্পের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। দেশের কোনো কোনো জায়গা শুধুই দর্শনীয় স্থান নয়, যেন পৃথিবীর বুকে একখণ্ড স্বর্গ। সেসব স্থানের একটি হলো ‘সুসং দুর্গাপুর’।

মেঘালয়ের কোলঘেঁষে ময়মনসিংহ বিভাগের উত্তরে নেত্রকোনায় অবস্থিত এক টুকরো স্বর্গ  ‘সুসং দুর্গাপুর’। শান্ত, স্নিগ্ধ ও চারপাশে সবুজে আবৃত মনোরম পরিবেশ। তাছাড়া রয়েছে সুউচ্চ পাহাড়, হ্রদ, টিলা, বিভিন্ন সংস্কৃতির ছোঁয়া ও নদনদীর সমাহার। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য অন্যতম আদর্শ স্থান।

দুর্গাপুরের বুনো হাতি

 চারদিকে সবুজ গাছগাছালি আর তারই মাঝে একটি  ‘সাদা মাটির পাহাড়’। একটি দুটি নয়, শতাধিক সাদামাটির টিলা আছে সেখানে। চীনামাটিকে সাদামাটি বলে আখ্যায়িত করলেও চীনামাটি পুরোপুরি সাদা নয়। বরং কোথাও লালচে, ধূসর, হালকা নীলাভ, গোলাপি, ঈষৎ বেগুনি, হলুদ কিংবা টিয়া রঙেরও। বিচিত্র রঙের মাটির সংমিশ্রণ দেখা যায় পাহাড়গুলোয়। এর নিচেই রয়েছে আবার স্বচ্ছ নীল পানির হ্রদ। আর বিস্তৃত মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। পাহাড় কেটে মাটি উত্তোলন করার ফলে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সেসব গর্তে বা ঢালুতে বৃষ্টির পানি জমে তৈরি হয়েছে এ স্বচ্ছ নীল পানির হ্রদ। চীনামাটির পাহাড়ের কাছেই রয়েছে কমলার বাগান, বিজিবি ক্যাম্প ও নয়নাভিরাম আরও দর্শনীয় স্থান। বর্তমানে চীনামাটি উত্তোলন বন্ধ থাকায় এটি পরিণত হয়েছে দেশের অন্যতম একটি টুরিস্ট স্পটে। বিজয়পুর চীনামাটির পাহাড়ের রয়েছে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অতুলনীয় গুরুত্ব। এটি টারশিয়ারি যুগের পাহাড়ের অন্তর্ভুক্ত। এখানকার মাটি মিহি, কোমাল- ট্যালকম পাউডারের মতো, যা সিরামিক শিল্পের প্রধান কাঁচামাল। বাংলাদেশের খনিজ সম্পদের অন্যতম খনিজ অঞ্চল বিজয়পুর। পুরো এলাকা ঘিরে ছোট-বড়ো টিলা বা পাহাড় ও সমতল ভূমি মিলিয়ে দৈর্ঘ্যে ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার ও প্রস্থে ৬০০ মিটার খনিজ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এ পর্যন্ত ৫ লাখ মেট্রিক টন মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। মজুদ আছে ১৩.৭৭ লাখ মেট্রিক টন। উল্লেখ্য, এই প্রাকৃতিক সম্পদটিকে জিআই স্বীকৃতি দিতে নিবন্ধনের আবেদন করেছিল নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনের কার্যালয়। ২০২১ সালে এসে স্বীকৃতি পায়।

দুর্গাপুর জমিদার বাড়ি

সুসং দুর্গাপুরের আরেকটি আকর্ষণ হলো সোমেশ্বরী নদী। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের বিঞ্চুরীছড়া, বাঙাছড়া প্রভৃতি ঝরনাধারা ও পশ্চিম দিক থেকে রমফা নদীর স্রোতধারা একত্রিত হয়ে সোমেশ্বরীর সৃষ্টি। দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুর ও ভবানীপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে নদীটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এটি বাংলাদেশ ও  ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার, গড় প্রশস্ততা ১১৪ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। রানীখং পাহাড়ের পাশ দিয়ে দক্ষিণ দিকে শিবগঞ্জ বাজারের কাছে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় এটি। সোমেশ্বরী নদীতে ঘুরে বেড়ালেই চোখে পড়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেঁষে সবুজঘেরা ও লাল চীনা মাটির অসংখ্য পাহাড়। বছরের বেশির ভাগ সময় এর একপাশজুড়ে থাকে ধুধু বালুচর, অন্য পাশেই হালকা নীলাভ জল। নদীর একপাশে খরস্রোতা বয়ে চলার দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। শীত শুরু হলেই ভিন্ন রূপ ধারণ করে নদীটি। শুকনো মৌসুমে সোমেশ্বরী যৌবন হারিয়ে প্রায় মরা নদীতে রূপ নেয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি সোমেশ্বরী নদী কয়লা, নুড়ি-পাথর ও সিলিকা বালু বয়ে আনে। কয়লা, নুড়ি-পাথর ও সিলিকা বালুতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে হাজারো মানুষ। কেউ কেউ আর্থিক অবস্থারও উন্নতি করেছেন। দুর্গাপুরের বালু এখন দেশব্যাপী জনপ্রিয়। আর এ নদীতে রয়েছে মহাশোল মাছ। যা বাংলাদেশে এ মাছটির অন্যতম আবাসস্থল।

তাছাড়া বৈচিত্র্যময় জনবসতি, ঐতিহ্যবাহী পোশাকে ছুটে চলা আদিবাসী, ক্ষুদ্র ও নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর কিছু প্রতিষ্ঠান, সাধু জোসেফের ধর্মপল্লী, রানীখং মিশন, ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি, ফান্দা ভ্যালি, টঙ্ক শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ, কমরেড মণি সিংহের বাড়ি, মণি সিংহ জাদুঘর, সুসং মহারাজার সুদৃশ্য বাড়ি, রাশমণি স্মৃতিসৌধ, কমলা রানীর দিঘি, কংস নদ, আত্রাখালী নদী, চণ্ডীগড় গ্রামের মানবকল্যাণকামী অনাথালয়, কুল্লাগড়ার রামকৃষ্ণ মঠ, দুর্গাপুর সদরের দশভুজা মন্দির, বিজয়পুরের স্থলশুল্ক বন্দর, বিরিশিরি বধ্যভূমিসহ আরও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণপিপাসুদের দারুণ ভাবে আকৃষ্ট করে।

এত ঐতিহাসিক স্থান ও নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও পর্যটনশিল্পে কিছুটা পিছিয়ে সুসং দুর্গাপুর। নানা প্রতিকূলতার জন্য পর্যটনশিল্প বিকাশ লাভ করছে না, দেশব্যাপী আলোড়িত হচ্ছে না। যার মধ্যে অন্যতম হলো রাস্তার বেহাল দশা। বালু দুর্গাপুরের জন্য আশীর্বাদ হলেও পর্যটনশিল্পে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বালুবাহী ট্রাকের কবলে তৈরি হচ্ছে অসহনীয় জ্যাম। যোগাযোগ সমস্যা, নিরাপত্তার অভাব ও নানা ভোগান্তির কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা। ফলে প্রতিনিয়ত কমছে পর্যটকের সংখ্যা।

তবে নানান প্রতিকূলতার মাঝেও দুর্গাপুর নিয়ে স্বপ্ন দেখছে জনগণ, আশা করছে দুর্গাপুরেও স্থলবন্দর হবে এবং সবকিছু উপেক্ষা করে, পর্যটনশিল্পে দেশে আলোকিত নাম হবে। এজন্য সোমেশ্বরী নদীর বালু যথাযথ ব্যবহার, চীনা মাটির পাহাড়ে যেতে তেরী বাজার ও শিবগঞ্জের মাঝে ব্রিজ নির্মাণ, রাস্তার বেহাল দশা সমাধানে বিকল্প রাস্তা তৈরি কিংবা দুর্গাপুর পর্যন্ত ট্রেন লাইন আনার মতো যুগান্তকারী উন্নয়ন হলেই তবে পর্যটনশিল্পে এগিয়ে যাবে সুসং দুর্গাপুর।

জাহ্নবী