
রোজার শুরুতেই ইফতারে নিত্যব্যবহার্য কিছু পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে ভোক্তারা ক্ষুব্ধ। যদিও গত শনিবার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রমজান মাস ধরে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। কিন্তু রাজধানীর বাজারগুলোর সরেজমিন তথ্য বলছে, পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। গত অক্টোবর মাসে প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন রমজানে খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপণ্যেরর দাম যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে। সে লক্ষ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নিবিড়ভাবে কাজ করেছে। রোজার সময় ভোজ্যতেল, ছোলা, খেজুরসহ কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। সব পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এসব পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন এ ব্যাপারে কাজ করছে বলে জানা গেছে। তার পরও বাজারে এসব পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের।
রমজান এলেই ইফতারে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। সরকারের কোনো পদক্ষেপই তখন কাজে আসে না। এরই মধ্যে সরকার খেজুর, ভোজ্যতেলসহ কিছু পণ্যের শুল্ক কমিয়েছে। তার পরও বাজারে নেই কোনো প্রতিফলন। ইতোমধ্যে শতের কোটা ছাড়িয়েছে বেগুন। শসা, লেবুর দামও ঊর্ধ্বমুখী। দেশি মুরগির দাম ৫০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৭০০ টাকা। বাজারভেদে গরুর মাংসের দাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৮০০ টাকা। এবারে রোজায় গত বছরের তুলনায় সয়াবিন তেল আমদানি বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। তার পরও দূর হচ্ছে না সংকট। খবরের কাগজের তথ্যমতে, ক্রেতারা বোতলজাত তেল চাইলে খুচরা বিক্রেতারা দিতে পারছেন না। অর্থাৎ আগের মতো বেশির ভাগ দোকানে সয়াবিন তেল নেই। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, খোলা সয়াবিন তেল ১৫৭ টাকা লিটার ঘোষণা করলেও পাওয়া যায় না।
ভোজ্যতেল উৎপাদনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বলা হয়েছিল, এবারে রমজান উপলক্ষে প্রচুর ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারির পর আর কোনো সংকট হবে না। কিন্তু তাদের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে গত শনিবার নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের একটি তুলনামূলক মূল্যতালিকা দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায়, গত বছর রমজানের সময়ের তুলনায় এবার সব ধরনের চালের দাম ৬ থেকে ১০ শতাংশ বেড়েছে। এবার খেজুরের আমদানিও দ্বিগুণ হয়েছে। সরকার শুল্কও কমিয়েছে। তার পরও এক সপ্তাহের ব্যবধানে খেজুরের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, দু-তিন দিনের ব্যবধানে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও এ ক্ষেত্রে বাজার মনিটরিংব্যবস্থা জোরদার করা হয়নি। মূলত প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে বিক্রেতারা খেয়ালখুশিমতো মূল্যবৃদ্ধি করছেন। রমজানের শুরুতেই অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ।
রমজান মাস সামনে রেখে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা লাভের আশায় প্রতিযোগিতায় নামে। রমজানে এ সময় বিশেষ কিছু খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এই বাড়তি চাহিদাকে মুনাফা লাভের উৎকৃষ্ট পন্থা হিসেবে মনে করে। তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে। সর্বসাধারণের কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে চাহিদামতো নিত্যপণ্যের আমদানি ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে বাজারে কঠোরভাবে নজরদারি বাড়াতে হবে।