ঢাকা ১০ চৈত্র ১৪৩১, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
English

খেলার শব্দ

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:২৫ পিএম
খেলার শব্দ
এঁকেছেন মাসুম

আমার রুমের সঙ্গে একটা বারান্দা আছে। এক বিকেলে সেখানে দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় চোখ পড়ল সামনের রাস্তায়। অনেকগুলো ছেলে ক্রিকেট খেলছে। আশপাশেই থাকে তারা। প্রতিদিনই খেলতে আসে, তাই চেহারাগুলো পরিচিত। রাস্তাটা ছোট, গাড়িঘোড়ার ভিড় নেই। ওদের খেলাও জমে উঠেছে। পাশের কবরস্থানে প্রায়ই ওদের বল চলে যাচ্ছে। ওরা গিয়ে বল আনছে। 
এখন বিকেল। অবশ্য ওরা সন্ধ্যার পরও সড়কবাতির আলোতেও খেলে। রাতে আমাদের বাসার সামনে ব্যাডমিন্টন খেলাও হয়। মাঝে মাঝে আমিও বাবার সঙ্গে খেলা দেখতে যাই। 
যা-ই হোক, সেদিন বিকেলে খেলা চলার সময় হঠাৎ গলিতে একটি প্রাইভেট কার ঢুকল। এগিয়ে গেল ছেলেগুলোর দিকে। গাড়ির ভেতর কয়েকজন লোক বসেছিল। তাদের হাতে লাঠি। লাঠি দিয়ে তারা রাস্তার ছেলেদের কয়েকজনকে আহত করল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। 
আম্মু এল তখনই। জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে?
বললাম, কয়েকজন দুষ্ট লোক এসে যারা খেলছিল, তাদের মারল। 
আম্মু শুনে অবাক হলেন। বললেন, আমাদের এখনই পুলিশ ডাকতে হবে। 
আমরা ফোন করে পুলিশকে আসতে বললাম। পুলিশ আসার আগেই খারাপ লোকগুলো পালিয়ে গেল। 
আহত ছেলেগুলোর মধ্যে একজন ছেলে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। আম্মু তাকে দেখতে গেল। বাসায় ফেরার পর জিজ্ঞেস করলাম, আম্মু, পচা লোকগুলো কেন ওদের মারল?
আম্মু বলল, শুনলাম পাড়ার অন্য ছেলেদের সঙ্গে বড় মাঠে তাদের মারামারি হয়েছিল। সেজন্য ওরা এসে এটা করেছে।
ওরা কি কালকেও নিচের রাস্তায় খেলতে যাবে?
না। আম্মু বলল, সবাই বলছে রাস্তায় খেলতে যাওয়ার দরকার নেই। ওরা ছাদে খেলবে।
কিন্তু ছাদ থেকে বল পড়ে গেলে?
নিচে গিয়ে নিয়ে আসবে। এখন যাও, পড়তে বসো।
আমি আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম, না মা, ছাদে খেলতে মানা করে দাও। কেউ যদি খেলতে গিয়ে ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়? 
বাজে কথা বলো না তো। কখনোই তোমার মুখ দিয়ে ভালো কথা শুনি না। এখন যাও তো, পড়তে বসো।- আম্মু আমাকে ধমক দিয়ে পড়তে বসতে পাঠিয়ে দিল। 
তারপর থেকে প্রতিদিনই ছেলেরা ছাদে খেলে। একদিন খুব দুঃখজনক ব্যাপার ঘটে গেল। 
খেলার সময় একটা ছেলে কীভাবে যেন ছাদ থেকে পড়ে গেল। হাসপাতালে নেওয়ার পরও ছেলেটাকে বাঁচানো 
গেল না।
এখন আর কারও ছাদে যাওয়ার অনুমতি নেই। ছাদ তালা দিয়ে রাখা হয়। তবু সন্ধ্যার পর থেকে ছাদে বল খেলার আওয়াজ পাওয়া যায়। আর সবাই সেই আওয়াজ শুনতে পায়। প্রতিদিনই আমরা ছাদে খেলার শব্দ শুনি। প্রতিদিনই আমরা ভয় পাই। 
আমার এখন রাতে ভয়ে ঘুম আসে না। একটি কথাই বারবার মনে পড়ে, সেদিনের মারামারিটা না হলে আজ ছাদে এসব হতো না। 

লেখক উত্তরার ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

প্যাঙ্গোলিন: আঁশওয়ালা লাজুক প্রাণী

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০১:০১ পিএম
প্যাঙ্গোলিন: আঁশওয়ালা লাজুক প্রাণী
প্যাঙ্গোলিন

আচ্ছা তোমরা কি কাঠবিড়ালী চিনো? যারা গাছে গাছে লাফিয়ে বেড়ায়। তবে আজকে তোমাদের কাঠবিড়ালী সম্পর্কে বলব না। আজ জানাব ‘প্যাঙ্গোলিন’ বা বনরুই নামের এক সুন্দর প্রাণী সম্পর্কে। 
এই প্রাণী কাঠবিড়ালীর মতো গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়। এদের শরীরের জন্যই এরা বেশি জনপ্রিয়। কেননা প্যাঙ্গোলিনের শরীরে মাছের আঁশের মতো বড় বড় আঁশ দিয়ে আচ্ছাদিত থাকে। শত্রু কিংবা বিপদের ঘ্রাণ ফেলেই এরা শরীর গুটিয়ে ফেলে। শক্ত বলের মতো কুঁকড়ে যায়। চলো প্যাঙ্গোলিনের শারীরিক গঠন সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জানা যাক।
প্যাঙ্গোলিন স্তন্যপায়ী প্রাণী। এদের চারটি পা, একটি লেজ আছে। পায়ে আছে পাঁচটি করে আঙুল। এদের মাথা সরু ও ছোট। প্যাঙ্গোলিনের কোনো দাঁত নেই। তবে তাদের আঠাল জিভ আছে, যা দিয়ে তারা খাবার ধরে খেতে পারে। 
কিছু কিছু প্যাঙ্গোলিনের ইয়া বড় জিভ থাকে। এটা দিয়ে তারা শিকার করতে পারে। তা ছাড়া তারা শিকার করতে নখও ব্যবহার করে। এদের প্রধান খাদ্য পিঁপড়া, উইপোকা ইত্যাদি। প্যাঙ্গোলিন জনপ্রিয় তার শরীরের আঁশের কারণে। এদের শরীরের আঁশগুলো অনেকটা রুই মাছের মতো সাজানো থাকে। তাই একে বনরুইও বলা হয়। এই আঁশগুলো অনেকটা আমাদের নখের মতো। কারণ এই আঁশগুলো কেরাটিন নামক এক ধরনের পদার্থ দিয়ে তৈরি। কেরাটিন দিয়ে মানুষের নখ এবং চুলও তৈরি। এরা বিপদের আঁচ পেলেই বলের মতো করে শরীর গুটিয়ে ফেলে। তাদের এই অবস্থাকে মালয় ভাষায় বলা হয় ‘পেঙ্গুলিন’। সেখান থেকে তাদের নাম ইংরেজিতে হয়েছে প্যাঙ্গোলিন।
প্যাঙ্গোলিন দেখলে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। এরা শান্ত মেজাজের এবং খুব লাজুক স্বভাবের হয়ে থাকে। মানুষকে আক্রমণ করে না। মানুষ দেখলে এরা লুকিয়ে যায়।
প্যাঙ্গোলিন খুব ভালো সাঁতার কাটতে পারে এবং গাছে চড়তে পারে। এরা মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বাস করে। এদের কোনো কোনো প্রজাতি গাছে বসবাস করে। শিকারি থেকে বাঁচতে গাছের ফাঁপা অংশে ঘুমায়। এরা বেশির ভাগই দিনে ঘুমায়, রাতে জেগে থাকে। অর্থাৎ এরা নিশাচর প্রাণী।
প্যাঙ্গোলিন এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। পৃথিবীতে সাত প্রজাতির বনরুই রয়েছে, এদের মধ্যে এশিয়ায় আছে চার প্রজাতির বনরুই বা প্যাঙ্গোলিন। আবার তিন প্রজাতির প্যাঙ্গোলিন বাংলাদেশে দেখা যায়। দুঃখের বিষয় হলো, এই ছোট্ট সুন্দর প্রাণীটি বিলুপ্তির পথে। মানে পৃথিবী থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে তারা। শিকারিরা অবৈধভাবে তাদের পাচার করার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। তবে কেউ কেউ প্যাঙ্গোলিন সংরক্ষণে ব্যবস্থাও নিচ্ছে।

নিহানের গল্পে দাদুর মুক্তিযুদ্ধ

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৯ পিএম
নিহানের গল্পে দাদুর মুক্তিযুদ্ধ
এঁকেছেন মাসুম

বারান্দার ইজি চেয়ারে বসে আছেন রহমান সাহেব। হাতে ধোঁয়া ওঠা এক কাপ গরম চা। দক্ষিণের এই বারান্দাটা ওনার বড্ড প্রিয়। বারান্দা থেকেই বধ্যভূমিটা চোখে পড়ে কি না। 
রহমান সাহেবের নাতি নিহান। বয়স মাত্র ৫ বছর। দুপুরে স্কুল থেকে ফিরেই সোজা দাদুর রুমে চলে আসে সে। 
- দাদু আগামীকাল স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে আমার স্কুলে গল্প বলা প্রতিযোগিতা হবে। তুমি তো কিশোর মুক্তিযোদ্ধা। আমি তোমার যুদ্ধদিনের কাহিনি সবাইকে শোনাব।
সেই দিনগুলোর কথা মনে হতেই রহমান সাহেবের চোখে পানি আসে। ডাক্তার দেখাতে হবে মনে হচ্ছে। নিহান চুপচাপ মোড়ায় বসে দাদুর দিকে তাকিয়ে থাকে। রহমান সাহেব শুরু করেন। বুঝলে দাদু ভাই, তখন আমি ১৫ বছরের কিশোর। দেশের অবস্থা খুব খারাপ। স্কুল-কলেজ সব বন্ধ হয়ে গেল। আমার বন্ধুরা সবাই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেল। কেউ গেল নানুবাড়ি, কেউ দাদুবাড়ি কেউবা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারত। আমি খুব একা হয়ে গেলাম। সারাদিন বাড়ির আশপাশেই ঘুরতে থাকি।   
এ করেই দিন কাটতে লাগল। মার্চ মাসের শেষদিকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলো। প্রতিদিন সন্ধ্যারাতেই দেখতাম বাবা, ছোট চাচা আর স্কুলের পলাশ স্যার বাড়ির কাছারি ঘরটায় কী যেন ফিসফাস করতেন। মা ওনাদের জন্য চা বানিয়ে আমাকে দিয়ে পাঠাতেন। চা নিয়ে গেলেই ওনারা চুপ হয়ে যেতেন। আমার সেই কিশোর মনে চাপা আগ্রহ। যদিও জানতাম, ঠিক হচ্ছে না, তার পরও কতবার যে আড়ি পাতার চেষ্টা করেছি ওনাদের কথা শুনতে। কিছুই শুনতে পারিনি। বাবা আর ছোট চাচ্চুকে কিছু জিজ্ঞেস করলেই দিতেন ধমক। 
শেষে একদিন থাকতে না পেরে পলাশ স্যারকেই ধরলাম, যিনি আমার খুব প্রিয় ছিলেন। স্যার আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারলেন। ওনার কথা শুনে খুব অবাক হলাম। কী সাংঘাতিক কথা! সবাই তলে তলে তৈরি হচ্ছেন যুদ্ধে যাওয়ার! এসব নিয়েই চলছে নানা ধরনের পরিকল্পনা।
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। স্যারকে বললাম, আমিও দেশের জন্য কিছু করতে চাই।
স্যার বললেন, তুই তো অনেক ছোটরে।
উত্তরে বললাম, স্যার, দেশের জন্য কিছু করার অধিকার কি আমার নেই?
স্যারের চোখে পানি। বললেন, আজ মাগরিবের পর বাড়িতে আয়।
অবশেষে সন্ধ্যায় স্যারের বাড়িতে এলাম। স্যার শুধু বললেন, মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে তোকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।
বুঝলাম বড়দের মিটিংয়ে আমার প্রবেশাধিকার নেই। তবে আমি খুশি, দায়িত্ব একটা কিছু তো পেয়েছি! তা যতই ছোট হোক না কেন।
গ্রামের শেষে একটা ফল-ফলাদির বাগিচা আছে। এমনিতে আমার খুব প্রিয় জায়গা ওটা। গ্রীষ্মকালে আম-কাঁঠাল আর শীতকালে পাকা কুল; আহা কোন ফলটা ছিল না ওই বাগিচায়! মাঝের ফাঁকা অংশে মাটিতে লাটিম ঘোরাতাম। 
যাই হোক, আমার কাজ ছিল বাগিচার উত্তর দিকে ঠায় দাঁড়ানো বটগাছটার কোটরে খাবার রেখে আসা। কিছু মুক্তিসেনার জন্য এ আয়োজন; যাতে তারা গ্রামে না ঢুকেও খাবার পেতে পারেন।
এভাবেই আমি সবার চোখ এড়িয়ে কাজ করে যাচ্ছিলাম। ছোট বলে কেউ সন্দেহ করত না। তবে একদিন সত্যি সত্যি বিপদে পড়ে গেলাম। তিনজন ইয়া লম্বা পাকসেনার হাতে ধরা পড়লাম।  
ওরা জিজ্ঞেস করল, খাবার কোথায় নেওয়া হচ্ছে? কার জন্য নেওয়া হচ্ছে?
প্রথমে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও পরক্ষণেই সামলে নিলাম। এ ঘোর বিপদে মাথা ঠাণ্ডা রাখা চাই। ইশারা- ইঙ্গিতে বললাম, এ খাবার পাশের মসজিদের ইমাম সাহেবের জন্য।
এরপর কী বলল তেমন কিছুই বুঝিনি। তবে এতটুকু বুঝলাম, ওদের জন্যও খাবার আনতে হবে। 
এর পর কোনোরকমে মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবকে সব খুলে বললাম। ইমাম সাহেব ছিলেন মাটির মানুষ। বললেন, ব্যাটা ভয় পাস না। তুই স্যারের কাছে যা, আর সব খুলে বল।
আমি অবাক হলাম। ইমাম সাহেবও তা হলে সব জানেন!
স্যারের কাছে এসে সব বললাম। স্যার শুনে আমাকে বাহবা দিলেন। বললেন, খবর পেয়েছি ওই তিনজন এ এলাকার নজরদারির দায়িত্বে আছে। কাল একটা ছোট অপারেশন হবে, আর সেই অপারেশন তোকেই করতে হবে।
স্যার এরপর সব বুঝিয়ে দিলেন।
পরদিন আবার ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় পাকসেনাদের আসার অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর ওরা এল। আকারে-ইঙ্গিতে বোঝালাম, তোমাদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছি! 
খুশিতে পাকসেনাগুলোর দাঁত বেরিয়ে পড়ল। তিনটা টিফিন বক্স, সব শেষেরটাতে বোমা। এর পর স্যারের কথামতো পানি আনার ছুতোয় দূরে সরে গেলাম। এর ঠিক পাঁচ মিনিট পরই বিকট শব্দ হলো।
আর অপেক্ষা না করে স্যারের বাড়িতে চলে এলাম। 
স্যার যেন আমার অপেক্ষাতেই ছিলেন। মাথায় হাত দিয়ে বললেন, শাবাশ ব্যাটা! তুই আমাদের চেয়েও অনেক এগিয়ে গেলি।
সেই দিনের খুশিটা বেশিক্ষণ থাকল না। ওই রাতেই আরেকটা অপারেশনে স্যার মারা গেলেন।
এতক্ষণ বেশ মনোযোগ দিয়ে যুদ্ধদিনের গল্প শুনছিল নিহান। দাদুর চোখে পানি দেখে একটা রুমাল এনে দাদুর চোখ মুছে দিল।

দুরন্ত ছড়া: খোকা খুকির হাসি

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০১:২৭ পিএম
দুরন্ত ছড়া: খোকা খুকির হাসি
এঁকেছে রেসতিনা ইবনাত

খোকা খুকির হাসি
সাঈদুর রহমান লিটন 

খোকা হাসে খুকি হাসে 
টুপি মাথায় দিয়ে,
খোকা খুকির হাসি দেখে
হাসে গাছে টিয়ে।

খুশির নদী বাঁধ ভেঙেছে
সবাই দিশেহারা
খুশির জোয়ার ভেসে গেছে
শহর, নগর পাড়া।

চাঁদের হাসি দেখে ওরা
আরও বেশি হাসে,
প্রভাত বেলা সূর্যি মামা
হাসে দূর্বাঘাসে।

 


বক কাব্য
শ্যামল বণিক অঞ্জন

কাঁঠাল গাছে বকের বাসায় তিনটি ছানা ফুটল, 
হঠাৎ করেই সন্ধ্যা বেলা প্রচণ্ড ঝড় উঠল!
বাসা ভেঙে ছানাগুলো মাটিতে যে পড়ল
আঘাত তিনটি ছানাই অকালে তো মরল!
মা পাখিটা শোকে কাতর হয়ে কেঁদে চলল,
চলো যাব ঝড় ছাড়া দেশ, বক বাবাটা বলল।
মা বক কয়, আঁধার কেটে আসবে দেখো আলো,
ঝড়ঝঞ্ঝা হোক বৃষ্টি তবু এ দেশ ভালো।
এই দেশেতে আছে অনেক নদীনালা ডোবা,
আছে সেথায় ব্যাঙ মাছ আর খাদ্য মনোলোভা!

 


রাজকুমারীর বিয়ে
খালিদ বিন ওয়ালিদ

তাক ডুমা ডুম, তাক ডুমা ডুম
বেজায় খুশির ধুম,
তাক ডুমা ডুম, তাক ডুমা ডুম
নেই চোখে আজ ঘুম।

রাজকুমারীর বিয়ে
সোনার পালকি নিয়ে
যাবে সে আজ রূপনগরে,
ঘোমটা মাথায় দিয়ে।

হইহুল্লোড়, হইহুল্লোড়
বর এসেছে ঘরে,
বর এসেছে টোপর পরে
ঘোড়ার পিঠে চড়ে।

 


বানর কাণ্ড
মো. দিদারুল ইসলাম 

দুষ্টু বানর নাচে মশগুল মগডালেতে উঠি,
বনের পাখি বিরক্ত সব, করে ছোটাছুটি।

হাতির পিঠে চড়ে বানর দেয় যে কানে মলা,
মনের সুখে একে একে গিলে পাকা কলা।

বানর বেটা কূট-কৌশলী, বুদ্ধি বেজায় খাসা,
বাঘ মামাকে সঙ্গে নিয়ে, ভাঙে সিংহের বাসা।

বানর মশাই এই তল্লাটের, সবার নাকি রাজা,
তার আদেশে না চলিলে, দেয় সে কঠিন সাজা।

বানর বেটার সঙ্গী শেয়াল, আরও আছে গোখরা
ভয়ে থাকে নিরীহের দল, প্রায়শই খায় তাড়া।

 


ফাগুনের রূপ
এম আব্দুল হালীম বাচ্চু

ফাগুন হাওয়ায় আগুন জ্বলে
শিমুল পলাশ ফুলে
কোকিলেরা কোথায় গেল
গান কি গেছে ভুলে?

কোকিলের গান শোনার আশায়
পেতে রাখি কান
তবু কোকিল কেন যেন
গায় না মধুর গান!

চৈতি হাওয়া বইছে যেন
গাছগাছালি বনে
ঝরছে পাতা দলে দলে
সুখ নেই তবু মনে!

ফাগুনের সেই গীতিময় দিন
আগের মতো নেই
ফাগুন ফাগুন লাগছে কেবল
আমের মুকুলেই।

কাগজের ফুল-পাখি

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০১:২৩ পিএম
কাগজের ফুল-পাখি
ওরিগামি

ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই কাগজ নিয়ে খেলতে অনেক ভালোবাসো? তোমরা কি জানো কাগজে কেবল আঁকাআঁকি নয়, কাগজ ভাঁজ করেও তৈরি করা যায় নানা আকৃতির জিনিস। আর এটাকে জাপানিরা নাম দিয়েছে ওরিগামি। জাপানি শব্দ Ori মানে হলো ভাঁজ আর Kami মানে হলো কাগজ। সময়ের সঙ্গে Kami শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে Gami হয়ে যায়। সাধারণত কাগজকে কোনো ধরনের কাটা, ছেঁড়া, পিন বা আঠা লাগানো ছাড়া শুধু ভাঁজ করে বিভিন্ন আকৃতি দেওয়ার এই কাজটিকে বলা হয় Origami। 
ধারণা করা হয় জাপানে ওরিগামির চর্চা শুরু হয় ১৬০৩ সালে। তারপর এই চর্চা কেবল জাপানে সীমাবদ্ধ না থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এক খণ্ড কাগজ আদৌ না কেটে এবং কোনোরকম আঠা ব্যবহার না করে শুধু ভাঁজ করে জীবজন্তু, পাখি ইত্যাদির রূপ দেওয়া হয় অরিগামিতে। অল্প কয়েকটি সরল ভাঁজের মাধ্যমে ওরিগামিতে তোমাদের পছন্দের অনেক কিছু তৈরি করা যায়। এই পদ্ধতিতে তুমি বানিয়ে নিতে পারো নৌকা, উড়োজাহাজ, পাখি, ফুল, প্রজাপতি, মাছ, হাতি, ঘোড়া, হার্ট, ব্যাঙ, খাম, তারা, চেয়ার, চায়ের কাপ, হাতপাখা, পাতা ইত্যাদি। 

এডিস মশার পরামর্শ

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০১:২০ পিএম
এডিস মশার পরামর্শ
এঁকেছেন মাসুম

আয়েল ক্লাস থ্রিতে পড়ে। লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী সে। আজ স্কুল থেকে এসে গোসল করে নিল। দুপুরের খাবার খেয়ে কিছু হোমওয়ার্ক ছিল, সেগুলো সেরে নিল। তারপর ঘুম। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে একটু খেলাধুলা ও হাঁটাহাঁটি। সন্ধ্যা হতেই পড়ার টেবিলে ফিরল সে। আয়েল পড়ছে। এই সময় দেখা দিল একটা মশা। খুব বিরক্ত করছে। ভোঁ ভোঁ করে চোখের সামনে ঘুরছে। উড়ে গিয়ে নাকের ওপর বসছে। আয়েল তাড়িয়ে দিয়ে যেই পড়তে শুরু করবে, অমনি পাজি মশাটা ওর কানে গিয়ে বসে ভোঁ ভোঁ শুরু করল। ভারি মুশকিল তো! 
আয়েলের মনে পড়ল পড়ার টেবিলের পাশেই মশার স্প্রে আছে। বাবা দিয়ে বলেছিলেন, সব সময় স্প্রে ব্যবহার করতে। মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। খুব সতর্ক হতে হবে। 
আয়েল স্প্রেটা হাতে নিতেই মশাটা বলে উঠল, আমি এডিস মশা। তুমি আমার কথা না শুনে স্প্রে করবে না কিন্তু।
আয়েল ভয়ার্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল, কী কথা বলো?
মশা বলল, আমি এডিস মশা জন্ম হয়েছি তোমার কারণেই। এখন তুমিই আমাকে মারতে চাচ্ছো?
আয়েল বিরক্তিবোধ করল। নাকটা খরগোশের কানের মতো খাড়া করে বলল, কী, আমার কারণেই তোমার জন্ম? 
হ্যাঁ, তোমার কারণেই— মশা চেঁচিয়ে উঠল। আবার বলল, তিন দিন ধরে তুমি একটা বাটিতে ময়লা পানি জমিয়ে রেখেছ। সেই পানিতেই তো আমি জন্মেছি। তোমার ভাগ্য ভালো যে, আমি এখনো কামড় বসাইনি।
আয়েল ইতিউতি তাকিয়ে বলল, কোথায়, কোথায় সে বাটি?
তোমার পড়ার টেবিলের নিচে। একটু নুয়েই দেখো না। বলল মশা।
আয়েল এবার নুয়ে দেখে সত্যিই পড়ার টেবিলের নিচে একটা বাটি। সেখানে পানি আছে। পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। একঝাঁক মশা বাটির ওপর উড়াউড়ি করছে। কী বিশ্রী অবস্থা। 
আয়েলের মনে পড়ল। তিন দিন আগে মা বাটিতে করে একটা ডিম আর কলা দিয়েছিলেন। ডিম কলা খেয়ে বাটিতেই হাত ধুয়েছিল সে। পানিটা ফেলে না দিয়ে পড়ার টেবিলের নিচে রেখে দিয়েছিল পরে ফেলবে ভেবে। কিন্তু আয়েল বেমালুম ভুলে গেছে। ও দৌড়ে পানিটা ফেলে দিয়ে এল। লজ্জানত হয়ে আয়েল বলল, ধন্যবাদ মশা ভাইয়া, আমাকে সতর্ক করার জন্য।
মশা বলল, আমাকে ধন্যবাদ দিলে হবে না। তোমার আঙিনা তোমাকেই পরিষ্কার রাখতে হবে। 
আচ্ছা, কী কী করলে মশা জন্ম নেবে না।—জানতে চাইল আয়েল। 
মশা বলল, আমরা মশারা তো তোমাদের অবহেলা, অসচেতনতা, অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্নতার কারণেই জন্ম নিই এবং তোমাদের কামড়াই। তবে কিছু কাজ কাজ করলে তোমরা আমাদের থেকে রক্ষা পাবে।
কী কাজ? —উদগ্রীব হয়ে উঠল আয়েল।
মশা বলল, সামনে বৃষ্টির সিজন। এ সময় কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবে না। বাড়ির ছাদে বা উঠানে বৃষ্টির পানি জমে থাকলে দ্রুত তা সরিয়ে ফেলতে হবে। কোনো পাত্রে পানি যেন জমে না থাকে। পানি জমতে পারে এমন পাত্র উল্টিয়ে রাখতে হবে। কারণ, জমে থাকা পানিতে আমরা ডিম পারি। ওটাই আমাদের জন্ম নেওয়ার স্থান।
তারপর! —আকুতি আয়েলের। তর যেন সইছে না। সব মনোযোগ এখন মশার দিকে।
বলছি, বলছি। সর্বদা চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ফুলের টব, ভাঙা হাঁড়িপাতিল, গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ছোট বড় কৌটা, নারিকেল বা ডাবের খোসা, রেফ্রিজারেটর এবং এসির নিচে যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
মশা আরও বলল, আর হ্যাঁ, ঘুমাবার সময় অবশ্যই মশারি টাঙাতে হবে। জানালাতে মশা প্রতিরোধক নেট ব্যবহার করতে হবে। মশা নিধনের ওষুধ, কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। তবেই তুমি মশার জন্ম রুখতে পারবে। করতে পারবে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ। নিজে বাঁচতে পারবে। বাঁচাতে পারবে অন্যকেও।