সৌদি আরবের পর্যটন ও আতিথেয়তা খাতে আগের তুলনায় অনেক বেশি নারী অংশগ্রহণ করছেন। এর মধ্য দিয়ে একটি অসাধারণ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে দেশটিতে। এই খাতের নেতাদের অনুপ্রেরণা ও শক্তিশালী সরকারি পদক্ষেপের জন্যই এটা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে সৌদি আরবের। এই পরিবর্তনটি তাৎপর্যপূর্ণ এই বিবেচনায় যে, পর্যটন হলো বৈশ্বিক কয়েকটি শিল্পের মধ্যে অন্যতম একটি, যেখানে নারীরা ইতোমধ্যেই সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমশক্তিতে পরিণত হয়েছে। খবর আরব নিউজের।
সৌদি আরবভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, দেশটি তাদের কর্মীবাহিনীতে আরও বেশিসংখ্যক নারী পেতে আগ্রহী এবং শ্রমবাজারে ৩০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যে দেশটি তার ‘ভিশন-২০৩০’ উচ্চাকাঙ্ক্ষা অতিক্রম করেছে। প্রকৃতপক্ষে দেশটির লক্ষ্যমাত্রা এখন ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে, এটি ২০১০ সালে দেখা হারের দ্বিগুণ।
পর্যটন ও আতিথেয়তাকে এমন একটি খাত হিসাবে দেখা হয়, যেখানে নারীরা উন্নতি করতে পারে এবং এই ক্ষেত্রে আরও সুযোগ বাড়াতে কঠোর পরিশ্রম করছে সৌদি আরব।
আতিথেয়তা শিল্পের ডেটা বিশ্লেষক ও পরামর্শক সংস্থা ইএইচএল ইনসাইটের মতে, মাত্র পাঁচ বছর আগে সৌদি আরবের নারীরা আতিথেয়তা কোম্পানিতে কাজ করার সময় উল্লেখযোগ্য বাধার মুখে পড়তে হয়েছে এবং এই শিল্পে শিক্ষা বা কর্মসংস্থানের সুযোগ পেতে পরিবারকে রাজি করাতে নারীদের অনেক সময় লেগে যেত।
‘ভিশন-২০৩০’ উদ্যোগের নেতৃত্বে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের কারণে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। পরামর্শক সংস্থা ‘আর কনসালটেন্সি’ গ্রুপের গত মার্চ মাসের তথ্য অনুসারে, এই খাতের ৪৫ শতাংশ কর্মী এখন নারী। আর খাতের মোট কর্মীর সংখ্যা ৯ লাখ ২৫ হাজার।
মধ্যপ্রাচ্যে বেইন অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার অ্যান-লর মালাউজাত আরব নিউজকে বলেন, ‘অনেক অনুপ্রেরণাদায়ী নারী নেত্রী রয়েছেন যারা সৌদি আরব ও এই অঞ্চলের পর্যটন খাত- উভয়কে আরও বিস্তৃত পরিসরে কৌশলগতভাবে গঠন করতে সাহায্য করেছেন। যেমন- প্রিন্সেস পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার হাইফা বিনতে মোহাম্মদ আল-সৌদ এবং ইউএন ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনের আঞ্চলিক পরিচালক বাসমাহ আল-মায়মান।’
অ্যান-লর মালাউজাত জোর দিয়ে বলেন, সৌদি আরবের মাটিতে পর্যটন ও আতিথেয়তা খাতের বিভিন্ন অংশে নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সৌদি আরবের প্রধান বিমানবন্দরগুলোর স্থপতি, পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এবং ক্যাবচালকদের পাশাপাশি আতিথেয়তা খাতের নেতা ও পর্যটক গাইডরা।
মালাউজাত বলেন, ‘এই সাফল্যের গল্পগুলোর উদাহরণ দিতে গেলে চলে আসে সারাহ গাসিমের নাম। তিনি জেএলএলের কেএসএ হোটেলস অ্যান্ড হসপিটালিটির প্রধান এবং সংস্থাটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। এর আগে তিনি হোটেল কমপ্লেক্সগুলো পরিচালনা করেছেন।
এ ছাড়া তিনি একজন লেখক এবং আতিথেয়তার ওপর অনেক বক্তৃতাও দিয়েছেন। তার এই উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি সৌদি আরবের আতিথেয়তা খাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তৈরি করতে সাহায্য করছেন।
সৌদি আরবের সরকারি যৌথ শেয়ার কোম্পানি রেড সি গ্লোবালের মুখপাত্র জয়নাব হামিদাদ্দিন আল-হানুফ আল-হাজ্জানি আরব নিউজকে বলেন, নীরারা আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা, গ্রাহক পরিষেবা, বিপণন ও ইভেন্ট পরিকল্পনার মতো ভূমিকাগুলোতে অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি, দক্ষতা ও অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে আসে, যা উল্লেখযোগ্যভাবে এই খাতের পরিষেবার সামগ্রিক গুণমান ও গ্রাহক সন্তুষ্টি উন্নত করেছে।
আল-হাজ্জানি বলেন, দেশের নারীদের বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গি, উন্নত পরিষেবা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মক্ষেত্রে অবদানগুলো দেশের উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে, যা তাদের সাফল্যকে অপরিহার্য করে তুলছে।
আল-হাজ্জানি দাবি করেন, নারীরা সক্রিয়ভাবে সৌদি আরবে পর্যটন ও আতিথেয়তা শিল্পের ভবিষ্যৎ গঠন করছেন। তিনি আরও বলেন, আরএসজিতে (রেড সি গ্লোবাল) এটি বিশেষভাবে সত্য, যেখানে নারীরা অতিথিদের অভিজ্ঞতাকে উন্নত করা, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে লালন করা এবং আমাদের প্রকল্পের ব্যাপক সাফল্যে অবদান রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
উদাহরণস্বরূপ, আমাদের এলিট গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম ২৫০ জন ব্যক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে, যার মধ্যে ৩০ জন নারী ব্যবস্থাপনার পদগুলোতে আসীন হয়েছেন।