ঢাকা ১ আশ্বিন ১৪৩১, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কেমন আছে রোহিঙ্গা টিনএজাররা

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৩৯ এএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৩৩ এএম
কেমন আছে রোহিঙ্গা টিনএজাররা
ছবি:সংগৃহীত

মিয়ানমারে চলা সহিংসতা ও নির্যাতন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে থাকতে বাধ্য হয়েছে রোহিঙ্গা টিনএজাররা। কেউ আশ্রয়শিবিরে আবার কেউ বাংলাদেশি কমিউনিটির আশ্রয়ে রয়েছে। তাদের জীবনের গল্প তুলে ধরেছেন জাজাফী।

চার বছর আগে মিয়ানমার থেকে অসংখ্য মানুষ জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল বাংলাদেশে। যাদের বেশির ভাগ ছিল টিনএজার। তেমনি একজন জোবায়ের (ছদ্মনাম)। বাংলাদেশে আসার পরেও সে শরণার্থী শিবিরের বাইরে যেতে ভয় পেত। তার মন থেকে সহিংসতার স্মৃতি মুছে যায়নি। বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয়ে থেকেও সব সময় তার মধ্যে আতঙ্ক কাজ করত। ১৪ বছর বয়সী জোবায়েরের আরও ছয় ভাই বোন আছে। সবাই মিলে একটি খুপরি ঘরে গাদাগাদি করে থাকে।

তার বয়সী ৮০ শতাংশ রোহিঙ্গা কিশোর-কিশোরী আশ্রয়শিবিরে আসার পর শিক্ষার সুযোগ পায়নি। পরে আশ্রয়কেন্দ্রে নানান শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর অনেকেই কিছু শিখতে শুরু করেছে। গত কয়েক বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব থিয়েটার আর্টস দ্বারা পরিচালিত ইউনিসেফ সমর্থিত সামাজিক কেন্দ্রে যুব নেতৃত্ব এবং পিয়ার-টু-পিয়ার বিভিন্ন কার্যক্রমে তার মতো টিনএজাররা অংশ নিয়েছে।

জীবনে নানা ক্ষেত্রে কাজে লাগবে এমন দক্ষতা অর্জন এবং সমমনা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে ক্যাম্পে থাকা সামাজিক কেন্দ্রগুলো। ক্যাম্পে থাকা কিশোরদের মধ্যে যারা সামাজিক কেন্দ্রের সুবিধা নিচ্ছে তাদের দিন একরকম কাটছে, কিন্তু যারা এর বাইরে তাদের দিন সম্পূর্ণ আলাদা। খোলা আকাশের নিচে থাকলেও রোহিঙ্গা কিশোর-কিশোরীদের ক্যাম্পের বাইরে যাওয়া নিষেধ।

যদিও অনেকেই নানা ভাবে বাইরে গিয়ে কাজ করছে। যারা ক্যাম্পেই অবস্থান করছে তারা সাধারণত বন্ধুদের নিয়ে ক্যারাম খেলে, তাস খেলে বা আড্ডা দিয়ে সময় পার করে। দেশি-বিদেশি নানা সংস্থার মাধ্যমে পরিবার প্রতি সহযোগিতা করা হয় ফলে অনেকের মধ্যেই একরকম গা ছাড়া ভাব দেখা যায়। কিন্তু অনেকেই আছে যারা বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে।

শরণার্থী কিশোর-কিশোরীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ নিরসনের লক্ষে ইউনিসেফ রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় কমিউনিটির কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন বিকাশ এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েকটি সামাজিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এসব সামাজিক কেন্দ্রে অনেক বাংলাদেশী কিশোর-কিশোরীও সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়েছে। 

ছবি:সংগৃহীত

তেমনই এক বাংলাদেশী কিশোরী সদস্য মানসুরা। বয়স ১৫ বছর। গত দুই বছরে রোহিঙ্গা কমিউনিটির মেয়েদের সঙ্গে তার মতো বাংলাদেশি কিশোরী সদস্যরা দ্রুত বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছে। মানসুরার মতো সহজে বিশ্বাস করা যায় এমন অনেক কিশোরীকে পেয়ে রোহিঙ্গা কিশোরীরা তাদের লড়াই এবং প্রতিদিন কীভাবে তারা তাদের দেশকে মিস করছে সেই কষ্টের গল্প বলে। 

মানসুরা বলে, ‘এক দিনের জন্যও বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারি, আমি এটা কল্পনাও করতে পারি না। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে তারা তাদের ঘরবাড়ি থেকে দূরে রয়েছে। এটা ভাবতেও খুব কষ্ট হয়।’ 

ইউনিসেফ বাংলাদেশের ইমার্জেন্সি ম্যানেজার মাইকেল জুমা বলেন, ‘কিশোর-কিশোরীরা যখন তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন তারা যৌন নির্যাতন, পাচার ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাসহ বিশেষ করে শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। তাদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়।’

আশঙ্কাজনক বিষয় হলো বাল্যবিবাহের হার রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেক বেশি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘুরলে সন্তান কোলে অসংখ্য কিশোরী চোখে পড়ে। তেমনই এক কিশোরী আকলিমা। বয়স ১৩ বছর। চোখের সামনে বাবা মাকে নৃশংসভাবে খুন হতে দেখেছে সে। কিছুদিন পালিয়ে থেকে দাদির সঙ্গে তিন দিন অবিরাম হেঁটে সীমান্ত পার হয়ে এই দেশে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু শরাণার্থী শিবিরে থাকা দাদির পক্ষে তার খরচ বহন করা সম্ভব ছিল না। ফলে কয়েক মাস আগে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে! রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এমন আকলিমার সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। আকলিমার মতোই আরেক কিশোরী জোবেদা। তারও বিয়ে হয়েছে কিছুদিন আগে। বয়স এখন ১৬ বছর।

ওরা ওদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চিত। শুধু জানে বিয়ে করার কারণে খাবারের সংকট কাটাতে পেরেছে। শরণার্থী শিবিরে পরিবার হিসাবে ত্রাণ দেওয়া হয় ৷ তাই মেয়েদের জন্য খাদ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিবার তাদের বিয়ে দেওয়াই একমাত্র সমাধানের পথ হিসেবে মনে করে। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে বিভিন্ন দেশি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ৷

এসব প্রতিষ্ঠানের গড়া স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে প্রসূতি মায়েদের এবং শিশুদের জন্য চিকিৎসাসেবার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। কুতুপালং ক্যাম্পে দুই বছর ধরে কাজ করছেন ড. রোমানা ইসলাম। অল্প বয়সী মেয়েদের গর্ভধারণ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন তিনি।৷ কখনো কখনো দিনে ২৫ থেকে ৩০ জন কিশোরী অন্তঃসত্ত্বার চিকিৎসা করেন তিনি ৷

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে দেখা যায়। জাতিসংঘের শিশু অধিকারবিষয়ক প্রতিষ্ঠান  ইউনিসেফ এবং তাদের অংশীদার বেসরকারি সংস্থাগুলো ২ হাজার ৮০০ শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে কক্সবাজার ক্যাম্পে সাড়ে ৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী কিশোর-কিশোরীর জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিল। করোনার ভয়াবহতার কারণে ২০২০ সালে বন্ধ হয়ে যায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিচালিত স্কুলগুলোও। ফলে রোহিঙ্গা কিশোর-কিশোরীরা দীর্ঘ সময় শিক্ষার কোনো সুযোগই পায়নি। আর ওই সময়ে বাল্য বিবাহের হার বেড়েছে, অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাও বেশি ঘটেছে। যদিও পরবর্তী সময়ে শিক্ষা কার্যক্রম আবার চালু হয়েছে।

ইউনিসেফ ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৭৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা কিশোর-কিশোরীর সাক্ষরতা, সংখ্যাগণনা, জীবন দক্ষতা এবং বৃত্তিমূলক দক্ষতা প্রশিক্ষণসহ শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। নূর নামে ১৬ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা কিশোর ইউনিসেফ সমর্থিত বহুমূখী শিশু ও কিশোর-কিশোরী কেন্দ্রে দক্ষতা বিকাশের কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিল। শরণার্থী শিবিরগুলোর সর্বত্র যেসব সৌর প্যানেল রয়েছে সেগুলো স্থাপন ও মেরামত করতে শিখছে নূর। 

ফলে সে এখন তার বাড়ির সৌর প্যানেল নিজে নিজেই মেরামত করতে পারে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা রাজিয়া ও তার ছোট বোন ফেরদৌস ও সাদেকার ইউনিসেফের ওয়ার্ল্ড ভিশন সেন্টারে অবস্থিত রোহিঙ্গা শিবিরে সেরা সময় কাটে। সেখানে তারা সেলাই, হস্তশিল্পের কাজের পাশাপাশি ইংরেজি ও বার্মিজ ভাষা এবং গণিতসহ জীবন ধারণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও শেখে। যদিও শরণার্থী হিসেবে থাকা রোহিঙ্গা কিশোর-কিশোরীরা মাদক পাচার থেকে শুরু করে অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে। অনেক সময় তাদের জোর করে এসব কাজে বাধ্য করা হচ্ছে। পাশাপাশি পাচারের শিকারও হতে হচ্ছে।  

ভয় ও আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করার জন্য গত কয়েক বছরে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে কয়েক শত শিশু কিশোর-কিশোরী সহায়তা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে, যেখানে নাচ, গান এবং অংশগ্রহণমূলক বিভিন্ন খেলার মাধ্যমে তাদের মন থেকে ভয়াবহ স্মৃতিগুলো মুছে দিতে চেষ্টা করা হয়। পড়াশোনা, লেখালেখি, খেলাধুলা এবং সৃজনশীল দিকগুলো বিকশিত করার স্বাধীনতা রয়েছে তাদের জন্য এমন নিরাপদ জায়গা করে দেওয়া এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর সে জন্য তাদেরকে নিরাপদে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়া জরুরি।

কলি

টিনএজ বয়সেই শতকোটি রুপির মালিক

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০৫ পিএম
টিনএজ বয়সেই শতকোটি রুপির মালিক

উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবনের কোনো নির্ধারিত বয়স নেই। এটি প্রমাণ করেছে তিলক মেহতা। বর্তমানে সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ উদ্যোক্তা। ইতোমধ্যে নিজ ব্যবসায় সফল তিলক ১০০ কোটি রুপির (ভারতীয় মুদ্রা) মালিক বনে গিয়েছে। কারও সাহায্য ছাড়াই নিজ বুদ্ধি ও মেধা খাটিয়ে তিলক গড়ে তুলেছে নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ডিজিটাল কুরিয়ার সার্ভিস ‘পেপার্স এন পার্সেল’।

তিলকই এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। ওয়ানডে পার্সেল পরিষেবার লক্ষ্যে একটি ডিজিটাল কুরিয়ার সংস্থা তৈরি করে এই মেধাবী তরুণ। এর মাধ্যমেই স্কুল বয় থেকে তিলক এখন বিখ্যাত বিজনেস বয়ের তকমা অর্জন করেছে। এত অল্প বয়সেই সফল উদ্যোক্তা হয়ে পুরো বিশ্বের মধ্যে তিলক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

তিলক ভারতের মুম্বাইয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস করে। তার বাবা মহেশ মেহতা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার মা কাজল মেহতা একজন গৃহিণী। তিলকের যমজ দুই বোন আছে।

বর্তমানে তিলক সে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। তিলক কখনোই ভাবতে পারেনি এত অল্প বয়সেই সে উদ্যোক্তা বনে যেতে পারবে। তার মতে, ‘চোখ-কান খোলা রাখলে তরুণরাও অনেক কিছু জানতে, শিখতে ও করতে পারে।’

এক দিন তিলকের কয়েকটি বইয়ের খুবই প্রয়োজন ছিল। তার বাবা মহেশ মেহতা অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকায়, ছেলের দরকারি বইগুলো আনতে ভুলে যান। এর পরের দিন তিলক তার বাবাকে জানায়, অনলাইনে বই অর্ডার করে দিলে দ্রুত পাওয়া যেত।

তবে এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে তার বাবা জানান, ডেলিভারি চার্জ বইয়ের দামের চেয়ে বেশি হবে। তাছাড়া আজ অর্ডার দিলে হাতে পেতেও কয়েকদিন লেগে যেত। এরপরই তিলকের মাথায় আইডিয়া আসে, চাইলে সে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারে। যার মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন স্থানে খাবারসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে দেওয়া যাবে।

এভাবেই তিলক ২০১৮ সালে ‘পেপার্স এন পার্সেল’ নামক একটি স্টার্টআপ গড়ে তোলে। ‘মুম্বাই ডাব্বাওয়ালা’দের সহযোগিতায় এক দিনেই পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার প্রয়াসে শুরু করে ডিজিটাল কুরিয়ার সার্ভিস।

ডোর টু ডোর পিকআপ এবং বিতরণ পরিষেবার মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে ডেলিভারি করাই এই কোম্পানির মূল লক্ষ্য। কলম থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী পেপার্স এন পার্সেল পৌঁছে দেয় ক্রেতার বাড়িতে। এর মাধ্যমেই মাত্র দুই বছরের মধ্যেই কোটিপতি বনে গেছে তিলক।
তিলকের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ‘পেপার্স এন পার্সেল’ একটি জরুরি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। এতে যুক্ত আছেন ২০০ জনেরও বেশি কর্মচারী। এ ছাড়া ৩০০ জনেরও বেশি ডাব্বাওয়ালা (যারা ক্রেতার বাসা থেকে খাবার নিয়ে ক্রেতার অফিসে পৌঁছে দেন) এই অ্যাপের মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে খাবার সরবরাহ করে থাকেন।

তিলক জানান, ‘প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ২০০ পার্সেল বিতরণ করা হয় এই অ্যাপের মাধ্যমে। পেপারস এন পার্সেল আমার স্বপ্ন। এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হলো- এক দিনের মধ্যেই পুরো মুম্বাইয়ের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দেওয়া। এর পরিধি ও ব্যাপ্তি আরও বাড়ানোর প্রয়াসে আমি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করব।’

২০১৮ সালে তিলক ‘ইয়াং এন্ট্রাপ্রিনিউর টাইটেল অ্যাট দ্য ইন্ডিয়ান মেরিটাইম অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কার জিতে। এ ছাড়া বিশ্বের প্রতিভাবান শিশুদের স্বীকৃতি হিসেবে অনুষ্ঠিত হয় ‘গ্লোবাল চাইল্ড প্রোডিজি অ্যাওয়ার্ডস’ পুরস্কার অনুষ্ঠান। যেখানে তিলক মেহতা ২০২০ সালের জানুয়ারিতে গ্লোবাল চাইল্ড প্রোডিজি অ্যাওয়ার্ড জিতে।

২০২০ সালের মধ্যেই ১০০ কোটি রুপির মালিক হয়েছে খুদে এই উদ্যোক্তা। তিলক যুবসমাজকে অনুপ্রাণিত করে আসছে। তার মতে, ‘যেকোনো শিশুই কৌতূহলী হয়ে কী, কেন ও কখন এর উত্তর খুঁজলেই উদ্যোক্তা হতে পারবে। যদিও এ যাত্রায় প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে পারি, তবু এগিয়ে যাওয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ।’

জাহ্নবী

যেভাবে আরেকটু লম্বা হবেন

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ এএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০৫ পিএম
যেভাবে আরেকটু লম্বা হবেন

টিনএজ বয়সটাই হচ্ছে লম্বা হওয়ার বয়স। এ সময় শরীরের ঠিকমতো যত্ন নিলে শরীর বাড়ে। তবে লম্বা হওয়া অনেক সময় বংশগতও হয়ে থাকে। শরীরের গ্রোথ প্লেট যদি কাজ করা বন্ধ করে দেয় তাহলে লম্বা হওয়া থেমে যায়। ১৪-২০ বছর বয়সে এই জিনিসটা বেশি হয়। তাই এ বয়সে শিশু-কিশোরদের লম্বা হওয়া নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। তবে, সঠিক পুষ্টি ও উন্নত জীবনধারায় শরীর বাড়ে ঠিকমতো। আজ আমরা জানব কীভাবে লম্বা হওয়া যায়। লিখেছেন ফারজানা আলম

লম্বা হওয়ার জন্য খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন

স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য
সঠিক পরিমাণে পুষ্টি দেহের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাজা শাকসবজি, ফলমূল এবং প্রোটিন জাতীয় খাদ্য প্রতিদিনের তালিকায় রাখতে হবে। প্লেটের অর্ধেক রাখতে হবে শাকসবজি, চার ভাগের এক ভাগ পূর্ণ করতে হবে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য দিয়ে এবং বাকি চার ভাগের এক ভাগ রাখতে হবে শর্করা। এ ছাড়া হালকা খাবার হিসেবে থাকতে হবে ফলমূল, সবজি ও কম চর্বিযুক্ত খাদ্য। প্রোটিন জাতীয় খাদ্যদ্রব্য হলো- মুরগির মাংস, টার্কি, মাছ, শিম, বাদাম এবং লো ফ্যাট জাতীয় খাদ্য। জটিল শর্করার মধ্যে আছে শস্য জাতীয় খাদ্য, যেমন আলু।

প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া
শরীরের বৃদ্ধি ও মাংসপেশি সুগঠিত করার জন্য প্রোটিন খুব জরুরি। প্রতি বেলায় আহারে তাই প্রোটিন অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে হালকা খাবার গ্রহণের তালিকায়ও প্রোটিন রাখতে হবে। যেমন- সকালের আহারের জন্য দই রাখা যেতে পারে, দুপুরের জন্য টুনা মাছ, রাতে মুরগির মাংস। এ ছাড়া হালকা নাশতার তালিকায় রাখা যেতে পারে চিজ।

প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া
পরীক্ষায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন একটি করে ডিম খায়, তারা একটু বেশি লম্বা হয়। ডিমে রয়েছে শরীরের বৃদ্ধির জন্য অতি প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও ভিটামিন। এ ছাড়া এটি সস্তা বলে সবাই কিনে খেতে পারে। তবে অনেক সময় প্রতিদিন ডিম খেলে, অনেক বাচ্চাদের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

প্রতিদিন স্নেহ জাতীয় খাবার খাওয়া
দুধ ও দুধ জাতীয় খাদ্যদ্রব্য উচ্চমাত্রায় প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন বহন করে, যা শরীরের পুষ্টি জোগায়। প্রতিদিন এক গ্লাস করে দুধ খাওয়া অথবা দই বা পনির শরীরের জন্য খুবই উপকারী। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় পছন্দমতো একটি দুধ জাতীয় খাদ্য রাখতে হবে অথবা প্রতিদিন দুধ পান করতে হবে।

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ট্যাবলেট গ্রহণ
সুষম খাদ্য তালিকার পাশাপাশি সহকারী হিসেবে বিভিন্ন ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ট্যাবলেট রাখা যেতে পারে। এসব ট্যাবলেট দেহের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন এ ও ডি সবচেয়ে বেশি দরকারি। কারণ এগুলো হাড়ের গঠনে সাহায্য করে থাকে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তাই ক্যালসিয়াম ও মাল্টি ভিটামিন ট্যাবলেট গ্রহণ করা যেতে পারে।

লম্বা হওয়ার জন্য জীবনযাত্রা পরিবর্তন

সঠিক ভঙ্গিতে চলাচল
দেহের সঠিক বৃদ্ধি নজরে আসার জন্য সঠিক ভঙ্গিতে চলাচল করতে হবে। হাঁটার সময় মেরুদণ্ড সোজা করে হাঁটতে হবে। কাঁধ সমান করে এবং সামনে তাকিয়ে হাঁটতে হবে। বসার সময়ও মেরুদণ্ড সোজা করে বসতে হবে এবং মুখ সোজা করে রাখতে হবে সামনে। হাঁটা ও বসার ভঙ্গি ঠিক আছে কি না, সেটা আয়নার সামনে বসে নিজে নিজেই পরীক্ষা করা যায়।

প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে শরীরচর্চা করা
শরীরের হাড় ও মাংসপেশি সুগঠিত হওয়ার জন্য প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করা জরুরি। ব্যায়াম শরীর সুস্থ রাখতে এবং দেহের সঠিক বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। পছন্দমতো একটি ব্যায়াম বাছাই করে নিতে হবে যেটা শরীরের জন্য উপযোগী হয় ও যেটা করে মন ও আনন্দ পায়। যেমন কোনো ধরনের খেলাধুলা, নাচের ক্লাসে অংশগ্রহণ, ৩০ মিনিট হাঁটা বা দৌড়ানো।

প্রতিদিন সময়মতো ও নিয়ম করে পরিমিত ঘুম

প্রতিদিনের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি নিয়ম 
করে ঘুমাতে হবে। সারা দিন পরিশ্রমের ফলে শরীরের হাড়, মাংসপেশি ক্লান্ত হয়ে যায়, শরীর ভেঙে পড়ে, তখন তাদের বিশ্রামের দরকার হয়। পুনরায় নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করার জন্য এদের দরকার পর্যাপ্ত বিশ্রাম। তাই ঠিকমতো যেন ঘুম হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঘুম ঠিকমতো হলে শরীরের হাড় ও মাংসপেশির বিশ্রামও ঠিকমতো হবে এবং তারা পুনরায় শক্তিশালী হয়ে উঠবে। বয়স অনুযায়ী ঘুমের মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। 

অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ
অসুস্থ হলে শরীর খুব দ্রুত তা সুস্থ করার চেষ্টা করে। এই অসুস্থতা শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে। তাই খুব দ্রুত চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে ওঠা উচিত। শরীর বেশি অসুস্থ থাকলে বৃদ্ধি পর্যাপ্ত হয় না। তাই তখন খাদ্যাভ্যাসের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

বৃদ্ধি পর্যাপ্ত না হলে, ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া
অনেক সময় বংশগত কারণে মানুষ লম্বা কম হয়। তবে যদি দেখা যায় যে পরিবারের সবাই পর্যাপ্ত লম্বা কিন্তু আপনি লম্বা হচ্ছেন না, তখন প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় গ্রোথ হরমোন কম হওয়ার কারণে বা হাইপোথাইরয়েডিজম রোগ থাকার কারণে বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।

জাহ্নবী

অবসর সময় কাটানোর দারুণ কিছু আইডিয়া

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ এএম
অবসর সময় কাটানোর দারুণ কিছু আইডিয়া

অবসর সময়টা অলস বসে না কাটিয়ে নানাভাবে ব্যবহার করা যায়। কীভাবে ব্যবহার করা যায় সেটাই লিখেছেন মো. রাকিব

এনজিওর সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবক হোন
স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আপনি ছিন্নমূল শিশুদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে পারবেন। অথবা সাহায্য করতে পারবেন অসহায়-দুঃখী মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে।

নিজের ঘর সুন্দর করে সাজাতে পারেন
অবসর সময় আপনার ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখতে পারেন। ফলে শুধু সময় কাটবে না, মন থেকে আনন্দও অনুভব করবেন।

নাচের ক্লাসের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন

আপনি একজন নর্তকী হোন বা না হোন, আপনার অবশ্যই উচিত নাচের ক্লাসে যোগদান করার ব্যাপারটি বিবেচনা করা। অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ শব্দের মাধ্যমে যা প্রকাশ করতে পারে না, তারা তাদের দেহের গতিবিধির মাধ্যমে তা প্রকাশ করতে সক্ষম হয়। শুধু তাই নয়, আপনি যদি কোনো কারণে হতাশায় ভোগেন তবে তা নাচের মাধ্যমে হয়তো দূর করা সম্ভব হবে। নাচের মাধ্যমে আপনি নিজের মধ্যে আনন্দ অনুভব করবেন।

প্রতিদিন হাঁটতে বা জিমে যেতে পারেন
অবসর সময়ে কিছুই না করে ঘরে বসে থাকার চেয়ে, আপনি হাঁটতে যাওয়া বা জিমের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন। ফলে আপনার শুধু অবসর সময় কাটবে না, সঙ্গে আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। হাঁটতে যাওয়া বা জিম করার ফলে নিজের মধ্যে সতেজতা বোধ করতে পারবেন।

আপনার শহরের কয়েকটি ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ দেখুন

আপনার অবসর সময় কাটানোর জন্য এটি একটি দুর্দান্ত উপায়। আপনি শহরের বিখ্যাত কিছু ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ দেখতে যেতে পারেন। ফলে আপনার অভিজ্ঞতা বাড়বে, সঙ্গে বিভিন্ন দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে সক্ষম হবেন। এই সামান্য অ্যাডভেঞ্চারে আপনি একা অথবা আপনার বন্ধুদের সঙ্গে যেতে পারেন।

আগ্রহ অনুযায়ী একটি ব্লগ শুরু করুন
আজকের প্রযুক্তির যুগে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ রয়েছেন যারা তাদের অবসর সময় ব্লগিংয়ে ব্যয় করেন। আপনার আগ্রহ অনুযায়ী আপনার ব্লগটি যেকোনো বিষয় হতে পারে, যেমন ধরুন রান্না, খেলাধুলা, চলচ্চিত্র, সামাজিক সমস্যা, এমনকি বইও হতে পারে। আপনি যদি ভালো লেখেন এবং আপনার ব্লগ আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন তবে আপনি বিপুলসংখ্যক লোক আকৃষ্ট করতে পারবেন। যদি এটি আপনার ভালো লাগা হয়ে থাকে এবং কাজটি করতে আপনি ভালোবাসেন তবে এটি ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে পারেন।

বই পড়তে পারেন

যদি আপনি বই পড়তে ভালোবাসেন তবে আপনার অবসর সময় কাটাতে এটি অবশ্যই একটি দুর্দান্ত ভালো বিষয়। বই এমন একটি জিনিস যা আপনাকে আশপাশের পরিবেশ থেকে পুরো পৃথিবীতে পরিবহন করতে পারে। একটি ভালো বই পড়ার মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন বিষয়ে জানতে পারবেন। আপনি আপনার কাছের লাইব্রেরি থেকে একটি ভালো বই সংগ্রহ করতে পারেন। অথবা ধার নিতে পারেন আপনার বন্ধুর থেকে। চাইলে ই-লাইব্রেরি থেকে বই ডাউনলোড করে পড়তে পারেন।

নিজের পছন্দমতো কোনো কাজ বাছতে পারেন
আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী কোনো ব্যয় ছাড়া নিজের শেখার জন্য বা দক্ষতা বাড়ানোর জন্য দরকারি বিভিন্ন ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। শুধু একটি বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার চেয়ে আপনি যদি অনেক বিষয় যুক্ত থাকেন তবে সহজেই নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারবেন।

স্ক্র্যাপবুক তৈরি করতে পারেন
আপনার অবসর সময় ব্যয় করতে এটি একটি ভালো বিষয়। প্রথমদিকে এটি শখ হিসেবে শুরু হতে পারে, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনি এতে আসক্ত হয়ে পড়তে পারেন। আপনার সময় ব্যয় করতে স্ক্র্যাপবুক তৈরি করা অবশ্যই কার্যকর একটি উপায়।

বৃদ্ধাশ্রমে সময় কাটাতে পারেন
অবসর সময়ে অন্যদের সঙ্গে কাটানো একটি ভালো আইডিয়া। তাই আপনি একটি বৃদ্ধাশ্রমে যেতে পারেন এবং কিছুটা সময় কাটাতে পারেন অসহায় বৃদ্ধদের সঙ্গে। যদি আপনি কাউকে হাস্যোজ্জ্বল করে আপনার সময় উপভোগ করতে চান তবে অবশ্যই এটি আপনাকে আনন্দ দেবে।

কিছুক্ষণ ধ্যান করতে পারেন
অবসর সময়ের কিছুটা অংশ ধ্যানের ক্ষেত্রে ব্যয় করা সর্বাধিক গুরুত্বের বিষয়। ধ্যান করার মাধ্যমে আপনার মানসিক চাপের এবং কুচিন্তাধারার অবসান ঘটবে। যোগব্যায়াম অনুশীলন বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষের জন্য সহায়ক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। নিজেকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে ধ্যান করতে পারেন।

সিনেমা দেখুন
অবসর সময় আপনি সিনেমা দেখতে পারেন, যার বেশ কয়েকটি ভালো দিক রয়েছে। এজন্য আপনার সর্বদা হলে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনি তা ঘরে বসে ডাউনলোড করেও দেখতে পারেন। সিনেমা দেখা এমন একটি উপায় যা বেশির ভাগ মানুষ অবসর সময়ে করতে পছন্দ করেন।

ব্যক্তিগত যত্নে কিছু সময় ব্যয় করুন
অবসর সময় ব্যয় করার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার ব্যক্তিগত যত্নের দিকে নজর দেওয়া। আপনার জামা কাপড় ইস্ত্রি করা দরকার কি না বা আপনার চুলে তেল লাগানোর দরকার কি না অথবা আপনার জুতা পালিশ করা দরকার- এমন সব বিষয় আপনার অবসর সময়ে খতিয়ে দেখা উচিত।

জাহ্নবী

টিনএজ বয়সে হয়ে উঠুন উপস্থাপক

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৫ পিএম
টিনএজ বয়সে হয়ে উঠুন উপস্থাপক

টিনএজ বয়সে অনেকের উপস্থাপনার আগ্রহ তৈরি হয়। এই বয়সে যারা উপস্থাপনা শুরু করতে চান, তাদের কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন অনুষ্ঠানের শুরুটা যদি চিত্তাকর্ষক না হয়, তাহলে দর্শক বা অতিথি সহজেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। অনুষ্ঠানের শুরু সুন্দর করার ক্ষেত্রে উপস্থাপকের ভূমিকাই মূল। নিখুঁত অনুষ্ঠানের জন্য চাই দক্ষ একজন উপস্থাপক। ভালো একটা স্ক্রিপ্ট আর পূর্বপ্রস্তুতির পাশাপাশি কিছু উপস্থাপনা কৌশল অবলম্বন করলে একটা অনুষ্ঠান সার্থক হয়ে ওঠে। লিখেছেন ফারজানা আলম

দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করা
অনুষ্ঠানের শুরুতেই যদি দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করার মতো কোনো কিছু করা যায়, তবে বাকি অনুষ্ঠান ভালো যাওয়ার একটা পাকাপোক্ত সম্ভাবনা তৈরি হয়। ‘দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করছি’- এ ধরনের কথা না বলে এমন কিছু করা, যেন দর্শক নিজ থেকেই কৌতূহলী হতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, অনুষ্ঠানের সঙ্গে যায় এমন একটা মজার কৌতুক দিয়ে শুরু করা যেতে পারে অথবা অনুষ্ঠানের ব্যাপারে একটা সংক্ষিপ্ত ভিডিও দিয়ে। দর্শক বিনোদন পেলেই ধরে নিন আপনি একটা সুন্দর অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত!

শ্রোতাদের কল্পনা করতে বা ভাবতে দেওয়া
একজন মানুষের মস্তিষ্ক যখন সরব থাকে, তার মনোযোগ আকর্ষণ করাও সহজ হয়। যদি অনুষ্ঠানের শুরু করা যায় একটা কল্পনা দিয়ে, তাহলে কিন্তু মন্দ হয় না। এক্ষেত্রে হয়তো আপনি অনুষ্ঠানের থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটা ‘কেমন হতো যদি অমুক ব্যাপারটা এমন না হয়ে তেমন হতো?’- জাতীয় প্রশ্ন দিয়ে শুরু করতে পারেন। তাহলে আপনার দর্শকও স্বাভাবিকভাবেই আপনার কল্পনা করা পরিস্থিতিটা নিজেরা কল্পনা করা শুরু করে দেবে। ব্যাস, পেয়ে গেলেন একসঙ্গে অনেক দর্শকের মনোযোগ।

ভবিষ্যৎ বা অতীত দিয়ে শুরু করতে পারেন
রাজনীতিবিদদের বক্তৃতায় এই ব্যাপারটি অনেক লক্ষ করে থাকবেন। তারা অতীতে কোনো খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে বর্তমানে এসে পৌঁছেছেন অথবা ভবিষ্যতে কী কী সাফল্য অর্জন করবেন এমন কথা দিয়ে শুরু করেন। মানুষের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে এটি হতে পারে আপনার মাধ্যম! উদাহরণস্বরূপ ধরুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে আপনি আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান উল্লেখের মাধ্যমে শুরু করতে পারেন। অথবা মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সমৃদ্ধ করতে কীভাবে অবদান রাখতে পারে তা নিয়ে বলতে পারেন।

প্রবাদ অথবা সংগতিপূর্ণ কবিতার লাইন
অনুষ্ঠান শুরুর বাক্য হিসেবে কবিতার লাইন অথবা কোনো প্রবাদ ব্যবহার করা নতুন কিছু নয়। কবিতার লাইন প্রাসঙ্গিক হলে অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য অনেকাংশে বেড়ে যায়। আপনি যদি উপস্থাপনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের স্লাইড ব্যবহার করেন, তাহলে বলার সময় স্লাইডেও লাইনগুলো তুলে দিতে পারেন। এটি দর্শককে বুঝতে, কল্পনা করতে সাহায্য করবে।

গল্প অথবা ঘটনা দিয়ে শুরু করা
এটা অনেকটা প্রথম কৌশলের মতোই। এখানেও আপনার মূল কাজ দর্শককে আপনার ভাবের জগতে নিয়ে যাওয়া। অনুষ্ঠানের মূল ধারণা আর তাৎপর্য বোঝার ক্ষেত্রে কাজে আসবে এমন একটা সত্যিকার অথবা কাল্পনিক গল্প দিয়ে আপনি শুরু করতে পারেন। গল্প কিন্তু মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করার একটা ভালো হাতিয়ার!

রসিকতার মধ্য দিয়েও গল্প বলা যায়।

অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা থাকলে সেটা শুরুতে বলার চেষ্টা করতে পারেন।

নিজের অথবা দর্শকদের জীবন নিয়ে গল্প বলা
শ্রোতারা গল্প শুনে উপভোগ করেন, এটা তো আমরা জানলামই। আর গল্পটির সঙ্গে যখন দর্শক-শ্রোতা নিজের জীবনের মিল পাবেন, তখন গল্পটি হয়ে উঠবে আরও অসাধারণ সুন্দর। উপস্থাপক হিসেবে আপনার নিজের কোনো ঘটনা অথবা দর্শকদের জীবনের সঙ্গে মিলে যায় এমন কোনো ঘটনা দিয়ে শুরু করতে পারেন। এতে করে দর্শকের সঙ্গে আপনার একটা সম্পর্ক তৈরি হবে অনুষ্ঠানের শুরুতেই।

দর্শকদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা
এটা অনুষ্ঠান শুরু করার আরেকটি সুন্দর উপস্থাপনা কৌশল। সাধারণত সেশন জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোয় এই পদ্ধতি ব্যবহার করেই সবসময় শুরু করা হয়। এ ছাড়া যেকোনো অনুষ্ঠান শুরু করার সময় প্রশ্ন করলে অনুষ্ঠানে সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ থাকে।

পরিসংখ্যানে শুরু!
আপনি যদি আপনার অনুষ্ঠানের একটি খুব অর্থপূর্ণ শুরু চান এবং বুঝতে না পারেন কীভাবে উপস্থাপনা শুরু করতে হয়, তবে পরিসংখ্যান দিয়ে শুরু করা হতে পারে সবচেয়ে ভালো অপশন। মনে করুন আপনার অনুষ্ঠান স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা। আপনি শুরু করতে পারেন আপনার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি জরিপের মাধ্যমে। এতে করে অনুষ্ঠানে একটা ভাবগম্ভীরতা আসবে, পাশাপাশি দর্শকের মনোযোগও আকৃষ্ট হবে। তবে লক্ষ রাখতে হবে যেন খুব কঠিন কোনো উপাত্ত চলে না আসে, যা দর্শকদের বুঝতে সমস্যা হয়।

উপস্থাপনায় নতুন হলে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন
উপস্থাপনায় নতুন হলে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। সবার আগে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। আর মনে রাখতে হবে আপনি কোন ধরনের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন। একটা অনুষ্ঠানে অনেক ধরনের মানুষ থাকতে পারে। আপনার কথা যেন সবারই বুঝতে সুবিধা হয়। একটা কথা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই, সহজ যেকোনো কিছুই সুন্দর। আপনার বলার বিষয় কঠিন হলেও, আপনি কত সহজে সেটাকে উপস্থাপন করতে পারছেন, এটা জরুরি। উপস্থাপনার সময় মাথায় অনেক ধরনের চাপ থাকতে পারে, অনেক দায়িত্ব নিয়ে বুঝে শুনে কথা বলতে হয়। কিন্তু সহজ-সাবলীলতা একবার আয়ত্ত করে ফেলতে পারলে পুরো ব্যাপারটা অনেক সহজ হয়ে যায়।

অনেক অনুষ্ঠানেই উপস্থাপক অতিথির সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। অনেক সময় দেখা যায় উপস্থাপক কিংবা দর্শকের কথার বিপরীতে অতিথি একটা অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়ে যান। একজন উপস্থাপক হিসেবে আপনার দায়িত্ব হচ্ছে এটা নিশ্চিত করা যে, আপনার অতিথি যেন অপ্রীতিকর অবস্থায় না পড়েন এবং কোনো অবস্থাতেই অপমানিত বোধ না করেন।

অতিথি যেমন অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়তে পারেন, তেমনি আপনিও যেকোনো সময় একটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন। কখনো হয়তো অপমানিত বোধ করতে পারেন। একজন সেরা উপস্থাপক হিসেবে আপনার কাজ হবে যতটা সম্ভব ওই পরিস্থিতিকে হাসিমুখে এড়িয়ে যাওয়া। যদি তা একান্তই সম্ভব না হয় তখন অবশ্য আলাদা ব্যাপার! তখন আপনার অন্য কৌশল অবলম্বন করতে হবে। তবু কোনো অবস্থাতেই অনুষ্ঠান ভণ্ডুল হতে দেওয়া যাবে না। এই ব্যাপারে আপনার ধৈর্য কম থাকলে উপস্থাপনার দিকে পা না বাড়ানোই ভালো!

আপনার যদি কোনোভাবে মনে হয় আপনার ধৈর্যধারণক্ষমতা কম, তাহলে উপস্থাপনা আপনার জন্য নয়। সব ক্যারিয়ারেই কমবেশি ধৈর্যের প্রয়োজন হয়, কিন্তু উপস্থাপনার ক্ষেত্রে এটা অপরিহার্য। উপস্থাপনার সময় যেহেতু সরাসরি অন্য মানুষদের সংস্পর্শে আসা হয়, সেহেতু অনেক ধরনের কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে। যেমন ধরুন, কোনো একটা অনুষ্ঠানে একজন দর্শক আপনাকে অকারণে একটা বিষয়ে দোষ চাপিয়ে দিতে পারেন, এমনকি কটাক্ষ করে উপহাস করতে পারেন। অনেক সময় দর্শক অথবা অতিথি এমন কথা বলতে পারেন, যা আপনার আদর্শিক দিককে মানে না। হোক সেটা টক শো, হোক সেটা সভা অথবা অন্য কোনো অনুষ্ঠান, আপনার ধৈর্য অটুট থাকা চাই। মনে রাখবে, উপস্থাপনার জগতে ধৈর্যই আর হাসিমুখই আপনার ব্রহ্মাস্ত্র।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপস্থাপনা কৌশল
নতুন উপস্থাপকদের জন্য পরামর্শ তো জানা হলো, এবার আসি উপস্থাপনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপসে। একজন সফল উপস্থাপক হতে হলে এই বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখা চাই।

আত্মবিশ্বাসী হতে হবে
উপস্থাপনায় অনেক সময় আপনার অভিজ্ঞতা নেই, এমন কাজও আপনাকে করতে হতে পারে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, অনেক অভিজ্ঞরাও কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খান। অভিজ্ঞতা থাকুক আর না-ই থাকুক, আত্মবিশ্বাস থাকাটা অপরিহার্য।

একজন সফল উপস্থাপক কিন্তু একজন অ্যাটেনশান সিকার!
কী, অবাক লাগছে? অ্যাটেনশান সিকার শব্দটাকে আমরা মোটামুটি নেতিবাচক একটা গুণের কাতারেই ফেলি। কিন্তু আপনি যদি একজন সফল উপস্থাপক হতে চান, তাহলে অ্যাটেনশান সিক করা শিখে নিন। একটা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা শুরুর পরমুহূর্ত থেকে উপস্থাপকের প্রধান কাজ থাকে দর্শক-অতিথির মনোযোগ ধরে রাখা। আর অ্যাটেনশান সিকিং এজন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ওপরে উপস্থাপনা শুরুর যে কয়েকটি কৌশলই দিয়েছি, তার প্রায় সবগুলোই দর্শকের মন আকর্ষণ করার। আপনার কাজ হচ্ছে এটা নিশ্চিত করা যে, তারা যেন সবাই আপনার কথা পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শোনেন।

পোশাকের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা
পোশাক কি উপস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ? উত্তর হচ্ছে- হ্যাঁ। পোশাকের ক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছা থেকে দর্শকের পছন্দের দিক বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। একজন উপস্থাপকের প্রতিটি সূক্ষ্ম বিষয় মাথায় রেখেই পোশাক নির্বাচন করা উচিত। অনুষ্ঠানের ভাবের সঙ্গে যায় এমন মার্জিত পোশাক পরা উচিত। দর্শকের কাছে এর মাধ্যমে একটা ইতিবাচক ভাব আসে।

স্পষ্ট উচ্চারণে বোধগম্য ভাষায় কথা বলতে হবে
উপস্থাপনার ক্ষেত্রে বাচনভঙ্গির থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো স্পষ্ট, বোধগম্য ভাষায় কথা বলা। উপস্থাপকের কণ্ঠ নিচু না হওয়াই ভালো। চেষ্টা করতে হবে কথার স্পষ্টতা যেন এমন হয় যে একজন অমনোযোগী শ্রোতাও ঠিকমতো শুনতে পান।

দর্শকের দিকে তাকানো
উপস্থাপনা হোক কিংবা পাবলিক স্পিকিং, আই কন্ট্যাক্ট কিন্তু থাকা চাই-ই। অনেকসময় দেখা যায় কথা বলার সময় কেউ কেউ ছাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ফেলে। এটা করা যাবে না। আপনি যাদের লক্ষ করে কথা বলছেন, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাদের দিকে তাকিয়েই আপনার কথা বলতে হবে।

হাতে স্ক্রিপ্ট না রেখে বুলেট পয়েন্ট রাখুন
অনেকে উপস্থাপনার সময় পুরো একটা স্ক্রিপ্ট হাতে নিয়ে সেটা দেখে দেখে বলে। ফলে যা হয়, দর্শকের দিকে তাকানোই হয় না। তাই একটা পুরো স্ক্রিপ্ট হাতে না রেখে, মূল বিষয়গুলো একটা ছোট্ট কাগজে টুকে রাখা যায়। এতে করে কোনো কথা বাদ পড়ার সম্ভাবনা থাকে না, পাশাপাশি একাধারে স্ক্রিপ্টের দিকে না তাকিয়ে দর্শকের দিকেও মনোযোগ দেওয়া হয়।

হাসিমুখ ওষুধের মতো
হাসিমুখ আপনার উপস্থাপনার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেবে। আপনার কথার প্রতি দর্শকের মনোযোগ বাড়িয়ে দেবে, আর অনুষ্ঠানে একটা ইতিবাচক ভাব এনে দেবে। শুধু উপস্থাপনাই না, সবসময়ই হাসার চেষ্টা করুন। আপনি হাসছেন মানে আপনি আপনার নিজেকে আর আশপাশের মানুষকে ভালো থাকতে সাহায্য করছেন।

পরিস্থিতি সামাল দিতে জানা
এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা বৈশিষ্ট্য, যেটা সব উপস্থাপকের আয়ত্তে আনতে হয়। অনেক সময় অনুষ্ঠান যেমন চিন্তা করা হয়েছিল অমন নাও হতে পারে। ঘটে যেতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা। উপস্থাপকে মাথা ঠাণ্ডা রেখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কোনোভাবেই উত্তপ্ত হওয়া চলবে না।

শেষ ভালো যার..
একজন উপস্থাপক অনুষ্ঠানজুড়ে কী করেছেন, এটির ধারণা দিতে হবে শেষে এসে। এর সঙ্গে সহানুভূতি আর আবেগপূর্ণ কিছু কথা জুড়ে দিয়ে সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানের ইতি টানা যায়। সম্ভব হলে দর্শককে অনুষ্ঠানজুড়ে মনোযোগ ধরে রাখা এবং সাড়া প্রদানের জন্য ধন্যবাদ দিতে পারেন। অনুষ্ঠানের ইতি টানার কাজটি কিন্তু শুরুর মতোই দক্ষতার সঙ্গে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে করতে হবে।

জাহ্নবী

 

প্রতিভাবান মমতাহিনা

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১২ পিএম
প্রতিভাবান মমতাহিনা

তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় মায়ের কাছে এইচটিএমএল, সিএসএস প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের হাতেখড়ি তার। মা ফ্রিল্যান্সিং করতেন। এরপর সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালীন স্কুলের ওয়েবসাইট তৈরি করেন। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় তৈরি করেন রোবট কিবো। এসবের পাশাপাশি ক্যালিগ্রাফি, গ্রাফিতি করেন তিনি। প্রতিভাবান এই মানুষটির নাম মমতাহিনা করিম মিম। এইচএসসি পড়ছেন কাপাসগোলা মহিলা কলেজে। মা, বাবা, ছোট ভাই আর ছোট দুই বোন নিয়ে তার পরিবার। 

মা-ই মিমের কাজের বড় অনুপ্রেরণা। মা যখন কম্পিউটারে কাজ করতেন, মিম অবাক বিস্ময়ে তা দেখতেন। একসময় মা হাতে ধরে তাকে প্রোগ্রামিংয়ের টুকটাক কাজ শেখান। সঙ্গে ছিল গ্রাফিক্স ডিজাইনের নানা বিষয়। এ প্রসঙ্গে মিম বলেন, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার মা কম্পিউটারে কাজ করতে। সেসব দেখতে দেখতে আমার কম্পিউটারের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। এরপর আমি যখন তৃতীয় শ্রেণিতে, তখন প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন আমি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। এই প্রতিযোগিতায়ও মিম খুব ভালো করি। আমার পাশে সবসময় সহযোগিতার হাত নিয়ে ছিলেন স্কুলের শিক্ষকরা। বন্ধুবান্ধবরাও উৎসাহ দিয়েছেন।

রোবট নিয়ে কৌতূহল মিমের অনেক আগে থেকেই। মিম ভাবতেন কীভাবে রোবট কাজ করে। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় রোবট নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি। ব্যাটারি, মোটর দিয়ে কিছু ছোট ছোট প্রজেক্ট করার পর তার মনে হয়, রোবট তৈরি করতে পারবেন। প্রবল আত্মবিশ্বাস খুঁজে পান। এরপর মাত্র এক বছর পর দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় রোবট তৈরি করেন। রিমোট কন্ট্রোল রোবটটির নাম ছিল কিবো।

মিম একজন চেঞ্জ মেকার। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কাজ করেন। কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা যায় সে বিষয়ে সচেতনতামূলক ভিডিও তৈরি করেন। পথশিশুদেরও নানাভাবে সাহায্য করেন তিনি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মিম অংশ নিয়েছেন। দেয়ালে ছবি, গ্রাফিতি এঁকে ছাত্রদের উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এতটুকু জীবনে এত অর্জনের মধ্যে স্কুলের ওয়েবসাইট তৈরি করা মিম সেরা অর্জন বলে মনে করেন। ওয়েবসাইট তৈরির ফলে অনেক মানুষ উপকৃত হয়েছে। ভবিষ্যতে মিম পড়াশোনার পাশাপাশি তার সৃজনশীল কাজগুলো অব্যাহত রাখবেন বলে জানান।

জাহ্নবী