
জার্মানির সর্বকনিষ্ঠ উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত ডমিনিক স্কালেই। ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারে খুঁটিনাটি পরীক্ষা আর আঁকাআঁকির নেশা থেকে একসময় পেয়ে বসে বড় কিছু করার ইচ্ছা। ২০২৪ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে চালু করে নিজের ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান নুডাইম থ্রিডি। বিভিন্ন করপোরেটের মাধ্যমের বড় বড় প্রতিষ্ঠান এখন এই টিনএজারের ক্রেতা। চলো জেনে নেই স্কালেই এর সফলতা ও স্বপ্নের গল্প।
শুরুর গল্প
সাধারণ প্রিন্টার থেকে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার অনেকটাই আলাদা। এই প্রিন্টারে রয়েছে স্তরে স্তরে নকশা তৈরি করে বিভিন্ন জিনিসের বাস্তবধর্মী ত্রিমাত্রিক অবয়ব তৈরি করার সুযোগ। প্রযুক্তি, সৃজনশীলতা আর কিছু ধাতব পদার্থ কাজে লাগিয়ে আধুনিক এই প্রিন্টিংব্যবস্থা নিয়ে শৈশব থেকে ডমিনিক স্কালেইয়ের ছিল আলাদা আগ্রহ। ২০২২ সালে ১১ বছর বয়সী স্কালেই উপহার পায় একটি ব্যক্তিগত ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার। তখন থেকেই শুরু হয় তার শখের প্রিন্টিং যাত্রা। প্রিন্টার মেশিনের মধ্য দিয়ে স্কালেই কখনো ফুটিয়ে তুলত জ্যামিতিক নকশা, প্রাকৃতিক দৃশ্য কখনো বা রোবোটিক্স চিত্র। তবে কাজ করতে গিয়ে সে বুঝতে পারে শখের তোলা সত্যিকার অর্থেই আশি টাকা। কেননা, থ্রিমাত্রিক প্রিন্টারে ভালো নকশা ফুটিয়ে তোলার কাজটি মোটেই সহজ নয়। পরিপূর্ণ একটি ডিজাইন করতে চাইলে প্রয়োজন গভীর ভাবনা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং প্রিন্টার ব্যবহারের নানান কলাকৌশল। আর কিশোর স্কালেই এই সবকিছুতেই ছিল অনভিজ্ঞ। তবে হার মানতে নারাজ ছিল সে। একসময় স্কালেই বুঁদ হয়ে যায় নিজে নিজেই ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারের বিস্তারিত ব্যবহার শেখার কাজে। নতুন নতুন উপাদান ব্যবহার আর সমস্যা সমাধান করতে করতে ক্রমেই ত্রিমাত্রিক প্রিন্টশিল্পে দক্ষ হয়ে ওঠে এই কিশোর। স্কালেই এর দক্ষতা যতই বাড়ছিল ততই বড় হচ্ছিল তার স্বপ্ন। আধুনিক বিশ্বে ফ্যাশন, বিজ্ঞান, নির্মাণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টশিল্পের চাহিদা। সেই থেকে তার মনে প্রশ্ন জাগে, শখকে যদি ব্যবসায় পরিণত করা যায় তবে কেমন হয়!
চ্যালেঞ্জ ও সফলতা
১৩ বছর বয়সে নিজের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান চালু করার পরিকল্পনা স্কালেই এর সমবয়সী বন্ধু ও স্বজনদের কাছে ছিল কল্পনাতীত। তারা কিশোর মনের ছেলেমানুষি কিংবা মজার ছলে বলা কথা হিসেবেই ধরে নিয়েছিল এই ভাবনাকে। তবে সে ছিল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ২০২৪ সালের শুরুতে কিশোর স্কালেই ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার প্রতিষ্ঠান চালুর লাইসেন্স চেয়ে আদালতে আবেদন করে। ছয় মাস অপেক্ষার পর সেই বছর সেপ্টেম্বর মাসে পেয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত লাইসেন্স। নুডাইম থ্রিডি নামে চালু করে তার ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট। এটি ছিল তার কাজের প্রথম ধাপ। তবে কাজ শুরুর পর ক্রেতাদের বিশ্বাস অর্জন করতে স্কালেইকে পাড়ি দিতে হয়েছিল কঠিন পথ। বয়সে ছোট হওয়ায় তার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করতো না কোনো প্রতিষ্ঠান। সেই সময় বারবার নিজের ভালো কাজের জন্য পাওয়া প্রশংসাপত্র দেখিয়ে ক্রেতাদের ভরসা আদায় করত স্কালেই। বর্তমানে নুডাইম থ্রিডি সফলতার সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং এ প্রোটোটাইপ, লিথোফেনস, আলংকরিক নকশা সরবরাহ করে। তবে ব্যাংকিং খাতে নিজের প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন করতে এখনো দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্কালেইকে। তার মতে, প্রতিভা ও দক্ষতা কোনো নির্দিষ্ট বয়সে সীমাবদ্ধ নেই। অনেক কিশোর-তরুণরাই পৃথিবীব্যাপী সফল উদ্যোক্তা। তাই কিশোর উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ ব্যাংকিংব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন বলে মনে করে স্কালেই।
স্বপ্ন
ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী ডমিনিক স্কালেই। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থ্রিডি প্রিন্টিং নিয়ে করা যাবে চমৎকার সব কাজ। প্রযুক্তিপ্রেমী সৃজনশীল কিশোর ও তরুণদের অন্যতম শখ ও মেধা যাচাইয়ের কাজ হতে পারে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিংশিল্প। এখন এআইয়ের মাধ্যমে ভয়েজ অ্যাক্টিভিটেড থ্রিডি প্রিন্টারের অপেক্ষায় স্কালেই। যেখানে মুখে বর্ণনার মধ্য দিয়েই আঁকা ও মুদ্রণ করা যাবে বিভিন্ন নকশা। সেই সঙ্গে নিজের ব্যবসাকেও আন্তর্জাতিক রূপ দিতে চায় এই কিশোর উদ্যোক্তা।