ঢাকা ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
English

সোনালী লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিবারের ১৪১ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ০৪:৩৫ পিএম
সোনালী লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিবারের ১৪১ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার স্ত্রী ফজলুতুননেসাসহ আটজনের ১৪১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি ১১টি বিও অ্যাকাউন্ট জব্দেরও আদেশ দেওয়া হয়েছে।

রবিবার (১ জুন) দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।

এই আটজনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা গোলাম কুদ্দুসের মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া, তাসনিয়া কামরুন অনিকা, ছেলে মোস্তফা কামরুল সোবহান, কামরুলের স্ত্রী শাফিয়া সোবহান, নূর-ই-হাফজা, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক সিএফও ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমান রয়েছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

আবেদনে বলা হয়, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, তার পরিবারের সদস্য ও কোম্পানির পরিচালক ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া, মোস্তফা কামরুস সোবহান, শাফিয়া সোবহান চৌধুরী, তাসনিয়া কামরুন অনিকা, ফজলুতুননেসা, নূর-ই-হাফজা ও কোম্পানির সাবেক সিএফও মীর রাশেদ বিন আমান সুপরিকল্পিতভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য বিধিবর্হিভূতভাবে একই পরিবারের সাতজন সদস্য কোম্পানির বোর্ড পরিচালক, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদ গ্রহণ করে একে অপরের সহায়তায় প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির আশ্রয়ে জাল চুক্তিনামা সৃজন করার মাধ্যমে বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের তহবিল থেকে ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন শেয়ারিং এর মাধ্যমে ওই অর্থ তাদের নামীয় বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যংক হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করায় মামলা করা হয়।

আবেদনে আরও বলা হয়, তদন্তকালে বিশ্বস্তসূত্রে জানা যায়, আসামিদের মালিকানাধীন ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামীয় অস্থাবর সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। আসামিদের মালিকানাধীন এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামীয় ব্যাংক হিসাব ও অন্যান্য অর্থিকপ্রতিষ্ঠানের হিসাব/শেয়ার অবরুদ্ধ করা না হলে বিচারকালে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না। এতে রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অবিলম্বে আসামিদের মালিকানাধীন এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামীয় ব্যাংক হিসাব ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন। 

পরে আদালত আবেদন মঞ্জুর করে ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন। সূত্র: বাসস

অমিয়/

হত্যা মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে সুব্রত বাইন

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৪:২২ পিএম
হত্যা মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে সুব্রত বাইন
ছবি: সংগৃহীত

যুবদল নেতা আরিফ সিকদার হত্যা মামলায় সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলীর ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। 

বুধবার (৯ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল ওয়াহাব এ আদেশ দেন। 

এদিন রিমান্ড আবেদন শুনানির জন্য সুব্রতকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম আসামিকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। 

অন্যদিকে আসামির আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ডের আদেশ দেন বিচারক। 

গত ২৩ জুন সুব্রত বাইনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। 

মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ১৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর হাতিরঝিলের নয়াটোলা মোড়ল গলির ‘দি ঝিল ক্যাফে’র সামনে ঢাকা মহানগর উত্তরের ৩৬নং ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সহ-ক্রীড়া সম্পাদক মো. আরিফ সিকদারকে গুলি করা হয়। আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ এপ্রিল মারা যান তিনি। 

এ ঘটনায় সুব্রত বাইনের সহযোগী মাহফুজুর রহমান বিপুসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত আরিফের বোন রিমা আক্তার।   

গত ২৭ মে সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী মোল্লা মাসুদসহ চারজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। পরদিন হাতিরঝিল থানার অস্ত্র আইনের মামলায় সুব্রত বাইনের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ওই রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। 

উজ্জ্বল/সালমান/

সালমান, আনিসুল, আমুসহ ৯ জন নতুন মামলায় গ্রেপ্তার

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০২:২৩ পিএম
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৪:১১ পিএম
সালমান, আনিসুল, আমুসহ ৯ জন নতুন মামলায় গ্রেপ্তার
আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান ও আমির হোসেন আমু

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণিজ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও ডা. দীপু মনিসহ ৯ জনকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার বিভিন্ন মামলায় নতুন করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। 

বুধবার (৯ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম মিয়া তদন্ত কর্মকর্তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন।

গ্রেপ্তার দেখানো অন্যরা হলেন- সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, সাবেক সচিব জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু ও যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান। 

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আনিসুল হক, জাহাঙ্গীর আলম, পলক, শহীদুল হক ও আবুল হাসানকে দুই মামলায়, সালমান, আমু, দীপু মনিকে এক মামলায় এবং মনিরুল ইসলাম মনুকে আট মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

তারা আটক হওয়ার পর থেকে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হওয়া অসংখ্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। 

উজ্জ্বল/পপি/

মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডার: ৮ আসামি রিমান্ডে

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০১:৪৬ পিএম
মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডার: ৮ আসামি রিমান্ডে
ছবি: খবরের কাগজ

কুমিল্লার মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানার করইবাড়ি এলাকায় মা, ছেলে ও মেয়েকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আটজনের প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। 

বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে কুমিল্লার ১১নং আমলি আদালতের বিচারক মমিনুল হক আসামিদের এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বাঙ্গরা বাজার থানা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা আবু তাহের এই রিমান্ড আবেদন করেন।

যদিও মামলাটি পরবর্তীতে ডিবির কাছে হস্তান্তর করায় বর্তমানে এটির তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমার চক্রবর্তী পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া সম্পাদন করবেন।

আসামিদের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা আদালতের পরিদর্শক মো. সাদেকুর রহমান।

তিনি বলেন, রিমান্ড শুনানির সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রিমান্ডের আসামি হলেন- মো. সবির আহমেদ (৪৮), মো. নাজিম উদ্দীন বাবুল (৫৬), বাচ্চু মিয়া মেম্বার (৫০), রবিউল আওয়াল (৫৫), দুলাল (৪৫), আতিকুর রহমান (৪২), বয়েজ মাস্টার (৪৩) ও আকাশ (২৪)। 

গত ৩ জুলাই মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে নিজ বাড়ির সামনে রোকসানা বেগম রুবি, তার মেয়ে জোনাকি আক্তার ও ছেলে রাসেল মিয়াকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় রুবির মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ২৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

এ ঘটনায় সেনাবাহিনী ও র‌্যাব পৃথক অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদেরকে পৃথক সময় আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে বাঙ্গরা থানা পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

জহির শান্ত/অমিয়/

দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনকে চাকরি-বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:৩৮ পিএম
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:৪৫ পিএম
দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনকে চাকরি-বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ
মো. শরীফ উদ্দিন

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে চাকরিচ্যুত মো. শরীফ উদ্দিনের চাকরি এবং পাওনা সব বেতন ও সুযোগ সুবিধা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

মো. শরীফ উদ্দিন এক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি।’

২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে অপসারণ করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৫৪ (২) তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো। তিনি বিধি অনুযায়ী ৯০ দিনের বেতন এবং প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা (যদি থাকে) পাবেন। কমিশনের অনুমোদনক্রমে জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো।

চট্টগ্রাম কার্যালয়ে কর্মরত থাকাকালে বেশকিছু বড় দুর্নীতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মো. শরীফ উদ্দিন। এরপরই তিনি একাধিক মহলের রোষানলে পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে।

সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি পরিবারসহ হত্যার হুমকি পান শরীফ। পরে এ বিষয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আইয়ুব খান চৌধুরী ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে সিসি টিভির ফুটেজসহ চট্টগ্রামের খুলশী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

মেহেদী/

অসংগতিপূর্ণ সেই রায়

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১১:৪৭ এএম
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১১:৪৮ এএম
অসংগতিপূর্ণ সেই রায়
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

দেশের বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য দায়ীদের অন্যতম সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলে এখনো ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের সংক্ষিপ্ত রায় ও পূর্ণাঙ্গ রায়ে ব্যাপক রদবদলের ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে রয়েছে তীব্র সমালোচনা। 

২০১১ সালের ১০ মে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চের ঘোষিত সংক্ষিপ্ত রায়ে বলা হয়েছিল, ‘সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী প্রসপেক্টিভলি (ভবিষ্যতের জন্য) বাতিল ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হলো, যা সাধারণত আইনসিদ্ধ নয়। জনগণ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন- সংসদ চাইলে আগামী দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে সংসদ ইচ্ছা করলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের বিচারকদের বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে পারে।’

সংক্ষিপ্ত এই রায় ঘোষণার পর এ বি এম খায়রুল হক চাকরির মেয়াদ শেষে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নেন। রায় ঘোষণার ১৬ মাস পর অবসরে থাকা অবস্থায় ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ে পরবর্তী দুই মেয়াদে (দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন) তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বলবৎ থাকার বিষয়টি ছিল না। শুধু তাই নয়, সরকারের মেয়াদ শেষ হলেও সংসদ বহাল থাকার কথা যুক্ত করা হয়। এতে সংক্ষিপ্ত রায়ের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায়ের ব্যাপক অসংগতি নিয়ে সে সময় জোরালো বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হয়। 

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, ‘১৯৯৬ সালের সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর আইন সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রীয় মূলনীতি এবং মৌলিক কাঠামোকে নষ্ট করে দেওয়ার কারণে বিতর্কিত আইনটি অসাংবিধানিক, বেআইনি এবং অকার্যকর বলে গণ্য হয়েছে।’ 

রায়ে তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি সংসদের কর্তৃত্বাধীন। সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনের একটি যুক্তিসংগত সময়ের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া যেতে পারে এবং এ সময়টি ৪২ দিন হতে পারে। নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা নতুন মন্ত্রিসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বাভাবিক এবং সাধারণ কার্যাবলি সম্পাদন করবে। নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনি ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত সব ব্যক্তি এবং প্রজাতন্ত্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে।’

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি হন), বিচারপতি এস কে সিনহা (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি এবং সরকারের চাপে পদত্যাগ ও দেশত্যাগে বাধ্য হন ) এবং বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি হন)।

রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। তবে বিচারপতি মো. ইমান আলী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে মত না দিয়ে বিষয়টি জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দেন। 

বিচারপতি খায়রুল হকের দেওয়া ওই রায় নিয়ে সেই সময় প্রশ্ন তুলেছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন বিচারপতি, আইনজীবী, রাজনীতিক ও বিশিষ্টজন। অসংগতিপূর্ণ ওই রায় নিয়ে সে সময় সারা দেশে বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনা হয়।     

দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। ২০১১ সালে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর একই বছর আওয়ামী লীগ সরকার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল রেখে বিদ্যমান সংসদ ও সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান যুক্ত করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে মূলত ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হয়। এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে গত বছর রিট করা হয়। শুনানি শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সরাসরি না ফেরানোসহ পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে সেগুলো পরবর্তী সংসদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। গতকাল পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। 

তবে, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাসংক্রান্ত বিচারপতি খায়রুল হকের দেওয়া সেই অসংগতির রায়ের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন শুনানির জন্য ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছেন আপিল বিভাগ। শিগগিরই শুনানি শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে।