রাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাফিউল ইসলাম জীবন। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে ছাত্রদলের এক নেতা ও তার বন্ধুকে তিন ঘণ্টা আটকে মারধর ও পিস্তল দেখিয়ে ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার (৬ মে) রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। তবে নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের নেতারা।
ভুক্তভোগীরা হলেন রাবির শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য (দপ্তরের দায়িত্বে) নাফিউল ইসলাম জীবন ও তার বন্ধু ইউনুস খান। তারা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। অপরদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব, সহসভাপতি মনু মোহন বাপ্পা, সাদিকুল ইসলাম সাদিক, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান সোহাগ ও মাদার বখশ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মিশকাত হাসান।
ভুক্তভোগী, ছাত্রলীগ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত ৯টার দিকে নাফিউল ও তার বন্ধু ইউনুস খান ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসেন। কিন্তু একপর্যায়ে তাদের অনুসরণ করা হচ্ছে বুঝতে পারলে তারা মোটরসাইকেলে করে রোকেয়া হলের পেছন দিয়ে ফ্লাইওভারসংলগ্ন গেট দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানে ছাত্রলীগ নেতারা তাদের পথরোধ করেন এবং জোর করে মাদার বখশ হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে আসেন। কক্ষটি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের। এর কিছুক্ষণ পর সেই কক্ষে আসেন গালিব ও ছাত্রলীগের অভিযুক্ত অন্য নেতারা। তারা নাফিউলকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করলে তাকে মারধর শুরু করেন গালিব এবং একপর্যায়ে পিস্তল দেখিয়ে তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এ সময় আরেক ভুক্তভোগী ইউনুস খান ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বললে তাকেও চড়-থাপ্পড় মারেন গালিব। খবর পেয়ে ক্যাম্পাসের সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে রাত ১টার দিকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে তুলে দেন ছাত্রলীগ নেতারা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রদল নেতা নাফিউল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গালিব আমাকে মারধর করেছেন। প্রায় তিন ঘণ্টা আমাকে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। এ ছাড়া তারা জোরপূর্বক আমার মোবাইল চেক করেন।’
ভুক্তভোগী নেতাকে উদ্ধার করার পর রাত ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে ছাত্রদল। এ সময় ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘একা পেয়ে আমাদের সংগঠনের এক নেতাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর ও ভীতি প্রদর্শন করে কাপুরুষের পরিচয় দিয়েছে ছাত্রলীগ। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’ এ ছাড়া ছাত্রদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব খবরের কাগজকে বলেন, ‘ওই ছেলেকে কোনো ধরনের মারধর, হুমকি কিংবা মানসিক নির্যাতন করা হয়নি। তবে এর আগেও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। সেই সন্দেহ থেকে তাকে নিয়ে এসে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তার কাছে সংগঠনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস পাওয়া গেলেও ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে, এমন কিছু তার কাছে আমরা পাইনি। পরে তাকে প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে হস্তান্তর করেছি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘ঘটনা জানতে পেরে আমি ওই হলে দুজন সহকারী প্রক্টরকে পাঠিয়েছি। তারা সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। তবে মারধর বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের কোনো অভিযোগ করেননি ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ পেলে ঘটনা যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’