যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, নিয়োগ বাণিজ্য, গবেষণা প্রবন্ধ চুরি, উপাচার্য-শিক্ষক দ্বন্দ্বে একাডেমিক কার্যক্রম বিঘ্নসহ নানা বিতর্কিত ঘটনায় আলোচিত বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বর্তমানে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষকদের একচেটিয়া ক্ষমতা অপপ্রয়োগের ক্ষেত্রভূমিতে পরিণত হয়েছে। শিক্ষকরা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
গত দশ বছরে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রায় অর্ধশত যৌন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৩ সালে প্রায় ২০টি যৌন সহিংসতার অভিযোগ পাওয়া যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত দুই বছরে যৌন সহিংসতা ও নিপীড়ন নিরোধ সেলে অন্তত ৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৩টি অভিযোগের তদন্ত শেষে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। মনোবিজ্ঞান বিভাগে নারী শিক্ষককে সহকর্মী শিক্ষক দ্বারা যৌন হয়রানির ঘটনাও রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।
আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৫১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহনন করেছেন। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন ৯৮ জন, যা শতকরা হিসেবে ১৯ দশমিক ১ শতাংশ। গত বছর সর্বোচ্চ ৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার পর আবারও আলোচনায় এসেছে বিশ্ববিদ্যলয়গুলোতে যৌন নিপীড়নের ঘটনা। ফাইরুজ অবন্তিকা আত্মহননের তিন মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু তা নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীম জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে আবেদন করেছেন। উক্ত শিক্ষার্থী তার বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার অভিযোগ করায় নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি। স্পষ্টতই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নারী শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। যৌন নির্যাতনবিরোধী সেল থাকলেও তা কার্যকর নয়। অভিযোগপত্র জমা হয়, তদন্ত করা হয় না। পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতি, শিক্ষকদের ক্ষমতার অপপ্রয়োগ, প্রশাসনের উদাসীনতা, বিচারহীনতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের যৌন সহিংসতা ঘটার অন্যতম প্রধান কারণ। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে উক্ত শিক্ষক যে নারী ও পুরুষ উভয় শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ- এমন কোনো মানদণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালায় নেই।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সংবাদের মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক পর্যায়ে যে করুণ অবস্থা দৃশ্যমান, তার পিছনে অন্যতম প্রধান কারণ শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি। শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র একই।
গত ১৩ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. নূরুল হুদা নামে এক আইনজীবী। তিনি কৃতিত্বপূর্ণ ফল নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। ভালো ফল অর্জন সত্ত্বেও শিক্ষক নিয়োগে আবেদন করে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির কাছে হার মেনেছেন। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া স্বর্ণপদকও ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দেন নূরুল হুদা।
যেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ২১ মার্চ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার দায়িত্বের শেষদিনে অন্তত ৩৭ কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষা ছাড়াই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে এই নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক মজুরি কিংবা অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ বন্ধ রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। শুধু তাই নয়, সদ্য সাবেক এ উপাচার্য ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে একের পর এক দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন। গত তিন মাসে অন্তত ১০৫ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন বলে সংবাদে জানা যায়। সাবেক উপাচার্য শিরীণ আখতার উপাচার্য পদে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০১৯ সালের নভেম্বরে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়োগ দেন ১৭২ জনকে। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণির ১১৫ আর চতুর্থ শ্রেণির ৫৭ জন। এর বাইরে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ৩৬৮ জন শিক্ষক ও কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষক ১৩০ জন, অন্যরা কর্মচারী। ২০২২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি বিভাগে ১৬ লাখ টাকায় শিক্ষক নিয়োগের অডিও ফাঁস হলে তা সর্বত্র আলোচিত হয়।
শেষ সময়ে উপাচার্যদের নিয়োগের তৎপরতা দেখা যায়। ২০২১ সালের ৬ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম আবদুস সোবহান তার শেষ কর্মদিবসে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে’ ১৩৮ জনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে এসব নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করে ইউজিসির তদন্ত কমিটি। অধ্যাপক শিরীণ আখতারের আগে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করা ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীও শেষ সময়ে এসে কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছিলেন। তারা এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে উপাচার্যের পাঁচটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়, যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা কর্মসূচি পালন করেন।
দুর্নীতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ হলে ও যোগ্যতার চেয়ে রাজনৈতিক পরিচয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দিলে তারা কর্মক্ষেত্রে ক্ষমতার চর্চা, অপরাজনীতি আর দুর্নীতিই করবেন।
এ ছাড়াও প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগে শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে বিভাজনের রাজনীতি। এই রাজনীতিতে কোনো ছাত্র পড়লে তাকে অপরপক্ষের রোষানলে পড়তে হয়। আবার কোনো শিক্ষার্থী নিরপেক্ষ হলে গ্রহণযোগ্যতা পান না। শিক্ষকরা বিভাজন ও পক্ষপাতদুষ্ট রাজনীতির মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে কথা বললে তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, তাকে একঘরে করে দেওয়া থেকে শুরু করে ফেল পর্যন্ত করানো হয়। শুধু শিক্ষার্থী নয়, অনেক শিক্ষকও বিভাজনের শিকার হন, তার জীবনও দুর্বিষহ হয়ে যায়, এমন অনেক নজির আছে।
যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা গবেষণা, স্কিল ডেভেলপমেন্ট ও চিন্তা-চেতনায় বিকশিত হওয়ার সহযোগিতাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান; সেখানে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিটনির্ভর গৎবাঁধা মুখস্থ পড়ালেখা এবং অপরাজনীতির জায়গায় পরিণত হয়েছে। কম-বেশি সবাই ব্যক্তিস্বার্থ দ্বারা তাড়িত। শিক্ষকরা সুষ্ঠুভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করেন না এবং নীতি-নৈতিকতারও কোনো বালাই নেই। বিভাগ ও শিক্ষকদের মন-মর্জির ওপর শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়। শিটনির্ভর মুখস্থ পড়ালেখায় একজন শিক্ষার্থী কি শিখবে আর জীবনে কি প্রয়োগ করবে? মুখস্থ করে পাওয়া সর্বোচ্চ সিজিপিএ দিয়ে শিক্ষক হলে সে কেমন শিক্ষক হবে? নির্ধারিত কিছু প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসে। ফটোকপির দোকান থেকে শিট কিনে গলগল করে মুখস্থ করেন শিক্ষার্থীরা। এটা কেমন শিক্ষাব্যবস্থা? এই শিক্ষাব্যবস্থাকে "শিটব্যবস্থা" বলাই ভালো।
বর্তমানে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও জ্ঞান অর্জন বাদে বাকি সব হয়। বর্তমান বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দের পরিমাণ দেখলে তা পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) অনুপাতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। শিক্ষা খাতের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। এই বরাদ্দ মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে ১৫ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ পেয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। যা জবির মূল বাজেটের ২ দশমিক ১২ শতাংশ। ইউনেস্কোর মতে, একটি দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার প্রতিষ্ঠান, সেখানে গবেষণায় বরাদ্দ এত কম কেন?
টাইমস হায়ার এডুকেশন-২০২৪ সালের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে প্রথম ৮০০ তালিকায় নেই এ দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের তেমন উল্লেখযোগ্য অবদান চোখে পড়ে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে গবেষণাকে ন্যূনতম গুরুত্ব দেওয়া হয় না, যেখানে পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে গবেষণাকে শিক্ষক নিয়োগের পূর্বশর্ত হিসেবে দেখা হয়।
শিক্ষাব্যবস্থা একটি জাতির মেরুদণ্ড তৈরি করে ও জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে, এটা মনে রাখা প্রয়োজন। বর্তমানে স্কিল ডেভেলপমেন্টকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। শিক্ষানীতির পরিবর্তন প্রয়োজন, ঔপনিবেশিক শিক্ষানীতি অর্থাৎ কেরানি তৈরির কারখানা হিসেবে কোনোরকমে চলছে এই শিক্ষাব্যবস্থা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি সংকটগুলোর একটা ইতিবাচক সমাধান হতে পারে। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অবন্তিকা ফাইরুজের আত্মহত্যার ঘটনায় আরও অনেক শিক্ষার্থী কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। কম-বেশি সব বিভাগেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আছেন, যৌন নিপীড়ন থেকে শুরু করে শিক্ষকদের কোরাম-কোরাম রাজনীতি সবই চলমান।
শিক্ষকের সর্বময় ক্ষমতা বলেই তিনি যৌন নিপীড়কে পরিণত হন। এই সংকটে জবিতে শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি বর্তমান সংকটগুলোর একটা ইতিবাচক সমাধান হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন শিক্ষকও আছেন যারা ক্লাস নেন না, সময়মতো ক্লাসে আসেন না, কোর্স কমপ্লিট তো করেনই না; বরং তাদের জীবনের ইতিহাসের উপরে কোর্স পড়ান। অনেক সময় পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে নাম্বার দেন। এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললে জীবন বিভীষিকা হয়ে যায়। তাই শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি হতে পারে শিক্ষার্থীদের কথা বলার প্ল্যাটফর্ম।
কোর্সের অগ্রগতি কতটুকু হলো, শিক্ষার্থীদের কোর্সে কোথায় সমস্যা, কীভাবে পড়ালে শিক্ষার্থীদের জন্য তা আরও কার্যকর হবে, শিক্ষক সময়মতো ক্লাসে আসেন কি না, শিক্ষক সঠিকভাবে পড়াতে পারছেন কি না- সব কিছুই মূল্যায়নের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সবচেয়ে বড় বিষয়, শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু হলে শিক্ষকের জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি হবে এবং শিক্ষকরা এখনকার মতো যাচ্ছেতাই করার সুযোগ পাবেন না। শিক্ষকদের পদোন্নতিতে শিক্ষক মূল্যায়ন নাম্বারকে বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হবে। শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি সারাবিশ্বেই প্রচলিত। এ পদ্ধতির ফলে একজন শিক্ষকের নিজের জ্ঞানচর্চা ও দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ খোলা থাকে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ শিক্ষকরা চাকরি পাওয়ার পর পড়ালেখা বাদ দিয়ে দেন। ক্লাস নেওয়ার আগে ন্যূনতম প্রস্তুতিটুকুও নেন না অনেকে।
বহির্বিশ্বে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষককে বলা হয় সিনিয়র স্কলার এবং শিক্ষার্থীকে বলা হয় জুনিয়র স্কলার। সেখানে বাংলাদেশের চিত্র হলো মালিক ও ভৃত্য। শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা পারস্পরিক আলাপ-আলোচনামূলক হতে পারে এবং ক্ষমতা অপপ্রয়োগের সুযোগ কম থাকবে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যলয়ে শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চালু করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে করুণ পরিস্থিতি তাতে শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে মালিক-ভৃত্য সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে সহযোগিতাপূর্ণ ও শিক্ষার্থীবান্ধব সম্পর্ক তৈরি করতে পারে।
সবশেষে বলতে চাই, শিক্ষাব্যবস্থায় মূল সংকট চিহ্নিত না করতে পারলে একটার পর একটা সমস্যা তৈরি হতে থাকবে, শিক্ষার্থীরা নির্যাতনের শিকার হবে, কেউ আত্মহত্যা করবে, আন্দোলন হবে, এতে সাময়িক সমস্যার সমাধান হলেও সংকট নিরসন হবে না। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি হতে পারে এই ক্ষমতা ক্ষমতা খেলা বন্ধের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।
লেখক : এমফিল অধ্যয়নরত ও সাবেক শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]