চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলার ১১৫তম আসর উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। এতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার হোমনার বাঘা শরীফ বলী। তিনি লড়েছিলেন একই এলাকার রাশেদ বলীর সঙ্গে।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকাল চারটা থেকে শুরু হয় জব্বারের বলী খেলার ১১৫তম আসরের প্রথম রাউন্ড। এই রাউন্ডে শতাধিক বলী খেলায় অংশ নেন। পরে সেমি ফাইনালে ঝরে যায় অনেকে। প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়ে খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমাকে হারিয়ে ফাইনালে যান কুমিল্লার রাশেদ বলী। ফাইনালে তিনি খেলেন তারই এলাকার বাঘা শরীফের সঙ্গে। ফাইনালে প্রায় ১১ মিনিট লড়াইয়ের পর বাঘা শরীফের কাছে হার মানতে হয় রাশেদকে।
জানা যায়, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বলী খেলায় ২০১৬, ২০১৭, ২০১৯ ও ২০২৩ সালে চ্যাম্পিয়ন হন কুমিল্লার শাহজালাল বলী। আর এবারের চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ ও রানার্স আপ রাশেদ বলী তারই শিষ্য। এবারও শাহজালাল বলী খেলায় অংশ নেওয়া কথা ছিল। কিন্তু দুই শিষ্যকে সুযোগ করে দিতে ফাইনালের আগে তিনি খেলা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন।
খেলায় তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে জয় পান খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমা। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার তৃতীয় স্থান অধিকার করেন তিনি। আর চতুর্থ স্থান অধিকার করেন সীতাকুণ্ডের রাসেল বলী।
বৃহস্পতিবার বিকাল চারটায় নগরীর লালদিঘী পাড়ের মাঠে নির্মিত বালির মঞ্চে বেলুন উড়িয়ে বলী খেলার উদ্বোধন করেন সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। এসময় প্রধান অতিথি ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাউজানের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ ও অন্যান্যরা।
বলী খেলা দেখতে দুপুর ১টা থেকেই নগরের লালদিঘী পাড়ে ভিড় জমাতে থাকে দর্শনার্থীরা। দুপুর দুইটার আগেই লালদিঘীর পাড়ের মাঠটি কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। টানটান উত্তেজনার মধ্যে বলী খেলা জমে ওঠলে দর্শনার্থীর চাপ বাড়ে কয়েকগুণ। এরপর শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ভেতরে দর্শনার্থী প্রবেশে বাধা দেয় পুলিশ। এরপরও সীমানা প্রাচীর টপকে ঢুকে পড়েন অনেকে। মাঠের তিনটি ফটক ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে বহু মানুষ। এসময় উত্তেজিত জনতাকে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে।
এমনকি বহুতল ভবনের ছাদ, দেওয়ালের কার্নিশ, গাড়ির ছাদ, গাছের ঢালসহ বিভিন্ন উঁচু স্থানে বসে বলী খেলা উপভোগ করেন হাজারো মানুষ। মহল মার্কেট, লালদিঘী পাড়, জেল রোড়, কোতোয়ালি মোড়, জহুর হকার্স মার্কেট, আন্দরকিল্লা, সিনেমা প্যালেস ও আশেপাশের এলাকায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিলো না। বলী খেলাকে ঘিরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই জমজমাট বেচাকেনা হয় বৈশাখী মেলায়। বিশেষ করে গৃহস্থালী পণ্যের দোকানগুলোকে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল।
আয়োজক কমিটির সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ খবরের কাগজকে জানান, এবারের আসরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শতাধিক বলী অংশ নেন। প্রথম রাউন্ডে যারা জয় পেয়েছেন সকলকে ক্রেষ্ট ও নগদ ২ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও চ্যাম্পিয়নকে ট্রফিসহ ৩০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড, রানার্স আপকে ট্রফিসহ ২০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড ও তৃতীয় স্থান অধিকারীকে ট্রফিসহ ১০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
মনির/এমএ/