কোরআন ও হাদিসের বহু জায়গায় জিনদের অস্তিত্বের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। অতীত ও বর্তমানের অসংখ্য মানুষ নানাভাবে জিনের অস্তিত্ব টের পেয়েছেন। অনেকে অবশ্য বুঝে উঠতে পারেননি, সেগুলো জিন ছিল। কেউ তাদের ভেবেছে আত্মা, কেউ অদৃশ্য মানব, কেউ ভিনগ্রহের প্রাণী; কেউ আবার এ রকম কোনো কিছু। মানুষের মতো জিনেরাও পথ চলে পায়ে হেঁটে বা জন্তুর পিঠে চড়ে। তবে জিনেরা খুব দ্রুতগতিতে উড়তেও পারে, যা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। ওড়ার জন্য তারা তাদের পাখা ব্যবহার করে। সুলাইমান (আ.) যখন বললেন, রানি বিলকিস এখানে আসার আগেই তোমাদের মধ্যে কে তার পুরো সিংহাসন উঠিয়ে আনতে পারবে? তখন ইফরিত জিন বলেছিল, ‘ইফরিত (সবচেয়ে শক্তিশালী জিন) বলল, আপনি বৈঠক শেষ করার আগেই আমি তা নিয়ে আসব। আর নিশ্চয় আমি এ কাজে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত।’ (সুরা নামল, আয়াত: ৩৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জিনেরা তিন ধরনের। এক. যারা কুকুর এবং সাপের আকৃতি ধারণ করতে পারে। দুই. যারা বাতাসে উড়তে পারে। তিন. যারা এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ায়। আবার কোথাও অবস্থান করে।’ (ইবনে হিব্বান, ৬১২৩)
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, ‘ইবলিস চার পাখা বিশিষ্ট।’ (শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকি: ১৪৪)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসতার (রা.)-এর বর্ণিত হাদিসে এসেছে, জিনেরা আল্লাহর রাসুলকে তাদের খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল। তিনি বলেছেন, ‘যেসব পশু আল্লাহর নামে জবাই করা হবে, সেগুলোর হাড় তোমাদের খাবার। তোমাদের হাতে পড়ামাত্রই তা মাংস দিয়ে আবৃত হয়ে যাবে। আর গোবর তোমাদের পশুদের খাবার।’ (মুসলিম, হাদিস: ৪৫০)
পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তাদের মধ্যে যাদের পারো, তোমার কণ্ঠস্বর দিয়ে সত্যচ্যুত করো এবং তাদের তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনীর মাধ্যমে আক্রমণ করো।’ (সুরা ইসরা, আয়াত: ৬৪)
তার মানে শয়তানের ঘোড়া আছে এবং সে তাতে চড়ে ক্রমাগত আদম সন্তানকে আক্রমণ করে। আবার এমন কিছু প্রাণীও আছে, যেগুলো শয়তানকে সঙ্গ দেয়। যেমন, উট। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘উটকে শয়তান থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’ ইমাম খাত্তাবি (রহ.) বলেন, ‘কথাটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে, উটের মাঝে শয়তানের মতোই অবাধ্যতার স্বভাব আছে এবং একে সামলানো বেশ কঠিন।’
আল্লাহতাআলা পৃথিবীতে বসবাসরত জীবের সৃষ্টির সূচনা করেছেন পানি থেকে। অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় কুকুর ও উটকেও সৃষ্টি করা হয়েছে পানি থেকে। এমন নয় যে, তাদেরকে সত্যি সত্যিই জিন বা আগুন থেকে তৈরি করা হয়েছে। পক্ষান্তরে শয়তানের সৃষ্টি আগুন থেকে।
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক