
বর্ষ পরিক্রমায় ফিরে এসেছে মাহে রমজান। পবিত্র এই মাসের গুরুত্ব মুসলমানদের কাছে অপরিসীম। আরবি মাসসমূহের মধ্যে রমজান হচ্ছে নবম মাস। রোজা শব্দটি ফারসি। এর আরবি পরিভাষা হচ্ছে সওম। সওম অর্থ নিবৃত্ত থাকা, পরিহার করা। এর তাৎপর্য হচ্ছে, আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তের সঙ্গে পানাহার পরিহার করা। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, মাহে রমজানের প্রথম দশ দিন হলো রহমত, দ্বিতীয় দশ দিন মাগফিরাত এবং শেষ দশ দিন নাজাতের। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই মাসের প্রতিটি দিন নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পানাহারে বিরত থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আত্মশুদ্ধির সাধনায় নিবেদিত থাকেন।
আত্মশুদ্ধির দুটো দিক আছে– একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা; দ্বিতীয়টি রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করে পরিশুদ্ধ জীবনযাপন করা। এই পরিশুদ্ধির অর্থ ব্যাপক। রোজার প্রস্তুতির শুরু তারাবিহ আদায়ের মধ্য দিয়ে। এরপর রোজা রাখার পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত, পবিত্র কোরআন তিলওয়াত, দান ইত্যাদির মাধ্যমে পুণ্য হাসিল করাই হচ্ছে রমজানের লক্ষ্য। এ মাসেই পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়। ফলে মাসটির গুরুত্ব অপরিসীম।
অন্যদিকে আত্মশুদ্ধির সাধনা বলতে বোঝায় সেই সব কাজ থেকে বিরত থাকা, সেসব কাজ থেকে আল্লাহতাআলা বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এ কারণেই এ সময়ে মিথ্যা, প্রতারণা, খেয়ানত, আত্মসাৎ, গিবত, জুয়া, ঝগড়া-বিবাদ, খুন, চুরি, রাহাজানি, অপবিত্র কাজে জড়িয়ে না পড়া- অর্থাৎ যা কিছু ব্যক্তিমানুষ ও মানবজাতির জন্য অকল্যাণকর, সেসব থেকে বিরত থাকা। এ প্রসঙ্গে বুখারি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে পাপ, মিথ্যা কথা, অন্যায়-অবিচার, মূর্খতাসুলভ কাজ পরিহার করতে পারে না, তার পানাহার ত্যাগ করাতে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’
বোঝাই যায়, রোজার দিনে প্রত্যেক মানুষের জন্য সর্বমানবিক, সৎ, পরিশুদ্ধ জীবনযাপন করাটা বাঞ্ছনীয়। ব্যবসায়ে ধোঁকাবাজি, অহেতুক মূল্যবৃদ্ধি, অন্য মানুষকে পীড়া দেওয়া ইত্যাদি অন্যায় কর্ম থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো রকমের অন্যায়-অবিচার-অমানবিক কাজ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সারা বছরই এভাবে জীবনযাপন করা উচিত, কিন্তু রমজান মাসে এর অপরিহার্যতা বেড়ে যায়। সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, হে মুমিনগণ, তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে।
ইসলামের গভীরতম তাৎপর্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পরিশুদ্ধ মানবিক জীবনযাপন ও সৎ কাজে যুক্ত থাকা। মাহে রমজানে এই বিষয়টি নতুন করে আমাদের সামনে চলে আসে। মুসলিম বিশ্ব ও মুসলমানরা নতুন করে পরিশুদ্ধ জীবন আর সৎ পথে থাকার অনুপ্রেরণা বোধ করেন। আজ মাহে রমজানের শুরুর দিনে প্রত্যেক মুসলমানকে আমরা এই কথাগুলো স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আসুন, আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পবিত্র কোরআন ও রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশিত পথে রমজানের সব বিধিবিধান মেনে রোজা রাখি ও জীবনযাপন করি।