![আমার পথ প্রবন্ধের ৪টি অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর, ২য় পর্ব, এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র](uploads/2024/12/03/এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র-২-1733223260.jpg)
প্রবন্ধ: আমার পথ
অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন: ‘মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম।’ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা তুলে ধরে ‘মানুষ-ধর্মকে সবচেয়ে বড় ধর্ম’ বলেছে।
ভারতের স্বাধীনতা আর মুক্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল হিন্দু-মুসলিমের বিরোধ। এ সাম্প্রদায়িক বিভেদ না থাকলে আরও আগে দেশ মুক্ত হতো। প্রত্যেকে যার যার ধর্মকে বড় ভেবেছে; কিন্তু অন্যকে সম্মান করতে শেখেনি। ফলে মানবিক চেতনাই যে সবচেয়ে বড় তার কেউ অনুভব করতে পারেনি। মানবিক চেতনাকে মূল্য দিতে পারলেই প্রকৃত ধার্মিক হওয়া যায়। এভাবেই ‘মানুষ-ধর্মকে সবচেয়ে বড় ধর্ম’ মানতে পারলে জাতিগত ঐক্য-সংহতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন: ‘আমি আছি- এই কথা না বলে সবাই বলতে লাগলাম গান্ধী আছেন’ উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘আমি আছি এই কথা না বলে সবাই বলতে লাগলাম গান্ধী আছেন’ উক্তিটি দ্বারা সেকালের ভারতবর্ষের মানুষের পরনির্ভরশীলতার কথা বোঝানো হয়েছে।
মহাত্মা গান্ধী জাতির অভিভাবকরূপে ভারতের মানুষকে স্বাবলম্বনের শিক্ষা দিচ্ছিলেন। সবাইকে শেখাচ্ছিলেন নিজের ওপর বিশ্বাস অটুট রাখতে। কিন্তু সেদিন ভারতের মানুষ তার আদর্শ, তার কথা ঠিক বোঝেনি। ফলে তারা নিজের অস্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সক্রিয় না হয়ে গান্ধী আছেন, এ কথা বলে গান্ধীর ওপর নির্ভরশীলতার বিষয়টিই ব্যক্ত করেছিলেন। প্রাবন্ধিক ভারতীয় জনগণের এমন পরাবলম্বনকে প্রকাশ করতেই এ কথা বলেছেন।
আরো পড়ুন : আমার পথ প্রবন্ধের ২টি অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর, ১ম পর্ব
প্রশ্ন: অন্তরে মিথ্যার ভয় থাকলে কেন বাইরের ভয়কে মানুষ ভয় মনে করে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অন্তরে যদি ভণ্ডামি, ছলনা, দুর্বলতা, অযোগ্যতা থাকে তাহলে বাইরের যেকোনো শক্তিই তাকে পরাজিত করে বলে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
আত্মনির্ভরশীলতায় উজ্জীবিত মানুষ যদি নির্ভীক চিত্তে যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে তবেই ব্যক্তি থেকে সমষ্টিতে সচেতনতার ধারাবাহিক উজ্জীবন ঘটবে। পরাধীন ভারতবর্ষে আত্মবিশ্বাসী হয়ে আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন মানুষের ভীষণ অভাব ছিল। ফলে তারা বাইরের ব্রিটিশ শক্তিকে যমের মতো ভয় পেয়ে তাদের দাসত্বে নিজেদের বহুকাল পরাধীন রেখেছিল। অন্তরে শক্তি না থাকায়, যোগ্যতা ছিল না বলে, অন্তরের মিথ্যা ভয়ে মানুষ সেদিন বাইরে ব্রিটিশ শক্তিকে ভয় পেত।
প্রশ্ন: কাজী নজরুল ইসলাম ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায়কে দূর করতে চেয়েছিলেন কেন?
উত্তর: মানব-ধর্মকে সবচেয়ে বড় ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করে একতাবদ্ধ ভারত গঠন করার প্রত্যয়ে প্রাবন্ধিক ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায় দূর করতে চেয়েছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলাম আজীবন মানব-ধর্মে বিশ্বাসী। তার কাছে মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম। তার উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায় বা ফাঁকি কোথায় তা দেখিয়ে দিয়ে এর গলদ দূর করা এবং দেশব্যাপী মানব-ধর্ম তথা সব ধর্মের মানুষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা। আর এই কারণেই তিনি হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায় দূর করতে চেয়েছিলেন। জাতীয় জীবনে উন্নতি এবং সমৃদ্ধিতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবিক চেতনা দ্বারা উদ্বুদ্ধ হতে না পারলে কখনোই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়; এমনকি স্বাধীনতা অর্জন করলেও তার সুফল ভোগ করা যাবে না। এটি-ই প্রাবন্ধিক বিশ্বাস করতেন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা
কবীর