ঢাকা ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪

জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ এএম
জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশ পরিচালনায় এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর ফলে দ্বৈতনীতিতে চলছে প্রশাসনের কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত থাকা কর্মকর্তারা প্রশাসনিক পদসোপান কাঠামো ভেঙে এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিন ধাপে পদোন্নতি নিয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, বঞ্চিত ব্যক্তিদের পাশাপাশি বঞ্চিত সেজে কিছু সুবিধাভোগী, বিতর্কিত ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাও পদোন্নতি পেয়েছেন। পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও রয়েছেন, যার বিরুদ্ধে অপরাধে জড়ানোর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয়েছিল। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা চলছে এমন কর্মকর্তাও পদোন্নতি পেয়েছেন। 

প্রায় প্রতিদিনই সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে ভিড় করছেন তদবিরকারী কর্মকর্তারা। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে প্রশাসনের ওপর এত চাপ তৈরি হয়নি। গত ১৫ বছরে ব্যাপক দলীয়করণ, সেটা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগের কারণে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। 

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সময় লাগবে। জনপ্রশাসন ক্যাডারের এই বিশৃঙ্খলায় বঞ্চিত অন্যান্য ক্যাডারের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পদোন্নতিসহ বিভিন্ন দাবিতে জোট বেঁধেছেন বিসিএস ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ৩১ আগস্ট তারা আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ নামের জোট ঘোষণা করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেন।

এক মাস ধরে গোটা প্রশাসনে চলছে সমন্বয়হীনতা, বিশৃঙ্খলা। ‘সুবিধাভোগী ও বঞ্চিত’- কর্মকর্তারা এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে চলছে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব। সম্প্রতি দুই ধাপে ৫৯ জেলার ডিসি নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এ তালিকায় বঞ্চিতরা উপেক্ষিত হওয়ায় বাগবিতণ্ডা ও অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন সিনিয়র ও জুনিয়র কর্মকর্তারা। 

এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রশাসনিক ‘চেইন অব কমান্ড’ ভেঙে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক আমলা ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। তারা এ ঘটনাকে দুঃখজনক, অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মন্তব্য করেছেন। মাঠ প্রশাসনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করেছেন সচিবালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, কারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল এবং কাউকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করায় এখন সাতটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব পদ খালি। এসব মন্ত্রণালয়ের কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। গত বুধবার আট জেলার ডিসির নিয়োগ স্থগিত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া আরও চার জেলার ডিসি পদে রদবদল আনা হয়েছে।

সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ডিসি নিয়োগ ইস্যুতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র ও জুনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে যে বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে তা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলাবিরোধী। সচিবালয় হচ্ছে সরকারের প্রাণকেন্দ্র। কারণ এই সচিবালয়ে মন্ত্রী-সচিবরা বসেন। এখন সরকারের উপদেষ্টারা বসছেন। এখান থেকেই জনপ্রশাসন পরিচালিত হয়।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন হওয়া দরকার প্রশাসনের সর্বস্তরে। প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও কাজের গতি ফিরিয়ে আনতে হলে সেটাও যোগ্যতার ভিত্তিতে হতে হবে।

সরকারি চাকরির আচরণবিধি মেনে সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে প্রশাসনের প্রত্যেক কর্মকর্তাকে। কিন্তু সম্প্রতি দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কার্যালয়ে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা রীতিমতো শঙ্কার বিষয়। কারণ প্রশাসনে দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের স্থান তা সবার জানা। 

কিন্তু তাদের এ ধরনের বিতর্কিত আচরণ সাধারণ মানুষকে চরমভাবে আহত করেছে। সরকার যদি এটি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশ এক কঠিন সময়ের মুখোমুখি হবে। আশা করি, সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।

রাজনৈতিক দলের মতামতকে গুরুত্ব দিন

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২০ এএম
রাজনৈতিক দলের মতামতকে গুরুত্ব দিন

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেশের ১৮টি রাজনৈতিক দলের গত শনিবার তৃতীয় দফা বৈঠক হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাষ্ট্রসংস্কার নিয়ে ভাবনা এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ বিষয়ে তাদের মনোভাব ও প্রস্তাবগুলো তুলে ধরে। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ শেষ করে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন দলের নেতারা। তারা বলছেন, যত দ্রুত সংস্কারকাজ করে নির্বাচন দেওয়া হবে অন্তর্বর্তী সরকার এবং রাজনৈতিক দলের জন্য ততই কল্যাণকর হবে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেছেন, সংলাপের সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে সব রাজনৈতিক দল সমর্থন জানিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে ছয় কমিশন।

বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এক নম্বর অগ্রাধিকার নির্বাচন। সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংস্কার করতে এবং আগামী নির্বাচন কবে হবে, তার একটি রোডম্যাপ দেওয়ার ওপর জোর দেন তিনি। এ ছাড়া প্রশাসনের ফ্যাসিবাদের দোসরদের সরানো, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল, বঞ্চিতদের পদোন্নতি, আইনশৃঙ্খলা ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা, সংস্কার কমিটির সাবেক দুজন সচিব, একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালককে নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। বৈঠক শেষে জামায়াতের আমির জানান, ভোটের আগে সংস্কার, এর পর নির্বাচন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশ শাসনের জন্য আসেনি। তারা দেশ শাসনের সুষ্ঠু পথ বিনির্মাণের জন্য এসেছে। 

আমরা আশা করব, বর্তমান সরকার কোনো পক্ষ-বিপক্ষের মানসিকতা না নিয়ে দেশকে ভালো জায়গায় নিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সক্ষম হবে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমকে নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে গণধিকার পরিষদ। এ ছাড়া হেফাজতে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ দলের পরিচয়ে বৈঠকে না ডাকায় মনোক্ষুণ্ন হয়েছেন সেসব দলের নেতা। বিতর্কিতদের দায়িত্ব কমানো এবং নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ দাবি এবি পার্টির। 

সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার ঐকমত্যে আসবে, এটা আশা করা যায়। রাজনৈতিক দলগুলো একটি ন্যূনতম ঐকমত্যে এলে এর ওপর নির্ভর করবে নির্বাচনের সময়সীমা। সংস্কার কাজের মধ্যদিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নেওয়ার কাজ চলবে। বেশকিছু রাজনৈতিক দলের নেতা সরকারের সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ততা ও নিয়মিত সংলাপের কথা বলেছেন। কেউ বলেছেন, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এখনো রোধ হয়নি। জনগণ আশাহত হলে সংস্কারের কথা শুনবে না। কোনো দলের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, পুলিশ বাহিনী অকার্যকর, দুর্বল ও নৈতিক মনোবলহারা। সশস্ত্র বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হলেও মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। 

গণ-অভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে বিভেদ দেখা যাচ্ছে। সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয় না থাকার বিষয়টিও দৃশ্যমান। সংস্কারে গঠিত কমিশনগুলো কাজ শুরু না করায় হতাশা দেখা দিয়েছে। সব নাগরিকের চাওয়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর গণতান্ত্রিক সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ দেবে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টেকসই ও গ্রহণযোগ্য সংস্কার হওয়ার প্রয়োজন। বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কারের জন্য ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।

 একটি নির্বাচন চাইলেই হয়ে যাবে, সে অবস্থায় এখন দেশ নেই। সর্বজন গ্রহণযোগ্য নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা ও সহযোগিতা থাকতে হবে। বাস্তবতার নিরিখে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। একটি জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও স্বচ্ছতা আনা দরকার। তা না হলে দেশ এক কঠিন সময়ের মুখোমুখি হবে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি থেকে দেশ বঞ্চিত হবে। 

ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষের চাওয়ার প্রতিফলন ঘটাতে হবে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় উত্তরণের মাধ্যমে। দেশের কল্যাণে অন্তর্বর্তী সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলো সেই যৌক্তিক সময়টুকু দেবে। জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকেও গুরুত্বের সঙ্গে সরকার বিবেচনা করবে।

ড. ইউনূস-আনোয়ার ইব্রাহিম বৈঠক সম্পর্ক জোরদারে ভূমিকা রাখবে

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৩ এএম
ড. ইউনূস-আনোয়ার ইব্রাহিম বৈঠক
সম্পর্ক জোরদারে ভূমিকা রাখবে

ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করতে একমত হয়েছেন বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার দুই নেতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও আনোয়ার ইব্রাহিম। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি ভালো উদ্যোগ। কিছুদিন আগে বিমানের টিকিট স্বল্পতাসহ সংকটময় পরিস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ে মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা শ্রমিকদের যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। মালয়েশিয়া যেতে বাংলাদেশ সরকার কর্মীপ্রতি সর্বোচ্চ ব্যয় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা নির্ধারণ করলেও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত এজেন্সিগুলো সাড়ে ৪ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়। 

মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যনুযায়ী, কর্মীপ্রতি ব্যয় ছিল ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। গত ৩১ মে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে মালয়েশিয়া। আবার চালুর জন্য আলাপের সঙ্গে আগের দুবারের মতো সিন্ডিকেটের আশঙ্কাও করছেন ব্যবসায়ীরা। সিন্ডিকেটের তৎপরতার প্রশ্নে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম জানান, এ ক্ষেত্রে অতীতের পদ্ধতি ভেঙে দিয়েছেন তারা। এখন ‘স্বচ্ছ’ প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে নিয়োগ হচ্ছে। ওই ১৮ হাজার কর্মী সব ধরনের প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছে এবং এটা তাদের দোষ নয়।

 সুতরাং প্রয়োজনীয় সমন্বয় ও পরিবর্তন করা আমাদের দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের সুযোগ পাবেন সেই ১৮ হাজার কর্মী। দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে অতি সংক্ষিপ্ত সরকারি সফরে আনোয়ার ইব্রাহিম গত শুক্রবার ঢাকায় পৌঁছলে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এর পর বিকেলে ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। 

দুই দেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্মরণ করে মালয়েশিয়াকে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, আনোয়ার ইব্রাহিমের সফর বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দুই মাস আগে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রীর এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর। এই সফর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মালয়েশিয়ার সমর্থনের স্বীকৃতি। দুই নেতার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা উভয়েই দীর্ঘদিনের দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলোকে জোরদার করতে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। 

অভিন্ন মূল্যবোধ, আস্থা ও জনগণের কল্যাণের স্বীকৃতির মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস জানান, তারা সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেছেন। দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত রোহিঙ্গা ইস্যুটি সমাধানের জন্য তিনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি আসিয়ান ফোরামে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। নিয়মিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন দুই দেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের ওপর জোর দেওয়া হয়। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে নিবিড়ভাবে কাজ করতে দৃঢ় অঙ্গীকার ও সংকল্প ব্যক্ত করেছে সরকার।

বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় বসবাস ও কাজ করেন। এর মধ্যে ২০২২ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ অভিবাসী হয়েছেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সফরটি বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গভীর এবং টেকসই বন্ধুত্বের অভিব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’ মালয়েশিয়া বাংলাদেশে অষ্টম বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কয়েকটি কোম্পানিসহ মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে এবং এখন শিক্ষাসহ আরও বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক।

দিন দিন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা বাড়ছে। অন্তর্বর্তী সরকার দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে পারলে এসব অভিবাসী ব্যবসা-বাণিজ্য বিনিয়োগে সুবিধা করে নিতে পারবে। এতে মালয়েশিয়ায় এ দেশের কর্মীদের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে। অন্তর্বর্তী সরকার দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গতিশীল করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পুরোনো বন্ধু হওয়ার সুবাদে দেশ সংস্কার কার্যক্রমে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে পাশে পাবেন তিনি। প্রত্যাশা রইল, দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে তাদের বন্ধুত্বের মাধ্যমে।

বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩৩ পিএম
বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিন

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে চরম নাভিশ্বাস। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় দুই মাস পার হলেও তারা বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। প্রতিদিনই কোনো না কোনো দ্রব্যের দাম বাড়ছে। চালের দাম ১০ শতাংশ বেড়েছে। ডিম ডজনে বেড়েছে ২০ টাকা। ডিমের দামেও চরম ভুগতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সবজির দাম ব্যাপক চড়া। এক কথায় সব পণ্য বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর সব বাজারের চিত্র প্রায় একই।

অভিযোগ উঠেছে, আগে যারা চাঁদাবাজি করত তারা এখন না থাকলেও, নতুন করে আরেকটি চক্র চাঁদাবাজিতে জড়িয়েছে। অর্থাৎ চাঁদাবাজির হাতবদল হয়েছে। আগের মতোই মহাসড়ক, ঘাটে সব জায়গায় চাঁদাবাজি হচ্ছে। ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করলেও থামছে না এ চক্রের চাঁদাবাজি। 

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাজার নিয়ন্ত্রণে বেশ জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের ইঙ্গিত দেয়। প্রথম দিকে কয়েক দিন কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গিয়েছিল। শিক্ষার্থীরা বাজার নিয়ন্ত্রণে বেশ ভালো উদ্যোগ নিয়েছিল। আশা ছিল দ্রুতই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। কিন্তু এখন বাজারের চিত্র ভিন্ন। নিয়ন্ত্রণে আসেনি দ্রব্যমূল্যের দাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। বন্যা ও বৃষ্টির অজুহাতে বাজারে সবজির দাম বেড়েছে। দাম বেঁধে দেওয়ার পরও তা মানা হচ্ছে না। বরং বিক্রেতারা যে যেমন পারছে, ভোক্তার পকেট কাটছে। বাজার লাগামহীন হয়ে পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত সবাই। বিবিএসের তথ্যমতে, সেপ্টেম্বরে প্রায় ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতির বিপরীতে মজুরি বেড়েছে ৮ শতাংশের মতো। অর্থাৎ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরও কমেছে। 

পরিসংখ্যান বিবেচনায় বছরের ব্যবধানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে। তবে বাজারে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। কম মূল্যস্ফীতির এই সময়ে মানুষ এখন বাজারে গিয়ে হাঁসফাঁস করছেন। নিত্যপণ্য থেকে শাকসবজির দাম ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি, রাজধানীর টাউনহল বাজার, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন খবরের কাগজের প্রতিবেদক। প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। 

গত বছরের সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ ছিল। গত মাসে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশে নেমেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আলু ও পেঁয়াজে শুল্ক কমালেও বাজারে দাম কমছে না। অনেকেই বলছেন, সিন্ডিকেট না ভাঙতে পারলে শুল্ক কমালেও কাজ হবে না। বাজার সিন্ডিকেটের কাছে এখন অসহায় ক্রেতা। মন্ত্রী, সচিব, ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে বাজারের দুষ্টুচক্র। 

বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। স্বল্পমেয়াদে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। সরবরাহ ব্যবস্থায় সংস্কার করতে হবে। বাজারগুলো থেকে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য দূর করতে হবে। এ জন্য দরকার সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপ। পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। সরকারি সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যান সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে, যাতে যথাযথ নীতি গ্রহণ করা সহজ হয়। অর্থনীতিবিদ, বাজার বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীদের মতামত গ্রহণ করে কিছু সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জনগণের ভোগান্তি বিবেচনা করে বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সেটিই প্রত্যাশা।

অন্তর্বর্তী সরকারকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সংস্কারকাজ করতে হবে

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৪ এএম
অন্তর্বর্তী সরকারকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সংস্কারকাজ করতে হবে

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পুনর্গঠনে কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে এ সরকার কিছু সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ভাষণে সংস্কার সম্পর্কে বলেন, ‘মানুষের আস্থা ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে এবং নির্মম অতীত যেন আর ফিরে না আসে, সে জন্য আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট খাতে সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। নির্বাচনব্যবস্থা, সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা সংস্কারে স্বাধীন কমিশন গঠন করেছি। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের সংস্কারের জন্য পৃথক কমিশনসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

 রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকার আরও সময় নিতে চায়। বুঝে নিতে চায় রাজনৈতিক দলগুলোর মনোভাব। এ ছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে এগোতে চায় সরকার। আর এ কারণেই ছয় কমিশন পুরোপুরি গঠন ও কাজ শুরু করতে সরকার আরও কিছুটা সময় নিতে ইচ্ছুক।

অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র মেরামত বা সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন তাকে সাধুবাদ জানিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে নিজেদের করণীয় নিয়ে চিন্তাভাবনাও শুরু করেছে। বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ ব্যাপারে প্রস্তাবও তৈরি করছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে। সূত্র মতে, এ ব্যাপারে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সঙ্গে কথা বলেনি সরকারের সংশ্লিষ্ট কেউ। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হতে হলে সব দলের অংশগ্রহণ জরুরি। বিগত সরকার কয়েকটি নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে ব্যর্থ হয়েছিল। সেসব নির্বাচনে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো অংশগ্রহণ করেনি। এ কারণে বিগত সরকার এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।

 এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ বা আগামী নির্বাচন কবে হবে, এ ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হলেও উপদেষ্টা পরিষদ এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সংবিধান সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। এটি না করতে পারলে স্বৈরশাসন আবারও শুরু হবে। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, দেশ ও প্রশাসন সম্পূর্ণ দলীয়করণ হয়েছে। নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের খারাপ প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে, যা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় কোনোভাবেই কাম্য নয়। সরকার পতনের আগে প্রশাসনে ক্ষমতাসীন দলের নিয়ন্ত্রণ ছিল। আওয়ামী লীগ চলে যাওয়ার পর এখন অনুমিতভাবে বিএনপির প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। তাই প্রশাসনকে দলীয়করণ থেকে মুক্ত করতে পদক্ষেপ নিতে জনগণের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। 

ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সংস্কার কার্যক্রমকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রাধান্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কী ধরনের সংস্কার কার্যক্রম করা হবে, তার একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি স্টেকহোল্ডার বা বিভিন্ন অংশীজনের মতামতকে প্রাধান্য দেবে, এটি আশা করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ রাষ্ট্র সংস্কার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ব্যবস্থাকে কীভাবে টেকসই করে গড়ে তোলা যায়, সে বিষয়ে সবার মতামত প্রয়োজন। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার সফলভাবে সংস্কারকাজ এগিয়ে নিতে সক্ষম হবে।

পুলিশকে যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলুন

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১১ এএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫৮ এএম
পুলিশকে যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলুন

পুলিশ প্রশাসনে এখনো অচলাবস্থা বিরাজ করছে। গত সরকারের সময়ে অতিরিক্ত পুলিশ-নির্ভরতা এ বাহিনীকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রায় দুই মাস পার হলেও পুলিশ সদস্যরা ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তথ্যমতে, বিগত সরকারের ১৬ বছরে পুলিশে নিয়োগ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার। এত সংখ্যক নিয়োগ হলেও এ বাহিনীকে পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। নির্বাচন, আন্দোলন মোকাবিলাসহ নানা কার্যক্রমে বিগত সরকার এ বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মুখোমুখি করে রেখেছিল এবং তাদের দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা ব্যাপক সমালোচিত হয়।

আন্দোলনের একপর্যায়ে এ বাহিনী একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। সদস্যরা নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষায় আত্মগোপনে চলে যান। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এ বাহিনীর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে জোর তৎপরতা শুরু করে। এতে কিছুটা আশার আলো দেখা যায়। কিন্তু দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। দেশের বিভিন্ন স্থানে মব ট্রায়াল নামে যে হত্যা চলছে তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সরকারকে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে জোর তৎপরতা শুরু করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দেশ এক কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে পারে। সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এ বাহিনীর উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সব শীর্ষ পদে ব্যাপক রদবদল হয়েছে, তার পরও স্বাভাবিক হয়নি তাদের কার্যক্রম।

সব মহল থেকে এখন দাবি- এ বাহিনীকে ঢেলে সাজিয়ে যুগোপযোগী একটি বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাহিনী পরিচালনায় পুলিশ সদস্যদের অপরাধ তদন্তে ‘পুলিশ অভিযোগ কমিশন’ গঠনেরও দাবি উঠেছে। ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করার কথা জানান।

এ ক্ষেত্রে পুলিশ সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সফর রাজ হোসেনকে। কাজ শেষে তিনি আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো তিনি কাজ শুরু করতে পারেননি। পুলিশের অভ্যন্তর থেকেও পদায়নে শৃঙ্খলা আনতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের দাবি উঠেছে। পুলিশ সদস্যদের অধিকাংশ অপরাধের নেপথ্যেই রয়েছে ঘুষ ও অবৈধ লেনদেন। অভিযোগ রয়েছে, তাদের পদোন্নতিও নির্ভর করে ঊর্ধ্বতনদের সুনজর, রাজনৈতিক বিবেচনা এবং আর্থিক লেনদেনের ওপর। বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। এ কারণে পুলিশ বাহিনী গণমানুষের বাহিনী হয়ে উঠতে পারে না। পুলিশের জবাবদিহির জন্য শক্ত কাঠামো গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের পাশাপাশি পুলিশ অভিযোগ কমিশন গঠন করতে হবে। পুলিশ বাহিনীর উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।


পুলিশের কার্যক্রম পরিচালনা ও সঠিক কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। সেই সঙ্গে পুলিশকে সেবামুখী করতে এ-সংক্রান্ত কিছু আইন ও বিধান যুগোপযোগী করতে হবে। পুলিশকে দলীয় প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে হবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশকে সেবা দেওয়ার মানসিকতা বাড়িয়ে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। পুলিশ বাহিনীর মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি করতে হবে। পুলিশকে যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।