বয়সভিত্তিক ফুটবলে আলো ছড়ানো শাহেদা আক্তার রিপার প্রথমবারের মতো অভিজ্ঞতা হলো সিনিয়র সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার। প্রথমবারই তিনি পেয়েছেন শিরোপার স্বাদ। কক্সবাজারের উখিয়া থেকে উঠে আসা এই ফরোয়ার্ড খবরের কাগজের মুখোমুখি হয়ে নিজের ও দলের সাফল্য নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তোফায়েল আহমেদ।
খবরের কাগজ: প্রথমবার সাফ খেলেই শিরোপার স্বাদ পেলেন। কেমন লাগছে?
রিপা: সিনিয়র পর্যায়ের সাফ এবারই প্রথম খেললাম আমি। প্রথমবার গিয়েই সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা আমার জন্য অন্য রকম অনুভূতি, অন্য রকম ভালো লাগার। এই অনুভূতি আমার জন্য সারা জীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
খবরের কাগজ: এবার তো আপনাদের সামনে শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ ছিল। কাজটা কতটা কঠিন ছিল?
রিপা: অবশ্যই অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ দুই বছর আগে আপুরা দেশকে প্রথমবার সাফে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। এবার আমাদের জন্য বড় দায়িত্ব হয়ে গিয়েছিল যে, শিরোপাটা যে করেই হোক ধরে রাখতেই হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা খেলেছি। সবাই নিজেদের শতভাগ দিতে পেরেছে বলে আমরা শিরোপাটা নিয়ে আসতে পেরেছি।
খবরের কাগজ: এবার যদিও প্রথম খেললেন। পরের আসরে তো আপনার দায়িত্ব অনেক বেড়ে যেতে পারে। সেই দিক থেকে জানতে চাচ্ছি, কতটা অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরলেন?
রিপা: যেহেতু প্রথমবার সিনিয়র সাফে গিয়েছি, অবশ্যই অনেক ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনেক কিছু শিখেছি। আপুরা খেলেছে, দেখেছি তারা কীভাবে খেলে। নতুন একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে।
খবরের কাগজ: ভুটানের বিপক্ষে বদলি হিসেবে খেলা ছাড়া আর কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। এ নিয়ে আক্ষেপ নেই?
রিপা: কোনো আক্ষেপ নেই। আক্ষেপ হবে কেন?
খবরের কাগজ: টুর্নামেন্ট চলাকালে অনেক বিষয় নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। দলে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব আছে বলেও গুঞ্জন চাউর হয়েছিল। এরকম কিছু কি আসলে ছিল?
রিপা: না, না, এরকম কোনো কিছুই নেই। আমরা দলের ভেতরের সবাই জানি, আমরা আসলে কেমন আছি। আমাদের বন্ডিংটা অনেক ভালো। সিনিয়র-জুনিয়র বলে কিছু নেই। আমরা এখানে সবাই একটা পরিবারের মতো। আপুরা বড় বোনদের মতো আমাদের আদর করে।
খবরের কাগজ: যাই হোক, টানা দুবার আপনারা সাফে চ্যাম্পিয়ন হলেন। সামনে লক্ষ্য কি?
রিপা: যেহেতু বাংলাদেশ দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এখন হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। আর শুধু দক্ষিণ এশিয়ার ভেতরে থাকতে চাই না। এশিয়ান পর্যায়ে ভালো করতে চাই।
খবরের কাগজ: ছোট করে আপনার ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্পটা একটু বলুন।
রিপা: আমি কক্সবাজারের উখিয়ার মেয়ে। আমার বাড়ির পাশেই খেলার মাঠ। সেখানে ছোটবেলা থেকেই ছেলেদের সঙ্গে খেলতাম। এভাবে খেলতে খেলতেই বিকেএসপিতে ট্রায়ল দেই। টিকেও যাই। ক্লাস সিক্সে আমি বিকেএসপিতে ভর্তি হই। যাত্রাটা খুব কষ্টের ছিল। সহজ ছিল না, মোটেও। তবে এলাকার সবাই সাহায্য করেছে। সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছেন আমার একজন স্যার। তার নাম সানাউল্লাহ স্যার। শামসুল আলম সোহাগ স্যারও অনেক হেল্প করেছেন। উনারা দুজন না থাকলে আজকে হয়তো আমি এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না।
খবরের কাগজ: বাবা-মা কতটা খুশি আপনার সাফল্যে?
রিপা: আমার বাবা-মা তো অনেক খুশি। কারণ আমি ছোটবেলা থেকেই যখন খেলতাম, আমাকে আমার বাবা-মা কোনো দিন বাধা দেননি। আমাদের এলাকায় তো খুব বেশি খেলোয়াড় ছিল না। আমাদের গ্রামে মেয়েরা ফুটবল খেলে না বললেই চলে। সেখানে বাবা-মা আমাকে কোনো দিনই খেলতে বাধা দেননি।
খবরের কাগজ: রিপার নিজের কাছে নিজের চাওয়া কী? নিজেকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়?
রিপা: নিজে একজন ভালো ফুটবলার হব, এটাই সবচেয়ে বড় চাওয়া। বিদেশে লিগ খেলতে চাই। এই স্বপ্নটা আমি খুব ছোটবেলা থেকেই দেখি। এ ছাড়া এবার এইচএসসি শেষ করলাম। ইচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। যদি চান্স হয়, তাহলে তো হলোই। না হলে অন্য কোথাও… আসলে আমি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়তে চাই।