খেতের এক কেজি শসা বেচে কৃষক ৫ টাকাও পাচ্ছেন না। ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ১০ টাকা কেজি। ঢাকায় আনতে ট্রাক ভাড়াসহ সব মিলিয়ে কেজিতে ৫ টাকা খরচ হয়। কিন্তু সেই শসা রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ভোক্তাদের ৫০-৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কৃষকরা খেতে বেগুনের দাম না পেলেও তীব্র দাবদাহে ঢাকায় আগুন লেগে গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বেগুনের কেজি ২০-৩০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ১২০ টাকা হয়ে গেছে।
করলা, পটোলের দামও চড়া। লেবুর দাম ১০-২০ টাকা বেড়ে ৪০-৫০ টাকা হালি। বাড়েনি ডিম, মাছ, মাংসের দাম। ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০-২০ টাকা কমলেও সোনালিতে বেড়েছে। হাওরের ধান ওঠা শুরু হয়েছে। কিন্তু এক পয়সাও কমেনি চালের দাম। সরকার সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও আগের রেটে ১৬৩ টাকায়ই বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর টাউনহল, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। সবজির দামের ব্যাপারে মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজারের সাধারণ সম্পাদক শাহাজাহান খান খবরের কাগজকে বলেন, তীব্র তাপে খেতখামার পুড়ে যাচ্ছে। ঢাকায় সবজি কম আসছে। এ জন্য দাম বাড়ছে। টাউনহলের সবজির কোয়ালিটি ভালো। এ জন্য অন্য বাজারের চেয়ে দামও একটু বেশি। তবে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলু আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
স্থিতিশীল পেঁয়াজ-আলু
পেঁয়াজের দামের ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের মিনহাজ বাণিজ্যালয়ের খলিল খবরের কাগজকে বলেন, পেঁয়াজের দাম আর কমবে না। পাইকারিতে ৫২-৫৫ টাকা কেজি। সেই পেঁয়াজই একটু দূরে ৫-১০ টাকা বেড়ে ৬৫-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এই বাজারের খুচরা বিক্রেতা সোহাগ বলেন, পেঁয়াজের কেজি ৬৫ টাকা। তবে ভালোটার দাম একটু বেশি। টাউনহল বাজারের শফিকুল বলেন, এখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। তার পরও বেশি দামে কেনা। তাই ৬৫-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম কমেনি। বাড়েওনি। ঝিম ধরে আছে। কারওয়ান বাজারের বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়ের পাইকারি বিক্রেতা সবুজ বলেন, মুন্সীগঞ্জের ভালো আলু ৪০-৪৩ টাকা। তবে রাজশাহী ও বগুড়ারটার দাম একটু কম। এই বাজারের খুচরা বিক্রেতা সুলতান বলেন, বর্তমানে ৫০-৫৫ টাকা কেজি। আড়তেই কেনা বেশি। আগের মতোই আদার কেজি ২০০-২২০ টাকা। তবে দেশি আদার দাম বেশি, ৩২০ টাকা কেজি।
আমদানি করা রসুন ২০০-২২০ টাকা। তবে দেশি রসুনের দাম ২০-৩০ টাকা বেড়ে ১৮০-২০০ টাকা কেজি। খুচরা ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য যাচাই করতে সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির ওয়েবসাইটেও দেখা গেছে, গতকাল ৬৫-৭০ টাকা কেজি পেঁয়াজ ও আলু ৫০-৫৫ টাকা কেজি ছিল।
বেড়েছে এলাচের দাম
বিভিন্ন বাজারের মুদি দোকানে দেখা যায়, আগের মতোই ছোলা ১১০ টাকা কেজি, বেসন ১২০ টাকা, ১৬৩ টাকা লিটার সয়াবিন তেল, পাঁচ লিটার ৭৯০-৮০০ টাকা, খোলা চিনি ১৪০ টাকা, প্যাকেট চিনি ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়। কিশমিশের কেজি ৫৮০-৭০০ টাকা কেজি, কাঠবাদাম ১ হাজার ১০০, দারুচিনি ৫৫০, লবঙ্গ ১ হাজার ৭০০ ও জিরার কেজি ৭৫০ টাকা। টাউনহল বাজারের আলো জেনারেল স্টোরের শিপন জানান, অন্য মসলার দাম না বাড়লেও এলাচের দাম হঠাৎ করে কেজিতে ৪০০ টাকা বেড়ে গিয়ে ৪ হাজার টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
হাওরে ধান উঠলেও কমেনি চালের দাম
হাওরে বোরো ধান উঠতে শুরু করলেও চালের বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি। সরকার চালের দাম কমাতে কিছু নির্দেশনা দিয়ে বিক্রি করতে বললেও সরেজমিনে দেখা যায় কোনো দোকানে নতুন বস্তার চাল আসেনি। দাম কমেনি। প্রতি কেজি নাজিরশাইল মানভেদে ৭০-৮০ টাকা, মিনিকেট ৭২-৭৫, আটাশ চাল ৫৫-৫৮ ও মোটা চাল ৪৮-৫২ টাকা কেজি। এখনো নামিদামি ব্র্যান্ডের পোলাওয়ের প্যাকেট চাল ১৭০-১৮০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। তাদেরই বস্তার পোলাওয়ের চাল ১৪০-১৪৫ টাকা কেজি।
চড়া দামে সবজি
ঈদের পর সবজির দাম ঢাকায় বেড়েই যাচ্ছে। তীব্র তাপের আগুনে বিভিন্ন গ্রামে খেতে কম দামে বিক্রি হলেও রাজধানীতে ভোক্তারা কম দামে পাচ্ছেন না কোনো সবজি। আগের সপ্তাহে বেগুন ৬০-৮০ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে ৭০ থেকে ১২০ টাকা। টমেটোর কেজি ৫০-৭০ টাকা, করলা ৬০-৮০, ঢ্যাঁড়স ৪০-৬০, শিম ৪০, পেঁপে ৪০-৫০, মিষ্টিকুমড়া ৩০-৪০, শসা ৪০-৬০, ঝিঙে ৬০, সজনে ডাঁটা ৮০-১০০, পটোল ৫০-৬০, গাজর ৫০, কাঁচা মরিচ ১২০-১৪০, বরবটি ৫০ টাকা কেজি। ঈদ-বৈশাখের উৎসব শেষ হলেও চলমান তাপপ্রবাহের কারণে তরমুজের দামও বাড়তি। গত সপ্তাহে ৫০-৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গতকাল ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা যায়।
স্থিতিশীল মাছ-মাংসের দাম
গরু ও খাসির মাংসের বাজারে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি। কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারের বিক্রেতারা জানান, ঈদ উপলক্ষে কিছুটা দাম বাড়ানো হয়েছিল। এখন আবার কমে গেছে। আগের সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ২২০-২৩০ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল ২০ টাকা কমে ২০০-২১০ টাকায় নেমেছে। তবে সোনালি মুরগির দাম ১০-২০ টাকা বেড়ে ৩৪০-৩৫০ টাকা ও দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের দাম বাড়েনি। গতকাল টাউনহল, কারওয়ান বাজারেও ১১০-১২০ টাকা ডজন ডিম বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। তবে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় বেশি, ১৩০ টাকা পর্যন্ত ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে। আগের মতোই রুই, কাতলা, ট্যাংরা, পাবদা মাছ বিক্রি হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।