পাঠকের চাহিদা মেটাতে মুক্তচিন্তার স্বাধীন দৈনিক খবরের কাগজে শুরু থেকেই ছিল বাড়তি চ্যালেঞ্জ। নতুন কিছু করে দেখানোর তাগিদ। ২০২৩ সালে পত্রিকাটি বাজারে আসার পরই জায়গা করে নেয় পাঠকের মনে। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার প্রমাণ দিতে ছুটতে হয়েছে রাত-দিন।
প্রতিদিনের ঘটনার তরতাজা খবর, অর্থকড়ি, রূপসী বাংলা, বিশ্বগ্রাম, ক্যাম্পাস, খেলার ভুবনে সব ধরনের তথ্যে ভরপুর পত্রিকার পাতা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের বিভাগীয় শহর খুলনার প্রতিনিধি হিসেবে এক বছরে প্রত্যন্ত অঞ্চলের খবর পত্রিকার পাতায় তুলে আনার চেষ্টা করেছি।
দেশের অন্যতম শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় খুলনা শহরকে বলা হয় শিল্পনগরী। এখানে আছে প্রাচীনতম নদীবন্দর, অপরূপ সৌন্দর্যের সমারোহ সুন্দরবন। আছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোংলা সমুদ্রবন্দর। বিভাগীয় শহর হওয়ায় রাজনীতি, অর্থনীতি, উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, ভোগান্তি, বঞ্চনায় বিভিন্ন ইস্যুতে বারবার শিরোনাম হয়েছে খুলনা। পত্রিকার পাতায় আমরা তুলে ধরেছি খুলনায় স্বাস্থ্য খাতের কমিশন বাণিজ্য, ধাপে ধাপে ভোগান্তি ও নানা সীমাবদ্ধতায় ব্যাহত চিকিৎসাসেবার কথা। সেই সঙ্গে প্রকাশ পেয়েছে পযর্টন সম্ভাবনায় সুন্দরবনে গহিন অরণ্যের হাতছানি, পিছিয়ে পড়া দক্ষিণের অথর্নীতি, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে অর্থ লুটপাট, নাগরিক ভোগান্তি ও কর্মসংস্থানের সক্ষমতা হারানো খুলনাসহ নানা প্রতিবেদন।
পাঠকের চাহিদা মেটাতে খুলনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খবর, সরকার পতনের পর দখলবাজি, নিরীহ ব্যবসায়ীকে সাজানো মামলায় হয়রানি, ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসী বাহিনীর সশস্ত্র মহড়ার সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে পত্রিকার পাতায়। খুলনা সিটি করপোরেশন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ওজোপাডিকো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদোন্নতি, দায়িত্ব বদল, চাকরি থেকে অব্যাহতি, বদলি বা হয়রানির ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদন করতে গিয়ে মুখোমুখি হয়েছি বিগত কয়েক বছর ধরে বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতায় ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় খুলনার ডুমুরিয়া-ফুলতলা এলাকার এক সময়কার কৃষিনির্ভর বিল ডাকাতিয়া এখন কৃষকের গলার ফাঁদ হয়ে দেখা দিয়েছে। চলতি বছরে টানা ভারী বৃষ্টিতে বিলের হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি, মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে দীর্ঘমেয়াদে নদী-খাল খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি তাৎক্ষণিক সংকট মোকাবিলায় সাবমারসিবল এক্সিয়াল ফ্লো পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে পাউবো দরপত্র আহ্বান করে জার্মানি থেকে পাম্প আনার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই ২০২০ সালে অপরিকল্পিতভাবে শুরু হয় ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ। সেতুতে ধীরগতির যানবাহনে চলাচলের সুবিধায় মাঝপথে পরিবর্তন আনা হয় নকশায়। জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় আটকে গেছে সেতুর নির্মাণ কাজ। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ শুরু না করলে দরপত্র বাতিলের কথা বলেছে সড়ক বিভাগ। অপরদিকে খুলনা শহরে প্রবেশের সবগুলো সড়কের খানাখন্দে দীর্ঘদিন ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের কাছে এক কিলোমিটার সড়কে রয়েছে ১১ বছরের ভোগান্তি। গল্লামারী ব্রিজের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় সেখানেও যানজটের ভোগান্তি লেগে থাকে।
নগরীর বিভিন্ন সড়কে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে মূল সড়কে। রয়েছে বেপরোয়া ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, মোটরচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য। এতে ব্যাহত হচ্ছে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
এসব প্রতিবেদন প্রকাশের পর খুলনা সিটি করপোরেশন চলতি মাসের শুরুতে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সড়কে যানবাহন চলাচলের ভোগান্তি কমাতে জরুরি ভিত্তিতে ইট দিয়ে হেরিং বন তৈরির করার কাজ শুরু করেছে। বিভিন্ন কাজের ঠিকাদারকে যথাসম্ভব দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে। আমি চেষ্টা করেছি এই অঞ্চলের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা আর প্রত্যাশার প্রতিচ্ছবি প্রতিধ্বনি খবরের কাগজে তুলে ধরতে। খবরের কাগজ নিখাদ-নির্ভীক নিরপেক্ষ। খবরের কাগজের সঙ্গে থাকুন। নিজেকে আপডেট রাখুন।