![অপরূপ সৌন্দর্য](uploads/2024/02/08/1707371485.b6.jpg)
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যকে আস্বাদন করতে চান প্রকৃতিপ্রেমীরা। তাইতো তারা একটু অবকাশ পেলেই ছুটে যেতে চান দিগদিগন্তে। মৌলভীবাজার জেলায় অবকাশের সেই সময়টুকু আনন্দময় করে তোলার জন্য রয়েছে দর্শনীয় অনেক স্থান।
সবুজ চা বাগানের গালিচা। আঁকাবাঁকা মেঠোপথ। বিশাল হাওরের বুকে জেগে ওঠা সূর্য। পাহাড় আর টিলার ভাঁজে ভাঁজে কুয়াশার হাতছানি। স্নিগ্ধ হিমেল হাওয়ায় নির্মল সবুজ মিলেমিশে একাকার। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেখা মিলবে মৌলভীবাজার জেলায়। এখানে ছোটবড় বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এখানে বসবাস করেন বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা। তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মণিপুরি সম্প্রদায় অধ্যুষিত শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা পর্যটন আকর্ষণে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় উদ্যান এবং চিরহরিৎ বনের একটি। এটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। দেশের ৭টি বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে লাউয়াছড়া অন্যতম। আয়তনে ছোট হলেও এ বন দুর্লভ উদ্ভিদ এবং প্রাণীর এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে এ বনে। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা যায়। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। উল্লুক ছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ এবং উদ্ভিদ। ১৯২৫ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকার এখানে বৃক্ষায়ন শুরু করলে সেটাই বেড়ে আজকের এই বনে পরিণত হয়। শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার মৌলভীবাজার ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীন ২ হাজার ৭৪০ হেক্টর আয়তনের সংরক্ষিত বনের এলাকাটি ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী ১৯৯৬ সালের ৭ জুলাই জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
হামহাম জলপ্রপাত
অত্যন্ত দুর্গম আর গভীর জঙ্গলে অবস্থিত হামহাম জলপ্রপাত পর্যন্ত পৌঁছানোর প্রতি পদে পদে যেমন রয়েছে বিপদের ভয়, তেমনি রয়েছে রোমাঞ্চের হাতছানি। সেই রোমাঞ্চের টানেই প্রকৃতিপ্রেমীদের আকর্ষণীয় স্থান হামহাম জলপ্রপাত। নির্জন পাহাড়ের ওপর থেকে আছড়ে পড়া স্রোতধারা শাঁ শাঁ শব্দে বয়ে যাচ্ছে সমতলে। সেই সৃষ্ট জলকণা তৈরি করছে কুয়াশার আবরণ। কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে ইসলামপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত রাজাকান্দি রেঞ্জের কুরমা বনবিটের প্রায় ৮ কিলোমিটার ভিতরে দৃষ্টিনন্দন এ জলপ্রপাতটি অবস্থিত। প্রায় ৩০ ফুট প্রশস্ত ও ১৩৩ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট এ জলপ্রপাতটি দিনদিন রোমাঞ্চকর অভিযাত্রীদের এক তীর্থভূমি হয়ে উঠেছে।
মাধবপুর লেক
সুনীল আকাশ, গাঢ় সবুজ পাহাড়, শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো মনোরম চা-বাগানের দৃশ্যে আপনি হারিয়ে যাবেন আপনমনে। চারদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত লেকটি সত্যি অপূর্ব। লেকের ঝলমল পানি, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, শাপলা-শালুকের উপস্থিতি আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে পরিবেশ। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ‘মাধবপুর লেক’ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি স্থান। ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) মাধবপুর চা বাগানের ১১ নম্বর সেকশনে অবস্থিত এই লেক।
বাইক্কা বিল
একাধারে পাখি, মাছ ও গাছগাছালির অভয়ারণ্য বাইক্কা বিল মূলত হাইল হাওরের অন্তর্ভুক্ত একটি অংশ। অগভীর এই হ্রদটিতে বিভিন্ন গাছপালার দেখা মেলে। সেই সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় জলাভূমিও। বিলের ঘেরাটোপে প্রবেশ করতেই পাখিদের মন মাতানো কলকাকলিতে মন ভরে উঠবে। যেহেতু বাইক্কা বিলে মাছ ধরা নিষেধ, বিলে থাকা মাছের ঝাঁক প্রতিবছরই পাখিদের আকর্ষণ করে। শীতকালে এখানে পরিযায়ী পাখিরা ভিড় করে। তাই প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য অন্যতম পছন্দের জায়গা এই বিল। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌর শহর থেকে মৌলভীবাজার আসার মাঝপথে বরুনা নামক এলাকায় এলে পশ্চিম দিকে বাইক্কা বিল যাওয়ার সড়ক।
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
পাহাড়ের ওপর সবুজ বৃক্ষরাজি ও তার বুক চিড়ে উঁচু-নিচু টিলার প্রবহমান স্বচ্ছ স্রোতস্বিনী জলধারা প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে প্রকৃতিপ্রেমীদের। নির্জন, শান্ত পাহাড়ের শরীর জুড়ে থাকা নাম না জানা লতাপাতা, গুল্ম, বন, বুনোফুল ও ফলের গাছ আগলে রাখা পরম মমতায় সৃষ্টির এক বিস্ময়। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য তেমনই এক সৌন্দর্যের আধার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। এ ছাড়াও মায়াকানন আর সন্ধানী নামের নতুন দুটি জলপ্রপাতের খোঁজ মিলেছে পাথারিয়া বনের গহিনে। জেলার জুড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী লাঠিটিলা বিটের কয়েক কিলোমিটার গহিন পথে হেঁটে গেলে এই দুই জলপ্রপাতের দেখা মিলবে। মৌলভীবাজার শহর থেকে বড়লেখাগামী গাড়ি করে বড়লেখা পৌঁছার আগে কাঁঠালতলী বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার পূর্বে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও পাথারিয়া বনভূমির অবস্থান।
জলের গ্রাম
‘বর্ষায় নাও হেমন্তে পাও’ অর্থাৎ অন্তেহরি গ্রামে বর্ষায় যাতায়াতের প্রধান ভরসা নৌকা। শীত মৌসুমে পায়ে হেঁটে চলতে হয় গ্রামের পথেঘাটে। বর্ষায় হাওরের বুকে থাকে থইথই জলের ওপর এক টুকরো সবুজের হাতছানি। নামে রূপে গ্রামখানি প্রশান্তির এক আদর্শ স্থান। শাপলা-শালুকসহ নাম না জানা বাহারি বর্ণের ফুল যেন জানান দেয়- স্বাগতম হে অতিথি। কাউয়াদিঘি হাওরের কোলঘেঁষা হিজল-করচ-তমালের বন এই গ্রামটিকে করেছে অপরূপ অনন্য। বর্ষায় শাপলা-শালুক মুগ্ধতা ছড়ায়। শীতে সবুজের রাজ্যে পাখিদের নিরাপদ শান্তির নীড়। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এই গ্রাম মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কাউয়াদিঘি হাওরের পশ্চিম প্রান্তে ফতেপুর ইউনিয়নে এর অবস্থান।
জাহ্নবী