![২০৩০ সালের মধ্যে পর্যটন খাতে কর্মসংস্থান হবে ৭২ লাখ মানুষের](uploads/2024/02/08/1707372040.b8.jpg)
দেশের পর্যটন খাতের রয়েছে অনেক সম্ভাবনা। এ খাতে বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কাজ করছেন সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোক্তারা। এ খাতে ২০৩০ সালের মধ্যে ৭২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। পর্যটন খাতের বিভিন্ন দিক নিয়ে খবরের কাগজের সিনিয়র রিপোর্টার শাহ আলম নূরের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের
খবরের কাগজ: দেশের পর্যটন খাতের উন্নয়নে কী কী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে?
আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের: দেশের পর্যটন খাতের উন্নয়নের জন্য মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ১ হাজার ৪৯৮টি স্থানকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রকে ৫৩টি ক্লাস্টার হিসেবে বিভক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টিকে অগ্রাধিকার ক্লাস্টার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশের পর্যটন খাত নিয়ে যেসব মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, তা ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০৪১ সালের ৩১ জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে। এটি হচ্ছে পর্যটন খাত উন্নয়নের জন্য একটি রোডম্যাপ। এ রোডম্যাপ বাস্তবায়নে অব্যাহতভাবে কাজ করা হচ্ছে।
খবরের কাগজ: পর্যটন খাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে কেমন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে?
আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের: দেশের পর্যটন খাত নিয়ে দুভাবে কাজ করা হচ্ছে। একটি হচ্ছে বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করা। দ্বিতীয় হচ্ছে এ খাতে অধিক মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি করা বা কর্মসংস্থান করা। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে পর্যটন খাতে ৭২ লাখ ২৫ হাজার মানুষের জন্য প্রত্যক্ষ কাজের সুযোগ তৈরি করা।
খবরের কাগজ: পর্যটন খাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরির জন্য কেমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে?
আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের: দেশের পর্যটন খাতে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এ খাতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তেমনি এ খাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। কারণ এখানে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি না করতে পারলে পর্যটকদের সেবা দেওয়ার লোকের অভাব দেখা দেবে। এ খাতে দক্ষ মানুষ তৈরি করতে আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিং ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার কাজ চলছে। এখানে যারা পড়াশোনা করবেন, তারা শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও কাজের সুযোগ পাবেন। আমাদের ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষা নিয়ে যখন সরকারি চাকরিজীবী হন, তখন তার শিক্ষক কিংবা পরিবার যেভাবে গর্ববোধ করেন, যারা হোটেল ম্যানেজমেন্ট কিংবা ট্যুরিজম নিয়ে পড়েন কিংবা এই সেক্টরে কাজ করেন, সেভাবে তাদের সম্মানটা দেওয়া হয় না। এটা আমাদের সামাজিক একটা বড় সমস্যা। এই বিষয়টা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এসব ছেলেমেয়েকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা চেষ্টা করছি।
খবরের কাগজ: দেশের পর্যটন খাত লক্ষ্যমাত্রা থেকে কত দূরে?
আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের: বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প এখন পর্যন্ত লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। আমাদের পলিসিতে এগুলোকে আমরা অ্যাড্রেস করছি। ইতোমধ্যে আমরা এ ব্যাপারে কথা বলা শুরু করেছি। বিশেষ করে যারা বিদেশি ট্যুরিস্ট, তারা যাতে অন অ্যারাইভাল ভিসা পান, এ ব্যাপারগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। এটা মানুষকে জানাতে হবে যে বাংলাদেশে কী কী সুবিধা আছে, কী কী পর্যটনের সম্ভাবনা আছে এবং সেখানে তারা কীভাবে আসবে। আসা-যাওয়ার যে ব্যাপারটা এটাকে সুন্দর করতে হবে। আমাদের ব্যবসায়ীদের প্রচার-প্রসার আরও বাড়াতে হবে এবং সেবার মান আরও উন্নত করতে হবে। আমরা বারবার বলি, আমরা খুব অতিথিপরায়ণ। সেবার মানে উন্নয়ন ঘটিয়েই সেটা প্রমাণ করতে হবে। শুধু মুখে বললে হবে না। আমাদের যারা ট্যুরের সঙ্গে জড়িত, তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এই কাজগুলো অলরেডি সরকারি সংস্থাগুলো করছে।
খবরের কাগজ: জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান কত?
আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের: বাংলাদেশের পর্যটন মূলত অভ্যন্তরীণ পর্যটনকেন্দ্রিক। জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে ৯০ শতাংশের অবদান বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটনের, আর বাকি ১০ শতাংশ বিদেশনির্ভর। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যে পর্যটন স্পটগুলো রয়েছে, সেখানে উপযুক্ত আবাসন কিংবা পর্যটকবান্ধব পরিবেশ উন্নয়নে কাজ চলছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ যে পর্যটন মাস্টারপ্ল্যান করেছে, সেই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন হলে দেশে পর্যটকবান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠবে। তবে এতে যে বিনিয়োগ প্রয়োজন, তা একা সরকারের পক্ষে জোগান দেওয়া সম্ভব হবে না। বেসরকারি বিনিয়োগকারীদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
খবরের কাগজ: পর্যটন খাতে বিদেশি বিনিয়োগ কেমন আসছে?
আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের: বাংলাদেশের পর্যটন খাতে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলেছে। কক্সবাজারে বিশ্বমানের পর্যটনব্যবস্থা গড়ে তুলতে ২ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ পাঁচ দেশ। এ ছাড়া সুন্দরবনসহ অন্যান্য স্পটে বিনিয়োগে আগ্রহী বিশ্বব্যাংক, জাপান ও সৌদি আরব।
খবরের কাগজ: এসডিজি অর্জনে পর্যটন খাতের ভূমিকা আছে কি?
আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের: পর্যটন খাতের উন্নয়নের সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) একটি সম্পর্ক রয়েছে। পর্যটনের বিকাশ না হলে ২০৩০ সাল নাগাদ এসডিজি অর্জনও বাধাগ্রস্ত হবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে পর্যটনের উন্নয়নে একগুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যটনের সঙ্গে সরাসরি ১০৯টি খাত ও পরোক্ষভাবে ১ হাজার ১০০টি খাত সম্পৃক্ত। প্রত্যেক পর্যটকের জন্য ১০টি প্রত্যক্ষ ও ৩৫টি পরোক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হয়। এ জন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য পর্যটনকে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জাহ্নবী