পাকিস্তান সফর শেষে তড়িঘড়ি করে অনুশীলন শুরু করেছে বাংলাদেশ দল। পাকিস্তান বধের পর এবার লক্ষ্য ভারতকে হারানো। পূর্ণ শক্তির ভারতকে তাদের মাটিতে হারাতে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য উইকেট কিংবা কন্ডিশনের চেয়ে বড় চিন্তার কারণ হতে পারে বল। সারা বছর কোকাবুরা বলে খেলে অভ্যস্ত বাংলাদেশকে ভারতের মাটিতে খেলতে হবে এসজি বলে। খানিকটা খাড়া সিমের এসজি বলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছে বাংলাদেশ দল। মিরপুরে চলমান প্রস্তুতি ক্যাম্পে এসজি বলে অনুশীলন করছেন নাজমুল হোসেন শান্ত-লিটন দাসরা। এসজি বলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাই যে বড় চ্যালেঞ্জ সেটা মনে করেন পেসার শরিফুল ইসলাম। বিসিবিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা খেলছি কোকাবুরা বল। এখন খেলতে হবে এসজি বলে। এটার সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি মানায় নিতে পারব, তত ভালো।’
কোকাবুরা বলগুলো সাধারণত উজ্জ্বল বর্ণের হয়ে থাকে। ফলে ম্যাচের শুরু থেকে পেসাররা পায় বাড়তি সুইং। অন্যদিকে এসজি বল খানিকটা কালচে বর্ণের হওয়ায় পেসারদের সুইং পেতে অপেক্ষা করতে হয় ৫-৬ ওভার পর্যন্ত। তবে দুই বলের মধ্যে তুলনামূলক বেশি সুইং হয় কোকাবুরা বলে। এই পার্থক্য বোলার-ব্যাটারদের জন্য তৈরি করে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। পাকিস্তানের মাটিতে পাওয়া সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে বাংলাদেশকে এখন এসজি বলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। স্বল্প সময়ের মাঝে মানিয়ে নেওয়া যে কঠিন সেটা মানেন সাবেক ক্রিকেটার ও কোচেরা। তবে পেশাদার ক্রিকেটার বলে বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে এসজির সঙ্গে ম্যাচের আগেই মানিয়ে নিতে হবে বলে মনে করেন।
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও কোচ রাজিন সালেহ মনে করেন, এসজি বলে প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছে না বাংলাদেশ দল। তবে পেশাদার ক্রিকেটার বলে এই স্বল্প সময়ের মধ্যে মানিয়ে নিতে হবে বলে জানান। তার কথায়, ‘প্রস্তুতির জন্য সময় কম পাওয়া গেছে। তবে তারা পেশাদার ক্রিকেটার। অল্প সময়ের মধ্যে মানিয়ে নেওয়াটা জরুরি।’ কালচে বর্ণের এসজি বল ১০ ওভারের পরই হারিয়ে ফেলে উজ্জ্বলতা। উজ্জ্বলতা হারিয়ে বসা বলে স্পিনাররা পায় বাড়তি সুবিধা। তবে ওই সময়ের পর পেসারদের দাপট হারিয়ে যায় এমনটাও নয়।
১০ ওভার খেলার পর উজ্জ্বলতা হারানো বলে পেসাররা ফের সুবিধা পান ৪০-৫০ ওভারের পর থেকে। পুরোনো হয়ে আসা বলে থাকে রিভার্স সুইংয়ের সুবিধা। ভারতের মাটিতে পেসারদের জন্য এই সুবিধা নেওয়াটা অনেক বেশি জরুরি বলে মনে করেন রাজিন। তার কথায়, ‘এসজি বলে সাধারণত ৪০-৫০ ওভারের পর রিভার্স সুইং করানো যায়। আমাদের পেস বোলিং ইউনিট এখন বেশ ভালো। তারা যদি ওই সুবিধা নিতে পারে তাহলে ভালো করার সুবিধা অনেক বেশি থাকবে।’ শুধু পেসাররা নয় পুরোনো বলে থাকবে স্পিনারদের দাপটও। ভারত ও বাংলাদেশের স্পিনারদের মধ্যে কাউকে খুব একটা এগিয়ে রাখতে চান না রাজিন। তার কথায়, ‘দুই দলের স্পিনারদের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। ফলে পুরোনো বলে দুই দলের জন্যই সমান সুযোগ থাকবে।’
কোকাবুরা, এসজি কিংবা ডিউক- তিন ধরনের বলে মূল পার্থক্যের জায়গা সিমের সেলাই ও ব্যবহৃত হওয়া চামড়ায়। কোকাবুরার তুলনায় খানিকটা মোটা চামড়া ব্যবহার করা হয় এসজি বলে। দুটি বলের সেলাইয়েও আছে পার্থক্য। কোকাবুরা বল মেশিন ও হাত- দুভাবেই সেলাই করা হয়, অন্যদিকে এসজি বলের সেলাই পুরোটা হয় হাতে। মূলত এ কারণে সিমে বড় পার্থক্য তৈরি হয়। কোকাবুরার চেয়ে এসজি বলের সিমে অমসৃণতা বেশি। এই অমসৃণতার সুযোগটা বেশ ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারে স্পিনাররা। এই পার্থক্যের কারণে একাদশ স্পিননির্ভর করার পক্ষে নন রাজিন সালেহ। তার কথায়, ‘এসজি বলের কারণে ভারতে স্পিনাররা অনেক বেশি সুবিধা পায়। তবে এই বলে পেসারদের জন্য রিভার্স সুইংয়ের সুবিধাও আছে। ফলে উইকেট কেমন হবে সেটা দেখে একাদশ সাজাতে হবে। আমার বিশ্বাস উইকেট দেখে একাদশ সাজানো হবে।’
এদিকে ভারত সফরের প্রস্তুতিতে কাজ করা এক কোচ খবরের কাগজকে জানান, বলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটা ক্রিকেটারদের ওপর নির্ভর করছে। তার কথায়, ‘ক্রিকেটাররা পেশাদার, তাদেরকে স্বল্প সময়ের মধ্যে মানিয়ে নিতে হবে। ভারতে এখন প্রথম শ্রেণির ঘরোয়া টুর্নামেন্ট দুলীপ ট্রফির খেলা চলছে। ওই ম্যাচগুলোও এসজি বলে হচ্ছে। ওই ম্যাচের ভিডিওগুলো ক্রিকেটাররা দেখে বেশ ভালো ধারণা নিতে পারে। তাহলে তাদের জন্য ভারত সিরিজের আগে মানিয়ে নেওয়াটা সহজ হবে।’