চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাংয়ের হামলা থেকে নিজের ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে নিহত চিকিৎসক কোরবান আলী হত্যায় জড়িত মূল আসামিরা ১৫ দিনেও গ্রেপ্তার না হওয়ায় মানববন্ধব করেছে পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আসামিরা গ্রেপ্তার তো হয়ইনি, উল্টো মামলার বাদী পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
কিশোর গ্যাং নির্মূল, টর্চার সেল চিহ্নিত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থ আকবর শাহ থানার ওসির অপসারণের দাবিও জানান তারা।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকালে ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকার আকবর শাহ থানার সামনে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, ক্লাব, সমিতি, অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত মানববন্ধনে এসব অভিযোগ করেন বক্তারা।
মানববন্ধনে প্রায় ২০টিরও বেশি সামাজিক সংগঠন, ক্লাব, সমিতির বিভিন্ন বয়সের অন্তত এক হাজার সদস্য অংশ নেন।
এতে সংহতি প্রকাশ করে উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, আকবর শাহ ও পাহাড়তলী থানা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
এ সময় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মূল আসামিদের গ্রেপ্তার, কিশোর গ্যাং নির্মূলসহ ৭ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা কিশোর গ্যাং লিডার গোলাম রসুল নিশান, তার সহযোগীদের এবং তাদের গডফাদার হিসেবে চসিকের সাময়িক বরখাস্ত কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের ছবি প্রদর্শন করে।
বক্তারা বলেন, আকবর শাহ এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। এই এলাকায় একের পর এক অপরাধীরা চিহ্নিত হচ্ছে। তাদের নিয়ে গণ্যমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে। অথচ প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য কোনো তৎপরতা নেই। কিশোর গ্যাং নামে সিন্ডিকেট করে ছোট ছোট স্কুলমুখী ছেলেদের জোর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে দলে ভেড়াতে বাধ্য করা হচ্ছে। এসব করছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা কিছু উঠতি কিশোর-তরুণ যুবক। আর তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন কিছু রাজনৈতিক প্রভাবশালী। যারা জায়গা দখল, পাহাড় কাটা, খাল ভরাট, সরকারি গাছ কাটা, সরকারি জায়গা দখল-বিক্রিসহ নানান অপরাধে এদের ব্যবহার করছে।
এসব গ্যাং প্রকাশ্যেই রাস্তাঘাটে-চলাচলের পথে মানুষের ওপর হামলা করছে। মারধর করছে, হত্যা করছে। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে বারংবার এসব বন্ধের নির্দেশনা এলেও কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না কিছু রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের কারণে। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সহায়তা চাওয়া কিংবা তথ্যদাতাদের তথ্য কিভাবে অপরাধীদের কাছে চলে যায় সে বিষয়েও প্রশ্ন রাখেন বক্তারা।
৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এরশাদ মামুন বলেন, ‘আমরা ওসি গোলাম রব্বানীর অপসারণ দাবি করেছি। তিনি এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। গত এক সপ্তাহে ১৫টি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। ওনার থানার আসামি গ্রেপ্তার করছে অন্য থানা। তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ। তিনি একজন তদবিরবাজ ওসি। তদবির না করলে তিনি কোনো মামলা নেন না। আমাদের মামলাও তিনি ভূমিদস্যুদের তদবিরের জন্য নিতে রাজি হননি। ওনাকে এমপি, মন্ত্রী, মেয়র দিয়ে ফোন করাতে হয়। না হয় ওনি কোনো কাজই করেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এলাকায় আরও টর্চার সেল আছে। আরও কিশোর গ্যাং আছে। সেগুলো ওসি চিহ্নিত করতে পারছে না। উল্টো মামলার বাদীরা আতঙ্কে দিন পার করছে। মূল আসামিদেরই গ্রেপ্তার করতে পারছেন না তিনি।’
নিহত চিকিৎসক কোরবান আলীর ছেলে আলী রেজা খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে। তারা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তারা পেছনের সারির আসামি। তাদেরও জবানবন্দি নেওয়া হয়নি। একমাত্র আকবর শাহ থানায় দেখলাম একজন চিকিৎসক কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আর প্রকৃত আসামিদের করা মামলা ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে নিলো ওসি।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে আকবরশাহ থানার ওসি গোলাম রব্বানীকে কল করা হলে খবরের কাগজের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত আল মামুন।
তিনি খবরে কাগজকে বলেন, ‘ওসি সাহেব ছুটিতে আছেন। আমরা ডা. কোরবান আলী হত্যা মামলার সব আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে কেন ওসির অপসারণ দাবি করা হয়েছে তা বলতে পারব না। আমাদের দৃষ্টিতে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো।’
গত ৫ এপ্রিল শুক্রবার বিকেলে আকবর শাহ থানা এলাকার পশ্চিম ফিরোজ শাহ হাউজিং এলাকায় একজনকে মারধর করার সময় ৯৯৯-এ কল করা হলে পুলিশ এসে একজনকে ধরে নিয়ে যায়। পরে সন্ধ্যায় কোরবান আলীর ছোট ছেলে আলী রেজা ইফতার কিনতে গেলে তাকে মারধর করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এই ঘটনা দেখে ছেলেকে বাঁচাতে গেলে হামলার শিকার হন কোরবান আলী। এরপর থেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে গত ৬ এপ্রিল আকবর শাহ থানায় কোরবান আলীর ছেলে আলী রেজা বাদী হয়ে মামলা করেন। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাফায়েত, সংগ্রাম ও সাগর নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মনির/ইসরাত চৈতী/অমিয়/