
আজ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। রবীন্দ্রনাথের নাম শুনলেই হয়তো তোমাদের চোখে ভাসে লম্বা সাদা দাঁড়ি, শান্ত চোখের এক আলোকজ্জ্বল মুখ। শৈশব-কৈশোরেও রবীন্দ্রনাথ দেখতে ছিলেন কিন্ত বেশ সুদর্শন। তবুও মা সারদা দেবী আক্ষেপ করে বলতেন, অন্যসব ছেলে-মেয়ে থেকে আমার রবি ই কেবল কালো হল! পনেরো জন ভাই-বোনের ভেতর রবীন্দ্রনাথ ছিলেন চৌদ্দতম। সবার ভেতর রবি কে আলাদা করা যেত তার ভাবুক স্বভাবের কারণে। শৈশবেও রবীন্দ্রনাথ ছিলেন কৌতুহলী, সৃজনশীল ও মুক্ত স্বভাবের। রবীন্দ্রনাথের শৈশব-কৈশোরের কিছু মজার গল্প নিয়ে আজকের লেখা।
বাড়ি থেকে পালিয়ে হিমালয়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত জমিদার পরিবারের সন্তান। বাড়িতে ছিল পড়াশোনা আর জীবন যাপনের কঠোর নিয়ম। স্বাধীনচেতা রবির মোটেই ভালো লাগত না এমন ধরাবাঁধা নিয়ম। ১২ বছর বয়সে একবার ঠিক করলেন বাড়ি থেকে পালিয়ে সোজা চলে যাবেন হিমালয়। সাধু-সন্ন্যাসীদের মতো প্রকৃতির মাঝে শান্তির জীবন কাটাবেন সেখানে। তবে কিভাবে যাবেন এতদূর পথ? ঠিক করলেন বাড়ি থেকে হেঁটে হেঁটেই পৌঁছে যাবেন হিমালয়। যেমন ভাবা তেমন কাজ। কিছু জমানো টাকা-পয়সা, শুকনো খাবার নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন হিমালয়ের উদ্দেশ্যে। তবে কিছু পথ যেতেই গঙ্গার ঘাটে তাকে দেখে ফেলেন ঠাকুর বাড়ির দারোয়ান। অগত্যা সে যাত্রায় আর হিমালয় পৌঁছানো হয়নি বালক রবির!
আকাশের তারা নিয়ে পরীক্ষা
শৈশবে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বেশ শান্ত স্বভাবের। তবে কৌতুহলী স্বভাবের কারণে কখনো কখনো দূর্ঘটনা ঘটিয়ে দুশ্চিন্তায় ফেলতেন বাড়ির বড়দের। রবির বয়স তখন ৮ কি ১০ বছর। তখন থেকেই আকাশের তারা-নক্ষত্রের সঙ্গে তার গভীর বন্ধুত্ব। একদিন রাতের আকাশের তারা দেখতে দেখতে তার মনে পড়ল পাঠ্যবইয়ে পড়েছিলেন, ‘তারা আগুনে পুড়ে না, জলে ডুবে না।’ রবির মনে প্রশ্ন এল, সবকিছুই তো আগুনে পুড়ে তাহলে তারা কেন নয়? এর উত্তর জানতে চাইলে হাতের মুঠোয় চাই আকাশের তারা। তা তো আর সম্ভব নয়। তাই তারার মতো দেখতে ছোট কাচের টুকরোতে আগুন ধরিয়ে শুরু করলেন পরীক্ষা। কাচ পোড়ার শব্দে ছুটে এসেছিলেন বাড়ির সবাই।
স্কুল ফাঁকির গল্প
স্কুল পালালেই রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায় না এই প্রবাদটি তোমরা শুনেছ নিশ্চই। একথা যেমন সত্যি তেমনি রবির স্কুল পালানোর গল্পও মিথ্যে নয়। শৈশবে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় একদম আগ্রহ ছিল না রবীন্দ্রনাথের। তবুও বাবার আদেশে স্কুলে যেতে শুরু করেন তিনি। তবে স্কুল ফাঁকি দিতে তাঁর ছিল নানা উপায়। কখনো স্কুলের পুকুরে জুতা ভিজিয়ে রাখতেন তারপর সেই জুতা সারাদিন পায়ে রেখে জ্বর বাঁধাতেন। কখনো বদহজম এর ভান করে পড়ে থাকতেন বিছানায়। কখনো নানা ছুঁতো ধরে স্কুলে যাবার আগে লুকিয়ে পরতেন মায়ের আঁচলের নিচে। অগত্যা স্কুল থেকে ছুটি দিয়ে বাড়িতেই পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে হয় তাঁর জন্য!
/ তাসনিম তাজিন