
বিদ্যুৎ খাতের ব্যয় কমাতে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা সফল হয়নি। বিতর্কিত চুক্তি বাতিলসহ বিদ্যুৎ খাতে প্রভাব ফেলার মতো বড় কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি সরকার। যে কারণে এ খাতে ব্যয় কমানো সম্ভব হয়নি। বাজেটে গলার কাঁটা বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে সেই ভর্তুকি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ মূল বাজেটের তুলনায় সংশোধিত বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বেড়েছে ৭৭ শতাংশ। যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, অর্থবছর শেষে এ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ভর্তুকির চাপ কমাতে সরকার গত এক বছরে চার দফা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেশি। সরকার উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে বিদ্যুৎ বিক্রি করে। ফলে এ খাতে প্রতিবছর বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ভর্তুকিতে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার বড় একটি অংশই খেয়ে ফেলছে বিদ্যুৎ খাত। এ খাতে ব্যয় বাড়ায় সামগ্রিকভাবে বাজেট বাস্তবায়নের চাপ বাড়ছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ খাতে চুরি বন্ধ এবং অদক্ষতা কমাতে পারলে ভর্তুকির চাপ কমবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ দেওয়া ভর্তুকির সিংহভাগই ব্যয় হয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া বাবদ বা ক্যাপাসিটি চার্জে। যেমন গত অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে ব্যয় হয় ৩২ হাজার কোটি টাকা। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিবছরই খরচ বাড়ছে। এর পেছনে কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ অন্যতম কারণ। পাশাপাশি এ খাতে অযৌক্তিক ব্যয় ও দুর্নীতিসহ নানা কারণে খরচ বাড়ছে বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, সরকারের অর্থায়নের ক্ষেত্রে টানাপোড়েন চলছে। বিশেষ করে রাজস্ব আদায়ে বিশাল দুর্বলতা রয়েছে। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির চাপ বাড়ছে। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বেড়ে গেলে অন্য খাতে ব্যয় কমাতে হবে। তাই বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমাতে হবে। আইএমএফ বলছে, স্বল্প মেয়াদে বিদ্যুতের খরচ কমানোর সুযোগ নেই। কাজেই দাম বাড়াতে হবে। সরকার বলছে, এমনিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের আয় বাড়ছে না। তা ছাড়া অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও ভালো নয়। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বাড়াতে গেলে ঝুঁকি রয়েছে। ফলে সরকারকে খরচ কমানোর দিকে যেতে হবে।
ভর্তুকি বাড়ার অন্যতম একটি কারণ জ্বালানি তেল আমদানি। এর ফলে বিদ্যুতে ভর্তুকির চাপও বাড়ছে। তবে এই মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়লে এর চাপ সরাসরি ভোক্তার ওপর গিয়ে পড়বে। এমনিতেই উচ্চমূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। তার ওপর বিদ্যুতের দাম বাড়লে অর্থনীতি আরও নাজুক হয়ে পড়বে। তাই জ্বালানি তেলের আমদানি নির্ভরশীলতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের দিকে আরও নজর দিতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের অব্যবস্থাপনা দূর করতে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।