অভিনেতাদের কেউ শারীরিক প্রতিবন্ধী, কেউ বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীও রয়েছেন কেউ। তবে এক দশকের শিল্পচর্চায় নিজেদের শাণিত করে তারা এখন পুরোদস্তুর পেশাদার অভিনেতা। সৃষ্টিশীলতা উদযাপনে জীবনের বহুমুখিতা বিকাশের উন্মুখ সেই শিল্পীদের অভিনীত ১০টি নাটক নিয়ে ঢাকায় শুরু হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী শিল্প উৎসব।
শুধু নাটক নয়, প্রথমবারের মতো আয়োজিত এ উৎসবে প্রতিবন্ধী শিল্পীদের উৎপাদিত নানা শিল্পপণ্যের সমাহার থাকবে। নানা শারীরিক কসরতে এই অদম্য অভিনেতারা ফুটিয়ে তুলবেন শিল্পের নানা আঙ্গিক। উৎসবে প্রতিবন্ধী বিষয়ক সেমিনারও থাকছে।
আগামী শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
রবিবার (২১ এপ্রিল) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এই আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেন ঢাকা থিয়েটার ও ব্রিটিশ কাউন্সিল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা থিয়েটারের কর্ণধার ও উৎসব পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ। তার সঙ্গে ছিলেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ডেভিড নক্স, আইআরডির প্রধান নির্বাহী সাইদ আহমেদ।
২০১৩ সালে ঢাকা থিয়েটার দেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে নিয়ে নাট্যচর্চার মাধ্যমে অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করার প্রয়াস নেয়। কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক প্রতিবন্ধী শিল্পীদের নিয়ে ঢাকা থিয়েটার তিনটি নাট্য প্রযোজনা মঞ্চস্থ করে। পরে সারা দেশের প্রতিবন্ধী শিল্পীদের নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহযোগিতায় ঢাকা থিয়েটার ২০১৯ সাল থেকে ‘ডিজ্যাবিলিটি আর্টস : রিডিফাইনিং এমপাওয়ারমেন্ট-ডেয়ার’ নামে নতুন প্রকল্প শুরু করে। এই প্রকল্পের আওতায় দেশে ৮টি বিভাগে সুন্দরম নামে ৮টি প্রতিবন্ধী শিল্পচর্চা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে ঢাকা থিয়েটার। গত ৬ বছরে দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে ৩৮৪টি কর্মশালা আয়োজন করেছে ঢাকা থিয়েটার। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত প্রতিবন্ধী নাট্য পরিচালক জেনি সেলিও এই কর্মশালায় যুক্ত হয়েছিলেন।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ জানান, আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী শিল্প উৎসবে সুন্দরমের ৯টি প্রযোজনা মঞ্চস্থ করবেন শিল্পীরা। এই প্রযোজনাগুলো হলো রমেশ মেয়াপ্প্যানের নির্দেশনায় ‘নৈঃশব্দ্যে ৭১’, অসীম দাশের ‘স্বপ্ন কাহন’, মোস্তাফিজ শাহিনের ‘সার্কাস সার্কাস’, শামীম সাগরের ‘অতঃপর করিম বাওয়ালি’, কাজী নওশাবা আহমেদের ‘ত্রিবেণী’, সামিউন জাহান দোলার ‘সঙগতি’, ড. আমির জামানের ‘পিতৃগণ’, এশা ইউসুফ-রফিকুল ইসলামের ‘কেন্দ্র বরাবর সুরঙ্গটির নাম পৃথিবী’, আল জাবির নির্দেশিত ‘কাজলরেখা’।
এ ছাড়া কলকাতার জন সংস্কৃতি সেন্টার ফর দ্য থিয়েটার অব দ্য ওপ্রেসড প্রযোজনা ‘দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড’ মঞ্চস্থ হবে উৎসব মঞ্চে।
শুক্রবার উদ্বোধনী দিনে ৫টি, শনিবার আরও ৫টি নাটক মঞ্চস্থ হবে জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে।
আয়োজকরা জানান, ডেয়ার ফেস্টিভ্যালের ওয়েবসাইট থেকে আগ্রহী দর্শকরা বিনামূল্যে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার লবিতেও নিবন্ধনের সুযোগ থাকবে।
শুক্র ও শনিবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে ও জাতীয় চিত্রশালার মিলনায়তনে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। ২৭ এপ্রিল উৎসবের সমাপনী আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান।
উৎসব পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থা চাই। দেশে ৫০ লাখের মতো প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছেন। তাদের সমাজ, রাজনীতি, শিক্ষা, অর্থনীতিতে যদি অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, তবে দেশের উৎপাদন চিত্র বদলে যেত। আমরা কেন তাদের বাইরে রাখব, কেন তাদের জীবন উদযাপন করতে দেব না?’
ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ডেভিড নক্স বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে কাজ করতে গিয়ে তিনটি বিষয়কে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করি। প্রথমত যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও নিবিড় করে তোলা। দ্বিতীয়টি হলো, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যেসব চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে তা সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে মোকাবিলা করা। তৃতীয়টি হলো, নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। ঢাকা থিয়েটারের এবারের উৎসব আমাদের সেই দ্বিতীয় ধাপকে সমর্থন করছে। আমরা আগ্রহভরে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছি।’
জয়ন্ত/সালমান/