ঢাকা ৬ চৈত্র ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১

পাঠাগার আছে বই আছে পাঠক নেই! পাঠক গড়তে সামাজিক আন্দোলন জরুরি

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৪ পিএম
পাঠাগার আছে বই আছে পাঠক নেই!
পাঠক গড়তে সামাজিক আন্দোলন জরুরি

মহাসমুদ্রের শত বছরের ঘুমিয়ে থাকা নীরব কল্লোলের সঙ্গে লাইব্রেরির তুলনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। মানবাত্মার অমর আলোকে উদ্ভাসিত থাকে লাইব্রেরির বইগুলো। মানুষ বই পড়ে আলোকিত হয়। কিন্তু আমরা আজও এই আলোয় পরিপূর্ণভাবে উদ্ভাসিত হতে পারিনি। গতকাল ছিল জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। দিবসটি উপলক্ষে খবরের কাগজের বিশেষ আয়োজনের বিভিন্ন প্রতিবেদনে এ রকম ছবিই উঠে এসেছে। লাইব্রেরি আছে, বই আছে, পাঠক নেই। সংকট বহুমুখী। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে আমাদের প্রতিবেদক ও সংবাদদাতারা যে প্রতিবেদনগুলো পাঠিয়েছেন তা হতাশাজনক।  

খবরের কাগজে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদনের শিরোনাম থেকে জানা যায়, বই পড়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকলেও সুযোগ ঘটছে না। নানা সংকটের কারণে বইপাঠকে আমরা জনপ্রিয়, এমনকি সহজ-স্বাভাবিক করতে পারিনি। এ রকম কয়েকটি শিরোনাম: ‘রাজধানীর লাইব্রেরি: বই আছে পাঠক নেই’; ‘চাকরিপ্রত্যাশীরাই আসেন বেশি’; ‘জনবলসংকটে ব্যাহত হচ্ছে কার্যক্রম’; ‘সাইনবোর্ডসর্বস্ব পাবলিক লাইব্রেরি’; ‘কালের সাক্ষী কোহিনুর লাইব্রেরি হারাতে বসেছে ঐতিহ্য’; ‘বই আছে, নেই পড়ার মানুষ’; ‘ভবন সম্প্রসারণ হয়নি, জনবলসংকটও মেটেনি’; ‘গোপালগঞ্জের নজরুল পাবলিক লাইব্রেরি, পাঠকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন’। 

উল্লিখিত শিরোনামগুলো হতাশাজনক। তবে এই হতাশার বিপরীতে আশাপ্রদ সংবাদও আছে। সবচেয়ে উজ্জ্বল সংবাদটি বান্দরবানের উপজেলা রুমা থেকে পেয়েছি আমরা। সেখান থেকে পাঠানো প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বান্দরবান জেলার সবচেয়ে দুর্গম জনপদ রুমায় জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে ‘মোহিনী সৃজনশীল পাঠাগার’। এই পাঠাগারটি সরকারি কোনো পাঠাগার নয়, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও পায় না। প্রায় একক প্রচেষ্টায় নিজস্ব অর্থায়নে পাঠাগারটি গড়ে তুলেছেন এবং পরিচালনা করছেন শিশুসাহিত্যিক ও কবি ‘অরণ্য ক্যানভাস’ পত্রিকার সম্পাদক কাজী মোহিনী ইসলাম। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থাকলে যে পাঠকদের জন্য পাঠাগার গড়ে তোলা যায়, তা এই পাঠাগারটিই প্রমাণ। আমাদের প্রান্তিক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিশু-কিশোরদের গ্রন্থপাঠে উদ্বুদ্ধ করার মতো অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে পাঠাগারটি। 

সমস্যাগুলো আমাদের অধিকাংশ প্রতিবেদনেই তুলে ধরা হয়েছে। বেশির ভাগ লাইব্রেরিতে প্রয়োজনীয় বই পাওয়া যায় না। রয়েছে নতুন বইয়ের অপ্রতুলতা। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় না। পাঠাগারের পরিবেশ পাঠকবান্ধব নয়। রয়েছে জনবলসংকট। অব্যবস্থাপনায় হারিয়ে গেছে লাইব্রেরির জৌলুশ ও ঐতিহ্য। লাইব্রেরির সংস্কারকাজের ধীরগতির জন্য নতুন করে নির্মিত ভবনে পাঠাগার চালু করা যায়নি। 

একটা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার ভবনের সংস্কার তিন বছরে শেষ করার কথা থাকলেও সাত বছরেও শেষ হয়নি। এক বছর আগে নির্মিত জামালপুর জেলা গণগ্রন্থাগারের ভবন মাটিতে দেবে গেছে। লাইব্রেরির জন্য বরাদ্দ করা বাজেটও অপ্রতুল। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম এই বাজেটসংকটের কথা উল্লেখ করেছেন আমাদের প্রতিবেদকের কাছে। অনেক পাঠাগার বছরের পর বছর বন্ধ রয়েছে। লাইব্রেরিতে পাঠক যারা আসেন, তারাও আসেন চাকরির সঙ্গে সম্পর্কিত বই পড়তে অথবা চাকরির প্রস্তুতি নিতে। এই প্রবণতাও কাম্য নয়। সব মিলিয়ে জাতীয়ভাবে লাইব্রেরি এবং বই পড়ার হতাশার চিত্রই ফুটে উঠেছে আমাদের বিশেষ আয়োজনের প্রতিবেদনগুলোয়। তবে এখনকার অবস্থা যতই প্রতিকূল হোক, এই হতাশাজনক পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো জরুরি।

দেশব্যাপী পাঠাগার আন্দোলন গড়ে তোলা গেলে এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। আসলে লাইব্রেরিকে ঘিরে যত ধরনের সমস্যা আছে, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেসব সমস্যার সমাধান করে গ্রন্থপাঠের প্রতি পাঠকদের আকৃষ্ট করতে পারে। বাংলাদেশের বিভিন্ন ছোট-বড় শহর ও জনপদের যারা বই ভালোবাসেন, লেখক, সংস্কৃতিকর্মী, তাদের স্থানীয়ভাবে উদ্বুদ্ধ করা হলে পাঠাগার আন্দোলন বাস্তবায়িত করা সহজ হবে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি ও স্থানীয় প্রশাসন সম্মিলিতভাবে এই আন্দোলনটি সফল করে তুলতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেদিকে নজর দেবে বলে প্রত্যাশা করছি। রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছিলেন, ‘এসো এখানে এসো, এখানে আলোকের জন্মসংগীত গান হইতেছে’, দেশব্যাপী লাইব্রেরি আন্দোলনের সূচনা করে আমরা জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক, জ্ঞানতাত্ত্বিক ও সৃজনশীলতাকে সমৃদ্ধ করতে পারি।

গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতা যুদ্ধবিরতির মধ্যে হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানাই

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৫:১৯ পিএম
গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতা
যুদ্ধবিরতির মধ্যে হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানাই

মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে। সবাই গভীর ঘুমে। কেউ কেউ সাহরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমন সময় একের পর শুরু হয় বোমা হামলা। চারদিকে আতঙ্ক আর রক্তাক্ত মানুষের আর্তচিৎকার, ছোটাছুটি। গাজা উপত্যকায় আবার রক্ত ঝরল।

গত সোমবারের ঘটনা এটি। খবরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে ওই দিন মধ্যরাতের পর আকস্মিকভাবে শুরু হয় এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। গাজার দক্ষিণের খান ইউনিস ও রাফা, উত্তরের গাজা নগর এবং মধ্যাঞ্চলের দেইর আর-বালাসহ গাজার প্রায় সব জায়গায় ইসরায়েল কুড়িটিরও বেশি যুদ্ধবিমান ও ড্রোন দিয়ে হামলা চালায়। এক রাতেই প্রাণ হারান ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ। এদের মধ্যে ছিলেন নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা। আহত হয়েছেন সাড়ে পাঁচ শর মতো মানুষ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে পুরো পরিবার। ইসরায়েলি আক্রমণে ২৩ লাখ জনবসতিপূর্ণ গাজা এভাবেই পরিণত হয় বিপজ্জনক রণক্ষেত্রে। ইসরায়েলের প্রতিপক্ষ গাজার হামাস বলেছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে এই বর্বরতম হামলা চালিয়ে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছে। ইসরায়েল অবশ্য বলেছে তারা চুক্তি ভঙ্গ করেনি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ইসরায়েল হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।

প্রায় ১৫ মাস ধরে গাজার ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর গত ১৯ জানুয়ারি ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। এর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২ মার্চ। মূল চুক্তিতে বলা ছিল, প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চলাকালে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা হবে। যদি এর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির শর্ত নিয়ে সমঝোতা না হয়, তাহলে প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চলবে। এই যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জিম্মিবিষয়ক দূত অ্যাডাম বোয়েহলারও একটি সমঝোতা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। সেই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, হামাস ইসরায়েলি-আমেরিকান জিম্মি মুক্তি দেবে এবং চারটি লাশ ফেরত দেবে। হামাস এতে রাজি হয়েছিল। তারা ধরে নিয়েছিল এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে। কিন্তু ইসরায়েল বোয়েহলারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। নতুন করে তারা দ্বিতীয় ধাপের চুক্তি করেনি আর প্রথম ধাপের চুক্তি ভঙ্গ করে গাজায় আক্রমণ চালিয়েছে। হামলা চালানোর আগে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে ইসরায়েল অনুমতিও নিয়েছে। এই হামলার দায় তাই ওয়াশিংটনেরও।

আমরা মনে করি, ইসরায়েল যা করেছে তা জঘন্যতম অপরাধ। তারা রাতের আঁধারে ঘুমন্ত মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে। শুধু এবারই নয়, দিনের পর দিন দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী এটি করে আসছে। শুধু গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৫৭৭ জন ফিলিস্তিনি তাদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে। এদের মধ্যে ১৭ হাজার ৫০০ ছিল শিশু। এসব হত্যা নিঃসন্দেহে মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ। ইসরায়েলের এই বর্বরোচিত আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে পৃথিবীর বহু দেশ। আগেও বিশ্ববাসী ছিল এর বিরুদ্ধে সোচ্চার। 

খোদ যুক্তরাষ্ট্রে দিনের পর দিন প্রতিবাদী মিছিল ও সমাবেশ করেছে সে দেশের বিবেকবান সচেতন মানুষ। নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারসহ দেশের সাধারণ মানুষ। এবারও আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। নিন্দা জানাই ইসরায়েলের। শুধু নিন্দা নয়, বিশ্ববাসী ও জাতিসংঘকে জরুরি ভিত্তিতে এই হামলার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সেই প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে যা করণীয় তা হলো, অবিলম্বে হামলা বন্ধ করে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে হবে। তবে এ সমস্যার সবচেয়ে ভালো সমাধান হচ্ছে রাজনৈতিক সমাধান। বহু বছর ধরে সেই চেষ্টা চলছে, কিন্তু সফলতা আসেনি। এখন আবার সেই উদ্যোগ গ্রহণ করাটা সময়ের দাবি। জাতিসংঘের উদ্যোগে সেটি হতে পারে। পরাশক্তিসহ উভয় পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে জাতিসংঘ সমস্যা সমাধানের গ্রহণযোগ্য একটা উপায় বের করতে পারে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই, কোনো অবস্থাতেই গাজায় যাতে আর একবিন্দু রক্ত না ঝরে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ নিয়ন্ত্রণে চাই কার্যকর পদক্ষেপ

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৮:৩০ পিএম
উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ
নিয়ন্ত্রণে চাই কার্যকর পদক্ষেপ

উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ অনেকটাই দিশেহারা। কয়েক বছর ধরে দেশের অর্থনীতি মন্থর হয়ে আছে। অর্থনীতির এই নাজুক অবস্থায় কেউ সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছেন, কেউ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা শেয়ার লোকসানে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আড়াই বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিদ্যমান রয়েছে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ কথা স্বীকার করতেই হবে, এত সমস্যার মধ্যেও আমাদের অগ্রগতি হয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে এখন বিপুল অর্থ। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী নিঃস্ব থেকে নিঃস্ব হচ্ছে। অর্থাৎ একদিকে আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে, অন্যদিকে বৈষম্য বাড়ছে ভয়াবহভাবে। এতে সমাজে অস্থিরতা বাড়ছে। সম্প্রতি বিবিএসের পরিসংখ্যান বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এটি আশার কথা। জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে। বিবিএসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে সার্বিকভাবে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ।

স্বল্প আয় ও দরিদ্র মানুষকে স্বস্তি দিতে সরকার চাল, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু শুল্ক কমালেও দাম কমেনি বরং আরও বেড়েছে। শুল্ককরের সুবিধাও মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে চলে গেছে। খেজুর, সয়াবিন তেলসহ সব পণ্যের পর্যাপ্ত আমদানির পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এনবিআরের সাবেক সদস্যের মতে, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, শুল্ককর কমিয়ে বাজার স্থিতিশীল করা যায়নি। বরং মাঝখান থেকে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। সে জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণে তদারকিব্যবস্থা আরও জোরদার করার পরামর্শ দেন তিনি।

সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা রাখে ব্যাংকে, তারপর নিরাপত্তা ও অধিক মুনাফার আশায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে। কিন্তু সুদ বেশি হওয়ার পরও সঞ্চয়পত্র কেনা কমিয়ে দিয়েছে মানুষ। এমনকি সঞ্চয়পত্র ভেঙে ফেলার প্রবণতাও লক্ষণীয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ২৫ হাজার ৬৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভেঙেছেন গ্রাহকরা। অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে সঞ্চয়পত্র কেনার হার ২৭ শতাংশ কমেছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়া ও ভাঙার হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ব্যয় বেড়েছে। সেই হারে আয় বাড়ছে না, সে জন্য অনেকেই সঞ্চয়পত্র ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া দেশের রাজনীতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সবকিছু একটা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ রকম অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর অবস্থায় নেই। বিনিয়োগের পরিবেশও তেমনটা আশাব্যঞ্জক নয়, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহ হারাচ্ছেন দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে। এ অবস্থায় দেশে কর্মসংস্থানেও ভাটা পড়েছে, এর ফলে আয়ও বাড়ছে না।

সাবেক সচিব গোলাম রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকার বলছে, মূল্যস্ফীতি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ৭-৮ শতাংশে নেমে আসবে। কিন্তু আমি মনে করি, আগামী এক বছরের মধ্যে ওই পর্যায়ে কমার সম্ভাবনা নেই। উৎপাদনব্যবস্থায় এখনো শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি। চাঁদাবাজি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, আমাদের উচিত ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করা। যাতে কেউ ইচ্ছা করলেও দাম বাড়াতে না পারে।’

গত কয়েক বছরে দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এরই মধ্যে দেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। গত সরকারও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর ফল হিসেবে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গড় মূল্যস্ফীতি আগের তুলনায় কমেছে। দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে সরকার কিছু কিছু পণ্যের আমদানি ও সরবরাহ বাড়িয়েছে, তার পরও রোজায় সেসব পণ্য ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। যদিও এ ক্ষেত্রে শুল্ককর অব্যাহতি দেওয়ায় পুরো মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের কবজায় রয়েছে। এ অবস্থায় বাজার তদারকিব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।

নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ মানসম্পন্ন করে গড়ে তুলুন

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০২:১৫ পিএম
নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ
মানসম্পন্ন করে গড়ে তুলুন

বাংলাদেশে শিক্ষার নানা স্তরে নৈরাজ্য চলছে দীর্ঘদিন ধরে। নতুন করে এতে যুক্ত হয়েছে সাত কলেজকেন্দ্রিক সংকট। এই কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করেছেন। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার পর বিক্ষোভ-অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ে তারা রাজপথে নেমে এসেছেন। এতে পুরো ঢাকা মহানগরী যান চলাচলের দিক থেকে অচল হয়ে যায়। জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। কলেজগুলোর এই আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গত ১৬ মার্চ সাত কলেজকে নিয়ে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রস্তাব দিয়েছে।

সরকারের এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় করার যে দাবি ছিল, আপাতত তার সুরাহা হলো। তবে শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেই হবে না, যে লক্ষ্যে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে।এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের মহান নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের একটা কথা স্মরণ করছি। তিনি বলেছিলেন, প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা ও চরিত্র গঠনের সঙ্গে সঙ্গে একজন শিক্ষার্থী যাতে গভীর ও সমালোচনামূলকভাবে চিন্তা করতে শেখে, সেটাই হচ্ছে উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য। উচ্চশিক্ষা তাই শুধু জ্ঞান অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। পরিপূর্ণ বোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলে। এখন কথা হলো, নতুন যে এক বা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি উঠেছে তার প্রয়োজন কতটুকু?
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা কতটুকু তা নিয়ে গতকাল খবরের কাগজে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ৬টি; এখন সেই সংখ্যা ৫৫। এর বাইরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তো আছেই। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেছেন, উচ্চশিক্ষার প্রধান সমস্যা হচ্ছে শিক্ষক সমস্যা। 

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো শিক্ষক পাওয়া যায় না। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রথমেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত মানসম্পন্ন শিক্ষার ওপর, নতুন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ওপর নয়। বৈশ্বিক মানদণ্ডের দিক থেকেও দেখা যাচ্ছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান তলানিতে। কিউএস র‌্যাঙ্কিং ও টাইমস হায়ার এডুকেশন র‌্যাঙ্কিং-এ ৫০০-এর মধ্যে, এমনকি এশিয়ার ১০০-এর মধ্যেও নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার বৈশ্বিক নানা সূচকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। ফলে মান বৃদ্ধির ওপর শিক্ষাবিদরা গত প্রায় দুই দশক ধরে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলে আসছেন। তাদের কথায়, সংখ্যা বৃদ্ধি যেটুকু হওয়া প্রয়োজন সেটুকু হয়ে গেছে। বরং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বেড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। কিন্তু মান বজায় রাখা যায়নি, ক্রমশ তা নিম্নমুখী হয়েছে। মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। 

এ জন্য প্রথমেই যা করা দরকার তা হচ্ছে, বর্তমানে যেসব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেই সব প্রতিষ্ঠানের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো। মানসম্পন্ন ডিগ্রিধারী দক্ষ শিক্ষকের সংকট দূর করতে হবে। অবহেলিত গবেষণার খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করাও জরুরি। এ ছাড়া শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। 
বলা হবে বিশ্ববিদ্যালয়, অথচ সেই প্রতিষ্ঠানে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা থাকবে; তারও কোনো একাডেমিক যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে শুধু গ্র্যাজুয়েশন, মাস্টার্স ও উচ্চতর শিক্ষার ব্যবস্থা থাকাই বাঞ্ছনীয়। মিশ্র ব্যবস্থায় একবার একজন শিক্ষক শিক্ষার একেবারে উঁচু স্তরে পড়াবেন, আবার তিনি নেমে আসবেন অনেক নিচু স্তরে; এভাবে শিক্ষাদান করাটা বিজ্ঞানসম্মত নয় বলে শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।

 আমরাও মনে করি, ইতোমধ্যে যেসব সরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স চালু রয়েছে, সেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উল্লিখিত সংকটগুলো আগে দূর করা প্রয়োজন। নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে যদি সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হয়, তাহলে তা দোষের নয়। সাত কলেজে অনেক শিক্ষার্থী। তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একটি ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হোক, যাতে আগামীতে শিক্ষার্থীদের আর মাঠে নামতে না হয়। সরকারের এই উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।  

 

সংলাপে জাতিসংঘের সহায়তার প্রস্তাব  রাজনৈতিক দলের মতামতকে গুরুত্ব দিন

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০২:৫৮ পিএম
সংলাপে জাতিসংঘের সহায়তার প্রস্তাব 
রাজনৈতিক দলের মতামতকে গুরুত্ব দিন

অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা এবং সংস্কার কমিশনের প্রধানরা। বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের আগে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান তুলে ধরেন। অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিব এই বৈঠকের মাধ্যমে অবহিত হয়েছেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ প্রত্যাশা করে সংস্কার বাস্তবায়নে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। কাজটি দেশের রাজনৈতিক দল ও সরকারকেই করতে হবে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিব ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। 

বৈঠকে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রধানরা তাদের নিজ নিজ সংস্কার প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্ত সার তুলে ধরেন। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল লিখিত বক্তব্য জমা দেয়। অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে ১৫টি কমিশন গঠন করেছে। ছয়টি কমিশনের দেওয়া সংস্কারের সুপারিশ নিয়ে সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সব দল সংস্কারকে সমর্থন করলেও পদ্ধতি এবং সময়সীমা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংস্কার দ্রুত শেষ করে নির্বাচন করার কথা জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেছেন। অন্যদিকে মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি এই সরকারের সময়ে তৈরি করতে হবে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গণপরিষদের মাধ্যমে সংস্কার করতে হবে অন্যথায় সংবিধান সংস্কার টেকসই হবে না। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, তারা টেকসই গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। 

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, সংস্কার প্রয়োজনীয়। জাতিসংঘ এতে পাশে থাকবে। সংস্কার কীভাবে, কতটুকু হবে, তা জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে একমত হয়ে ঠিক করতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশ সংস্কার ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ পর্বে রয়েছে। দেশটির এ সন্ধিক্ষণে শান্তি সংলাপ ও ঐকমত্য সহায়তার জন্য জাতিসংঘ প্রস্তুত রয়েছে; টেকসই ও ন্যায়সংগত ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কাজ করবে। দেশের মানুষ তাদের অবিচল অংশীদার হিসেবে জাতিসংঘের ওপর নির্ভর করতে পারে। জাতিসংঘ মহাসচিব একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের প্রকৃত রূপান্তরের জন্য সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রশংসা করেন। 

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি জাতিসংঘের পূর্ণ প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন বলে এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর জনমনে এক ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। এই প্রত্যাশার আলোকে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের কাজ শুরু করে। দেশের ভেঙে পড়া সব গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে গতিশীল করার অভিপ্রায়ে সংস্কার কমিশনও গঠন করেছে। 

জাতিসংঘ মহাসচিব রাজনৈতিক দল ও সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। এ দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ধারা অব্যাহত রাখতে জাতীয় সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দল ও সরকারকে এই সংলাপ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। বৈষম্যহীন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে একটি সফল সংলাপের মাধ্যমে উদার গণতান্ত্রিক পথে হাঁটবে দেশ, এটিই প্রত্যাশা।

 

সংস্কারে সমর্থন জাতিসংঘের স্থিতিশীলতার স্বার্থে জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩৯ পিএম
আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪১ পিএম
স্থিতিশীলতার স্বার্থে জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সে অনুযায়ী সংস্কার কমিশনও গঠন করা হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফরে এসে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া এই সংস্কার কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার কার্যালয়ে তিনি এক বৈঠকে মিলিত হন। প্রধান উপদেষ্টা গুতেরেসকে জানান, রাজনৈতিক দলগুলো যদি সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরেই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি এও জানান, রাজনৈতিক দলগুলো যদি বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ গ্রহণ করে, সে ক্ষেত্রে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে। যদিও দেশের বর্তমান অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। নারী, শিশু ধর্ষণ ও সামাজিক অপরাধসমূহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো ভেতরে ভেতরে গুছিয়ে উঠতে পারেনি। অপরাধীদের হাতে থানা লুটের অস্ত্র এখনো রয়ে গেছে। 

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দল পুনর্গঠন-প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছে রাজনৈতিক দলগুলো। ইতোমধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। দল গোছানো ও নিবন্ধনের শর্ত পূরণে মনোযোগ দিয়েছেন এর নীতিনির্ধারকরা। সরকারের সংস্কার ইস্যুতে জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন থাকলেও এ ক্ষেত্রে দেশের ভেতরে রাজনৈতিক দলগুলোর পূর্ণ সমর্থন থাকা খুবই প্রয়োজন। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। সংস্কার ভাবনায় রাজনৈতিক দলগুলো কী চায়, সেটিও রাজনৈতিক দলগুলোকে পরিষ্কার করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতের ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী। এ জন্য স্থিতিশীলতার স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় ঐকমত্য দরকার। 

প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেসকে দেশের চলমান সংস্কার-প্রক্রিয়া নিয়ে অবহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রায় ১০টি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত জমা দিয়েছে। দলগুলো কমিশনের সুপারিশগুলোর সঙ্গে একমত হলে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে; যা দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পাশাপাশি রাজনৈতিক, বিচারিক, নির্বাচনসংক্রান্ত, প্রশাসনিক, দুর্নীতি দমন এবং পুলিশ সংস্কারের একটি রূপরেখা হবে। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব ড. ইউনূসকে বলেন, 'আমি সংস্কার কর্মসূচির প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করতে চাই।' তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের এই সংস্কার-প্রক্রিয়া একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের একটি বাস্তব রূপান্তর নিশ্চিত করবে। যদিও সংস্কার-প্রক্রিয়াটি জটিল হতে পারে। অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার পদক্ষেপে পাশে থাকবে জাতিসংঘ।

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের আগমন সংকট নিরসনে বড় ভূমিকা রাখবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও নির্বাচন-প্রক্রিয়া নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তিনি স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি পূর্ণ সমর্থনও ব্যক্ত করেছেন। এ ছাড়া তিনি রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। যা খুবই ইতিবাচক। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে।