
প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের চতুর্থ রবিবার বিশ্ব নদী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এ উপলক্ষে নদীর গুরুত্ব নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা, সভা-সেমিনার থেমে নেই। এ বছরও নদী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে নানান পদক্ষেপের বিষয় বিভিন্ন নিবন্ধে ও আলোচনায় উঠে এসেছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য জলপথ’।
দেশের ছোট নদীতে নাব্যসংকট দিন দিন বাড়ছে। বর্ষা মৌসুমে মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে এটা প্রকট আকার ধারণ করছে। পলির কারণে এই সংকট তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন নদী নিয়ে গবেষণায় যুক্ত বিশেষজ্ঞরা। অপরিকল্পিত ড্রেজিং সিরিয়াল ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে না পারা ও নিয়মিত ড্রেজিং না করার কারণে দেশের ছোট নদী এবং খালগুলোতে নাব্য ধরে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে বলে মত দিয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনও।
বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২২ অনুযায়ী আট কারণে দেশের ছোট নদীগুলো নাব্যসংকটের মুখে পড়েছে। নদী ক্রমাগত দখল হয়ে যাওয়া। অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা। দীর্ঘদিন কচুরিপানা জমে থেকে নদী ভরাট হয়ে যাওয়া। স্বল্প উচ্চতা ও নদীকে দুই পাশ থেকে সংকুচিত করে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ। স্লুইসগেট ও অন্যান্য হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার দীর্ঘদিন অকেজো অবস্থায় থাকা। দীর্ঘদিন নদীকে খননের আওতায় না আনা ও খননের পর ড্রেজড ম্যাটারিয়ালের যথাযথ ব্যবস্থাপনা না হওয়ার কারণে নাব্যসংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়ের নাব্য পুনরুদ্ধারে খনন, ড্রেজড ম্যাটারিয়ালের সঠিক ব্যবস্থাপনা, কচুরিপানা অপসারণ, নদীভাঙন রোধ, নদীতে স্থাপিত সব অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদ করতে হবে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ খনন করে নদীর নাব্য বজায় রাখার চেষ্টা করলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনের উপপরিচালক (গবেষণা ও পরিবীক্ষণ) মাশফাকুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘নদীর নাব্য ধরে রাখা আমাদের জন্য এখন চ্যালেঞ্জ। আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে নদীতে পলি পড়ে যাচ্ছে। পলি পড়ার বড় কারণ নদীর পাড় দখল হওয়া। পলির কারণে পানিপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। শুধু তাই নয়, নদীর তলদেশ ভরে গেলে পানির উচ্চতা বেড়ে বন্যা হতে পারে। নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় বিভিন্ন স্থানে অসমভাবে গর্ত হচ্ছে। সে কারণে পানিপ্রবাহের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে নদীর পাড়ে গিয়ে তা আঘাত করে।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বাংলাদেশের নদীগুলোকে রক্ষা ও দখল হওয়া নদী পুনরুদ্ধারে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হবে। নদীকে দূষণমুক্ত করতে ব্যয়সাশ্রয়ী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। নদী শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, আমাদের সংস্কৃতি ও জীবিকার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিতের অংশ হিসেবে আমাদের নদীগুলোকে অবশ্যই দূষণমুক্ত করতে হবে।
দেশের ছোট নদী এবং খালগুলোর নাব্য ধরে রাখতে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে খনন করতে হবে। যাতে দ্রুত এটি ভরাট না হয়ে যায়। নদ-নদী, খাল-বিল দখলমুক্ত করতে হবে। এ জন্য কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। অত্যধিক পলি পড়ে নদীর দুই পাশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ সুযোগে একটি মহল এগুলো দখল করে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করছে। এতে নদীর নাব্য নষ্ট হচ্ছে। তাই পানিপ্রবাহের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।