পৃথিবীর প্রায় সব বড় ও মহৎ কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীর ভূমিকা ছিল অনন্য। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। এই যুদ্ধে নারীর ভূমিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নারী তার সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করেছিল স্বাধীনতার মতো একটি বড় অর্জনে। পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণ ছিল তার জীবনবাজি রাখার ঘটনা। অথচ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নারীকে মূলধারায় স্থাপন না করার ফলে নারীর প্রকৃত ইতিহাস যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। নারী মুক্তিযুদ্ধে যে গৌরবগাথা রচনা করেছিল, তা ধর্ষিত এবং নির্যাতিত নারীর ভূমিকায় অদৃশ্য হয়ে আছে।
বীরাঙ্গনা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনের বীর নারী। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অনেক নারী পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা ধর্ষিত হয়। ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর, যুদ্ধ শেষ হওয়ার ছয় দিন পর নির্যাতিত নারীদের বীরাঙ্গনা উপাধি দেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের ‘বীরাঙ্গনা’ স্বীকৃতি দিয়ে সে সময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘আজ থেকে পাক বাহিনী কর্তৃক নির্যাতিত মহিলারা সাধারণ মহিলা নয়, তারা এখন থেকে বীরাঙ্গনা খেতাবে ভূষিত।’ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এবং সংখ্যালঘিষ্ঠ হিন্দু কেউই পাকিস্তানিদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। যুদ্ধাবস্থায় হাজার হাজার নারী গর্ভধারণ করেন, যুদ্ধশিশুর জন্ম হয় এবং গর্ভপাত, আত্মহত্যা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪০ বছর পরে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধাপরাধ অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে ধর্ষণসহ বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধে ১ হাজার ৫৯৭ ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে। সেনাবাহিনীর কাছে আটক থাকা ৫৬৩ জন নারী সম্পর্কে টাইম ম্যাগাজিন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়— যখন পাকসেনাদের ক্যাম্প থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়, তারা সবাই তিন থেকে পাঁচ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। তাদের কাছ থেকে নৃশংসতার বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। অনেক নারীর যৌনাঙ্গের মধ্যে বেয়নেট চার্জ করা হতো। নিজেকে প্রথম বীরাঙ্গনা হিসেবে পরিচয় দেওয়া নারী ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী বলেছিলেন, ‘বীরাঙ্গনা লজ্জার নয়, গর্বের।’ ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল। ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে ওই বিল পাস হয়। সরকারি ও বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ২ থেকে ৪ লাখ বাঙালি নারী পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলেন। ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার বিপুলসংখ্যক নারীর সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই যুদ্ধে ধর্ষিত নারীদের বীরাঙ্গনা (সাহসী নারী) উপাধি প্রদান করে। বীরাঙ্গনা হিসেবে সম্মানিত হওয়া সত্ত্বেও বেশির ভাগ নির্যাতিত নারী তাদের পরিবার পরিত্যাগ করেছিল এবং সমাজ থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় বাংলাদেশ সরকার বীরাঙ্গনাদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করে। নারী পুনর্বাসন বোর্ডের প্রধান কাজ ছিল ধর্ষণের ফলে গর্ভবতী, যৌনরোগ বা শারীরিক ও মানসিক আঘাতে ভুগছেন এমন নারীদের সহায়তা করা। যুদ্ধের সময় ধর্ষণের শিকার নারীদের জন্য ১৯৭২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গর্ভপাতসংক্রান্ত আইনের ধারা মওকুফ করা হয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ পরিত্যক্ত শিশু (বিশেষ বিধান) আদেশ প্রণয়ন করা হয়। এই আদেশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিকভাবে পরিত্যক্ত বা বিবাহবহির্ভূতভাবে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের দত্তক নেওয়াকে বৈধ করে। সেই সময়ে নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালনায় শুধু মাদার তেরেসার সংস্থা ৩০০-এর বেশি শিশু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দত্তক হিসেবে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল। নারী পুনর্বাসন বোর্ড উইমেনস ক্যারিয়ার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট চালু করেছিল, যা যুদ্ধে বিপর্যস্ত নারীদের পেশাদার বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করে। নারী পুনর্বাসন বোর্ড যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ নারীদের ‘স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং অর্থনৈতিক ও মনোজাগতিক স্বাধীনতা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল। ক্ষতিগ্রস্ত নির্যাতিত নারীরা নারী পুনর্বাসন বোর্ডের মাধ্যমে সক্ষমতা অর্জন করে কাজ খুঁজে পেয়েছিলেন। আর্থসামাজিক সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে নির্যাতিত নারীদের উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত ও নির্যাতিত নারীদের জন্য ১০ শতাংশ শূন্যপদ সংরক্ষণ করার বিধান জারি করা হয়। বঙ্গবন্ধুর সরকার সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার বীরাঙ্গনাদের সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবন সহজতর করার জন্য এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পুনর্বাসন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং সমস্ত নথিপত্র জব্দ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকার বীরাঙ্গনাদের জন্য অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও পরে স্বৈরশাসকরা বীরাঙ্গনাদের কোনোরূপ সহায়তা বা সম্মান প্রদান করেনি। স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রায় ৪ দশক পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার অনুসন্ধান কমিটি গঠনের ম্যাধমে ধর্ষণ-নির্যাতনসহ বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধে ১ হাজার ৫৯৭ জনকে অভিযুক্ত করে এবং পরে তাদের অনেককেই বিচারের সম্মুখীন করা হয়। ২০১৪ সালে হাইকোর্টের এক রায়ে সরকারকে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়, কেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতনের শিকার নারীদের রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। পরে ২০১৫ সালে সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি আইন পাস করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৪৪ বছর পর বীরাঙ্গনারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সুযোগ-সুবিধা অর্জন করেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকে সরকারি হিসাবের প্রায় ২ লাখ বীরাঙ্গনার বিপরীতে মাত্র ৪৪৮ জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধশিশুদের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৪১ বীরাঙ্গনাকে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়ে প্রথম গেজেট প্রকাশ করে ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। কিন্তু ২৪ মে ২০২২ পর্যন্ত বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা মাত্র ৪৪৮ জন। সরকারি প্রজ্ঞাপনে কতদিনের মধ্যে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে, তার উল্লেখ নেই। সময়সীমার অনুপস্থিতির কারণে বীরাঙ্গনাদের বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য। বীরাঙ্গনাদের একটি বৃহৎ অংশকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে এখনো তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল। কারণ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অধিকাংশ বীরাঙ্গনাই তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে চান না। আবার পরিবারের সদস্যরাও বীরাঙ্গনাদের পরিচয় প্রকাশে আগ্রহী নন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের নারীরা নির্যাতিত হয়েছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে নিগৃহীত হয়েছেন, অনেক বীরাঙ্গনা গর্ভপাত করেছেন বা সন্তান দত্তক দিয়েছেন, অনেকেই আত্মহত্যা করেছেন। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আর্থসামাজিক অবকাঠামোতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সম্মানের সঙ্গে টিকে থাকার লড়াইয়ে বীরাঙ্গনারা অংশীদার হয়েছিলেন- নির্যাতনের ভয়ংকর ক্ষত ও সমাজের তিরস্কার মোকাবিলা করে। স্বাবলম্বী হওয়ার অকল্পনীয় যে ক্ষমতা বীরাঙ্গনারা দেখিয়েছিলেন, তা অতুলনীয়। বীরাঙ্গনারা মুক্তিযোদ্ধা, সাহসিকা এবং জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কম আলোচিত। তৃণমূলে সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবস্থান, সামাজিক সচেতনতা ও সংবেদনশীলতার অভাবের কারণে বীরাঙ্গনারা বেশির ভাগ অন্তরালেই রয়ে গেছেন। বীরাঙ্গনারা তাদের জীবনের বেশির ভাগ সময় কষ্ট, অপবাদ আর অপমানই পেয়েছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে তাদের যথাযথ সম্মান নিশ্চিত করতে হবে। বার্ধক্য জীবনে কিছুটা স্বস্তি, সম্মান আর আর্থসামাজিক নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য দ্রুততার সঙ্গে সব বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে হবে। বীরাঙ্গনাদের শনাক্তকরণে এবং রাষ্ট্রীয় পরিসরে তাদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত বীরাঙ্গনাদের নিয়েই একটি কমিশন গঠন করতে হবে। বীরাঙ্গনারা যেন তাদের প্রাপ্য সুবিধা পেতে গিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের সম্মুখীন না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অসচ্ছল ও ভূমিহীন বীরাঙ্গনাদের জন্য আবাসন বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। বীরাঙ্গনাদের ত্যাগ ও সংগ্রাম সম্পর্কে আমাদের আরও সংবেদনশীল হতে হবে এবং তাদের গল্পগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে, সচেতনভাবে প্রচার করতে হবে। তাদের ত্যাগ ও সংগ্রামের গল্পগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। আমাদের ইতিহাসের বইগুলোতে বীরাঙ্গনাদের গল্পগুলো একীভূত করতে হবে, যাতে আমাদের শিশুরা বাংলাদেশের জন্মের পেছনের সংগ্রামগুলো জানতে পারে। বীরাঙ্গনাদের সংগ্রামের কথা যেন সাহিত্য, স্থিরচিত্র, চলচ্চিত্র, নাটক কিংবা গানের মাধ্যমে জনসাধারণের মানসপটে অটুট থাকে তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বীরাঙ্গনাদের নামে দেশের প্রধান সড়কগুলোর নামকরণ করতে হবে। তাদের নামে স্কুল, কলেজ, পাঠাগারের নামকরণ করতে হবে। যুদ্ধকালীন সহিংসতায় নারীদের অভিজ্ঞতা যদি নীরবতা, মৌনতা, লজ্জা, সম্মানহানি এবং সামাজিক অনুশাসনের সীমিত দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়, তবে এটি সমাজে ধর্ষিতা নারীর করুণ চিত্র তৈরি করতে সাহায্য করে। ধর্ষিতা নারীর প্রতি সামাজিক ও পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে বীরাঙ্গনাদের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা জরুরি। বর্তমান সময়ে যৌন সহিংসতার শিকার নারীরা যেন অবহেলা ও অপমানের শিকার না হন, তার জন্য মুক্তিযুদ্ধকালীন যেসব নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের যথাযোগ্য স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তাদের সর্বোচ্চ সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করতে হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বাংলাদেশ তার আর্থসামাজিক উন্নয়ন, মানবিক প্রচেষ্টা, লিঙ্গ সংবেদনশীল নীতির জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক উন্নয়নে ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার লিঙ্গ সমতাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আবার মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি বলেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার ব্যাপারে সর্বদাই সচেষ্ট। আওয়ামী লীগের ২০১৯ সালের ঘোষণাপত্রে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর বিশেষ আলোকপাত করা হয়েছে। ঘোষণাপত্রে আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান নিশ্চিত করার সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে। ২০১৯ সালের ঘোষণাপত্রে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণ সম্মান, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও ভাতা প্রদান, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা ব্যবস্থা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে এবং সম্মানিত নাগরিক হিসেবে সব রাষ্ট্রীয় সুবিধা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এরই ধারাবাহিকতায় দ্রুততার সঙ্গে সব বীরাঙ্গনাকে চিহ্নিত করে তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে স্বীকৃতির ব্যবস্থাসহ তাদের আর্থসামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে।
বীরাঙ্গনাদের সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করতে তাদের অবদানকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং গণমাধ্যমে বীরাঙ্গনাদের অবদান গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসকেন্দ্রিক সরকারি অনুষ্ঠানে বীরাঙ্গনাদের সম্পৃক্ত করা, বীরাঙ্গনাদের সামাজিক স্বীকৃতির জন্য সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন- যাতে সব বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি পায় এবং সেই সঙ্গে যথাযোগ্য মর্যাদা ও সামাজিক নিরাপত্তা লাভ করে। এ জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি সুশীল সমাজ ও সচেতন নাগরিকদের ভূমিকা রাখতে হবে ।
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ
[email protected]