
মাত্র চার দিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। এই ঈদকে ঘিরে প্রস্তুত রাজধানীর পশুর হাটগুলো। সন্ধ্যার পর থেকে ট্রাকে ট্রাকে গরুসহ অন্য পশু নিয়ে হাটে ঢুকছেন ব্যাপারীরা। তবে এখনো সেভাবে জমে ওঠেনি বেচাকেনা।
বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, গরু ও কোরবানির অন্যান্য পশু পর্যাপ্ত সংখ্যায় থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। দু-একজন এলেও পশু দেখে ও দাম জেনে চলে যাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারি ও বিক্রেতারা।
এদিকে গত কয়েক দিন টানা বৃষ্টির ফলে হাটগুলোতে ময়লা-আবর্জনার পাশাপাশি পশুর মলমূত্র জমতে শুরু করেছে। এতে করে একদিকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, অন্যদিকে হাটের আশপাশের বাসিন্দাদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। বৃষ্টি-বাদলের দিনে কাস্টমার না থাকায় ব্যাপারীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। নিজেদের মধ্যে গল্প আর আড্ডা দিয়ে সময় পার করছেন তারা। গতকাল রাজধানীর হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজের পাশে পশুর হাট ও পোস্তগোলা পশুর হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
ব্যাপারীরা জানিয়েছেন, এবার খামারে পশুর খাবারের দাম বেড়েছে। সঙ্গে শ্রমিক খরচও। অনেকেই প্রত্যাশা করেছিলেন, হাটে ভালো দামে গরু বিক্রি হবে। কিন্তু বেচাকেনা না থাকায় লোকসানের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমনিতেই রাজধানীতে শেষ তিন দিন পশু বিক্রি বাড়ে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বাজারে ক্রেতা কম দেখা যাচ্ছে। এ বছর বড় গরুর চাহিদাও কম। ছোট ও মাঝারি পশুর চাহিদা রয়েছে। অথচ বড় পশুতে লাভ বেশি হয়। হাটে যতদিন থাকতে হবে, ততদিন ব্যাপারী-শ্রমিকদের নিজস্ব একটা খরচ রয়েছে এবং হাটের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া শেষে লাভ নিয়ে একধরনের শঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাজারীবাগ ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজের পূর্ব পাশের খালি জায়গায় বসেছে পশুর হাট। তবে হাটের নির্ধারিত স্থানের বাইরেও বড় অংশ আবাসিক এলাকা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনের সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে পশুর হাট। সড়কের দুই পাশে অস্থায়ী ছাউনি তৈরি রাখা হয়েছে গরুসহ অন্য পশু। ফলে যানজট, আবর্জনা ও দুর্গন্ধে এখনই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী।
হাজারীবাগের হাট ঘুরে দেখা যায়, ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে অস্থায়ী ছাউনির নিচে গরুর ব্যাপারীরা নিজেদের মধ্যে গল্প করে আর আড্ডা দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। আর ক্রেতার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। হাশেম নামে এক ব্যাপারী বলেন, গত বছর এই সময় দিনে অন্তত ৫-৭টা গরু বিক্রি হতো, এবার ২-৩টাও বিক্রি হচ্ছে না। হাটে লোকজন ঘোরেন, দেখে চলে যান, দাম বললেই চলে যান। কাল থেকে বিক্রি বাড়তে পারে আশা বিক্রেতাদের।
তবে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরে হাজারীবাগ হাটে একজন ক্রেতার দেখা মেলে। তিনি বলেন, অনেক বিক্রেতা এখনো চড়া দাম হাঁকাচ্ছেন। শেষ মুহূর্তে দাম কিছুটা কমার আশায় তারা অপেক্ষায় আছেন।
এদিকে যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজের পাশে পশুর হাট ও পোস্তগোলা পশুর হাট প্রায় প্রস্তুত হয়েছে। শেষ মুহূর্তে বাঁশ, লাঠি এবং ছাউনি তৈরি করে পশু রাখার প্রস্তুতি চলছে হাটে। তবে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে হাটে পানি পড়ে স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। ব্যবসার কথা মাথায় রেখে হাট কর্তৃপক্ষ বালু ফেলে গরু রাখার উপযোগী করে তুলেছেন হাটগুলো। ইতোমধ্যে হাটের কয়েকটি স্থানে গরু উঠেছে। কিন্তু হাট এখনো জমে ওঠেনি। বেচাকেনা নেই বললেই চলে। হাট জমতে আরও দুই থেকে তিন দিন লাগতে পারে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
পোস্তগোলা পশুর হাটের ব্যাপারী কালাম বলেন, হাটে গরুসহ অন্য পশু আসতে শুরু করেছে। এখনো বিক্রি তেমন শুরু হয়নি। কাস্টমারও তেমন নাই। যারা আসতেছেন, তারা গরু দেখার জন্য আর দাম জানার জন্য আসতেছেন। আশা করছি ঈদের আগে আগে বিক্রি বাড়বে।
এদিকে দুই সিটি করপোরেশনের প্রস্তুতিও অনেকটা ঢিলেঢালা চলেছে। সংস্থা দুটির অধীনে ১৯টি পশুর হাট বসার কথা। নানা জটিলতায় এখনো হাটগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি ইজারাদারদের। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্য কর্মকর্তা রাসেল রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ১১টি হাট বসার কথা থাকলেও কোর্টের নির্দেশে দুটি হাট স্থগিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬টি হাট চূড়ান্ত হয়েছে, বাকি ৩টি সরকারি মূল্যে ইজারা পাওয়ায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
দক্ষিণের অধীনে হাটের মধ্যে উত্তর শাজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাবের খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটের পশ্চিম পাশের নদীর পাড়ে খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ ক্লাবের খালি জায়গা, হাজারীবাগে ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজের পূর্ব পাশের খালি জায়গা, আমুলিয়া আলীগড় মডেল কলেজের উত্তর পাশের খালি জায়গায় সর্বোচ্চ দরদাতাকে হাট বুঝিয়ে দিয়েছে ডিএসসিসি। সাদেক হোসেন খোকা মাঠের দক্ষিণ পাশের খালি জায়গা, কমলাপুর সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারসংলগ্ন খালি জায়গা, শ্যামপুর-কদমতলী ট্রাকস্ট্যান্ডসংলগ্ন খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজারের পূর্ব পাশের খালপাড়ের খালি জায়গা নানা জটিলতার কারণে এখনো ইজারাদারদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
উত্তর সিটির অধীনে ভাটারা সুতিভোলা খালসংলগ্ন খালি জায়গায়, উত্তরা দিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরসংলগ্ন বউবাজার এলাকার খালি জায়গা, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং আফতাবনগরের খালি জায়গা, মিরপুর-৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, মোহাম্মদপুরের বছিলার ৪০ ফুট রাস্তাসংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর কালশী বালুর মাঠের খালি জায়গা এবং কাঁচকুড়া বাজারসংলগ্ন খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসংলগ্ন খালি জায়গা, খিলক্ষেত থানাধীন ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মস্তুল চেকপোস্টসংলগ্ন পশ্চিমপাড়ার খালি জায়গা ও ভাটুলিয়া সাহেব আলী মাদ্রাসা থেকে ১০ নম্বর সেক্টর রানাভোলা স্লুইস গেট পর্যন্ত খালি জায়গায় হাট বসবে।