মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের প্রভাব বাংলাদেশেও আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতের ফলে বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা যায়। দেশের অর্থনীতিতে এই সংঘাতের কিছুটা প্রভাব আসতে পারে। এমন পরিস্থিতিতেও আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের ওপর এর প্রভাব প্রশমনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
বুধবার (৮ মে) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবুল কালামের লিখিত প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জনগণের ওপর থেকে মূল্যস্ফীতির প্রভাব কমাতে বর্তমান সরকারের নেওয়া নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনসাধারণের কষ্ট লাঘবে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এরই মধ্যে আমরা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিকে অনেকাংশে সংযত করতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারের কয়েকটি পণ্য যেমন- জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, গম, সারসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘টাকার বিনিময় হারের সাম্প্রতিক পতন অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এ ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য শিগগিরই ক্রলিং পেগভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় নীতি গ্রহণ করা হবে। নির্ধারিত করিডরভিত্তিক এ ব্যবস্থা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের অস্বাভাবিক উত্থান-পতন রোধ করবে বলে আশা করা যায়। মূল্যস্ফীতির ওপর বাহ্যিক প্রভাব কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিলাসদ্রব্য বা অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যে এলসি স্থাপন সহজীকরণ করা হয়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হবে।’
তিনি বলেন, ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটে ওএমএস খাতে চার লাখ টন চালের সংস্থান রয়েছে। চাল ও আটার বাজারমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বর্তমানে ওএমএস কর্মসূচিতে সারা দেশে সর্বমোট ৮৭১টি কেন্দ্রে দৈনিক মোট ৮৬৯ টন চাল এবং ১ হাজার ১০১ টন করে আটা বিক্রি করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ওএমএস (সাধারণ) খাতে প্রায় ১ দশমিক ৬৭ লাখ টন চাল এবং ২ দশমিক ১৩ লাখ টন আটা বিক্রি করা হয়েছে। এ ছাড়া টিসিবির মাধ্যমে ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় ভর্তুকি মূল্যে এক কোটি পরিবারের মধ্যে পাঁচ কেজি করে প্রতি মাসে মোট ৫০ হাজার টন চাল বিতরণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে টিসিবির কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রশ্নে ড. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘টিসিবিতে যে লোকবল আছে, সেটা দিয়ে আমরা মানুষের যে সেবা করে যাচ্ছি, সেটাই যথেষ্ট। সাধারণ মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায়, বিশেষ করে যারা সীমিত আয়ের তাদের কষ্ট হচ্ছে। তবে গ্রামে যারা নিজেরা উৎপাদন করতে পারেন বা করছেন তাদের খুব একটা কষ্ট নেই, হাহাকারও নেই। তার পরও আমাদের সব সময় প্রচেষ্টা থাকে দ্রব্যমূল্য যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ জন্য যে যে পণ্যের প্রয়োজন, সেটা যথাযথভাবে দেশে উৎপাদনের পদক্ষেপ নিয়েছি। পাশাপাশি আমদানিও করে যাচ্ছি। সেটা যত টাকাই লাগুক না কেন, আমরা কিন্তু খরচ করে যাচ্ছি। যেটা আমাদের রিজার্ভেও চাপ পড়ছে। মানুষের কল্যাণটা হচ্ছে আমাদের সব থেকে বড় কথা। সেদিকে আমরা লক্ষ রাখছি।’
সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে পদক্ষেপ নিয়ে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হকের সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ট্রাফিক পুলিশ দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তাদের ঈদ বা ঝড়-বৃষ্টি, রোদ বলে কিছু নেই। তারা তাদের কর্তব্য পালন করে যান। কিন্তু মানুষের সচেতনতা না এলে কী করবেন? হেলপার যদি গাড়ি চালায় বা যার লাইসেন্স নেই, সে যে কখন কোন গাড়িতে বসে চালাতে শুরু করে- এটা তো বোঝাও দুষ্কর। এভাবে গাড়ি চালাতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটে। এরা নিজেও মরে, যাত্রীদেরও মারে।’
দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। আমরাও গাড়ি কেনার সুযোগ দিয়েছি মানুষকে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও সুযোগ দিয়েছি। এখন আমাদের গাড়ির সংখ্যা এত বেশি, কিন্তু সেই তুলনায় ড্রাইভারের সংখ্যা খুব কম। আমরা চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নিচ্ছি। এখন শুধু হাতে-কলমেই ট্রেনিং নয়, একেবারে কম্পিউটারাইজড। ডিজিটাল সিস্টেমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাতে লাইসেন্স দেওয়া হয়, সেই পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।’