![পর্যটকদের টানে হবিগঞ্জ](uploads/2024/02/08/1707373290.Lokkhi-Baur-,-Baniyachong.jpg)
শীত এলেই ব্যস্ত জীবনে একটু স্বস্তি পেতে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তে চান ভ্রমণপিপাসুরা। প্রকৃতির মধ্যে হারিয়ে যেতে ছুটে বেড়ান এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। পরিবার কিংবা বন্ধুদের নিয়ে দেশ বা দেশের বাইরের কোথায় যাওয়া যায়, তা নিয়ে মানুষের একটি দোটানা থাকে। যারা দেশের ভেতরে প্রকৃতির কাছাকাছি কোথাও যেতে চান তাদের জন্য হবিগঞ্জ হতে পারে একটি আদর্শ জেলা। প্রকৃতির সঙ্গে এখানে পাবেন ইতিহাস আর ঐতিহ্যের আবহ। যা আপনার সারা বছরের ক্লান্তিকে নিমিষেই দূর করে দিতে পারে। হবিগঞ্জ যেতে চাইলে কোন কোন স্থান সহজেই ঘুরতে পারেন তা খবরের কাগজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
জেলার চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলার ২৪৩ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। উদ্যানের ভেতরে সাতটি ছড়া বা ঝরনা ছিল, সেখান থেকেই সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের নামকরণ। সেই সাতটি ঝরনা না থাকলেও কিছু কিছু এখনো দেখা মেলে সেখানে। প্রায় ১৯৭ প্রজাতির প্রাণীর বসবাস এই উদ্যানে। এর মধ্যে পাখি রয়েছে ১৪৯ প্রজাতির, স্তন্যপায়ী রয়েছে ২৪ প্রজাতির, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৬ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে সেখানে। বিলুপ্তপ্রায় অনেক প্রাণী ও বিরল প্রজাতির গাছপালা দেখতে যেতে পারেন এই উদ্যানে। এখানে রয়েছে সুউচ্চ একটি ওয়াচ টাওয়ার। সেখানে দাঁড়িয়ে পুরো বনকে দেখা যায়।
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য
সুন্দরবনের পরেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক বন রেমা-কালেঙ্গা। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ভারত সীমান্ত ঘেঁষে প্রায় ১ হাজার ৭৯৫ হেক্টরের এলাকাটি একটি বনভূমি। বনকে অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ১৯৮২ সালে। ৬৩৮ প্রজাতির গাছ ও লতাগুল্ম রয়েছে এখানে। এর মধ্যে কয়েকটি বিরল প্রজাতির। এখানে পাহাড়গুলোর সর্বোচ্চ উচ্চতা প্রায় ৬৭ মিটার। রেমা-কালেঙ্গায় প্রায় ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, সাত প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১৬৭ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এই বনেও রয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার। রেমা-কালেঙ্গা বনের ভেতরেই রয়েছে ত্রিপুরা, সাঁওতাল, তেলুগু ও উড়ং আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। যাদের অতিথিপরায়ণতা যে কাউকে মুগ্ধ করবে।
তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ
হবিগঞ্জের মাধবপুর তেলিপাড়া চা বাগানে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ‘তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ’। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম বৈঠককে স্মরণ করে এই স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। বুলেট আকৃতির এ স্মৃতিসৌধের পাশে রয়েছে ডাক বাংলো ও লাল শাপলায় ভরে থাকা অপরূপ একটি লেক। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান বা তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ ঘুরতে এলে আপনি উঁচু-নিচু টিলার সঙ্গে সবুজ চা বাগানের মনোরম সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
কীভাবে যাবেন
উল্লিখিত তিনটি স্থান ঘুরতে হলে ঢাকা থেকে বাস অথবা ট্রেনযোগে যেতে পারবেন। বাসে গেলে ঢাকা সায়েদাবাদ অথবা মহাখালী থেকে হবিগঞ্জ অথবা সিলেটগামী যেকোনো বাসে করে মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর তেমুনিয়াতে নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে চা বাগান দেখতে দেখতে তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধে যাবেন। সিএনজি ভাড়া গুনতে হবে জনপ্রতি ৩০ টাকা। তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ থেকে সাতছড়ির দূরত্ব মাত্র ৩ কিলোমিটার। লোকাল যেকোনো পরিবহনের সাহায্যে যেতে পারেন মনোমুগ্ধকর চা বাগানের মাঝ দিয়ে এঁকেবেঁকে চলা রাস্তা দিয়ে চলে যাবেন সাতছড়ি উদ্যানে। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে চুনারুঘাট শহরে এবং এখান থেকে অটোরিকশা করেই রেমা-কালেঙ্গা যেতে পারবেন। তবে রেমা কালেঙ্গা যাওয়ার ভালো রাস্তা না থাকায় পরিবার নিয়ে না যাওয়াই ভালো। কারণ কিছু রাস্তা হেঁটেও যাওয়া লাগতে পারে।
কোথায় থাকবেন
এই তিনটি স্থান ঘোরা শেষ হলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জ (নতুন ব্রিজ) এলাকায় থাকার মতো মাঝারি মানের অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। ২৫০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে পাবেন একেকটি রুম।
দেশের বৃহৎ জলাবন ‘লক্ষ্মীবাউর’
জেলার বানিয়াচং উপজেলায় অবস্থিত লক্ষ্মীবাউর সোয়াম্প ফরেস্ট (জলাবন)। খড়তি নদীর দক্ষিণে ঘেঁষে এই জঙ্গলের অবস্থান হওয়ায় স্থানীয়রা এটিকে ‘খড়তির জঙ্গল’ নামে ডাকেন। হিজল, করচ, বরুণ, কাকুরা, বউল্লা, খাগড়া, চাউল্লা, নলসহ অসংখ্য গাছ ও গুল্মে পরিপূর্ণ এই জলাবন।
দুই মৌসুমে জলাবনের রূপ দুই রকম। বর্ষাকালে হাওরের মাঝখানে এই জঙ্গলকে দেখলে মনে হবে যেন পানিতে ভাসমান একটি জঙ্গল। শুকনো সবুজ ধানখেতের মাঝখানে এই জঙ্গল তার আপন রূপ ধারণ করে রাখে। বনের ভেতর দিয়ে একটি আরসিসি ঢালাই সড়ক রয়েছে। শুকনো মৌসুমে এই সড়কটি সাইক্লিস্টদের অন্যতম আকর্ষণ।
বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী জীবজন্তু যেমন- মেছোবাঘ, শিয়াল, গুইসাপ, কেউটে, লাড্ডুকা, দারাইশসহ অনেক বিষধর সাপ। শীতে এখানে অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠে অতিথি পাখিরা। বক, পানকৌড়ি ও বালিহাঁসসহ বিভিন্ন ধরনের পাখির ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ানো যে কাউকে বিমোহিত করে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাসযোগে হবিগঞ্জ। পরে হবিগঞ্জ শহর থেকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে বানিয়াচং উপজেলায়। সেখান থেকে টমটম ইজিবাইক করে আপনি লক্ষ্মীবাউর চলে যেতে পারবেন। হবিগঞ্জ শহর থেকে গন্তব্যে পৌঁছাতে সবমিলিয়ে আপনার ভাড়া গুনতে হবে ৮০ থেকে ১০০ টাকার মতো। তবে ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর থেকে শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে নামবেন। পরে সিএনজি অটোরিকশা করে হবিগঞ্জ শহরে যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
বানিয়াচং উপজেলায় থাকার মতো ভালো হোটেল না থাকায় আপনাকে হবিগঞ্জ শহরে এসে থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনি ২৫০ থেকে ৭০০ টাকায় হোটেল পেয়ে যাবেন। বানিয়াচং ভ্রমণে এলে আপনি একসঙ্গে দেখতে পারবেন কমলাবতীর সাগরদিঘি, রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। সবশেষে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গ্রামও আপনার দেখা হয়ে যাবে।
দ্য প্যালেস রিসোর্ট
যারা বিলাসবহুল সময় কাটাতে চান তাদের জন্য রয়েছে সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধার বিলাসবহুল রিসোর্ট ‘দ্য প্যালেস’। জেলার বাহুবল উপজেলার পুটিজুড়ি এলাকায় টিলার চূড়ায় চূড়ায় গড়ে তোলা হয়েছে দ্য প্যালেস রিসোর্ট। এ রিসোর্টের ভাড়া ১২ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। অতিথিদের জন্য সকালের নাশতা, দুপুর ও রাতের খাবারে বিশেষ মেনু রয়েছে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাসযোগে বাহুবলের পুটিজুড়ি বাজারে। সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশা করে আপনি পৌঁছে যেতে পারবেন দ্য প্যালেস রিসোর্টে।