অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করুন । খবরের কাগজ
ঢাকা ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করুন

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৪, ১০:৩৩ এএম
অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করুন

২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যু দেশের মানুষকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে জন্য দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশ জাতীয় নির্মাণবিধি এবং অনুমোদিত নকশা না মেনেই রাজধানীতে এত বহুতল ভবন গড়ে ওঠে কীভাবে! এ ক্ষেত্রে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট ঘাটতি বা দুর্বলতা আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যখনই কোনো দুর্ঘটনা, দুর্যোগ ও বড় সংকট সৃষ্টি হয়, তখনই দায়িত্ব পালনকারী কর্তৃপক্ষ অনিয়ম-দুর্নীতি ও অপরাধী খুঁজতে মাঠে নামে। শুরু হয় বিশেষ অভিযান। বেইলি রোডের ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে ফায়ার সার্ভিস, রাজউক, সিটি করপোরেশন ও পুলিশ। এ ধরনের অভিযান আগেও হয়েছে। ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও সুস্পষ্ট। এবার বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে অভিযান চলমান রেখে যেন স্থায়ী সুফল নিশ্চিত করা হয় এবং অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থা পেশাজীবীদের সমন্বয়ে জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। 

বেইলি রোডের বহুতল ভবন গ্রিন কোজি কটেজের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অগ্নিনিরাপত্তা ও জীবনের সুরক্ষা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট আইএবি। প্রতিনিধিদলের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির নির্গমন পথ বাধামুক্ত ছিল না। ভবনটির সিঁড়িতে আগুনরোধক দরজা না থাকায় ধোঁয়া অতি দ্রুত একতলা থেকে পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটিতে অগ্নি প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় শনাক্তকরণ এবং অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল ছিল। ভবনে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবস্থাপনা যথাযথ ছিল না। ২০২৩ সালে ঢাকা মহানগরী এলাকায় মার্কেট ও শপিংমল পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। পরিদর্শন শেষে দেওয়া প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, রাজধানীর ৫৮টি মার্কেট, সুপার মার্কেট ও শপিংমল অগ্নিনিরাপত্তার দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলোর মধ্যে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ৯টি, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ১৪টি এবং ৩৫টি সাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ। অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনে যেকোনো সময় আগুন লাগতে পারে বলে ওই  প্রতিবেদনে  বলা হয়েছে। এ ছাড়া ঝুঁকির তালিকায় আছে সিটি করপোরেশনের স্থাপনাও।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সহসভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে বলেছি একটি প্রটোকল তৈরি করতে। রাজউক কী কী করবে, সেটার একটা চেকলিস্ট থাকতে হবে। সেই চেকলিস্ট নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, প্রকৌশলীদের সঙ্গে নিয়ে করতে হবে। অথবা নগর উন্নয়ন কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে করতে হবে। তা না হলে আমরা আশঙ্কা করছি, যে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, সেটি শুধু ঘুষ-বাণিজ্যই বাড়াবে। কাজেই এই দিকটা রাজউককে অবশ্যই খেয়াল করতে হবে।’ 

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে রেস্তোরাঁ। এদের জন্য নেই নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা। নিয়ম না মেনে যাতে রেস্তোরাঁ গড়ে উঠতে না পারে, সে জন্য ভবিষ্যতের জন্য একটি নীতিমালা করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের দৃশ্যমান স্থানে নোটিশ টাঙানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সিলগালা করতে হবে। মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। শুধু নগরায়ণ বাড়ালেই হবে না, বাড়াতে হবে রাজউকের সক্ষমতা। সর্বোপরি অগ্নিকাণ্ড থেকে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারকে জাতীয় ট্রাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। টাস্কফোর্সকে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা দিতে হবে। তাহলেই ঘনবসতিপূর্ণ এই রাজধানী শহরে ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে মানুষ রেহাই পাবে।  

বনের জায়গায় কাসাভা চাষ বন্ধ করুন

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪, ১০:১০ এএম
বনের জায়গায় কাসাভা চাষ বন্ধ করুন

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর ইউনিয়নে দেড় হাজার একর সংরক্ষিত বন উজাড় করে কাসাভা চাষ করা হচ্ছে। প্রায় এক যুগ আগে লাগানো গাছগুলো কেটে সাবাড় করে লাগানো হয়েছে কাসাভা। টিলার পর টিলার বন ধ্বংস করে লাগানো হচ্ছে কাসাভা। স্থানীয়দের মতে, কাসাভা চাষ করছেন স্থানীয় ও পাশের উপজেলার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাদের কাছ থেকে পাইকারি দামে কাসাভা নিয়ে যায় প্রাণ গ্রুপ। বিষয়টি স্থানীয় বিট কর্মকর্তা জানলেও এ থেকে প্রতিকার হয়নি। বন বিভাগ বন উজাড়ের দায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করলেও খবরের কাগজ প্রতিনিধিদের সরেজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে পাহাড়ি, বাঙালি এবং বন বিভাগের লোকজন মিলেমিশে বন উজাড় করছেন।

তথ্য বলছে, চট্টগ্রামের নারায়ণ ঘাট রেঞ্জের আওতায় উত্তর কাঞ্চননগর মৌজায় বন বিভাগের ৩ হাজার ৭৩৭ একর সংরক্ষিত বন রয়েছে। এর মধ্যে দেড় হাজার একরের বেশি টিলায় কাসাভা চাষ হয়েছে। ২০২২ ও ২০২৩ সালে প্রায় শত বছরের পুরোনো শত শত একর সেগুন, আকাশমণি, গামারি, বহেড়ার বাগান উজাড় করে সেখানে ব্যাপকভাবে কাসাভা চাষ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, কাসাভাচাষিরা বন বিভাগ থেকে একর হিসেবে ভাড়া নিয়ে কাসাভা চাষ করেছেন। প্রাণ গ্রুপ থেকে তারা চাষের খরচ পান। ফসল তোলার পর কেজি ১০ টাকা করে প্রাণ গ্রুপ কিনে নিয়ে যায়। যেহেতু বিক্রির দুশ্চিন্তা নেই, সে জন্য কাসাভা চাষের দিকেই চাষিরা ঝুঁকছেন। এমনকি কাসাভা চাষে সরকারি কর্মকর্তাদেরও জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

কাসাভা চাষে যেমনি ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য, তেমনি মরছে গবাদিপশুও। আবাস নষ্ট হওয়ায় বন্য প্রাণী খুবই ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। প্রাকৃতিক ইকোসিস্টেম বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। প্রাণ-প্রকৃতি সবই বিলুপ্ত। চারদিকে এখন শুধুই কাসাভা আর কাসাভা। এখন যে জাতের কাসাভা আবাদ হচ্ছে এটা যদি কোনো পশুপাখি খেয়ে থাকে, তা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। এতে শুকিয়ে যাচ্ছে হালদার পানির উৎস। বন উজাড় করে মরূকরণের কারণে প্রাকৃতিক পানির উৎসগুলোও শুকিয়ে যাচ্ছে। 

ভরাট হয়ে যাচ্ছে খাল, ঝিরি, ছড়া ও ঝরনা। চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটছে। প্রাকৃতিক মাছ প্রজননক্ষেত্র হালদার শাখা শুকিয়ে পরিণত হয়েছে গোচারণ ভূমিতে। হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, বনের সঙ্গে পানির সম্পর্ক আছে। যে পাহাড়ে যত বেশি গাছ থাকে, সেই পাহাড় তত বেশি পানি সংরক্ষণ বা ধারণ করবে। তা ছোট ঝরনার মাধ্যমে খালে এসে পড়ে। বন ধ্বংসের কারণে ঝিরি, ঝরনা, খাল শুকিয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। দেশের রুই-জাতীয় মাছের একমাত্র প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে পানি নেই। কারণ পানির উৎসগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। 

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজি বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, কাসাভা একদিকে ওষুধ, আবার কিছু ক্ষেত্রে এর পাতা গবাদিপশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এমনকি বেশি খেলে পশুর মৃত্যুও হতে পারে। তবে আসল কারণ বের করার জন্য কাসাভা এবং ওই গাছের পাতা পরীক্ষা করা জরুরি।

সংরক্ষিত বন উজাড় করে কাসাভা চাষ কোনোভাবেই কাম্য নয়। জীববৈচিত্র্য এবং ইকোসিস্টেম রক্ষায় বন বড় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ইদানীং পাহাড়ি বন উজাড় করে একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী পাহাড় ধ্বংসলীলায় মেতেছে। বন বিভাগও নীরব দর্শকের ভূমিকায়। আঙুল তুলছে একে অপরের দিকে। কর্মকর্তারা বলছেন, তারা পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের কাছে অসহায়। তা হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কী ভূমিকা রেখেছে! আশা করছি, অচিরেই পাহাড় এবং বনখেকো এই অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। সরকার এসব অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বন, পাহাড় সুরক্ষিত হোক।  

স্বাস্থ্য খাতের সমন্বয়হীনতা দূর করুন

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ১০:৫৪ এএম
স্বাস্থ্য খাতের সমন্বয়হীনতা দূর করুন

স্বাস্থ্য খাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দক্ষতা ও দুর্নীতির ভয়ে অনেক সময় খরচ করতে ব্যর্থ হতে হয় এই বিভাগের কর্মকর্তাদের। স্বাস্থ্য অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা প্রতিবছরের অব্যাহত অর্থ ফেরত দেওয়াকে এই খাতের বড় ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, যখন স্বাস্থ্য খাতের সংকটের কথা বলা হয়, তখনই পর্যাপ্ত বাজেট না পাওয়ার অজুহাত আসে। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে যে পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়, তা তারা খরচ করতে পারে না।

সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট স্বাস্থ্য খাতের অর্থ বরাদ্দ ও খরচ নিয়ে যৌথভাবে এক গবেষণা পরিচালনা করে। ওই গবেষণা প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে অর্থ বরাদ্দ খরচের খাতওয়ারি চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, কোনো খাতেই বরাদ্দ করা অর্থ খরচ করতে পারেনি। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের জন্য ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়, যা মোট জাতীয় বাজেটের ৫ শতাংশ। যদিও সংশোধিত বাজেটে কিছুটা কমে যায়। আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা জানান, চলতি অর্থবছরে আগের তুলনায় খরচ কিছুটা বেশি করা হয়েছে। কারণ এ বছর স্বাস্থ্য খাতের পঞ্চবার্ষিকের শেষ বছর। ফলে গত পাঁচ বছরে যে কাজগুলো আটকে ছিল, তা এই মেয়াদের মধ্যে শেষ করা না গেলে নতুন পঞ্চবার্ষিকের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ এখনো কম। আবার যা বরাদ্দ রয়েছে তাও খরচ করতে ব্যর্থ হয়। এটা খুবই দুঃখজনক। এখান থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে স্বাস্থ্য খাতের কার্যকর কোনো উন্নতি ঘটবে না। খরচ করতে না পারার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার পাশাপাশি রয়েছে দরপত্রের জটিলতাও। অডিট প্রক্রিয়াতেও রয়েছে নানা ঝামেলা। অনেক কর্মকর্তা নানা ধরনের অনিয়মের আশঙ্কায় থাকেন। তারা ভয়ে তড়িঘড়ি করে কোনো কেনাকাটায় যেতে চান না; বরং টাকা ফেরত দেওয়াই শ্রেয় মনে করেন। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কাজ করা অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, স্বাস্থ্য বাজেট নিয়ে কেবল বরাদ্দ আর খরচের টানাপোড়েনে থাকলেই হবে না। এর ঊর্ধ্বে উঠে আরও বড় আঙ্গিকে কাজ করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও ক্ষেত্রবিশেষে সংস্কার দরকার। তবে এটা ঠিক যে স্বাস্থ্য খাতের বাজেট কম। এটা অবশ্যই বাড়ানো দরকার। আর যে টাকা বরাদ্দ হয় তা খরচ করতে না পারা অবশ্যই ব্যর্থতা। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতের বিকেন্দ্রীকরণ এখনো হয়নি। মাঠপর্যায়ে স্থাপনা থাকলেও স্থানীয় ব্যবস্থাপকদের অনেক কিছুর জন্যই কেন্দ্রের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। জরুরি অনেক কাজ স্থানীয় ব্যবস্থাপকরা করতে পারেন না, তাদের সেই স্বাধীনতা নেই। ফলে অনেক সেবা বন্ধ থাকে।

স্বাস্থ্য খাতের সমন্বয়হীনতা দূর করতে সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। এ খাতের কেনাকাটায় গতিশীলতা আনতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের জন্য আলাদা অডিট ব্যবস্থা রাখতে হবে। যাদের কারণে বরাদ্দের অর্থ খরচ করা হয় না, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের যেকোনো পরিকল্পনা গ্রহণ থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা রাখতে হবে। সমন্বয় ও তদারকির দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। 

নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে আইনি ব্যবস্থা

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ১১:২৩ এএম
নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে আইনি ব্যবস্থা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মোট ১ হাজার ৭৩৩ প্রার্থী। ওই নির্বাচনের পর ২১টি আসনের ৪৫ জন প্রার্থীর নির্বাচনি ব্যয়ের রিটার্ন নিয়ে গবেষণা করে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা টিআইবি। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ব্যয়ের রিটার্ন জমা দেওয়া এসব প্রার্থীর মধ্যে ৪০ জন ব্যয়ের রিটার্ন জমা দিয়েছেন। এই প্রার্থীদের নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাবের তথ্য গবেষণা করে টিআইবি দেখতে পায়, বেশির ভাগ প্রার্থী তাদের প্রকৃত ব্যয়ের তথ্য গোপন করেছেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আইনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক দলকে প্রার্থী অনুপাতে ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে দলের ক্ষেত্রে নির্বাচনি ব্যয় বিবরণী জমা না দেওয়ার কারণে কোনো দলের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের নজির নেই। অনেকে নির্বাচনি ব্যয়ের তথ্য কৌশলে গোপন করেন। 

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর চার মাস পেরিয়ে গেলেও নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে জমা দেননি শতাধিক প্রার্থী ও ৯টি রাজনৈতিক দল। চট্টগ্রামসহ তিন জেলার প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসাব এখনো পুরোপুরি বুঝে পাননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের দুর্বলতার কারণেই বন্ধ হচ্ছে না এসব অনিয়ম। সংসদ নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন আসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে খবরের কাগজের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরপিও আইনে উল্লিখিত ভোট-পরবর্তী নির্ধারিত সময়ে ২৮টি দলের মধ্যে নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব ইসিতে জমা দিয়েছে মোট ১৯টি রাজনৈতিক দল। 

সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের বিপরীতে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোট ১ হাজার ৯৭৭ জন। তাদের মধ্য থেকে ভোটের পর নির্বাচনি ব্যয় বিবরণী জমা দিয়েছেন ১ হাজার ৭৪৮ প্রার্থী। অন্যদিকে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো নির্বাচনি ব্যয় বিবরণী জমা দেননি শতাধিক প্রার্থী। এ ছাড়া তিন জেলা- চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ ও নাটোরের প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসাব এখনো বুঝে পাননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এবার প্রার্থীদের জন্য ভোটারপ্রতি সর্বোচ্চ ব্যয় ১০ টাকা এবং ভোটার সংখ্যা যা-ই হোক না কেন, একজন প্রার্থীর জন্য সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা নির্বাচনি ব্যয়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে প্রার্থীদের জন্য জেল-জরিমানা আর দলের ক্ষেত্রে নিবন্ধন বাতিলের যে বিধান রয়েছে, তা এখনো কার্যকর করা হয়নি। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, দলের ক্ষেত্রে না হলেও নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব জমা না দেওয়ার সংখ্যা মনে নেই, বেশ কয়েকজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে আমাদের সময় মামলা করা হয়েছিল। অনেকে জেলেও গিয়েছিলেন। এ ছাড়া কয়েকজনকে জরিমানা বা অর্থদণ্ড করা হয়। নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব নিয়ে এই লুকোচুরি বন্ধে আইন করার পরামর্শ দেন তিনি। 

নির্বাচনের প্রকৃত ব্যয় লুকানো, সময়মতো রিটার্ন দাখিল না করা, এগুলো হরহামেশাই লক্ষ করা যায়। কমিশনকে এসব অনিয়মের ব্যাপারে সুস্পষ্ট আইন করতে হবে। অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ায় এ ধরনের অনিয়ম দিনে দিনে বাড়ছে। নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব যথাসময়ে না দিলে দলের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। অনিয়ম রোধে নৈতিক ও জনকল্যাণমুখী রাজনীতিতে কীভাবে ফিরে আসা যায়, তার নীতি-কৌশল দলগুলোকেই নির্ধারণ করতে হবে। সে কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার প্রয়োজন। 

পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ১১:২৯ এএম
পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে পদক্ষেপ নিন

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে পুঁজি হারিয়ে বের হয়ে এসেছেন অনেক বিনিয়োগকারী। তথ্য বলছে, পুঁজিবাজারে ২০১৫ সালের জুন মাসের শেষে বিনিয়োগকারী ছিলেন ৩১ লাখ ৯৫ হাজার। পুঁজিবাজারের এই পতনের জন্য বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা ও আতঙ্কিত হওয়া বড় কারণ। টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ কারণে অনেকে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন। শেয়ারবাজার থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে নেই আইনের কঠোর প্রয়োগ। তাই বিনিয়োগকারীদের আস্থা আসেনি। প্রতিবছর বাজেট ঘোষণার সময় পুঁজিবাজার নিয়ে আশার কথা শোনা গেলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যেন ৫০ হাজার টাকার লভ্যাংশের ওপর কর প্রত্যাহার করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন থেকে একগুচ্ছ সুপারিশ করা হয়েছে। পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে নতুন নতুন কোম্পানি আনা প্রয়োজন। তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির করপোরেট কর ব্যবহারের ব্যবধান বাড়ানোর মাধ্যমে সেটি করা সম্ভব। প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর থেকে চাপ কমাতে না পারলে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। পুঁজিবাজারের লভ্যাংশকে করমুক্ত আয় হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। 

বড় বা ভালো মানের প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত না হলে পুঁজিবাজারের ওপর আস্থা বাড়বে না। তাই ওই সব প্রতিষ্ঠানের ঋণ, মূলধন বা ব্যবসার আকৃতির ওপর তালিকাভুক্তির একটি কাঠামো নির্ধারণ করা যেতে পারে। 

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত ও বাজেটবিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিবেদনে পুঁজিবাজারের গতি বাড়াতে রাজস্ব ছাড়সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু রাজস্ব আদায় কমে যেতে পারে- এমন আশঙ্কা এখন পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) খসড়া বাজেট প্রস্তাবে কিছুই অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পুঁজিবাজারে বিশেষ সুবিধায় অপ্রদর্শিত অর্থ (কালোটাকা) বিনিয়োগের পক্ষে এনবিআর মতামত দিলেও বিপক্ষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আর তাই এ পদক্ষেপ আগামী অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। 

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও অধ্যাপক আবু আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, বেশির ভাগ উন্নত দেশে পুঁজিবাজার থেকে অর্থনীতির মূলধারায় যোগ হয় বড় অঙ্কের অর্থ। ওই সব দেশের সরকার শেয়ারবাজার থেকে আপৎকালীন অর্থ নিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্র কিছুটা অন্য রকম। গত এক যুগে হাজার হাজার কোটি টাকার কারসাজি করা হলেও কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। দীর্ঘ সময়েও পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আসেনি।

বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারবিমুখ হচ্ছেন, এটা রেগুলেটরদের গভীরভাবে ভাবতে হবে। বিশ্লেষকদের সুপারিশগুলো বিবেচনায় এনে বাজেটে পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে। দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে কর আদায়ের বিকল্প নেই। পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে আরও মনোযোগী হতে হবে। বাজেটের মতো বড় আয়োজনের বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। এক কথায় পুঁজিবাজারের গতি ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে পারলে অর্থনীতিতে সফলতা আসবে।

জমির লবণাক্ততা কমিয়ে আনুন

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১০:৫৬ এএম
জমির লবণাক্ততা কমিয়ে আনুন

দেশে দিনে দিনে লবণাক্ত পানি ও মাটির এলাকা বাড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে কৃষির ওপর। নানাভাবে চেষ্টা চলছে লবণসহিষ্ণু ফসল উৎপাদনের। কিন্তু লবণাক্ত এলাকা বৃদ্ধির ফলে সেই উদ্যোগেও বারবার ব্যাঘাত ঘটছে। আবার পানীয় জলে লবণাক্ততা দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ, প্রি-একলাম্পসিয়া, হৃদরোগ, শিশুমৃত্যুর হার বৃদ্ধির সঙ্গে লবণাক্ত পানির যোগসূত্র রয়েছে বলে দাবি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। যদিও অর্থনৈতিকভাবে অনুকূল কিন্তু পরিবেশগতভাবে চিংড়ি চাষের ফলে কিছু এলাকার মানুষ ইচ্ছাকৃত পানি লবণাক্ত করছে। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে স্থায়ী লবণাক্ত পানি ও মাটির এলাকা বেড়ে যায় বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা। 

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০০০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রায় এক দশকে লবণাক্ত জমির পরিমাণ বেড়েছে আগের তুলনায় ৩৫ দশমিক ৫১ হাজার হেক্টর এবং অন্যদিকে চার দশকে ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত লবণাক্ত জমির পরিমাণ ২ লাখ ২৩ হাজারে হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, লবণাক্ত পানি প্রবেশের মাধ্যমে মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিতে এক মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের ২৫ লাখ হেক্টর উপকূলীয় অঞ্চল। এর মধ্যে ১০ লাখ হেক্টরের বেশি জমি বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ততায় আক্রান্ত। জলবায়ুর পরিবর্তন ও শুকনো মৌসুমে নদীর প্রবাহ ক্রমাগত কমে যাওয়ায় চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্র ভূ-ভাগের অনেক গভীরে সমুদ্রের লোনা পানি প্রবেশ করে মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি করছে। ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। 

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সেচের পানির লবণাক্ততার অবস্থা পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে বিভিন্ন উপকূলীয় জেলায় ২০০ ফুটের ১৩০টি বোরহোল স্থাপন করে। তারা লবণাক্ততা মূল্যায়নের জন্য একটি বার্ষিক মনিটরিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করে দেখতে পায় লবণাক্ততা বাড়ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় একটি দল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-মধ্য অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত অধ্যয়ন এলাকার গভীর জলজ/টিউবওয়েলে (গভীরতা ৫০০ ফুট) লবণাক্ততা খুঁজে পায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেতে পারে বিভিন্ন কারণে। বাংলাদেশের বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায় দুটি প্রাকৃতিক কারণে। জোয়ারের সময় লবণযুক্ত পানি জমিতে প্লাবিত হয়েও ভূগর্ভস্থ লবণাক্ত পানি কৈশিক রন্ধ্র দিয়ে মাটির ওপরে চলে আসার কারণে। সাধারণত শুকনো মৌসুমে লবণাক্ত জোয়ারের পানিতে বহু জমি তলিয়ে যায়। তখন লবণাক্ত পানি জমিতে ছড়িয়ে যায়। এ পানি সেচকাজে ব্যবহার করা হলে মাটি বা জমি লবণাক্ত হয়। অন্যদিকে বর্ষা শেষ হলে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মাটি শুকাতে শুরু করে। এর ফলে মাটিতে অনেক ফাটল সৃষ্টি হয়। 

যখন মাটির ওপর রোদ পড়ে তখন মাটির উপরিস্তর থেকে পানি বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে চলে যায় এবং ভূগর্ভস্থ লবণাক্ত পানি ওই ফাটল দিয়ে ভূমির উপরিস্তরে চলে আসে। ফলে জমির উপরিস্তর লবণাক্ততায় আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া মনুষ্যসৃষ্ট কারণেও লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়। লবণাক্ততার কারণে উদ্ভিদের বৃদ্ধি কমে যায়, ফুলের সংখ্যা হ্রাস পায়, অনেক ক্ষেত্রে পরাগায়ণও হয় না। এতে ফসলের ফলন বিভিন্ন মাত্রায় কমে যায়। মাটি লবণাক্ত হওয়ার কারণে মৃত্তিকা দ্রবণের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। তখন অল্প ঘনত্বের গাছের রস চলে যায় মাটিতে। ফলে গাছ পানিশূন্য হয়ে নেতিয়ে পড়ে। লবণাক্ত জমিতে দ্রবীভূত লবণের মাত্রা বা পরিমাণ বেশি থাকায় গাছ মাটি থেকে খাদ্য উৎপাদন ও পানি কোনোটি সহজে শোষণ করতে পারে না। প্রতিকূলতার সৃষ্টি হয় শোষিত উপাদানগুলোর আত্তীকরণেও। 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত উষ্ণায়ন যত বাড়বে, ততই আমাদের দেশের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে। সেই সঙ্গে লবণাক্ত পানি আরও ছড়িয়ে পড়বে ফলে বিপদ আরও বাড়বে।’ 

জমির লবণাক্ততা রোধে প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণ দুটো চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। লবণ পানির ব্যবহার কমাতে হবে। পোল্ডার ব্যবস্থাপনাসহ স্লুইসগেট ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে। লবণসহিষ্ণু বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন করতে হবে। সর্বোপরি মাটি ও পানির লবণাক্ততা রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।