![দুর্নীতির বিরুদ্ধে এখনই যুদ্ধ চাই](uploads/2024/02/07/1707275920.Mahbubuddin-Chowdhury.jpg)
দুর্নীতির বিরুদ্ধে এখনই যুদ্ধ চাই, আর অপেক্ষা নয়। আপনারা জেনে অবাক হবেন কি না জানি না তবে কথাগুলো একেবারে মিথ্যা বা ফেলে দেওয়ার মতো নয়। সরকারি অফিসগুলোর রন্ধে রন্ধে দুর্নীতি উইপোকার মতো দেশকে ফাঁপা করে দিচ্ছে, যা রোধ করা দুদক কেন কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তবে যত দ্রুত সম্ভব দেশকে বাঁচাতে হলে সবাইকে একসঙ্গে মিলেমিশে এ দুর্নীতি দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারি অফিস-আদালত বা মন্ত্রণালয় বা তার অধিনস্ত সব প্রতিষ্ঠানে ওপেন সিক্রেটের মতো দুর্নীতির ব্যাপকতা শতগুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইত্যাদির বিভিন্ন ঢেউয়ের বিরুদ্ধে সাফল্যের সঙ্গে নীরবে যুদ্ধ করেছে ঠিকই, তবে অর্থনৈতিক অবস্থা এখনো অনেকটা দুর্বল। এ লড়াইয়ে আমাদের জীবন বাজি রেখে জয়লাভ হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। সরকারি কর্মচারীদের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী উদারতা দেখিয়ে তাদের বেতন শতগুণ বাড়ালেও এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো সফলতা বা উন্নতি দেখা যায়নি। বরং দুর্নীতি মাকড়সার জাল বা অক্টোপাসের মতো জেঁকে বসেছে, যা সরানো একেবারে দুষ্কর। দুদকের কিছু কিছু দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ডে দেখা যায়, সরকারি কর্মচারীদের একটি বড় অংশ কীভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে গ্রাস করছে। এই দুর্নীতিই আমাদের দেশের সন্তানদের আশা, ভরসা ও ভবিষ্যৎ ধ্বংস করতে বসছে। বাংলাদেশের মানুষ দেশকে দুর্নীতিমুক্ত হিসেবে দেখতে চায়। আপনি এখনই যদি শক্ত হাতে দুর্নীতি রোধ করার চেষ্টা না করেন, তাহলে লাল ফিতা বা আমলাতান্ত্রিকতার দৌরাত্ম্য এমন পর্যায়ে চলে যাবে তখন রশি টেনেও কোনো লাভ হবে না। শক্তি থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতি যেভাবে দেশকে বোধশক্তিহীন করে ফেলছে এর বিরুদ্ধে কথা বলাও এখন বিপদ। তবে দুদককে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। তদন্ত রিপোর্ট কোনোভাবেই হিমাগারে ফেলে রাখা যাবে না।
যে হারে সরকারি অফিসগুলোয় সরকারের রাজস্ব তহবিল থেকে বাজেটের টাকা বরাদ্দ করা হয়, তা কিন্তু যথাযথভাবে সরকারি অফিসগুলোয় ব্যয় করা হয় না। বছর শেষে সেই বাজেটের অর্থ ব্যয় করতে না পেরে ক্রয় ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে থাকে। সেখানেও এজি বা অডিট অফিসগুলোর অসৎ কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে। দুর্নীতির পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ খুবই উদ্বিগ্ন। যেহেতু আপনি সরকার প্রধান আপনার কাছে আমাদের নিবেদন, সরকারি অফিস-আদালতে বা সরকারি খাতে দুর্নীতি কমাতে আপনার সরকারের প্রচেষ্টাকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি বেড়েছে, যা দেখে দেশের জনগণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে। সাম্প্রতিককালে দুদকের এক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। বাংলাদেশে দুর্নীতি হচ্ছে একটি চলমান সমস্যা, যার বিরুদ্ধে একটি কার্যকর ও টেকসই সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। দুর্নীতির ফলে সেবা খাতে মানুষের হয়রানি, বিড়ম্বনা, প্রতারণা ও ক্ষতির অভিজ্ঞতা এখনো তুলনামূলকভাবে বেশি। বিশেষ করে সরকারের উল্লেখযোগ্য সেবার খাত হচ্ছে, ভূমি প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ। এখানেও মানুষের দুর্নীতির শিকার হওয়ার হার হচ্ছে ৬০ শতাংশ। খাস মহল-জল মহলের নামে ভূমি মন্ত্রণালয়, ভূমি ভবন, জেলা প্রশাসন, এসি ল্যান্ড ও দেশের ভূমি অফিসগুলো বছরের পর বছর সেবার নামে অপরিসীম যন্ত্রণা, হয়রানি, দুর্ভোগ দিচ্ছে যা দেখার কেউ নেই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার জায়গা না থাকায় জনগণ আজ হতাশার মুখোমুখি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারীদের হুঁশিয়ারি করে আমলানির্ভর নয়, রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমে দেশ গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। এখন বড়ই প্রয়োজন বা সময় এসেছে সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবার পরিজন এবং ক্ষমতাবানদের সম্পদের সঠিক তথ্য-বিবরণ নেওয়ার।
আশা করি, দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য মন্ত্রণালয়, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্নীতির উইপোকা দূর করার জন্য সরকারকে আর অপেক্ষা না করে এখনই কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি।
মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী: লেখক, গণমাধ্যমকর্মী