
সারা দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে গতকাল ৩ জুলাই থেকে। মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সময়সূচি ও করণীয় নির্দেশনা ইতোমধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এই নির্দেশনা মানেনি রাঙামাটি বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া আদর্শ মাদ্রাসা।
এমনকি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মৃদুল কান্তি তালুকদার দুপুরে হলেও পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে আসলে তাতেও কর্ণপাত করেননি প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল সামশুল আরেফিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম দিন রুটিনটা একটু মিসিং হয়েছে। শনিবার থেকে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করব।’
তবে সরকারি নির্দেশনা না মানার প্রমাণ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা মৃদুল কান্তি তালুকদার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান স্বাক্ষরিত গত ৩০ জুনের এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘সময় নির্ধারিত’ ও ‘অতীব জরুরি’। এই চিঠি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও এসব অধিদপ্তরের শিক্ষা বিভাগসহ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবদের পাঠানো হয়েছে। সেখানে নির্দেশনাপত্রটি বিভাগগুলোর আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে পাঠাতে বলা হয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত আর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশনাকে পাশ কাটিয়ে যথাসময়ে পরীক্ষা শুরু না করার বিষয়ে সামশুল আরেফিন বলেন, ‘আমাদের প্রথম দিন রুটিনটা একটু মিসিং হয়েছে। তবে ওইদিন কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত নয় আরবি পরীক্ষাগুলো নিয়েছি। আমাদের এবতেদায়ি (প্রাথমিক) শাখাও সংযুক্ত। রুটিন করতে সব একসঙ্গেই করেছি। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত আমাদের প্রায় ৯০ জন শিক্ষার্থী আছে।’
নিজের একক সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ায় কোনো সমস্যা তৈরি হবে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই সবগুলো পরীক্ষা আমরা শনিবার থেকে একসঙ্গে শুরুর চিন্তা করছি। মাদ্রাসার চারটি বিষয় সরকার যে রুটিন দিছে ওখানে নেই। গতকালের আগ পর্যন্ত সরকারি নির্দেশনা ছিল যে, পরীক্ষার গ্যাপের মধ্যে ক্লাস হবে না। আমরা ভাবছিলাম ওই গ্যাপের মধ্যে পরীক্ষাটা নিয়ে নেব। কিন্তু এখন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়ায় শিডিউল মেনেই পরীক্ষা নেব।’
প্রিন্সিপালের এমন সিদ্ধান্তকে ‘হঠকারী’ বলে মন্তব্য করেছেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল বাতেন।
তিনি বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তকে না মেনে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মনগড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরীক্ষা শুরুর বিষয়ে পরিচালনা কমিটির সঙ্গে কোনো আলোচনাও করেননি। কোনো সমস্যা হলে আমরা সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারতাম। কিন্তু প্রিন্সিপাল একক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পরীক্ষার মতো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কার্যক্রম থেকে পিছিয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মৃদুল কান্তি তালুকদার বলেন, ‘আমি তো গতকাল গিয়েছিলাম। পরীক্ষা হয়েছে। ঘটনা কী? পরীক্ষা হয়নি? তারা সময়মতো পরীক্ষা নেয়নি। তাই নির্দেশনা দিয়েছি, আপনারা এই ভুল করলেন কেন? আমাকে বলেছিল যে, পরে পরীক্ষা হবে। সম্ভবত ১২টা কী ১টায় একটা টাইম দিয়েছিল পরীক্ষা নেওয়ার।’
নির্দেশনা দেওয়ার পরও পরীক্ষা না নেওয়ার বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘ইচ্ছে করলেই তার (প্রিন্সিপাল) মতো পরীক্ষা নিতে পারবেন না। এটা আগে থেকেই শিডিউল করা আছে। টাইমলি নিতে হবে। যদি পরীক্ষা না নিয়ে থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জিয়াউর রহমান/সালমান/