রাজধানীর পুরান ঢাকায় সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানির (এসএমসি) সঙ্গে মিল রেখে ‘এসএনসি’ নামে তৈরি করা হতো নকল স্যালাইন। তাপপ্রবাহের মধ্যে শ্রমজীবী মানুষকে টার্গেট করে দেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে এই নকল স্যালাইন ছড়িয়ে দিয়েছে একটি চক্র। এই ধরনের নকল স্যালাইন পানে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যাসহ মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হতে পারে। একই সঙ্গে জুসসহ নানা ভেজাল শিশুখাদ্য তৈরি করে সারা দেশে সরবরাহ করত চক্রটি। এই চক্রের ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ উত্তর।
গ্রেপ্তাররা হলেন- আনোয়ার হোসেন (৩৮), শাহ নেওয়াজ খান (৩৩), মোরশেদুল ইসলাম (৫১), সবুজ মিয়া (২৩), আরিফ (২৩) ও হানিফ মিয়া (৩০)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে নকল স্যালাইনসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরির মেশিন, স্যালাইন, নকল কোমল পানীয়, নকল ড্রিংকো উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (৮ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, নকল পণ্য তৈরি চক্রটি একদিকে পুরান ঢাকায় বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়া স্যালাইনের নকল প্যাকেট বানাচ্ছে, অপর দিকে লবণ চিনি দিয়ে স্যালাইন বানাচ্ছে। কোটি কোটি নকল স্যালাইন তৈরি করে তারা রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে ধান কাটার সিজন, আরেক দিকে নির্বাচন। ফলে বাজারে স্যালাইনের প্রচুর চাহিদা। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে সবাইকে গ্রেপ্তার করেছি। তারা নকল স্যালাইনের পাশাপাশি ভেজাল কোমল পানীয়, ম্যাংগো জুস তৈরি করত। নামিদামি ব্র্যান্ডের মোড়কে কেমিক্যাল দিয়ে শিশুখাদ্য, কোমল পানীয়, ম্যাংগো জুস তৈরি করত।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, চক্রের সদস্যরা আগে বিভিন্ন ব্যবসা করত। আনোয়ার হোসেন এক সময় সেলুন ব্যবসা করত, হানিফ মিয়া বিক্রি করতো শনপাপড়ি। তারা এখন নকল টেস্ট স্যালাইনের কারখানার মালিক। পুরান ঢাকার কদমতলি থানা এলাকায় ভাড়া বাসায় এসব নকল পণ্য তৈরি করা হতো। এই চক্রের মূল হোতা হলেন আনোয়ার হোসেন।
অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, এই চক্রটি বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়া নকল পণ্য তৈরি করে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিশন দিয়ে বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে বিশেষ করে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ডিলার নিয়োগ দিত। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিশন দেওয়ার পরেও তাদের অনেক টাকা লাভ হতো। আসলে তাদের তেমন কোনো উৎপাদন খরচ নেই। কোনো ভ্যাট দিতে হয় না। সোডিয়াম, স্যাকারিন, আর্টিফিশিয়াল ফ্লেভার, মানহীন কেমিক্যাল দিয়ে এসব ভেজাল পণ্য তৈরি করতেন আনোয়ার। এসব কাজে তাকে সহায়তা করতেন শাহনেওয়াজ ও মোর্শেদ। শাহনেওয়াজ প্রাণ কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর। প্রাণ কোম্পানির পাশাপাশি নকল শিশুখাদ্য বিক্রি করতেন তিনি। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।