
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়মিতই লাগেজ চুরির ঘটনা ঘটছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্র। যদিও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, তারা ব্যাগেজ নিজস্ব সিকিউরিটি স্কোয়াড দিয়ে আনা-নেওয়া করে। দাঁড়িয়ে থেকে ব্যাগেজ ‘বেল্টে ড্রপ’ করে, যা বিমান নিরাপত্তা শাখা মনিটরিং করে থাকে। নিরাপত্তাকর্মীরা সব স্টাফের দেহ তল্লাশি করে থাকেন। এ ছাড়া কাস্টমস হলের আগমনী ব্যাগেজ বেল থেকে ট্যাগ মিলিয়ে ডেলিভারি দেওয়া হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তাদের বডি ক্যামেরাও আছে। এ ক্ষেত্রে চুরি হওয়ার সুযোগ কম। এর পরও দেখা যাচ্ছে লাগেজ চুরির ঘটনা ঘটছে; যা খুবই উদ্বেগের বিষয়। সরকারি হিসাবেই প্রতিদিন গড়ে তিনটি লাগেজ চুরি বা গায়েব হচ্ছে এই বিমানবন্দর থেকে।
দীর্ঘদিন ধরেই এই লাগেজ গায়েব চক্র তাদের তৎপরতা চালালেও সম্পূর্ণভাবে তা বন্ধ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কয়েক স্তরে নিরাপত্তাবেষ্টনীর এই বিমানবন্দরে কীভাবে এবং কারা এ অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অ্যাভিয়েশন বিশ্লেষকরা।
বিমানের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড বিভাগের তথ্যমতে, প্রতিদিন গড়ে তিনটির মতো লাগেজ চুরির অভিযোগ পাওয়া যায়। গত ছয় মাসে ৫৪০টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লাগেজ চুরির সঙ্গে জড়িত রয়েছে মূলত একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এ চক্রের সদস্যরা যাত্রী সেজে বেল্টের সামনে থেকে অথবা টার্মিনালের বাইরে জটলার মধ্যে থেকে লাগেজ বা ব্যাগেজ চুরি করে থাকে। পরে হারানো লাগেজের জন্য বাড়তি টাকা আদায় করে অথবা লাগেজে তেমন কিছুই না থাকলেও ‘দামি মালামাল’ ছিল বলে মিথ্যা দাবি করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করে থাকে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, এমন একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজ চুরি বা গায়েবের মতো ঘটনা লজ্জাজনক। লাগেজ বা ব্যাগেজের নিরাপত্তা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকেই নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। কারণ কার্গো হ্যান্ডলিং থেকে শুরু করে লাগেজ ব্যান্ডেজ যাত্রীর হাতে যাওয়া পর্যন্ত ওই কর্তৃপক্ষই সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে থাকে। ফলে এ কাজে যারা নিযুক্ত তাদের দায়িত্বশীলতার দিকে ঊর্ধ্বতনদের নজর দেওয়া জরুরি। এগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে। এ জাতীয় অপতৎপরতা দেশের এয়ারলাইনস, বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনা তথা দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করে।
শাহজালাল একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হওয়ায় দেশি-বিদেশি বহু মানুষের যাতায়াত রয়েছে। বাংলাদেশে আসা কোনো বিদেশি নাগরিকের সঙ্গে এ জাতীয় ঘটনা ঘটলে তা খুবই নেতিবাচক বার্তা দেবে। কয়েক স্তরে নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে এ ধরনের ঘটনা খুবই অনভিপ্রেত। তাই লাগেজ-ব্যাগেজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। লাগেজ চুরির সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে নজরদারি বাড়াতে হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে জন্য অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।