
আমার রুমের সঙ্গে একটা বারান্দা আছে। এক বিকেলে সেখানে দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় চোখ পড়ল সামনের রাস্তায়। অনেকগুলো ছেলে ক্রিকেট খেলছে। আশপাশেই থাকে তারা। প্রতিদিনই খেলতে আসে, তাই চেহারাগুলো পরিচিত। রাস্তাটা ছোট, গাড়িঘোড়ার ভিড় নেই। ওদের খেলাও জমে উঠেছে। পাশের কবরস্থানে প্রায়ই ওদের বল চলে যাচ্ছে। ওরা গিয়ে বল আনছে।
এখন বিকেল। অবশ্য ওরা সন্ধ্যার পরও সড়কবাতির আলোতেও খেলে। রাতে আমাদের বাসার সামনে ব্যাডমিন্টন খেলাও হয়। মাঝে মাঝে আমিও বাবার সঙ্গে খেলা দেখতে যাই।
যা-ই হোক, সেদিন বিকেলে খেলা চলার সময় হঠাৎ গলিতে একটি প্রাইভেট কার ঢুকল। এগিয়ে গেল ছেলেগুলোর দিকে। গাড়ির ভেতর কয়েকজন লোক বসেছিল। তাদের হাতে লাঠি। লাঠি দিয়ে তারা রাস্তার ছেলেদের কয়েকজনকে আহত করল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
আম্মু এল তখনই। জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে?
বললাম, কয়েকজন দুষ্ট লোক এসে যারা খেলছিল, তাদের মারল।
আম্মু শুনে অবাক হলেন। বললেন, আমাদের এখনই পুলিশ ডাকতে হবে।
আমরা ফোন করে পুলিশকে আসতে বললাম। পুলিশ আসার আগেই খারাপ লোকগুলো পালিয়ে গেল।
আহত ছেলেগুলোর মধ্যে একজন ছেলে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। আম্মু তাকে দেখতে গেল। বাসায় ফেরার পর জিজ্ঞেস করলাম, আম্মু, পচা লোকগুলো কেন ওদের মারল?
আম্মু বলল, শুনলাম পাড়ার অন্য ছেলেদের সঙ্গে বড় মাঠে তাদের মারামারি হয়েছিল। সেজন্য ওরা এসে এটা করেছে।
ওরা কি কালকেও নিচের রাস্তায় খেলতে যাবে?
না। আম্মু বলল, সবাই বলছে রাস্তায় খেলতে যাওয়ার দরকার নেই। ওরা ছাদে খেলবে।
কিন্তু ছাদ থেকে বল পড়ে গেলে?
নিচে গিয়ে নিয়ে আসবে। এখন যাও, পড়তে বসো।
আমি আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম, না মা, ছাদে খেলতে মানা করে দাও। কেউ যদি খেলতে গিয়ে ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়?
বাজে কথা বলো না তো। কখনোই তোমার মুখ দিয়ে ভালো কথা শুনি না। এখন যাও তো, পড়তে বসো।- আম্মু আমাকে ধমক দিয়ে পড়তে বসতে পাঠিয়ে দিল।
তারপর থেকে প্রতিদিনই ছেলেরা ছাদে খেলে। একদিন খুব দুঃখজনক ব্যাপার ঘটে গেল।
খেলার সময় একটা ছেলে কীভাবে যেন ছাদ থেকে পড়ে গেল। হাসপাতালে নেওয়ার পরও ছেলেটাকে বাঁচানো
গেল না।
এখন আর কারও ছাদে যাওয়ার অনুমতি নেই। ছাদ তালা দিয়ে রাখা হয়। তবু সন্ধ্যার পর থেকে ছাদে বল খেলার আওয়াজ পাওয়া যায়। আর সবাই সেই আওয়াজ শুনতে পায়। প্রতিদিনই আমরা ছাদে খেলার শব্দ শুনি। প্রতিদিনই আমরা ভয় পাই।
আমার এখন রাতে ভয়ে ঘুম আসে না। একটি কথাই বারবার মনে পড়ে, সেদিনের মারামারিটা না হলে আজ ছাদে এসব হতো না।
লেখক উত্তরার ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।