শৌচকর্ম সম্পাদনের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার আবু হুরায়রা (রা.)-কে কিছু পাথর নিয়ে আসতে বললেন। তবে হাড় বা গোবর আনতে নিষেধ করলেন। আবু হুরাইরা (রা.) কাপড়ে করে কিছু পাথর এনে সেগুলো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পাশে রেখে চলে গেলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) কাজ সেরে ফিরে আসার পর আবু হুরাইরা জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ, হাড় ও গোবরে সমস্যা কী?’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘সেগুলো জিনদের খাবার। নাসিবিন শহরে জিনদের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। তারা সবাই খুব ভালো জিন। আমার কাছে খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। আমি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দোয়া করি। তাই তারা যে হাড় বা গোবরের পাশ দিয়ে যাবে, তাতেই নিজেদের জন্য খাবার খুঁজে পাবে।” (বুখারি, হাদিস: ৩৮৬০)
এ জন্য কেউ যদি বিসমিল্লাহ বলে খাবার খায় এবং হাড় থেকে মাংস খাওয়ার পর নাপাক স্থানে না ফেলে, মুমিন জিনেরা সেই হাড় হাতে নিলে তাতে মাংস ফিরে আসবে। (তিরমিজি, হাদিস: ৩২৫৮)
দুষ্ট জিন ও শয়তানের খাবার
আর দুষ্ট জিন এবং শয়তানরা খায় এমন সব খাবার, যেখানে আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয় না। যেসব খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হয়, সেগুলো তারা ছুঁয়েও দেখে না। আর গোবরে জিনদের পশুদের জন্য খাবার জমা হয়। তার মানে জিনদের পোষা প্রাণী আছে এবং তারা তাতে আরোহণ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘গোবর বা হাড় নাপাকি পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করো না। কারণ এগুলো তোমাদের ভাই জিনদের খাবার।’ (জামিউত তিরমিজি, হাদিস: ১৮)
এতে ক্ষতির আশঙ্কাও থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) জিনদের খাবার দিয়ে শৌচ করতে নিষেধ করেছেন। আপনি যদি খাবার নষ্ট করে জিনের ক্ষতি করেন, সে পাল্টা আপনার ক্ষতি করতে পারে। জিনদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবার দিয়ে শৌচ করা মানে, খাবার নষ্ট করে তাদের ক্ষতিসাধন করা।
খাবার খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলা
উমাইয়া ইবনু মাখশা (রা.) বলেন, “নবিজির সামনে এক ব্যক্তি খাবার খাচ্ছিল। ‘বিসমিল্লাহ’ না বলেই সে খাবার প্রায় শেষ করছিল। মাত্র এক লোকমা পরিমাণ বাকি ছিল। সে ওই লোকমা খাওয়ার জন্য মুখে তুলে ধরে বলল, বাংলা উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহ।’ বাংলা অর্থ: আমি আল্লাহর নাম নিচ্ছি খাবারের শুরুতে ও শেষে। তার কথা শুনে নবিজি (সা.) হেসে বললেন, শুরু থেকেই শয়তান তার সাথে খাচ্ছিল কিন্তু যখনই সে ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহ’ বলল শয়তান বমি করে দিল।” (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৭৬৮)
ইসলাম পরিচ্ছন্নতার ধর্ম। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের পানাহার, হাত মেলানো, আদান-প্রদান ইত্যাদি কাজের জন্য ডান হাত ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। বাম হাত দিয়ে কিছু নেওয়া ঠিক নয়। কারণ শয়তান বাম হাতে গ্রহণ করে। দেওয়া-নেওয়ার কাজ করা উচিত ডান হাতে।
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক