ঢাকা ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
English
বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ডিমের দাম কমলেও বাড়তি মুরগির

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫২ পিএম
আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫৩ পিএম
ডিমের দাম কমলেও বাড়তি মুরগির
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

গত দুই বছর থেকে ডিম ও মুরগির বাজার অস্থির হলে মামলা করে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। তার পরও বাজার ঠেকানো যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এতে দাম কিছুটা কমে ১৪২ টাকা ডজনে বিক্রি হচ্ছে ডিম। কিন্তু মুরগির দাম এখনো বাড়তি। 

বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখনো ভোক্তাদের নির্ধারিত দর ১৮০ টাকার ব্রয়লার ২০০-২১০ টাকা ও ২৭০ টাকার সোনালি মুরগি ৩০০-৩৩০ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে। তবে খামারিরা বলছেন, সরকার রাজধানীর ২০টি বাজারে মুরগি বিক্রি করতে জায়গা দিলে খুচরা পর্যায়ে নির্ধারিত দরে মুরগি বিক্রি করা সম্ভব। এতে ভোক্তারা কম দরে পাবেন মুরগি, স্থিতিশীল হবে বাজার। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। 

গত দুই বছর থেকে জুলাই মাস এলেই ডিম ও মুরগির বাজার অস্থির হয়ে যাচ্ছে। কমতে চায় না দাম। কারসাজি করার অভিযোগে কাজী ফার্মসসহ বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে ২০২২ সাল এমনকি গত বছরও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন মামলা করে। এ বছরেও একই দশা। বেড়েই যাচ্ছে ডিম ও মুরগির দাম। বাধ্য হয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৫ সেপ্টেম্বর ফার্মের মুরগির ডিম, ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর পোলট্রি খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মতামতের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের জন্য ডিম ও মুরগির ‘যৌক্তিক মূল্য’ নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন দর অনুসারে, খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম রাখা হবে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা বা প্রতি ডজন ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা। উৎপাদন পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম পড়বে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারিতে হবে ১১ টাকা শূন্য ১ পয়সা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি খুচরা পর্যায়ে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা দরে বিক্রি করা হবে। উৎপাদন পর্যায়ে ১৬৮ টাকা ৯১ পয়সা ও পাইকারি পর্যায়ে ১৭২ টাকা ৬১ পয়সা দরে বিক্রি হবে। অন্যদিকে সোনালি মুরগি উৎপাদন পর্যায়ে ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা ও পাইকারিতে ২৬৪ টাকা ৫৭ পয়সা কেজি ও খুচরা পর্যায়ে ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা দরে বিক্রি হবে।

পোলট্রি খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে চলতি ২০২৪ সালের জন্য মুরগি (সোনালি ও ব্রয়লার) এবং ডিমের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য সঠিকভাবে বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

তার পরও ডিমের দাম না কমায় ভোক্তা অধিদপ্তরের অনুরোধে করপোরেট প্রতিষ্ঠান দিনে ১০ লাখ করে কাপ্তান বাজার ও তেজগাঁও বাজারে ২০ লাখ ডিম সরবরাহ করলে পাইকারি বিক্রেতারা নির্ধারিত দরে ১৩২ টাকা ডজন বিক্রি করছে। এ জন্য খুচরা বাজারেও আগের চেয়ে দাম কমেছে। নির্ধারিত দরের কাছাকাছা ১৪৫-১৫০ টাকা ডজনে নেমেছে। 

কিন্তু এখনো বেশি দামে ভোক্তাদের মুরগি কিনতে হচ্ছে। কারণ খামারেই দাম বেশি। পাইকারি বিক্রেতাদের নির্ধারিত ১৬৯ টাকা দরের মুরগি এখনো বেশি দামে ১৭৫ টাকা পর্যন্ত কেজি কিনতে হচ্ছে। এর সঙ্গে পরিবহন ভাড়া ও ওয়েট লসও রয়েছে কেজিতে ১৫-১৭ টাকা। অর্থাৎ পাইকারি বিক্রেতারা ১৯০ টাকার কম ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করতে পারছে না। এ জন্য খুচরা বাজারেও বেশি। বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বলেন, ‘২০০-২১০ টাকা কেজি। খুচরা পর্যায়ে সোনালি মুরগির দামও বেশি। বিভিন্ন বাজারে ৩০০-৩৩০ টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।’

মুরগির বাজারে অস্থিরতার ব্যাপারে মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের ব্রয়লার হাউসের স্বত্বাধিকারী মো. বিল্লাল হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লার ২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে হাতিরপুলসহ অন্য বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বলেন, ব্রয়লার ২১০ টাকা ও সোনালি ৩২০-৩৩০ টাকা কেজি। 

মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘মুরগির বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি। কাজেই করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে এ ক্ষেত্রে দাম কমাতে হবে। তাহলে খামারিরা কম দামে ডিম ও মুরগি বিক্রি করতে পারবেন। এটা কার্যকর হলে ভোক্তারাও নির্ধারিত দরে খেতে পারবেন। এ ছাড়া করপোরেট ও প্রান্তিক খামারিরা সরাসরি আমাদের কাছে মুরগি বিক্রি করলে দাম কমবেই। কারণ মাঝপথে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না। তিন-চার হাতবদল হবে না। এভাবে তারা আমাদের মুরগি দিলে পাইকারিতে ৪-৬ টাকা ও খুচরায় ১৫ টাকা লাভ থাকবে।’

এ ব্যাপারে নাজিফা পোলট্রি ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘মুরগির বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বেশি নিচ্ছে করপোরেটরা। এ জন্য উৎপাদন খরচ বেশি। বর্তমানে ব্রয়লারের উৎপাদন খরচ পড়ছে কেজিতে ১৫৫-১৭০ টাকা। এটা কয়েক হাতবদল, পরিবহন খরচ ও ওয়েট লসের কারণে খুচরা বিক্রেতার কাছে যেতে ২০ টাকা খরচ আছে। তারা কেজিতে ১০ টাকা লাভ করবে। সব মিলে ভোক্তা পর্যায়ে ২০০ টাকা কেজি, এটা যৌক্তিক দাম বলা যায়। আর সোনালি মুরগির উৎপাদন খরচ ২২০-২৪০ টাকা। সব মিলে কেজিতে বাড়তি ২০ টাকা খরচ আছে। খুচরা বিক্রেতারা ১০-১৫ টাকা লাভ করবে। এ জন্য ২৮০ টাকা হতে পারে। কিন্তু ৩০০ টাকা কেজি ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে। এটা বেশি।’ 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই খামারি বলেন, ‘প্রান্তিক খামারিরা চাহিদার ৮০ শতাংশ ডিম ও মুরগি উৎপাদন করলেও কৌশল করে করপোরেটরা বাজারটা নিয়ন্ত্রণ করছে। এ জন্য বাজার অস্থির হয়ে থাকছে। সরকার আমাদের কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর, মোহাম্মদপুরসহ ১৫-২০টি বাজারে মুরগি বিক্রির সুযোগ দিলে খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লার ১৮০ টাকা কেজি ও সোনালি মুরগি ২৭০ টাকা নির্ধারিত দরে মুরগি বিক্রি করা সম্ভব। এতে বাজার অস্থির হবে না। স্থিতিশীলতা আসবে। কারণ আমরা প্রাপ্তিক খামারিরা ৮০ শতাংশ ডিম ও মুরগি উৎপাদন করছি। খুচরা বিক্রেতারা সরাসরি আমাদের কাছ থেকে মুরগি কিনতে পারবেন।’

খুচরা বিক্রেতা ও খামারিদের অভিযোগের ব্যাপারে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ডলারের কারণে খাদ্যের দাম বেশি। এ জন্য উৎপাদন খরচ বেশি। তাই ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকার বেশি নয় ‘সরকার তো খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লার ১৮০ ও সোনালি ২৭০ টাকা কেজি নির্ধারণ করে দিয়েছে।’ এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এই রেট অনেক আগের। সরকার পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে দেরিতে প্রকাশ করা হয়েছে। এটা পর্যালোচনা করে নতুন দর নির্ধারণ করা দরকার।’ 

ডিমের মতো বাজারে মুরগি সরবরাহ করার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ফার্ম থেকে ডিম বাজারে পৌঁছা যতটা সহজ মুরগি অত সহজ না। আমাদের ভ্যান তেমন নেই। তবে সরকার উদ্যোগ নিলে প্রসেসিং করা মুরগি বাজারে বিক্রি করা সম্ভব। বিশ্বে এটা হচ্ছে। আমাদের দেশে স্বপ্ন, আগোরা শপিং শপে শুরু করেছে। তাহলে কম দামে ভোক্তারা মুরগির মাংস খেতে পাবেন।’

দ্বিতীয় দিনে সূচকের উত্থান

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৮ পিএম
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৯ পিএম
দ্বিতীয় দিনে সূচকের উত্থান

চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে সূচকের উত্থানে। টানা দ্বিতীয় দিনের মতো সূচকের উত্থান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চালন করেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হঠাৎ করে এক দিন সব কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়ে উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে পরিচালিত হলে তা বাজারের জন্য ভালো। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ে।

তারা বলছেন, কিন্তু পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থায় টানা পতনই বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগে অনীহা তৈরি করছে। সূচকের এমন বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বিনিয়োগকারীরাও নতুন বিনিয়োগে আসবে, যা সার্বিক পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) লেনদেনে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। ফলে তিন সূচকেরই উত্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে আগের দিনের তুলনায় লেনদেনও বেড়েছে।

দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্য সূচক বেড়েছে। এর মাধ্যমে টানা দুই কার্যদিবস উভয় শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলল।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) লেনদেন শুরুতে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। ফলে লেনদেন শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মিলে। শুরুর দিকের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
 
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ২০৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৮টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৭১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৪ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ২২৬ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৭৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯২১ পয়েন্টে উঠে এসেছে।

সবকটি মূল্য সূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫০০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ১২ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার দর বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে ছিল ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং লিমিটেড। এদিন ড্রাগন সোয়েটারের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় বেড়েছে ১ টাকা বা ১০ শতাংশ। ডিএসই সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

দর বৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলের শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়েছে। আর ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেড।

দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- সাইফ পাওয়ারটেক, ফু-ওয়াং ফুড, বসুন্ধরা পেপার, ইনট্রাকো রিফুয়েলিং, এমএল ডাইং, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ এবং কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ।

৪ শতাংশ সুদে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৫ পিএম
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৮ পিএম
৪ শতাংশ সুদে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ

রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) সরকারি গ্যারান্টির ৪ শতাংশ হারে তিন হাজার কোটি টাকা পাচ্ছে। আইসিবির প্রস্তাবের ভিত্তিতে তা অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) আইসিবি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রথমে এই ঋণের সুদের হার ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এ ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইসিবির অনুকূলে ঋণ দেওয়া হয় এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সরকার তা পরিশোধ করে।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও ঋণশোধের জন্য সরকারি গ্যারান্টির বিপরীতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আইসিবিকে ১০ শতাংশ সুদে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ১০ শতাংশ সুদ উচ্চহার বলে অভিহিত করে আপত্তি জানিয়ে ছিল আইসিবি। ঋণের সুদ ৪ শতাংশে নির্ধারণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে গত ২৮ নভেম্বর চিঠি দিয়েছিল আইসিবি।

এর আগে গত ১৩ নভেম্বর আইসিবিকে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার জন্য সরকারি নিশ্চয়তা বা সভরেন গ্যারান্টি প্রদান করে। সেই সভরেন গ্যারান্টির বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করে।
এরপর ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক আইসিবিকে তিন হাজার টাকার ঋণের চিঠি প্রেরণ করে। চিঠিতে ঋণের সুদহার ধার্য করা হয় ১০ শতাংশ। ঋণের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় দেড় বছর।

কিন্তু চড়া সুদে দেড় বছরের জন্য ঋণ নিয়ে আইসিবির পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে বলে মনে করেছে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ জন্য তারা সুদ কমানোর জন্য পরের দিন ২৮ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠায়

আইসিবিকে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছিল, ওই ঋণ নিজেদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ করবে আইসিবি। এই টাকা তারা শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা আনয়ন ও উচ্চ সুদে নেওয়া তহবিল পরিশোধে ব্যবহার করবে।

শ্বেতপত্র নিয়ে আরও পর্যালোচনার পরামর্শ

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩২ পিএম
শ্বেতপত্র নিয়ে আরও পর্যালোচনার পরামর্শ
ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

পুঁজিবাজার থেকে গত ১৫ বছরে এক লাখ কোটি টাকা বা এক ট্রিলিয়ন টাকা আত্মসাৎ হয়েছে এমন তথ্য উঠে এসেছে দেশের অর্থনীতি নিয়ে তৈরি করা শ্বেতপত্রে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চাওয়া কোম্পানিগুলোর প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি, প্রতারণা এবং প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও জালিয়াতির মাধ্যমে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

শ্বেতপত্রে উঠে আসা পুঁজিবাজারের এমন অবস্থাকে দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটা লুণ্ঠন। শ্বেতপত্রে যেসব বিষয় উঠে এসেছে সেগুলো আগামীতে পুঁজিবাজারসহ সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়নে যেকোনো সিদ্ধান্তে দলিল হিসেবে থাকবে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, শ্বেতপত্রে গত ১৫ বছরের পুঁজিবাজার নিয়ে যা বলা হয়েছে তা এক কথায় লুণ্ঠন। আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন ব্যবসায়ীরা কীভাবে পুঁজিবাজারকে নষ্ট করেছে তা উঠে এসেছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তিন মাসের অনুসন্ধান শেষে গত রবিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছেন।

আবু আহমেদ বলেন, এই শ্বেতপত্র নিয়ে অনেকের ভিন্নমত থাকতে পারে। তবে এটি যারা প্রস্তাব করেছেন তারা দেশের অর্থনীতি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছেন এবং তারা দেশের অর্থনীতির গতি প্রকৃতি সম্পর্কে জানেন। তাদের মাধ্যমে যে শ্বেতপত্রটি তৈরি করা হয়েছে সেটিকে দেশের সার্বিক অর্থনীতি দলিল হিসেবে উপস্থান করা যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমরা দীর্ঘ সময় ধরেই বলে আসছি বুক বিল্ডিং বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে যেসব দুর্বল কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে সেগুলোই বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করেছে। শ্বেতপত্রে সে বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে।

শ্বেতপত্রে মূলত আওয়ামী লীগের সময়কালটিকে বিবেচনা করা হয়েছে। সেখানে শুধু পুঁজিবাজার নয়, বড় বড় প্রকল্প, গ্যাস-বিদ্যুৎ খাত কোথায় লুণ্ঠন হয়েছে সেটিও উল্লেখ করা হয়েছে। সে সময়ের আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন হয়েই সবাই এই লুণ্ঠনে যুক্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় ব্যবসায়ী ছাড়া গত ১৫ বছরে কেউ ব্যবসা করতে পারেনি।

এমনকি দেশে সে সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় যেসব পণ্য আমদানি করা হয়েছে সেখানেও আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট সক্রিয় ছিল বলে মনে করেন আবু আহমেদ।

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, কারসাজিকারীরা আইন লঙ্ঘন করে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বাড়িয়ে টাকা লুপাট করেছে। পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুর্বল কোম্পানিকে ভালো কোম্পানি দেখিয়ে শেয়ারের মূল্য অতিমূল্যায়ন করা হয়েছে। শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, বুক বিল্ডিং পদ্ধতির মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ারের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি।

আবু আহমেদ বলেন, শ্বেতপত্রে যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের বিষয়ে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা যায়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, শ্বেতপত্রের সার্বিক বিষয়কে আরও পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। পুঁজিবাজারের বিষয়গুলো পুরোনো। শ্বেতপত্রটি আরও দেখে বিস্তারিত বলা যেতে পারে। এর বেশি বলতে চাচ্ছি না।

শ্বেতপত্র প্রতিবেদনে বলা হয়, পুঁজিবাজারে প্রভাবশালী উদ্যোক্তা গোষ্ঠী, ইস্যু ম্যানেজার, নিরীক্ষক ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কারসাজির একটি বড় নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। বাজারের মধ্যস্থতাকারী (ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক) দেউলিয়া হয়েছে, তাদের ইক্যুইটি ৩০ হাজার কোটি টাকা নেতিবাচক হয়েছে।

তবে পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত শীর্ষ এক মার্চেন্ট ব্যাংকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে খবরের কাগজকে বলেন, শ্বেতপত্রে যেসব বিষয় নিয়ে আসা হয়েছে সেগুলোর আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন ছিল। অর্থ পাচার, দুর্নীতি এগুলো গত ৫ আগস্টের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে, মূলত সেই প্রতিবেদনগুলোকেই পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদনে যুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজার বিষয়ে যে বলা হয়েছে এক লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে তার বিস্তারিত কোনো ব্যাখ্যা প্রতিবেদনে দেওয়া হয়নি। কারা কীভাবে এই টাকা আত্মসাৎ করেছে সেটি উল্লেখ করার প্রয়োজন ছিল।

স্বনামধন্য একটি সিকিউরিটিজ হাউসের শীর্ষ এই কর্তা ব্যক্তি বলেন, তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রমাণ লাগবে। শ্বেতপত্রে এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। ২০১০ সালে ইব্রাহিম খালেদ যে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল সেটি নিয়েও বেশ হইচই শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেখানে যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছিল তাদের কি আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। শ্বেতপত্রের মাধ্যমে দুর্নীতির জায়গাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে মাত্র। 

পাথর আমদানি নিয়ে জটিলতা তামাবিল-শেওলা স্থলবন্দরে প্রতিদিন ক্ষতি লাখ টাকা

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ পিএম
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৬ পিএম
তামাবিল-শেওলা স্থলবন্দরে প্রতিদিন ক্ষতি লাখ টাকা
তামাবিল স্থলবন্দরের গেট। ছবি: সংগৃহীত
ভারত থেকে পাথর আমদানির ওজন নির্ধারণসংক্রান্ত সমস্যার কারণে সিলেটের তামাবিল ও শেওলা স্থলবন্দরে মালবাহী গাড়ি আনলোড করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ সমস্যার কারণে দুটি স্থলবন্দরে প্রায় ১৬ দিন ধরে কয়েক শত মালবাহী গাড়ি আটকে আছে। এতে করে আমদানিকারকদের প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে।
 
সিলেটের পাথর আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেটের তামাবিল ও শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে যে পাথর আমদানি করা হয়, তা সরাসরি মাইন থেকে গাড়িতে লোড করে পাঠানো হয়। ফলে পাথরের সঙ্গে মাটি ও বালি মিশ্রিত থাকে। এর আগে তামাবিল ও শেওলা স্থলবন্দরে পাথর শুল্কায়নের পূর্বে বন্দর কর্তৃপক্ষ মাটি ও বালির ওজন বাদ দিয়ে পাথরের প্রকৃত ওজন নির্ধারণ করতেন। এর ফলে আমদানিকারকরা কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হতেন না। তবে কিছুদিন আগে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন স্থলবন্দর পরিদর্শন করেন এবং তার পর থেকেই বন্দর কর্তৃপক্ষ মাটি ও বালির ওজন ছাড় দিতে চাচ্ছে না। এ কারণে বর্তমানে তামাবিল ও শেওলা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ পাথর আনলোড করতে দিচ্ছে না এবং আমদানিকারকদের সঙ্গে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
 
অপরদিকে, পাথর আমদানিতে সমস্যার কারণে প্রায় ১৬ দিন ধরে ব্যবসায়ীরা আমদানি বন্ধ রেখেছেন। এতে তাদের মারাত্মক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। একদিকে যেমন পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকছে, অন্যদিকে সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন পাথর আমদানি না হওয়ার কারণে দেশীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
 
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে বৈঠক করে এ সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা হয়েছে। গত ১ ডিসেম্বর সিলেট চেম্বারের সদস্যদের উপস্থিতিতে তামাবিল ও শেওলা স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। সভায় আমদানিকারকরা তাদের সমস্যা তুলে ধরেন। সভায় অংশগ্রহণ করেন ব্যবসায়ী হেনরি লামিন, ইলিয়াস উদ্দিন লিপু, আব্দুল করিম রাসেল, জয়দেব চক্রবর্তী, জাকারিয়া ইমতিয়াজ জাকির, মো. সুহেল আহমেদ, দেলোয়ার লামিন, মো. আব্দুল আলীম, মো. শমসের আলী, মো. মনিরুল হক, বেলাল হোসেন, জুনেদ আহমদ জয়নালসহ আরও অনেকে।
 
একটি ট্রাকে ১২ টন পাথর আনা হয়, যার মধ্যে প্রায় ২ টন মাটি ও বালি থাকে। আমদানিকারক ইলিয়াস উদ্দিন লিপু বলেন, ‘ভারতের মাইনিং এলাকা থেকে সরাসরি পাথর ট্রাকে লোড করে পাঠানো হয়। এতে পাথরের সঙ্গে অনেক বালি ও মাটি থাকে। বন্দর কর্তৃপক্ষ যদি এই ২ টন বালি ও মাটি ছাড় না দেয়, তবে আমদানিকারকদের তা কিনতে হচ্ছে, যা তাদের জন্য আর্থিকভাবে ক্ষতিকর।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে পোর্ট চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে তিনি এটি সমাধান করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। এর সমাধান নৌ উপদেষ্টাই করতে পারবেন। আমরা ব্যবসায়ীরা চাই, বালু-মাটি মিশ্রিত পাথর কর্তৃপক্ষ সরাসরি এসে দেখে যৌক্তিক সমাধান দিক।’
 
দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফয়েজ হাসান ফেরদৌস বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে চেম্বার সর্বদা প্রস্তুত। ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো ব্যবসা করতে না পারলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমদানি বাণিজ্য বন্ধ থাকলে পণ্য সরবরাহ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি সরকার রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হবে। এ সমস্যাটি সমাধান করে আমদানি বাণিজ্য স্বাভাবিক করতে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। প্রয়োজনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করব। তবে ব্যবসায়ীদের যেকোনো পরিস্থিতিতে একতাবদ্ধ থাকতে হবে।’

আখাউড়া স্থলবন্দরে বেড়েছে রপ্তানি আয়

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২২ পিএম
আখাউড়া স্থলবন্দরে বেড়েছে রপ্তানি আয়
আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ট্রাকে করে বরফ দেওয়া মাছ রপ্তানি করা হচ্ছে। ছবি: খবরের কাগজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও চলমান পরিস্থিতির কারণে বন্দরের রপ্তানিতে কোনো ধরনের প্রভাব পড়েনি। একদিকে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেলেও, অন্যদিকে গত পাঁচ মাসে বন্দরের মাধ্যমে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি।

আখাউড়া স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের (জুলাই-নভেম্বর) প্রথম পাঁচ মাসে বন্দর দিয়ে মোট ১৪৮ কোটি ৫৫ লাখ ১১ হাজার ৩৭ টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই-আগস্ট) প্রথম দুই মাসে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ১৫২ টাকার। এটি বিগত অর্থবছরের তুলনায় ১২ কোটি ৪৫ লাখ ৭৩ হাজার ১১৫ টাকার বেশি। 

রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে ছিল ছোট-বড় মাছ, শুঁটকি, পাথর, সিমেন্ট, প্লাস্টিকসামগ্রী, বর্জ্য তুলা, ফার্নিচার ও ফুট ড্রিংকস। তবে রপ্তানি পণ্যের মধ্যে মাছই ছিল সবচেয়ে বড় অংশ। বিশেষভাবে ছোট-বড় মাছ ও শুঁটকি রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। 

এদিকে রপ্তানি বাড়লেও গত পাঁচ মাসে বন্দর দিয়ে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি। বন্দরসূত্র আরও জানিয়েছে, সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুন মাসে কিছু পরিমাণ ভারতীয় জিরা আমদানি হয়েছিল। এরপর থেকে বিশেষ করে চলতি অর্থবছরের এপ্রিল-মে মাসে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি। এ ধরনের পরিস্থিতির কারণ হিসেবে বন্দরসংশ্লিষ্টরা নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন।

আখাউড়া স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাসিবুল হাসান হাসিব বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কিছুটা কমেছে। এর মধ্যে রয়েছে ডলারের দর, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ওপারের (ভারতের) রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এসব কারণে বাণিজ্য ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পরিবর্তে নিম্নমুখী হচ্ছে। তবে আমরা হতাশ নই। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি ভালো হবে এবং ব্যবসা বাড়বে।’

বন্দরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী শোয়েব ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. রাজীব ভূঁইয়া জানান, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার সত্ত্বেও এ বন্দর দিয়ে রপ্তানিতে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।

তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে রপ্তানি আরও বাড়বে বলে তাদের প্রত্যাশা। আখাউড়া স্থলবন্দরের মাছ রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া বলেন, ‘গত কয়েক মাসে বন্দর দিয়ে মাছ রপ্তানি প্রায় পাঁচ গুণ বেড়েছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারের চাতল বন্দর বন্ধ থাকায়, সেখানে উৎপাদিত মাছগুলোও আখাউড়া বন্দর দিয়ে রপ্তানি হচ্ছে। আশা করছি, ভবিষ্যতে মাছ রপ্তানি আরও বাড়বে।’ বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী শানু মিয়া বলেন, ‘বন্দরে রপ্তানি আগের মতোই চলছে। তবে গত পাঁচ মাসে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি।’

আখাউড়া স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘পটপরিবর্তনের কারণে বন্দরের বাণিজ্যে কোনো ধরনের প্রভাব পড়েনি। আমদানি না হলেও, বিগত অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা যেন বৈধ পণ্য দ্রুত রপ্তানি করতে পারেন, সে জন্য আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আমরা আশা করছি, আগামীতে রপ্তানি বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে।’

আখাউড়া স্থলবন্দর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক বন্দর হিসেবে পরিচিত। এ বন্দরের মাধ্যমে ছোট-বড় মাছ, শুঁটকি, প্লাস্টিকসামগ্রী, পাথর, ইট, ভোজ্যতেল, বর্জ্য তুলা, সিমেন্ট, ফুট ড্রিংকসসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পণ্য ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যসহ সাতটি পাহাড়ি রাজ্যে রপ্তানি হয়।