জীবিকার সন্ধানে বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রবাস জীবনে সুবিধা করতে না পেরে দেশে ফিরে এসে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন মৌলভীবাজারের হাবিবুর রহমান জালাল। কৃষির নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও নতুন জাতের ফসল চাষ করে উদ্যোক্তা কৃষক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। এবার তার জমিতে ২১ জাতের আলুর চাষ করেছেন।
সম্প্রতি সদর উপজেলার গিয়াসনগরে জালালের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, তার ঘরভর্তি হরেক জাতের আলু। জমির সব আলু তুলে ফেলা হয়েছে জানিয়ে জালাল বলেন, ‘এই আলু এখন বিক্রি করব না। উৎপাদিত এই আলু বীজের জন্য সংরক্ষণ করব। বীজ বাছাই শেষে যা থাকবে সেগুলোই বিক্রি করা হবে।’
গত বছর ১২ জাতের আলু চাষ করেছিলেন। তখন সিদ্ধান্ত নেন পরের বছর বাণিজ্যিকভাবে আলু চাষ করবেন। সেই চিন্তা থেকে এ বছর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) এবং মৌলভীবাজারের আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সহযোগিতা ও পরামর্শে ১৬০ শতাংশ জমিতে ২১ জাতের আলু চাষ করেছেন। এর মধ্যে ১৮টি জাত কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সরবরাহ করে।
আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ১৮ জাতের আলুর মধ্যে বারি আলু-২৫ (অ্যাসটেরিক্স), ৪০, ৪১, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫৩ (এলবি-৬), ৬২, ৬৩, ৭৭ (সার্পো মিরা), ৭৮, ৭৯, ৮৭, ৮৮, ৯০ (এলোয়েট) ও ৯১ (ক্যারোলাস)।
জালাল জানান, ডিসেম্বরের শেষ দিকে আলুর বীজ রোপণ করেন। জমিতে বীজ রোপণের পর সার দেওয়াসহ নিয়মিতভাবে পরিচর্যা করতে হয়। এই জাতের আলু গাছে রোগ বা পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়। তবে এবার বৃষ্টির কারণে অনেক গাছ মরে যায়। আলুর জমিতে প্রায় এক ফুট পানি জমে গিয়েছিল। তাই আলু যতটা বড় হওয়ার কথা, তা হয়নি। তারপরও উৎপাদন ভালো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এক শতাংশ জমিতে দেশি জাতের আলু খুব ভালো উৎপাদন হলেও সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ কেজি হয়। সেখানে এই আলু ১৬০ থেকে ১৭০ কেজি উৎপাদিত হয়েছে। তবে এবারের বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। ঘন কুয়াশা ও বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে মড়ক ও পোকার উপদ্রব ছিল। ফলে ঘন ঘন ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হয়েছে। এতে প্রতি শতকে প্রায় ২ হাজার ৫০০ টাকা খরচ পড়েছে। তার জমিতে নিয়মিত চারজন শ্রমিক কাজ করেন। এ ছাড়া ১০ থেকে ১২ জন অনিয়মিত শ্রমিক কাজ করেন।
এবার আরও ৭০ থেকে ৭৫ জন কৃষক নতুন জাতের আলু চাষ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এবার আলু একেবারে শেষ সময়ে রোপণ করা হয়েছে। তবে আলুর ফলন ভালো হয়েছে। বারি আলু-৭৮ ও ৪৭-এর ফলন সবচেয়ে ভালো হয়েছে।’
নতুন জাতের আলু চাষ ইতোমধ্যে স্থানীয় কৃষকদের ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আশপাশের কৃষকসহ অনেক দর্শনার্থী প্রতিদিনই তার বাড়িতে এসে পরামর্শ নিচ্ছেন।
আলু চাষের জন্য পরামর্শ নিতে আসা অর্জুন বেনবংশী বলেন, ‘আমাদের এখানে সাধারণত দুই থেকে তিন জাতের আলুর চাষ হয়। কিন্তু জালাল ভাই ২১ জাতের আলুর চাষ করেছেন। ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। আমি তার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে এসেছি। তার কাছ থেকে বিভিন্ন জাতের আলুর বীজ সংগ্রহ করে আমিও আগামী বছর আলু চাষ করব।’
মৌলভীবাজারের আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুল মাজেদ মিয়া বলেন, ‘গত মৌসুমে হাবিবুর রহমান জালালকে ১০ জাতের আলুর বীজ দেওয়া হয়েছিল। এবার উনাকে ১৮ জাতের বীজ দেওয়া হয়। ঘন কুয়াশা, বৈরী আবহাওয়ার পরও ভালো ফলন হয়েছে।’