ঢাকা ২ শ্রাবণ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

রাজধানীতে জমেনি পশুর হাট

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০৭:২৫ এএম
আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ১১:১৬ এএম
রাজধানীতে জমেনি পশুর হাট
ছবি: খবরের কাগজ

মাত্র চার দিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। এই ঈদকে ঘিরে প্রস্তুত রাজধানীর পশুর হাটগুলো। সন্ধ্যার পর থেকে ট্রাকে ট্রাকে গরুসহ অন্য পশু নিয়ে হাটে ঢুকছেন ব্যাপারীরা। তবে এখনো সেভাবে জমে ওঠেনি বেচাকেনা।

বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, গরু ও কোরবানির অন্যান্য পশু পর্যাপ্ত সংখ্যায় থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। দু-একজন এলেও পশু দেখে ও দাম জেনে চলে যাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারি ও বিক্রেতারা।

এদিকে গত কয়েক দিন টানা বৃষ্টির ফলে হাটগুলোতে ময়লা-আবর্জনার পাশাপাশি পশুর মলমূত্র জমতে শুরু করেছে। এতে করে একদিকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, অন্যদিকে হাটের আশপাশের বাসিন্দাদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। বৃষ্টি-বাদলের দিনে কাস্টমার না থাকায় ব্যাপারীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। নিজেদের মধ্যে গল্প আর আড্ডা দিয়ে সময় পার করছেন তারা। গতকাল রাজধানীর হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজের পাশে পশুর হাট ও পোস্তগোলা পশুর হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

ব্যাপারীরা জানিয়েছেন, এবার খামারে পশুর খাবারের দাম বেড়েছে। সঙ্গে শ্রমিক খরচও। অনেকেই প্রত্যাশা করেছিলেন, হাটে ভালো দামে গরু বিক্রি হবে। কিন্তু বেচাকেনা না থাকায় লোকসানের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমনিতেই রাজধানীতে শেষ তিন দিন পশু বিক্রি বাড়ে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বাজারে ক্রেতা কম দেখা যাচ্ছে। এ বছর বড় গরুর চাহিদাও কম। ছোট ও মাঝারি পশুর চাহিদা রয়েছে। অথচ বড় পশুতে লাভ বেশি হয়। হাটে যতদিন থাকতে হবে, ততদিন ব্যাপারী-শ্রমিকদের নিজস্ব একটা খরচ রয়েছে এবং হাটের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া শেষে লাভ নিয়ে একধরনের শঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাজারীবাগ ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজের পূর্ব পাশের খালি জায়গায় বসেছে পশুর হাট। তবে হাটের নির্ধারিত স্থানের বাইরেও বড় অংশ আবাসিক এলাকা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনের সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে পশুর হাট। সড়কের দুই পাশে অস্থায়ী ছাউনি তৈরি রাখা হয়েছে গরুসহ অন্য পশু। ফলে যানজট, আবর্জনা ও দুর্গন্ধে এখনই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী।

হাজারীবাগের হাট ঘুরে দেখা যায়, ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে অস্থায়ী ছাউনির নিচে গরুর ব্যাপারীরা নিজেদের মধ্যে গল্প করে আর আড্ডা দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। আর ক্রেতার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। হাশেম নামে এক ব্যাপারী বলেন, গত বছর এই সময় দিনে অন্তত ৫-৭টা গরু বিক্রি হতো, এবার ২-৩টাও বিক্রি হচ্ছে না। হাটে লোকজন ঘোরেন, দেখে চলে যান, দাম বললেই চলে যান। কাল থেকে বিক্রি বাড়তে পারে আশা বিক্রেতাদের।

তবে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরে হাজারীবাগ হাটে একজন ক্রেতার দেখা মেলে। তিনি বলেন, অনেক বিক্রেতা এখনো চড়া দাম হাঁকাচ্ছেন। শেষ মুহূর্তে দাম কিছুটা কমার আশায় তারা অপেক্ষায় আছেন।

এদিকে যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজের পাশে পশুর হাট ও পোস্তগোলা পশুর হাট প্রায় প্রস্তুত হয়েছে। শেষ মুহূর্তে বাঁশ, লাঠি এবং ছাউনি তৈরি করে পশু রাখার প্রস্তুতি চলছে হাটে। তবে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে হাটে পানি পড়ে স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। ব্যবসার কথা মাথায় রেখে হাট কর্তৃপক্ষ বালু ফেলে গরু রাখার উপযোগী করে তুলেছেন হাটগুলো। ইতোমধ্যে হাটের কয়েকটি স্থানে গরু উঠেছে। কিন্তু হাট এখনো জমে ওঠেনি। বেচাকেনা নেই বললেই চলে। হাট জমতে আরও দুই থেকে তিন দিন লাগতে পারে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

পোস্তগোলা পশুর হাটের ব্যাপারী কালাম বলেন, হাটে গরুসহ অন্য পশু আসতে শুরু করেছে। এখনো বিক্রি তেমন শুরু হয়নি। কাস্টমারও তেমন নাই। যারা আসতেছেন, তারা গরু দেখার জন্য আর দাম জানার জন্য আসতেছেন। আশা করছি ঈদের আগে আগে বিক্রি বাড়বে।

এদিকে দুই সিটি করপোরেশনের প্রস্তুতিও অনেকটা ঢিলেঢালা চলেছে। সংস্থা দুটির অধীনে ১৯টি পশুর হাট বসার কথা। নানা জটিলতায় এখনো হাটগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি ইজারাদারদের। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্য কর্মকর্তা রাসেল রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ১১টি হাট বসার কথা থাকলেও কোর্টের নির্দেশে দুটি হাট স্থগিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬টি হাট চূড়ান্ত হয়েছে, বাকি ৩টি সরকারি মূল্যে ইজারা পাওয়ায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

দক্ষিণের অধীনে হাটের মধ্যে উত্তর শাজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাবের খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটের পশ্চিম পাশের নদীর পাড়ে খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ ক্লাবের খালি জায়গা, হাজারীবাগে ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজের পূর্ব পাশের খালি জায়গা, আমুলিয়া আলীগড় মডেল কলেজের উত্তর পাশের খালি জায়গায় সর্বোচ্চ দরদাতাকে হাট বুঝিয়ে দিয়েছে ডিএসসিসি। সাদেক হোসেন খোকা মাঠের দক্ষিণ পাশের খালি জায়গা, কমলাপুর সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারসংলগ্ন খালি জায়গা, শ্যামপুর-কদমতলী ট্রাকস্ট্যান্ডসংলগ্ন খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজারের পূর্ব পাশের খালপাড়ের খালি জায়গা নানা জটিলতার কারণে এখনো ইজারাদারদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

উত্তর সিটির অধীনে ভাটারা সুতিভোলা খালসংলগ্ন খালি জায়গায়, উত্তরা দিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরসংলগ্ন বউবাজার এলাকার খালি জায়গা, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং আফতাবনগরের খালি জায়গা, মিরপুর-৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, মোহাম্মদপুরের বছিলার ৪০ ফুট রাস্তাসংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর কালশী বালুর মাঠের খালি জায়গা এবং কাঁচকুড়া বাজারসংলগ্ন খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসংলগ্ন খালি জায়গা, খিলক্ষেত থানাধীন ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মস্তুল চেকপোস্টসংলগ্ন পশ্চিমপাড়ার খালি জায়গা ও ভাটুলিয়া সাহেব আলী মাদ্রাসা থেকে ১০ নম্বর সেক্টর রানাভোলা স্লুইস গেট পর্যন্ত খালি জায়গায় হাট বসবে। 

‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান’ থেকে বাদ যাবে ‘ক্ষুদ্র’ শব্দটি

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩১ এএম
আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৩ এএম
‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান’ থেকে বাদ যাবে ‘ক্ষুদ্র’ শব্দটি
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান’ থেকে ‘ক্ষুদ্র’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া তৈরি করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

পাশাপাশি প্রস্তাবিত খসড়াটির অধ্যাদেশে এর বর্তমান নাম ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০ পরিবর্তিত হয়ে ‘জাতি বৈচিত্র সাংস্কৃতিক (সংশোধন) প্রতিষ্ঠান অধ্যাদেশ, ২০২৫ নামে পরিচিত হবে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

জানা গেছে, ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রণয়নের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মতামত প্রদানসংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে গত মঙ্গলবার (১৫ জুলাই)।

এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে জানান, সারা দেশে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ১০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নৃগোষ্ঠীগুলোর এসব সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০’-এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সংরক্ষণ, সমকালীন শিল্প ও সাহিত্য সংরক্ষণ, মুক্তচিন্তার প্রসার এবং গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষদের মানসিক বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের নামের শুরুতে ‘ক্ষুদ্র’ শব্দটি ব্যবহারের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করে তাদের মধ্যে একধরনের হীনম্মন্যতা তৈরি হয়। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তিত হলে সব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈচিত্র্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো আরও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে।

এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান’ থেকে ‘ক্ষুদ্র’ শব্দটি বিলুপ্ত করার লক্ষ্যে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে সরকার।

একই সঙ্গে সংশোধিত খসড়া প্রস্তাবে ‘নৃ-গোষ্ঠী’ শব্দের পরিবর্তে ‘জাতি বৈচিত্র্য’ শব্দটি স্থাপন করার জন্য খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

‘নৃ-গোষ্ঠী’ শব্দের পরিবর্তে ‘জাতি বৈচিত্র্য’ শব্দটি অধ্যাদেশে স্থাপন প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অন্য আরেক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে জানান, নৃগোষ্ঠী শব্দটি বিশেষ এলাকার বিশেষ কিছু জাতি-গোষ্ঠী সম্পর্কে ধারণা দেয়। কিন্তু জাতিবৈচিত্র্য শব্দটি সারা দেশের সব জাতি-গোষ্ঠীর পরিচয় দেবে। তিনি বলেন, এ দেশে বসবাসকারী বিভিন্ন জাতিসত্তার মাঝে যাতে ঐক্য বজায় থাকে সেই মনোভাব থেকেই জাতিবৈচিত্র্য শব্দটি স্থাপন করতে অধ্যাদেশের সংশোধিত প্রস্তাবে দেওয়া হয়েছে।

ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যা অপকর্ম-সিন্ডিকেটের সদস্যরা লাপাত্তা

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৭ এএম
অপকর্ম-সিন্ডিকেটের সদস্যরা লাপাত্তা
খবরের কাগজ ইনফো

ভাঙারি ব্যবসায়ী লালচাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের পর গা ঢাকা দিয়েছে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িতরা। বীভৎস ওই খুনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত মহিন সিন্ডিকেটের সদস্যদের পাশাপাশি চাঁদাবাজি ও আধিপত্য নিয়ে লড়াই করা অন্যরাও এখন এলাকা ছাড়া। এতে করে কয়েক দিন ধরে কিছুটা স্বস্তিবোধ করছেন স্থানীয় ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা। তবে নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের আতঙ্কের রেশ এখনো কিছুটা রয়ে গেছে মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায়।

এদিকে সোহাগ হত্যা মামলায় মহিনের সহযোগী নান্নু কাজীকে (২৭) গত সোমবার দিনগত রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১০ ব্যাটালিয়ন। নান্নু এই মামলার এজাহারভুক্ত ৭ নম্বর আসামি। এ ছাড়া মঙ্গলবার মামলার প্রধান আসামি ও খুনের মাস্টারমাইন্ড মহিনের আরও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এই মামলায় মঙ্গলবার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। এজাহারভুক্ত আরও ১১ আসামি এখনো পলাতক আছেন। পুলিশ ও র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা তাদের গ্রেপ্তারে মাঠে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় যেখানে সোহাগকে হত্যা করা হয়েছিল সেখানে মানুষের জটলা। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন। ঘটনাস্থলের আশপাশের দেয়ালে লাগানো হয়েছে হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে ব্যানার ও পোস্টার। ব্যানারের এক পাশে ছিল হত্যার শিকার সোহাগের ছবিও।

এ ছাড়া নিহত সোহাগের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সোহানা মেটালে গতকালও তালা ঝুলছিল। এমনকি মহিনের টর্চার সেল হিসেবে যে কক্ষটি সামনে এসেছে সেটিও তালাবদ্ধ পাওয়া যায়।

ওই এলাকায় কথা বলতে গেলে মহিন ও সোহাগকে ব্যবসায়ী সম্বোধন করে কথা বলতে নারাজ অধিকাংশ ব্যবসায়ী। তারা খবরের কাগজকে বলেন, ‘এরা সন্ত্রাসী, তারা মূলত চোরাই কারবার করত। ভাঙারি পণ্য (তামা, পিতল, দস্তা, সিসা, প্লাস্টিকের পণ্য) ব্যবসার আড়ালে চোরাই কেবলসহ (তার) নানা অবৈধ অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের কারবার ছিল তাদের। চোরাই ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করেই এখানে গড়ে ওঠে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট এমনভাবে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় প্রভাব বা আধিপত্য তৈরি করেছিল, যেখানে প্রতিবাদ করলে নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হতো। এই সিন্ডিকেট এলাকায় আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল টাকা কামাত। সেই সব টাকার ভাগবাঁটোয়ারা বা ওই সব ব্যবসার দ্বন্দ্বের জেরে খুন হন সোহাগ। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, সোহাগ-মহিন গ্রুপের দৌরাত্ম্য-আধিপত্য বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য অতিষ্ঠ ছিলেন মিটফোর্ডের ব্যবসায়ীরা। এই হত্যাকাণ্ডের পর সোহাগ-মহিনের সঙ্গে থাকা সন্ত্রাসীরা এবং অন্য গ্রুপের সদস্যরাও গা ঢাকা দিয়েছে। আপাতত এখন কিছুটা স্বস্তিতে ব্যবসা করছেন তারা। 

সোহাগের পাশের দোকানের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী খবরের কাগজকে জানান, প্রায় এক যুগ ধরে তিনি এই এলাকায় ব্যবসা করেন। সোহাগ এখানে দোকান দিয়েছেন তিন মাস। এর আগে সোহাগ মহিনের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বেড়াতেন। তিনি বলেন, ‘সোহাগ-মহিন গ্রুপ এই এলাকায় বেশ পরিচিত। তারা চাঁদাবাজি ও চোরাই কারবারের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেন। এলাকায় তাদের খুব দাপট ছিল। কেউ কথা না শুনলে চালাতেন নির্যাতন। এখন কাউকে দেখা যায় না। সব পালিয়েছে।’

পাশে খবির দেওয়ান নামে আরেকটি একটি পিতলসামগ্রীর দোকানের কর্মচারী মাহফুজ খবরের কাগজকে বলেন, ‘সোহাগ আশপাশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে খুব একটা মিশতেন না। মহিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল। তারাসহ ১০ থেকে ১২ জন এখানে নিয়মিত আড্ডা দিতেন।’

টর্চার সেলে তালা

মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেট থেকে পশ্চিম দিকে তাকালেই চোখ যায় বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী অফিসে (মিটফোর্ড হাসপাতাল)। টিনের ছাউনিযুক্ত এই অফিসের একটি কক্ষ মহিনের টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার হতো বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে গতকাল ওই অফিসের সেই কক্ষের দরজা তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। কেউ তাদের কথা না শুনলে এখানে এনেই নির্যাতন করা হতো বলে জানান স্থানীয়রা। 

জানা যায়, মহিনের নির্যাতনের শিকার এই এলাকার বাসিন্দা গাড়ি ব্যবসায়ী শাওন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাবার সূত্র ধরে আমি গাড়ির ব্যবসা করি। সোহাগ হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে মহিন গ্রুপ আমার কাছে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দেব না বলে জানিয়ে দিলে পরে চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী অফিসে নিয়ে আমাকে মারধর করে।’ 

শাওন আরও অভিযোগ করেন, সন্ত্রাসী মহিন সঙ্গে অস্ত্র রাখতেন। মহিন গ্রুপের ভয়ে এলাকার লোক তটস্থ থাকতেন। ১০ থেকে ১৫ জন দল বেঁধে তারা এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলা মহিনের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পেতেন না। মহিনের ডান হাত ছিল নান্নু গাজী।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, সোহাগ হত্যাকাণ্ডে মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া মহিনের আরও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। সোহাগকে পাথর মারা ও লাশের ওপর ওঠে উল্লাস করা দুই ব্যক্তিকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে খুঁজছে পুলিশ। এই দুজনের বিষয়ে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। দ্রুত সময়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। 

আসামি নান্নু কাজী গ্রেপ্তার

সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় অন্যতম আসামি নান্নু কাজীকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। র‌্যাবের কর্মকর্তারা জানান, নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামে নান্নু কাজী তার মামার বাড়িতে আত্মাগোপন করেছিলেন। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নান্নু হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন বলেও জানানো হয়েছে।
 
মহিনের আরও ৫ দিনের রিমান্ডে

মহিনকে আবারও পাঁচ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমান ওই আদেশ দেন। এর আগে প্রথম দফায় পাঁচ দিন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবারও ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। গত ১০ জুলাই প্রথম দফায় মহিনকে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। আদালতে রিমান্ড আবেদনের বিপরীতে আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

প্রসঙ্গত, গত ৯ জুলাই সন্ধ্যার আগে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটসংলগ্ন রজনী বোস লেনে পাকা রাস্তার ওপর সংঘবদ্ধভাবে ভাঙারি ব্যবসায়ী ও যুবদলকর্মী লালচাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) এলোপাতাড়ি পাথর দিয়ে আঘাত করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সোহাগ হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। তাদের মধ্যে ভিডিও ফুটেজ ও নানা তথ্য বিশ্লেষণ করে ১১ জনকে শনাক্ত করেছেন তারা। 

জরুরি ওষুধের নামে মাদক আমদানি

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৯:৪৬ এএম
জরুরি ওষুধের নামে মাদক আমদানি
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

গত অর্থবছরে বিভিন্ন বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা প্রায় ৩ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকার পণ্য আটক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আটক পণ্যের বেশির ভাগই ছিল মাদকদ্রব্য। কাগজে কলমে এসব পণ্যের দাম দেখানো হয়েছিল ৯৫১ কোটি টাকা। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে এ অর্থ পাচার করা হয়েছে। এনবিআরের একটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিথ্যা ঘোষণায় মাদকদ্রব্য ছাড়াও যৌন উত্তেজক পণ্য, সোনার বার, তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল, উচ্চ মূল্যের ওষুধ, ইলেকট্রনিকস পণ্য, দামি মোবাইল ফোন, উচ্চ সিসির মোটরসাইকেল, বিলাসবহুল গাড়িও আমদানি করা হয়েছে। জরুরি ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী, শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির কথা বলে এসব আনা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির সময় সবচেয়ে বেশি পণ্য আটক করা হয়েছে। মিথ্যা ঘোষণায় মালয়েশিয়া, চীন ও ভারত থেকে আমদানির সময় এবং দুবাইতে রপ্তানির সময় বেশি পণ্য আটক করা হয়। তবে অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীন থেকে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা পণ্যের মধ্যে মাদকদ্রব্য বেশি পাওয়া গিয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিথ্যা ঘোষণায় মাদকদ্রব্য এনে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্রি করা হয়েছে। বয়সে তরুণ-তরুণীরা মাদকের প্রধান ক্রেতা। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের বিভিন্ন দোকানের মাধ্যমে এসব বিক্রি করা হয়। আবার মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমদানি করা মাদকদ্রব্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে অন্যদেশেও রপ্তানি করা হয়েছে। আটক মাদকদ্রব্যের মধ্যে আইস, ইয়াবা, মদ, ফেনসিডিল, হেরোইন বেশি। কোকেন ও বিভিন্ন ধরনের ইনজেকশনও আটক করা হয়েছে। মরফিন, ভায়াগ্রা, সানাগ্রাও আটক করা হয়েছে। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জানুয়ারিতে মালয়েশিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে সুজাতা এক্সেসরিজ লিমিটেডের নামে আমদানি করা কাঁচামাল পৌঁছায়। বন্দরের কর্মকর্তারা কাগজপত্রের সঙ্গে কার্টনের ভেতরে কী আছে তা মিলিয়ে দেখতে গিয়ে দেখেন কাঁচামালের সঙ্গে গোপনে ৭শ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ (আইস) আনা হয়েছে। এর বাজার মূল্য ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা। শুল্ক শাখার কর্মকর্তারা মালামাল আটক করেন। তদন্তে বেরিয়ে আসে, ওই নামে বাস্তবে কোনো কারখানার অস্তিত্বই নেই। জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে এলসি খোলা হয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির সময় মাদকদ্রব্য কোকেন আটক করা হয়েছে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় বিভিন্ন ধরনের যৌন উত্তেজক পণ্য আটক করা হয়েছে। বিমানবন্দর দিয়ে আমদানির সময় বিভিন্ন ধরনের মাদক আটক করা হয়েছে। এসব চালানের প্রতিটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে আনা হয়েছে। এসব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানের নাম বেশি। 

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, বিগত সরকারের গত ১৫/১৬ বছর ব্যবসায়ী নামধারী কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি আমদানি-রপ্তানির আড়ালে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্যাংক ও এনবিআরের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতা ছাড়া এ কাজ করা সম্ভব হয়নি। এসব ব্যক্তি ব্যাংক ও এনবিআরের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে নিরাপদে এ কাজ করেছেন। 

প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিগত সরকারের সময়ের নামি ব্যবসায়ীদের অনেকে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি-রপ্তানিতে জড়িত ছিলেন বলে প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এদের অনেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা হিসেবেও দীর্ঘদিন দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মতো লোকেরাও জড়িত ছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়া শেখ হাসিনা পরিবারের দাপুটে সদস্যরাও এ কাজে জড়িত ছিলেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বর্তমান এনবিআরের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী মিথ্যা ঘোষণায় জড়িত আছে কি না তার তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে এনবিআর সংশ্লিষ্টদের অনেকের বিষয়ে সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠান থেকেও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এসব ব্যক্তিদের অনেকে আত্মগোপনে গেলে বা গ্রেপ্তার হলেও তাদের দলের লোকজন মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি-রপ্তানি করতে থাকেন। আগের মতোই ব্যাংক ও এনবিআরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে সহযোগিতা করতে থাকেন। 

এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পর মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি-রপ্তানি বন্ধে জিরো-টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেন। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধে এনবিআর চেয়ারম্যান শুল্ক শাখার দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে দেন। টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য হিসেবে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশি রাখা হয়। 

টাস্কফোর্স কমিটি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে থাকে। কোন বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় কী ধরনের পণ্য বেশি আসছে, এ কাজে কে বা কারা জড়িত, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে সরকার কী পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে, কোন ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি বা ঋণপত্র খুলে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য বেশি আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে, ব্যাংক ও এনবিআরের কে বা কারা এ কাজে জড়িত- এমন অনেক বিষয় খতিয়ে দেখে তদন্ত করে টাস্কফোর্স কমিটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করে। টাস্কফোর্স কমিটি তদন্তের প্রয়োজনে সিআইডিসহ সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও তথ্য সংগ্রহ করেছে। 

এনবিআর চেয়াম্যান আবদুর রহমান খান খবরের কাগজকে বলেন, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধে এনবিআর অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে জোর দিয়ে কাজ করছে। এ অসাধু ব্যক্তিরা যত বড় প্রভাবশালীই হোক না কেন এনবিআর জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। আশা করি এনবিআরের এমন অবস্থানের কারণে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি-রপ্তানি কমবে।

তিনি আরও বলেন, এনবিআরের সব কাজে এখন প্রযুক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। 

টাস্কফোর্স কমিটির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তৈরি পোশাক খাতের কারখানাগুলো শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। এসব সুবিধা পাওয়ার শর্ত থাকে রপ্তানির জন্য পণ্য উৎপাদনে ঠিক যতটা কাঁচামাল লাগবে ততটাই আমদানি করবে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তি তৈরি পোশাক শিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে কম দামের ও কম পরিমাণের কাঁচামাল (ফেব্রিক বা কাপড় (সুতি, লিনেন, সিল্ক, উল, নাইলন, পলিয়েস্টার ইত্যাদি), সুতা, বিভিন্ন ধরনের এক্সেসরিজ আমদানির কথা বলে বেশি দামের বেশি পরিমাণের পণ্য শুল্ক না দিয়ে এনে কারখানায় না লাগিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। বেশিরভাগই জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে এ কাজ করেছেন। এসব কাঁচামাল দিয়ে উন্নতমানের পণ্য রপ্তানি করা হবে বলে ঘোষণা দিলেও রপ্তানি করেছে নিম্নমানের কিছু পণ্য। 

রপ্তানি করা পণ্যের দাম হিসেবে একটি অর্থও দেশে আনেনি। বিদেশেই আছে। 

এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি-রপ্তানি বন্ধে এনবিআর আগের চেয়ে তৎপর। তবে সম্পূর্ণ প্রযুক্তি ব্যবহারে কাজ করতে সক্ষম হলে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি রপ্তানি কমবে। অর্থপাচারও কমবে।’ 

স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটি থেকে বাদ পড়ছেন রাজনীতিকরা

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৫ এএম
স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটি থেকে বাদ পড়ছেন রাজনীতিকরা

কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিতে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা থাকতে পারবেন না। বুধবার (১৬ জুলাই) প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টি অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এ কথা জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকার গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে। সুপারিশমালার আলোকেই এই প্রস্তাব আগামীকালের বৈঠকে অনুমোদনের তাগাদা দেওয়া হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির প্রথম বৈঠক বুধবার বেলা ৩টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ।

প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠানো প্রস্তাব সম্পর্কে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুদক সংস্কার কমিশন এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে সরকার। এসব কমিশনের সুপারিশের মধ্যে শিগগিরই বাস্তবায়নযোগ্য ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ’ সংশ্লিষ্ট সুপারিশও রয়েছে।

সুপারিশে বলা হয়, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ম্যানেজিং কমিটিতে সংশ্লিষ্ট থাকায় নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই ম্যানেজিং কমিটিতে রাজনৈতিক ব্যক্তির পরিবর্তে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে বেসরকারি কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি গঠনের জন্য জোরালো সুপারিশ করেছে কমিশন।  

তা ছাড়া বৈঠকের আলোচ্যসূচির ১৭টি প্রস্তাবে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদর দপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ৩৩টি পদ, সরকারের পরিকল্পনা বিভাগের আইসিটি সেলের মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার ও অ্যাসিসটেন্ট মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ারের পদ-নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ দুটি পদ নাম পরিবর্তন করে রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী ও সহকারী রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী পদ নাম করার প্রস্তাব দিয়েছে পরিকল্পনা বিভাগ।

তা ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের আওতাধীন জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর স্থাপনের লক্ষ্যে রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে ৩৭টি পদ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির (এনআইবি) জন্য রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে ২১টি পদ, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের জন্য রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে ২২টি পদ, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন বেনাপোল, বুড়িমারী, ভোমরা, আখাউড়া ও তামাবিল স্থলবন্দরের জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তার ৫টি পদ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামোতে পরিকল্পনা অনুবিভাগের বিভিন্ন শাখার জন্য ১১টি ও লাইব্রেরি শাখার জন্য একটি পদসহ মোট ১২টি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ১১টি মডার্ন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন (২য় সংশোধনী) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ফতুল্লা ও নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল স্টেশনের জন্য রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে ২৪টি পদ, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির কার্যক্রম শক্তিশালী ও বর্ধিতকরণ শীর্ষক সমাপ্ত প্রকল্পের অস্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত ১৬টি পদ রাজস্ব খাতে স্থায়ী করার কথা বলা হয়েছে। একই প্রকল্পের আরও ৭৬টি অস্থায়ী পদ রাজস্ব খাতে স্থায়ীভাবে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি করার আগে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণের লক্ষ্যে ১৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৭৩টি পদ সৃজনের প্রস্তাব রয়েছে।

সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে এসব পদ সৃজনের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ ছাড়া প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিতে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের (বিইপিআরসি) ২২টি পদ বিলুপ্ত করার জন্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৪’; পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৪’ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে ‘মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (সকল) (নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি) প্রবিধানমালা, ২০২৫’ অনুমোদনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সিনিয়র লাইব্রেরিয়ান পদটির নাম পরিবর্তন করে উপপরিচালক (লাইব্রেরি) নামকরণ করার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।

বেড়েছে ডেঙ্গু রোগী, প্রতিরোধে উদাসীনতা

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ১১:১৫ এএম
বেড়েছে ডেঙ্গু রোগী, প্রতিরোধে উদাসীনতা
ছবি: খবরের কাগজ

বর্ষা এলেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কয়েক বছর ধরেই এমনটি হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। গত জুনের তুলনায় চলতি জুলাই মাসে ডেঙ্গু রোগী অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও প্রতিরোধে দৃশ্যমান কার্যক্রম কম। 

এভাবে চলতে থাকলে সামনে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা মশক নিধন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে পুলিশের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত সেভাবে পরিচালনা করা যাচ্ছে না। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় আনসার সদস্যদের নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু অভিজাত এলাকায় অভিযানই চালাতে পারছে না সিটি করপোরেশন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের এই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫ হাজার ২১০ জন। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৫৮ জনের। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩, এপ্রিলে ৭, মে মাসে ৩, জুনে ১৯ এবং জুলাইয়ে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যেখানে জুনে মারা গেছেন ১৯ জন, সেখানে জুলাইয়ের ১৪ দিনে মারা গেছেন ১৬ জন। জুন মাসে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ৯৫১ জন। আর জুলাইয়ের ১৪ তারিখ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ১৬৪ জন।

গত ৩০ জুন পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালগুলোয় ৮৩১ জন এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালগুলোয় ১ হাজার ৪০৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। ১৪ জুলাই পর্যন্ত এই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশেন এলাকার হাসপাতালগুলোয় ১ হাজার ২১৪ জন এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালগুলোয় ২ হাজার ৫২ জন ভর্তি হয়েছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব রোগী সিটি করপোরেশন এলাকার নয়। ঢাকার বাইরের রোগী ঢাকার হাসপাতালে এসে ভর্তি হচ্ছেন। সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী কম। গত ১২ জুলাই দুই সিটি করপোরেশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই দিন দক্ষিণ সিটির ১২ জন বাসিন্দা এবং উত্তর সিটিতে ৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণের হাসপাতালগুলোয় ৬৩ জন এবং উত্তরের হাসপাতালগুলোয় ২০ জন ভর্তি হন।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। সড়কের বিভিন্ন স্থানে, পরিত্যক্ত বিভিন্ন পাত্রে, পলিথিনে পানি জমে থাকছে; যা মশার বংশবিস্তারের সহায়ক পরিবেশ। 

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রতিবছরই বর্ষা শুরুর আগে মশা নিধনে বিশেষ কর্মসূচির ঘোষণা আসে। এবারও এসেছে। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। মুগদা, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, কামরাঙ্গীরচর, শেওড়াপাড়া ও উত্তরা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অধিকাংশ এলাকায় গত সপ্তাহে মশার ওষুধ ছিটানো হয়নি। কোথাও কোথাও ছিটানো হলেও তা তেমন একটা কাজে আসছে না। 

রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বরের বাসিন্দা সালমা আক্তার বলেন, সন্ধ্যার পর জানালা খুলে রাখা যায় না। ঘরে বসেই মশার কামড় খেতে হয়। আগে মাঝে মাঝে ওষুধ স্প্রে করতে দেখা যেত, এখন সেটাও বন্ধ। গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা নিজেরাই এখন মশা মারার ওষুধ কিনে ছিটাই। অথচ করের টাকা তো সিটি করপোরেশন নেয়। আমাদের সেবা দেয় কে?’

দক্ষিণ সিটির রামপুরা, গোপীবাগ ও কাকরাইল আর উত্তরের দক্ষিণখান, মিরপুর ও পল্লবীতে গিয়ে দেখা গেছে, ড্রেন ও সড়কে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও ড্রেন পরিষ্কার না করায় পানি আটকে পানি আর ময়লার স্তূপ এক হয়ে আছে। 

উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘এই সময়টা এডিস মশার প্রজনন মৌসুম। তবে সেই তুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কম। আমরা চেষ্টা করছি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখার। সমস্যা হচ্ছে- বিভিন্ন জায়গায় ময়লা জমছে এবং ড্রেন পরিষ্কার করা হয় না। ড্রেনের পানি প্রবাহমান না থাকলে মশা নিধন করা কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ বদ্ধ পানিতে মশা ডিম পাড়ে এবং বংশবৃদ্ধি করে, যা মশার উপদ্রব বাড়িয়ে দেয়।

ড্রেনের পানি প্রবাহমান না থাকলে মশা নিধন করা সম্ভব হয় না। আর মশকনিধন কর্মীরা মাঠপর্যায়ে কাজ না করলে আমাদের মনিটরিংয়ে ধরা পড়লে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
 
ডেঙ্গু প্রতিরোধে নির্মাণাধীন ভবন, ভবনের ছাদ, ড্রেন বা পরিত্যক্ত পাত্রে জমে থাকা পানিতে লার্ভা পাওয়া গেলে জরিমানা করা হয়। কিন্তু গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় আগের মতো পুলিশ পাচ্ছে না সিটি করপোরেশন।

উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর পুলিশের উপস্থিতি কম রয়েছে। এই কারণে আমাদের মোবাইল কোর্ট তুলনামূলক কম পরিচালনা করা হচ্ছে- এটা সত্য। তার পরও আমরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। এ ক্ষেত্রে কোনো বাসাবাড়িতে আমরা মশার লার্ভা পেলে প্রথমে নোটিশ দিয়ে সতর্ক করি। পরে একই স্থানে লার্ভা দেখলে আমরা সেখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি এবং জরিমানা করি। তবে উত্তরা ও গুলশান-বনানীর বাড়িগুলোর ছাদে উঠতে দেওয়া হয় না। ফলে সেখানে মশা নিধনও করা যায় না। এটাও একটা সমস্যা।

ঢাকা দক্ষিণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা তুলনামূলক কম হচ্ছে। এর কারণ জানতে চাইলে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন খবরের কাগজকে বলেন, ‘এটা আঞ্চলিক কর্মকর্তারা পরিচালনা করেন। এটা ঠিক গত তিন দিন কোনো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হয়নি। তবে একদমই যে বন্ধ রয়েছে তা নয়। আমাদের করপোরেশন থেকে আনসার সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।’ 

পুলিশের কাজ আনসার দিয়ে কতটা সম্ভব? এ বিষয়ে তিনি বলেন, এখন যা রয়েছে তা দিয়ে তো কাজ চালিয়ে নিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা দুভাবে মশক নিধন কার্যক্রম চালাচ্ছি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের মাধ্যমে এবং সচেতনতা সৃষ্টিমূলক কার্যক্রম চালিয়ে। প্রতি শনিবার ওয়ার্ড পর্যায়ে আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং জনসচেতনতা সৃষ্টিমূলক প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এই কার্যক্রমে স্থানীয় ৩০০ থেকে ৪০০ লোক অংশ নেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে যতই মশার ওষুধ ছিটানো হোক না কেন, তা কাজে আসবে না।’