ঢাকা ১১ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
English

বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০১ পিএম
বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি

বিদ্যুৎ খাতের ব্যয় কমাতে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা সফল হয়নি। বিতর্কিত চুক্তি বাতিলসহ বিদ্যুৎ খাতে প্রভাব ফেলার মতো বড় কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি সরকার। যে কারণে খাতে ব্যয় কমানো সম্ভব হয়নি। বাজেটে গলার কাঁটা বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে সেই ভর্তুকি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ মূল বাজেটের তুলনায় সংশোধিত বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বেড়েছে ৭৭ শতাংশ। যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, অর্থবছর শেষে খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ভর্তুকির চাপ কমাতে সরকার গত এক বছরে চার দফা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেশি। সরকার উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে বিদ্যুৎ বিক্রি করে। ফলে খাতে প্রতিবছর বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ভর্তুকিতে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার বড় একটি অংশই খেয়ে ফেলছে বিদ্যুৎ খাত। খাতে ব্যয় বাড়ায় সামগ্রিকভাবে বাজেট বাস্তবায়নের চাপ বাড়ছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ খাতে চুরি বন্ধ এবং অদক্ষতা কমাতে পারলে ভর্তুকির চাপ কমবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ দেওয়া ভর্তুকির সিংহভাগই ব্যয় হয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া বাবদ বা ক্যাপাসিটি চার্জে। যেমন গত অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে ব্যয় হয় ৩২ হাজার কোটি টাকা। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিবছরই খরচ বাড়ছে। এর পেছনে কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ অন্যতম কারণ। পাশাপাশি খাতে অযৌক্তিক ব্যয় দুর্নীতিসহ নানা কারণে খরচ বাড়ছে বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ . জাহিদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, সরকারের অর্থায়নের ক্ষেত্রে টানাপোড়েন চলছে। বিশেষ করে রাজস্ব আদায়ে বিশাল দুর্বলতা রয়েছে। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির চাপ বাড়ছে। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বেড়ে গেলে অন্য খাতে ব্যয় কমাতে হবে। তাই বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমাতে হবে। আইএমএফ বলছে, স্বল্প মেয়াদে বিদ্যুতের খরচ কমানোর সুযোগ নেই। কাজেই দাম বাড়াতে হবে। সরকার বলছে, এমনিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের আয় বাড়ছে না। তা ছাড়া অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও ভালো নয়। অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বাড়াতে গেলে ঝুঁকি রয়েছে। ফলে সরকারকে খরচ কমানোর দিকে যেতে হবে।

ভর্তুকি বাড়ার অন্যতম একটি কারণ জ্বালানি তেল আমদানি। এর ফলে বিদ্যুতে ভর্তুকির চাপও বাড়ছে। তবে এই মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়লে এর চাপ সরাসরি ভোক্তার ওপর গিয়ে পড়বে। এমনিতেই উচ্চমূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। তার ওপর বিদ্যুতের দাম বাড়লে অর্থনীতি আরও নাজুক হয়ে পড়বে। তাই জ্বালানি তেলের আমদানি নির্ভরশীলতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের দিকে আরও নজর দিতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের অব্যবস্থাপনা দূর করতে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

নামসর্বস্ব দলের আবেদনের হিড়িক নিবন্ধন-প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনুন

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ০৮:২৮ পিএম
নামসর্বস্ব দলের আবেদনের হিড়িক
নিবন্ধন-প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনুন

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য বর্ধিত সময় শেষ হয়েছে গত রবিবার। ইসির তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে শেষ দিনে আবেদন পড়ে ৫০টির বেশি। এ পর্যন্ত ইসিতে মোট আবেদন করেছে ১৪৭টি রাজনৈতিক দল। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ ইসির ডেসপাচ থেকে তথ্য একীভূত করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানাবে ইসি সচিবালয়। সবকিছু যাচাই-বাছাই শেষে যোগ্য দলকে নিবন্ধন দেবে ইসি। শেষ দিনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধন পেতে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

 খবরের কাগজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর গত ১০ মাসে গঠিত হয়েছে অন্তত ৩০টি দল। এর মধ্যে প্রায় দুই মাস আগে আত্মপ্রকাশ করা দলও এবার আবেদনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এত কম সময়ে কীভাবে নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণ করা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবেদনকারী দলগুলো সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের মধ্যে মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ দলের নিবন্ধনের শর্ত পূরণের যোগ্যতা রয়েছে। বাকি ৯৭ শতাংশ দলের বেশির ভাগই নামসর্বস্ব। অনেক দলের কার্যালয়ের ঠিকানা, এমনকি ফোন নম্বর পর্যন্ত ভুয়া। 

আবেদনকারী অনেক দলের নেতা-কর্মী দূরের কথা, বেশির ভাগেরই নেই কার্যালয়। ইসিতে দেওয়া ঠিকানায় বেশির ভাগ দলের কোনো অস্তিত্বই নেই। কমিশনে উল্লিখিত ঠিকানায় রয়েছে কারও বাড়ি বা অফিস। এসব দলের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের বেশির ভাগই ব্যবসায়ী, সাবেক আমলা ও পেশাজীবী। এর মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ছাড়া বেশির ভাগ দলের অস্তিত্ব শুধু কাগজে-কলমে। 

অন্তর্বর্তী সরকারের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ডিসেম্বরে ভোটের লক্ষ্য ধরে নতুন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দিতে গত ১০ মার্চ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ইসি। সে সময় ইসিতে আবেদন করে ৬৫টি নতুন রাজনৈতিক দল। এরপর এনসিপিসহ বেশ কিছু দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দলের নিবন্ধন আবেদনের সময়সীমা ২০ এপ্রিল থেকে বাড়িয়ে ২২ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। সম্প্রতি আদালতের আদেশে ইসির নিবন্ধন স্থগিত হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আর নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

 গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলের ইসির নিবন্ধন পেতে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এর বাইরে নিবন্ধনের জন্য দলের গঠনতন্ত্রের সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে বিধান রয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে বিদ্যমান আইন-বিধি অনুযায়ী ১০টি তথ্য আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। নিবন্ধনের জন্য জমা পড়া আবেদনগুলো যাচাই-বাছাইয়ে ইসির একটি কমিটি রয়েছে। আবেদনকারীরা শর্ত পূরণ করেছে কি না, কমিটির সদস্যরা সেটি দেখবেন। আইনে উল্লিখিত শর্তগুলো পূরণ করতে না পারা কোনো দলকেই নিবন্ধন দেওয়া হবে না। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে মাঠে কাজ করছে। 

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার খবরের কাগজকে বলেন, নতুন দলের জন্ম ইতিবাচক হলেও তা যদি নামসর্বস্ব ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষা বা আলোচনায় আসার জন্য গঠিত হয় তা গণতান্ত্রিক চর্চার সুফল বয়ে আনবে না। এসব দল দেশ ও জনগণের কোনো কাজেও আসবে না। কারণ তাদের অনেকেরই উদ্দেশ্য ভোটের আগে বড় বড় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা বা আসন ভাগাভাগি করে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করা। 

রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন জরুরি। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা হতে হবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে। নিবন্ধন বিধিমালার যে শর্তগুলো আছে সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে কি না, তা নির্বাচন কমিশনকে যাচাই করতে হবে। আশা করছি, কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন-প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।

ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ে বিবিএসের জরিপ সেবা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি জরুরি

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ০৭:৫১ পিএম
ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ে বিবিএসের জরিপ
সেবা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি জরুরি

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে এক তথ্য প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি অফিসের সেবা পেতে ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ নাগরিক ঘুষ বা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। ২১টি সরকারি অফিসের মধ্যে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বিআরটিএ। দ্বিতীয় অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং তৃতীয় অবস্থানে পাসপোর্ট অফিস।

 সরকারি সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে গত এক বছরে প্রায় ৩২ শতাংশ নাগরিককে ঘুষ দিতে হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি তিনজনের মধ্যে গড়ে একজনকে ঘুষ দিতে হয়েছে। গ্রামে এই হার ৩২ শতাংশ হলেও শহরে ৩০ শতাংশ। অবশ্য পুরুষের চেয়ে নারীরা তুলনামূলক কম ঘুষ দিয়েছেন। বিবিএস জানায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের ৬৪ জেলার ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ১৮ বছর ও তার বেশি বয়সের ৮৪ হাজার ৮০৭ নারী-পুরুষ এ জরিপে অংশ নেন। এ জরিপে নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার এবং বৈষম্যবিষয়ক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) ১৬ অভীষ্টের ছয়টির অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়েছে। 

বিবিএসের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নাগরিকদের সর্বাধিক ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বিআরটিএ। সেখানে সেবা নিতে গিয়ে ৬৩ দশমিক ২৯ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় ৬১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, পাসপোর্ট অফিসে ৫৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ ও ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ মানুষ সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ ও দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। 

জরিপের ফল অনুযায়ী, গত এক বছরে দেশের ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন।
জরিপে উঠে আসা ঘুষ-দুর্নীতির তথ্য নিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ বলেন, গড় সংখ্যা দেখে খারাপ বলে মনে হয় না। আমার ধারণা ছিল সরকারি সেবা নিতে সবাইকে ঘুষ দিতে হয়। যেসব দপ্তরে কম ঘুষ দিতে হয় বলে জরিপে দেখানো হয়েছে, সেখানেও যে কম দিতে হয়, তা নয়। যেমন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রচণ্ড ঘুষ-বাণিজ্য হয়। বেশি হয় বদলি-বাণিজ্য। তাড়াতাড়ি সেবা পাওয়ার জন্য ঘুষ লেনদেন হয়।

 এ ক্ষেত্রে শিক্ষা খাত উল্লেখ করা না হলেও পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় দেখেছি প্রচুর ঘুষ লেনদেন হয়। গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তা ধরা হয়েছে। বিভিন্ন মধ্যস্বত্বভোগী এ কাজে জড়িত। পাসপোর্ট অফিস, ভূমি অফিস, বিআরটিএ অফিস অনলাইন হলেও ঘুষের লেনদেন হচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের অফিসারদের তা দেখা দরকার। পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও বলেন, নিজের বাড়িতে নিরাপদ বোধ করার হারটি শতভাগ হওয়া দরকার।
জরিপের তথ্যানুযায়ী, এক বছরের মধ্যে অন্তত একবার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন ৪৭ শতাংশ নাগরিক। তাদের মধ্যে ৮৩ শতাংশ সহজে ৮৯ শতাংশ কম খরচে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার বিষয়ে মত প্রকাশ করলেও সন্তুষ্টি তুলনামূলকভাবে কম। 

সরকারি সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিবিএসের জরিপ প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছে তা সরকারি সেবাগ্রহীতাদের জন্য হতাশাজনক। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি অফিসের সেবা পেতে ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ নাগরিক ঘুষ বা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। সরকারি সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে এ ধরনের বিড়ম্বনা বা হয়রানির বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি এবং ঘুষ বন্ধ করতে হলে সেবাদাতাদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যাশা করছি, সেবা প্রতিষ্ঠানের কাজের গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।

গণপরিবহনে কর বৃদ্ধির প্রস্তাব সাধারণ মানুষের বাড়তি চাপ লাঘবে ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ০১:২৮ পিএম
গণপরিবহনে কর বৃদ্ধির প্রস্তাব
সাধারণ মানুষের বাড়তি চাপ লাঘবে ব্যবস্থা নিন
উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে এমনিতেই সাধারণ মানুষ দিশেহারা। এর ওপর গণপরিবহন খাতে নতুন করে কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্ধিত এই করের বোঝা মানুষের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। বাজেটে এই পদক্ষেপকে ‘অযৌক্তিক ও গণবিরোধী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। বর্ধিত কর কার্যকর হলে যাত্রীদের ভাড়া বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি বাড়বে পণ্য পরিবহনের খরচ। কারণ, কর বাড়ানোর ফলে পরিবহনের মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দেবেন। পরিবহন খরচ বাড়লে এর প্রভাব সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে পড়বে। বিরূপ প্রভাব দেখা দেবে ব্যবসা-বাণিজ্যে। দ্রব্যমূল্য আরেক দফা বাড়বে। ফলে মানুষের জীবনযাপন আরও কঠিন হবে। 
 
বর্তমানে ৫২ আসন বাসের কর ১৬ হাজার টাকা, প্রস্তাবিত বাজেটে এটি বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে কর বাড়ছে ৫৬ শতাংশের বেশি। ৫২ আসনের নিচের বাসের জন্য বর্তমান কর নির্ধারণ আছে ১১ হাজার ৫০০ টাকা। এটি বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব হয়েছে। এতে কর বাড়বে প্রায় ৭৪ শতাংশ। এসি বাসে বর্তমানে কর আছে ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। এখানে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে কর বাড়ছে সাড়ে ৩৩ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি কর বাড়ছে নন এসি মিনিবাসের ক্ষেত্রে। বর্তমানে নন এসি মিনিবাসের কর ৬ হাজার ৫০০ টাকা। এটি বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে সর্বোচ্চ ৯২ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন পরিবহনের ক্ষেত্রে কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গণপরিবহন খাতে সর্বশেষ কর বাড়ানো হয়েছিল ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে। অর্থাৎ ছয় বছর পর কর বৃদ্ধি করা হলো। এখন গণপরিবহন খাতে নিবন্ধন ফি, নবায়ন ফি ও সারচার্জ আদায় করে সরকার।
 
 তার সঙ্গে বাড়তি অনুমিত কর বা উৎস কর দিতে হয় মালিকদের। বছরে একবার এই কর আদায় করা হয়। নতুন বাজেটে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনসহ মোট ১৩ ক্যাটাগরির পরিবহনের বাড়তি করারোপ করার প্রস্তাব করা হয়। 
এনবিআরের সূত্র বলেছে, এই কর সমন্বয়ের সুযোগ আছে। পরিবহন মালিকরা প্রতি বছর যে বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দেন তার সঙ্গে তা সমন্বয় করা যাবে। কাজেই তাদের ওপর বাড়তি করে চাপ আসবে না। ভাড়াও বাড়ানোর কথা নয়।
 
 পরিবহন মালিকরা তাদের প্রকৃত আয় দেখান না। তাই এনবিআর অনুমানভিত্তিক এই কর ধার্য করে। অতীতে দেখা গেছে, কর বৃদ্ধি করলে ভাড়া বাড়ানোর প্রশ্ন আসে। আন্দোলন ধর্মঘটের হুমকি আসে। এ কারণে কোনো রাজনৈতিক সরকার কর বাড়াতে চায় না। ফলে এই খাত থেকে নামমাত্র রাজস্ব পায় সরকার। আয়কর আদায় বাড়াতে গণপরিবহন খাতে এবারের বাজেটে বাড়তি করারোপ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। 
 
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, বাজেটে বাড়তি কর বাড়ানোর ফলে ভাড়া বাড়বে। যার প্রভাব যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ওপর পড়বে। সরকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে, যা গণবিরোধী ও অযৌক্তিক। আমাদের সঙ্গে আলোচনা করলে বিকল্প আয়ের পথ খুঁজে দিতে পারতাম। তখন বাড়তি করারোপের দরকার হতো না। নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে জনগণের ওপর করের বোঝা চাপানো ঠিক হয়নি। গণপরিবহনকে গতিশীল করতে হলে বর্তমান কর বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে।
 
 আয়কর আদায় বাড়াতে গণপরিবহন খাতে সরকারের এই সিদ্ধান্ত যাত্রী পণ্য পরিবহনে চাপ বাড়াবে। যদিও এনবিআর বলছে, এত বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে না। কিন্তু পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, বাড়তি কর গণপরিবহন খাতে অচলাবস্থা সৃষ্টি করবে। এটি তুলে না নিলে এর প্রভাব যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ওপর পড়বে। প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত গণপরিবহনগুলো কর বাড়ানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা গুরুত্বের সঙ্গে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। যাতে সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি না হয়।

 

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের বিপুল অর্থ পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ০৬:৫৯ পিএম
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের বিপুল অর্থ
পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে গত বৃহস্পতিবার। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩৩ গুণ। ২০২১ সালের পর গত বছরই বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ জমা হয়েছে সুইস ব্যাংকগুলোয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের ফলে বিগত সরকারের সময়ের সুবিধাভোগীদের একটি বড় অংশ দেশ থেকে পালিয়েছে। এর পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারঘনিষ্ঠদের অর্থ-সম্পদ বাজেয়াপ্ত হতে শুরু হয়। এতে অনেকে এক দেশ থেকে অন্য দেশে অর্থ সরিয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে জমা হয়। বাংলাদেশের অনেক ব্যাংকেও বৈধ পথে দেশটির ব্যাংকে অর্থ জমা রাখে। আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাও সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা রাখেন। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুইস ব্যাংকের শাখাগুলোতে সেসব দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাও অর্থ জমা রাখেন।

 সেগুলোও সুইস ব্যাংকে জমা অর্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন দেশ থেকে জমা হওয়া এসব অর্থ সে দেশের দায় হিসেবে আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে থাকে। 

এসএনবির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সাল শেষে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের নামে জমা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৯ কোটি ৪০ লাখ সুইস ফ্রা। প্রতি সুইস ফ্রা ১৫০ টাকা হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। আগের বছর ২০২৩ সাল শেষে এই অর্থের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৮০ লাখ ফ্রা বা ২৭০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ৫৭ কোটি ৬০ লাখ ফ্রা বা প্রায় ৮ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৩ গুণ বেশি। যদিও ২০২৩ সালে এ আমানত ৬৭ শতাংশ কমে গিয়েছিল। অবশ্য এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তখন অর্থ পাচার নিয়ে তীব্র সমালোচনার কারণে এসব অর্থ সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। 

গোপনে অর্থ গচ্ছিত রাখার জন্য খ্যাত সুইজারল্যান্ড। কঠোরভাবে গ্রাহকদের নাম-পরিচয় গোপন রাখে সুইস ব্যাংকগুলো। ফলে সুইস ব্যাংকে অবৈধ আয় ও কর ফাঁকির টাকা জমা রাখা হয় বলে এক বিশ্বাস প্রচলিত আছে। সুইজারল্যান্ডের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হয়েছে, অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তরের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সরবরাহ করা হলে তারা তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে। বর্তমান সরকারও দেশ থেকে যে অর্থ পাচার হয়েছে তা ফেরত আনতে বদ্ধপরিকর। এসএনবির এ পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব পরিচয় ব্যবহার করে অর্থ জমা রাখলে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

 একইভাবে মূল্যবান শিল্পকর্ম, স্বর্ণ বা দুর্লভ সামগ্রী আমানত হিসেবে রাখলে তার আর্থিক মূল্যও এ হিসাবে দেখানো হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের সঞ্চিত অর্থের সবই পাচারকৃত, তা বলা যাবে না। কারণ সুইজারল্যান্ড, ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাও বৈধভাবে দেশটিতে অর্থ জমা রাখেন। ব্যক্তির পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও অর্থ জমা রাখা হয় সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে।

এক বছরের ব্যবধানে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমার পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার সুইজারল্যান্ড সরকারের 
সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশি গ্রাহকদের বিষয়ে তথ্য চাইতে পারে। একই সঙ্গে দেশ থেকে অর্থ পাচারের প্রবণতা যাতে না বাড়ে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক রাখতে হবে।

শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করুন

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ১২:২৪ পিএম
শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে বাজেট
বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করুন

এবার বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বাজেট প্রণয়নের সুযোগ পেয়েছিল। বলা হয়েছিল বিভিন্ন সংস্কারের কথা। কিন্তু ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা অনেক কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজেটে এবার ভিন্ন কিছু করার সুযোগ ছিল।

শিক্ষার জন্য বরাদ্দ মোট বাজেটের প্রায় ১২ দশমিক শতাংশ, যা আগের বাজেটের চেয়ে মাত্র শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি। শিক্ষায় বরাদ্দ জিডিপির মাত্র দশমিক ৭২ শতাংশ। ক্ষেত্রে ইউনেসকোর সুপারিশ হলো, জিডিপির অন্তত - শতাংশ এবং জাতীয় বাজেটের ১৫-২০ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ করা। এবার উভয় খাতেই বরাদ্দ গত বাজেটের তুলনায় বেড়েছে খুবই সামান্য। জিডিপির - শতাংশ তো দূরের কথা, শতাংশেও পৌঁছায়নি। রকম কম বরাদ্দের কারণে হতাশা প্রকাশ করছেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কৌশলগত পরিকল্পনারও অভাব রয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দও আশানুরূপ নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে স্বাস্থ্য খাতের আদর্শ বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ। বিশ্বের ৫১টি নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের বাজেটের তুলনায় স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৮তম। ভুটান তাদের মোট জাতীয় বাজেটের দশমিক শূন্য শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়। অথচ বাংলাদেশে এই দুই খাতে গড়ে জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মোট জাতীয় আয়ের (জিডিপি) দিক থেকেও এই বরাদ্দ অনেক কম, দশমিক শতাংশের কাছাকাছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে ক্ষেত্রে আদর্শ বরাদ্দের পরিমাণ হওয়া উচিত শতাংশ। নেপালে এই বরাদ্দের পরিমাণ দশমিক শতাংশ, ভারত শ্রীলঙ্কায় দশমিক শতাংশ এবং যুক্তরাজ্য ব্যয় করে ১০ শতাংশ। শিক্ষা স্বাস্থ্য খাত বাজেট বরাদ্দের দিক থেকে বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোর মতোই অবহেলিত থেকে গেছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা, বরাদ্দ করা অর্থের ৬৫ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসকদের বেতন-ভাতাতেই ব্যয় হয়ে যায়। সাধারণ মানুষের চিকিৎসায় ব্যয় হয় খুবই কম।

এক পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, মোট স্বাস্থ্যব্যয়ের ৭২ শতাংশই সাধারণ মানুষ বহন করে থাকে। বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রেকর্ড ভালো নয়। কারণেই বিশেষজ্ঞরা বাজেট বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়ার ওপর জোর দিতে বলেছেন। দেশের শিক্ষা খাতেরও সিংহভাগ ব্যয় হয় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতে। সেই তুলনায় শিক্ষা গবেষণার মানোন্নয়নে ব্যয় হয় যৎসামান্যই। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদও জানিয়েছেন, ভৌত অবকাঠামোর চেয়ে জনগণের শিক্ষা স্বাস্থ্যের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। তবে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেছেন, ‘ বছরের বাজেটে আগের বছরের তুলনায় তেমন বাড়েনি। শিক্ষা খাত অনেক দিন ধরে স্থবির রয়েছে। এই বাজেটেও তা থেকে উত্তরণের কথা নেই। কাজেই বলতেই হয়, আমরা যারা শিক্ষা নিয়ে কাজ করি তারা হতাশ।

বিশেষজ্ঞদের মতো আমরাও মনে করি, এই হতাশা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। ক্ষেত্রে শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। যেহেতু বাজেট প্রস্তাবিত পর্যায়ে রয়েছে, যদি সম্ভব হয় এই বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। কিছুদিন আগে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন। কমিশন স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ বা জিডিপির শতাংশ বরাদ্দের সুপারিশ করেছিল। স্বাস্থ্য খাতে এর কাছাকাছি বরাদ্দ দেওয়া যায় কি না, সরকার সেটা ভেবে দেখতে পারে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও বরাদ্দের পরিমাণ জিডিপির শতাংশ করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

তবে এটাও ঠিক, বাজেট বরাদ্দে অর্থসংকট রয়েছে। আয়-ব্যয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেই সরকারকে সামনে এগোতে হবে। কথাও মনে রাখতে হবে, স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের অভিমুখে যাত্রা করছে বাংলাদেশ। সব ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় নাম থাকবে দেশের। বাংলাদেশের এই যাত্রাপথকে যদি মসৃণ করতে হয়, তাহলে শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের উপযোগী স্বাস্থ্যবান মানবসম্পদ সৃষ্টির জন্যই এই বরাদ্দ বৃদ্ধির দিকটা সরকারের বিবেচনা করে দেখা প্রয়োজন।