
পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ আমদানি হলেও বাজারে তার প্রভাব পড়ছে না। বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ভোক্তারা। পেঁয়াজের দাম কমাতে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এবার বড় মাপের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের আয়কর নথি তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এ নথি তলব করা হয়। একই সঙ্গে গত ছয় মাসে কোন ব্যবসায়ী কী পরিমাণ কত দামে পেঁয়াজ আমদানি করেছেন তার তথ্য সংগ্রহ করছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
হিসাবে গরমিল পাওয়া গেলে মামলা করা হবে। প্রয়োজনে হিসাব জব্দের মতো কঠোর পদক্ষেপও নেওয়া হবে। প্রথম ধাপে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের ওপর নজরদারি করা হলেও দাম বেড়েছে এমন সব পণ্যের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে এনবিআর-সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মোহাম্মদ আবদুর রকিব খবরের কাগজকে বলেন, ‘পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা কমছেই না। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এক শ্রেণির সুযোগ-সন্ধানী ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফা করছেন। এরা সিন্ডিকেট করে এ কাজ করছেন। এতে সাধারণ আয়ের মানুষ কষ্টে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেয়ে আমরা পেঁয়াজ ব্যবসায় যারা সিন্ডিকেট করছেন বলে সন্দেহ করছি, তাদের কর নথি নিয়ে কাজ শুরু করেছি। তাদের কর ফাঁকি খোঁজা হচ্ছে। এনবিআরের অন্যান্য গোয়েন্দা শাখা থেকেও একইভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি এসব সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। বাজারে এর সুফল পড়বে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের আয়কর নথি তলব করা হয়েছে। সারা দেশের কর অঞ্চল থেকে এসব নথি ঢাকায় আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটে আনা হচ্ছে। পেঁয়াজ আমদানিকারক, আড়তদার ও পাইকারি বিক্রেতারা আছেন এ তালিকায়।
দীর্ঘ দিন ধরে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও ভরা মৌসুমেই বাড়ছে দাম। ঈদের আগে কেজিতে ৪০ থেকে ৫৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হলেও বর্তমানে ৬৫-৭০ টাকার কমে মেলে না। গত বছরের এই সময়ে পেঁয়াজ ছিল ৩০-৪০ টাকা কেজি।
রাজধানীর শ্যামবাজার পেঁয়াজ আড়ৎদার সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল মাজেদ বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে এই অজুহাতে দেশের বাজারে কৃষকরা পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন। এ জন্য ঢাকার বিভিন্ন বাজারেও বাড়ছে দাম। এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর মোকামের বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর কাজটা করেন। বাধ্য হয়ে সরকার গত বছর খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করার ঘোষণা করে। এরপর মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠলে দাম কমতে থাকে।
ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে আমরা যারা নিয়ম মেনে ব্যবসা করি তাদেরও দুর্নাম হচ্ছে। সরকার এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ালে পেঁয়াজের দাম কমবে বলে আশা করছি।
দামের ব্যাপারে মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের খুচরা বিক্রেতা রমজান আলী বলেন, ‘পাবনা ও রাজশাহীর পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। বৈশাখ মাসের প্রথম থেকেই এই দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কারওয়ান বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা হারুন রশিদও বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলছে। এক কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাতিরপুল বাজার, নিউ মার্কেটসহ অন্য বাজারেও দেখা গেছে বাড়তি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
গত অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে ১৩০-১৫০ টাকা কেজি। ভারত থেকে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আমদানি হলেও পেঁয়াজের বাজারে চলে নৈরাজ্য। পাবনা ও ফরিদপুরের পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হওয়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াতে থাকেন।
এদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তথ্য বলছে, বর্তমানে বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এটা বিক্রি হয়েছিল ৪০ থেকে ৬৫ টাকায়।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইএর সূত্র মতে, বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ থেকে ২৬ লাখ টন। উৎপাদন হয় ৩৫ লাখ টনের বেশি। কিন্তু পেঁয়াজ সংরক্ষণকালে প্রক্রিয়াকরণে ক্ষতি হয় ২৫ শতাংশ। তারপরও বছরে কমবেশি আমদানি করা হয় ৯ থেকে ১১ লাখ টন। পেঁয়াজের দাম গত অক্টোবরে লাগামহীন হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পেঁয়াজ আমদানির ওপর থেকে শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে অর্থাৎ পেঁয়াজ আমদানিতে প্রযোজ্য মোট করভার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য শতাংশ করা হয়েছে। এরপর থেকে দেশে পেঁয়াজের আমদানি বাড়ে। আবার দেশেও মুড়িকাটা পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ে। এ জন্য দাম কমে। তবে হালি পেঁয়াজ উঠার পরও অধিকাংশ বাজারে কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।