
উপন্যাস: কাকতাড়ুয়া
অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন: আলো-আঁধার বুধার কাছে সমান কেন?
উত্তর: বুধার জীবন ছন্নছাড়া, উদ্দেশ্যহীন বলে দিনের আলো বা রাতের আঁধার বুধার কাছে বিশেষ কোনো পার্থক্য সৃষ্টি করে না।
ছেলেবেলায় বাবা-মাসহ পরিবারের সবাইকে হারিয়ে চরম মানসিক আঘাত পায় বুধা। সেই থেকে তার ভবঘুরে জীবনের শুরু। মাঠে-ঘাটে গন্তব্যহীন ঘুরে বেড়ায় সে। রাত কাটে স্কুলের বারান্দা, ঢেঁকিঘর, খড়ের গাদা নতুবা নৌকায় শুয়ে। সময়ের কোনো হিসাবে সে নিজেকে বন্দি করে না। দিন কী রাত সবই তার কাছে তাই একই রকম।
প্রশ্ন: ‘ও পাগল হয়নি, শক্ত হয়ে গেছে’ কেন?
উত্তর: চোখের সামনে পরিবারের সবাইকে মৃত্যুবরণ করতে দেখেছে বুধা। আলোচ্য বাক্যে তার মনের অবস্থা প্রকাশ পেয়েছে।
একরাতেই বুধার বাবা-মা ও চার ভাই বোনের সবাই প্রাণ হারায় কলেরায় আক্রান্ত হয়ে। এত কাছ থেকে আপন মানুষদের এভাবে হারিয়ে যেতে দেখে শোকে পাথর হয়ে যায় বুধা। সেই থেকেই তার আচার-আচরণের কোনো ঠিক নেই। কেউ কেউ ভাবে বুধা বুঝি পাগল হয়ে গেছে। আর সচেতন মানুষরা জানে বুধা পাগল হয়নি। মৃত্যুশোকের তীব্রতা তার স্বাভাবিক অনুভূতিকে ভোঁতা করে দিয়েছে। মনের ভেতর তৈরি হওয়া স্বজন হারানোর গভীর ক্ষত বুধার মনে স্থায়ী ছাপ তৈরি করেছে।
প্রশ্ন: চাচির প্রতি বুধা মনে মনে কৃতজ্ঞ হয়ে ওঠে কেন?
উত্তর: চাচির ভর্ৎসনার কারণেই বুধা আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছিল। এ কারণেই চাচির প্রতি সে কৃতজ্ঞ হয়ে ওঠে।
এক রাতের ব্যবধানে পরিবারের সব সদস্যকে হারানো অসহায় বুধার আশ্রয় জোটে চাচার ঘরে। বেকার চাচা তার আট সন্তান নিয়ে অতি কষ্টে দিনযাপন করছিলেন। তাই বিশাল এই পরিবারে বুধা যে একটি বোঝা সেই কথা বুধাকে স্মরণ করিয়ে দেয় চাচি। চাচির কথা শুনে বুধা বুঝতে পারে আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার গুরুত্ব। চাচির সংসার ছেড়ে সে নিজের ভার নিজের কাঁধে নিয়ে নেয়। এভাবে মুক্ত স্বাধীন জীবনের স্বাদ পায়, যা চাচির সংসারে পড়ে থাকলে তার পক্ষে সম্ভব হতো না। এ কারণেই বুধা মনে মনে চাচির প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে উঠেছিল।
প্রশ্ন: বুধা আতঙ্কে ধানখেতের কাদায় মিশে যায় কেন?
উত্তর: পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা দেখে বুধা আতঙ্কে ধানখেতের কাদায় মিশে যায়।
১৯৭১ সালের একদিন পাকিস্তানি হানাদাররা বুধাদের গ্রামে এসে উপস্থিত হয়। গ্রামের বাজারে তারা হামলা চালায়। গুলি করে মানুষ হত্যা করে। বাজারে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুনে পুড়ে মারা যায় অনেকে। পাকিস্তানি হানাদারদের নিষ্ঠুরতার কথা জানা ছিল না বুধার। এ কারণেই পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা দেখে বুধা আতঙ্কে ধানখেতের কাদায় মিশে যায়।
আরো পড়ুন : কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের ৩১টি জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর, ৩য় পর্ব
প্রশ্ন: বুধার গ্রামের লোকেরা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছিল কেন?
উত্তর: পাকিস্তানি হানাদারদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে বুধার গ্রামের লোকেরা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছিল।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশের মানুষের ওপর বর্বর নির্যাতন চালায়। পাখির মতো মানুষকে হত্যা করে। বাড়ি-ঘর-বাজার জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসে উল্লেখিত বুধাদের গ্রামেও একইভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় হানাদাররা। প্রাণ বাঁচাতে বুধার গ্রামের মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ঘরবাড়ি ফেলে পালাচ্ছিল।
প্রশ্ন: ‘যেন পুরো একটি বিল ঢুকে আছে ওর চোখে’ কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: বুধার বোন বিনুর মায়াঘেরা চোখের সৌন্দর্যের অনুভূতি প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য বক্তব্যে।
বিনু ছিল বুধার পিঠাপিঠি বোন। তার চোখ জোড়া ছিল অসম্ভব সুন্দর। বিলের মতোই গভীর ও স্বচ্ছ ছিল তার চাহনি। সেই বোনটি কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। মৃত বোনের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে বুধা।
প্রশ্ন: বুধা আলির কাছ থেকে কেরোসিনের শিশি চেয়ে নেয় কেন?
উত্তর: আহাদ মুন্সির ঘরে আগুন দেওয়ার জন্য বুধা আলির কাছ থেকে কেরোসিনের শিশি চেয়ে এনেছিল।
১৯৭১ সালে এ দেশে পাকিস্তানিদের বর্বরতার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগী হয়েছিল এ দেশেরই কিছু নরপশু। আহাদ মুন্সি তাদেরই একজন প্রতিনিধি। বুধাদের গ্রামে পাকিস্তানিদের ধ্বংসযজ্ঞের সে ছিল অন্যতম দোসর। বুধা তাই আহাদ মুন্সিকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার কথা ভাবে। আহাদ মুন্সির ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য সে আলির কাছ থেকে কেরোসিনের শিশি চেয়ে নেয়।
প্রশ্ন: বুধা আহাদ মুন্সির বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় কেন?
উত্তর: দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য আহাদ মুন্সিকে শাস্তি দেওয়ার জন্য বুধা তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বুধাদের গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে। গ্রামে গণহত্যা চালায়। তাদের হত্যাযজ্ঞে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা পালন করে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আহাদ মুন্সি। আহাদ মুন্সিকে বুধা তাই উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সে আহাদ মুন্সির বাড়িতে আগুন দেয়।
লেখক : সিনিয়র শিক্ষক (বাংলা)
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল, ঢাকা
কবীর