কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে এক দিনেই ২৪টি মৃত মা কচ্ছপ ভেসে এসেছে। ‘অলিভ রিডলি’ প্রজাতির এই কচ্ছপগুলোর পেটে ডিম ছিল বলে জানিয়েছেন সমুদ্র বিজ্ঞানীরা।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের সোনার পাড়া থেকে টেকনাফ সৈকত ও সোনাদিয়া উপকূলে কচ্ছপগুলো ভেসে আসে।
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) বিজ্ঞানীরা সরেজমিন পরিদর্শন করে এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার একই সমুদ্র উপকূলে ১৫টি মৃত মা কচ্ছপ ভেসে আসে। এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৮৩টি সামুদ্রিক মৃত মা কচ্ছপ ভেসে আসার তথ্য জানিয়েছেন বোরির বিজ্ঞানীরা।
সব কচ্ছপই অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙা প্রজাতি বলে জানিয়েছেন বোরি জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম। তিনি জানান, নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রজনন মৌসুমে গভীর সাগর পাড়ি দিয়ে অলিভ রিডলি ডিম পাড়তে আসে। এ সময় তারা প্রজনন ক্ষেত্রে আসার পথে জালে আটকা পড়ে বা অন্য কোনোভাবে আঘাত পেয়ে মারা পড়ছে। উদ্ধার করা অধিকাংশ কচ্ছপের শরীরে জাল ও রশি প্যাঁচানো ছিল।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়ে তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এর মধ্যে স্তন্যপায়ী প্রাণী পরপইস ও ডলফিনের মৃতদেহ ভেসে এসেছে। এভাবে মৃত কচ্ছপ ভেসে আসার বিষয়টি উদ্বেগের ও হতাশার। দু’একদিনের মধ্যে গভীর সাগরে ঘুরে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হবে।’ এরপর মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান সহজ হবে বলে মনে করেন এই বিজ্ঞানী।
তিনি আরও বলেন, ‘এ মৌসুমে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭৬টি অলিভ রিডলি মা কচ্ছপ থেকে ৯ হাজার ১০৭টি ডিম সংগ্রহ করা হয়। এসব ডিম সৈকতের প্রাকৃতিক হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে।’ তবে এক সপ্তাহ ধরে নতুন করে কোনো কচ্ছপ ডিম দেয়নি বলে জানান তিনি।
বোরির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ বলেন, ‘ভেসে আসা সামুদ্রিক প্রাণীর মৃতদেহের নমুনা সংগ্রহ করে কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। এসব প্রাণীর বিচরণ ও বাসস্থানে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সারওয়ার আলম বলেন, ‘বোরির বিজ্ঞানী ও স্থানীয়ের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে, জালে আটকা পড়ে অধিকাংশ কচ্ছপ মারা পড়ছে। এ বিষয়ে খোঁজ পেলেই ব্যবস্থা নিতে বনবিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।’