ডিএনএ টেস্টের যে রিপোর্টটা আফনানের ইমেইলে এসেছে, তা যে প্রত্যাশিত নয়, সে কথা বলবার অপেক্ষা রাখে না। রিপোর্টটা দেখার সঙ্গে সঙ্গে আফনানের মনে হলো, সে ডালপালা ছেঁটে দেওয়া শ্রীহীন এক নিঃসঙ্গ গাছের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
আমেরিকায় স্থায়ীভাবে থাকার জন্য আমেরিকা প্রবাসী বড় ভাইয়ের আবেদনে সাড়া দিয়ে যা যা করণীয় সবই করেছে আফনান।
পুরো প্রক্রিয়াটাই তার কাছে বিরক্তিকর রকমের বাড়াবাড়ি ঠেকেছে। এই কাগজ জমা দাও, ওই কাগজ জমা দাও, এটা হয়নি, এটা এভাবে দিলে হবে না, কত রকমের ফ্যাকড়া মেনে নিতে হয়েছে তাকে।
আফনানের বড়ভাই নিউইয়র্কে থাকেন। তিনি গ্রিনকার্ড পাওয়ার পর প্রথমে তার মা-বাবার জন্য আবেদন করলেন। মা-বাবার কাগজপত্র খুব সহজেই হয়ে গেল। তারা অতি আনন্দে ছেলের কাছে চলে গেলেন।
আফনানের বড়ভাই এরপর আবেদন করলেন আফনান ও তার স্ত্রী-সন্তানের জন্য।
আবেদনের কয়েক বছর পর তাদের ডাক পড়ল অ্যাম্বাসিতে। ইন্টারভিউ নিয়ে বলে দিল, ডিএনএ টেস্ট করতে হবে।
আফনান বিরক্ত হয়েছিল। ব্যাপারটা অপমানজনক লাগে। সে তো জানে অহনা তার মেয়ে। আইরিন জানে। ব্যস, এটাই কি যথেষ্ট নয়? ওদের কাছে আবার ডিএনএ রিপোর্ট দিয়ে প্রমাণ করতে হবে কেন?
ভেতরে ভেতরে মহাবিরক্তি নিয়ে ডিএনএ টেস্ট করিয়েছিল আফনান। সেই টেস্টের রিপোর্টটাই আফনানের শরতের নির্মল আকাশটাকে আজ কালবৈশাখীপূর্ব জমাট মেঘে ঢেকে দেয়।
আফনান রিপোর্টটা ফরওয়ার্ড করে আইরিনের কাছে।
রিপোর্ট দেখার পর আইরিনের মগজটা যেন ফ্রিজ হয়ে জমে গেছে। সে কিছু চিন্তা করতে পারছে না। ঝিম মেরে কিছুক্ষণ বসে থাকে।
২.
বিয়ের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও সন্তানের মুখ দেখতে পারেনি আইরিন-আফনান। এমন না যে, তারা সন্তান নিতে চায়নি। এমন না যে, তারা চেষ্টা করেনি। এমনকি চিকিৎসকের পরামর্শও নিয়েছিল।
সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডাক্তার জানিয়ে ছিলেন, কারও কোনো সমস্যা নেই। ধৈর্য ধরে চেষ্টা করতে হবে।
কিছু ওষুধ প্রেসক্রাইব করে চিকিৎসক এও জানিয়েছিলেন, যেসব দম্পতি বন্ধাত্ব সমস্যায় আছেন, তাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ সমস্যা নারীর কারণে। এক তৃতীয়াংশ সমস্যা পুরুষের কারণে। আর বাকি এক তৃতীয়াংশের বেলায় সমস্যাটা চিহ্নিত করা যায় না। দেখা যায় স্বামী-স্ত্রী কারোই কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তারা সন্তান নিতে পারছেন না। আপনারা এই তৃতীয় গ্রুপের। তাই আপনাদের বেলায় একেবারে আশা নেই এমন নয়। চেষ্টা করলে সফল হতেও পারেন। আর শেষ ভরসা হিসেবে টেস্ট টিউব বেবি মানে আইভিএফ-এর ব্যবস্থা তো রইলই।
হ্যাঁ, সাফল্য তারা পেয়েছিল তো। এই যে অহনার জন্ম হলো। আইরিনের কোলে অহনা তো নয়, স্রষ্টা যেন গোটা চাঁদটা তুলে দিয়েছেন।
একটা ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট সেই চাঁদের গায়ে আজ কলঙ্ক ছিটিয়ে দিল!
অহনার জন্মের পর থেকেই বাইরের শত আনন্দের মাঝেও আইরিনের গলায় যেন একটা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কাঁটা বিদ্ধ হয়েছিল। এমনিতে ব্যথা করে না। কিন্তু নাড়া পড়লে একটা চিনচিনে ব্যথা হয়। আইরিন একটা অস্বস্তিকর ব্যথা অনুভব করত রকির কথা মনে পড়লেই। অহনার দিকে তাকালে কখনো কখনো মনে হতো তার মুখের আদলে কোথায় যেন একটু রকির মুখটা গেঁথে আছে। হয়তো সেটা ভুল। হতে পারে এগুলো আইরিনের আজগুবি কল্পনা। কিন্তু মাঝে মাঝে এ কল্পনাটা ভাবতে মন্দ লাগত না আইরিনের। আজ সে ভাবনায় গলায় বিঁধে থাকা মিহি কাঁটাটা আবার নড়েচড়ে ওঠে। আইরিনের ভেতরে গেঁথে থাকা গোপন কাঁটাটা প্রকাশিত হয়ে পড়ার আশঙ্কায় মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায় হঠাৎ দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে ওঠা মানুষের মতো।
অফিসিয়াল কাজে সাত দিনের জন্য বরিশাল যেতে হয়েছিল আফনানকে। তার ঢাকায় ফেরার দুই দিন আগে হঠাৎ আফনান চাইল, আইরিন যেন বরিশাল যায়। দুই দিন পরেই ভরা পূর্ণিমা। এই পূর্ণিমায় আইরিন বরিশাল গেলে সেখান থেকে ফেরার পথে আফনান ও আইরিন একসঙ্গে ঢাকায় ফিরবে। পূর্ণিমার মধ্যে লঞ্চ জার্নির খুব শখ ছিল আইরিনের। তার সেই শখটা পূরণ করতে চায় আফনান। এই লোকটা বিয়ের পর থেকে আইরিনকে সুখী করার জন্য যা কিছু সম্ভব সব করে যায় গভীর ভালোবাসা নিয়ে।
আইরিন কেবিনে উঠেই বিস্মিত হয়। একটা লঞ্চের কেবিন এতটা সুন্দর আর পরিপাটি হতে পারে, তা ছিল তার কল্পনারও বাইরে। মনে হয় যেন কোনো ফাইভ স্টার হোটেলের রুমে বসে আছে।
আইরিন কেবিনের পাশে লঞ্চের বারান্দায় রাখা চেয়ারে গিয়ে বসে। বাইরে মন উতলা করা জ্যোৎস্না। পূর্ণিমার চাঁদটা নদীর পানিতে পড়ে কী যে এক মোহনীয় অবস্থা তৈরি করেছে তা পুরোপুরি উপলব্ধি করা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। লঞ্চের গতি পানিতে যে ঢেউয়ের সৃষ্টি করে তার দিকে তাকিয়ে আইরিনের মনে হয়, ছোট ছোট ঢেউগুলো জোছনার গায়ে বিলি কেটে যাচ্ছে। নদীর স্বচ্ছ পানি চাঁদের আলোয় চিকচিক করে ওঠে। আইরিনের মন খারাপ হয়। এত সুন্দর একা একা বসে দেখা যায় না। কারও সঙ্গে শেয়ার করতে পারলে ভালো হতো। আইরিন মোবাইলটা হাতে নেয় আফনানকে কল করবে বলে। মোবাইলের আলো যখন তার মুখের ওপরে পড়ে, তখনই অদূরে বসে থাকা একজনের কণ্ঠ ভেসে আসে, ‘সরি, আপনি আইরিন তো?’
এই গভীর রাতে মোহনীয় জোসনা আর নদীর জলের খেলা দেখতে দেখতে বিমোহিত আইরিনের কর্ণকুহরে হঠাৎ অপরিচিত কণ্ঠে তার নাম শুনে এক অদ্ভুত শিহরণ অনুভব করে। ঘুরে তাকিয়ে যাকে দেখে, তা অবিশ্বাস্য। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রকি। স্বপ্নের মতো মনে হয়। আইরিন রকির দিকে তাকিয়ে বলে, ‘জি, আমি আইরিন। কিন্তু আপনি করে বলছ যে!’
‘না, কনফার্ম ছিলাম না তো। যদি আইরিন না হয়ে অন্য কেউ হতো, তুমি করে বলাটা অভদ্রতা হতো না!’
‘কোথায় যাচ্ছ?’ আইরিনকে জিজ্ঞেস করে রকি।
‘আমার হাজব্যান্ড অফিসের কাজে বিশেষ প্রয়োজনে এক সপ্তাহের জন্য বরিশাল গেছে। এই জোছনায় দুজনের লঞ্চভ্রমণের লক্ষ্য নিয়ে আমার বরিশাল যাত্রা। কালকে রাতেই দুজন একসঙ্গে ফিরব।’
‘যাক, তাহলে তোমার অনেক দিনের পুরনো একটা ইচ্ছে পূর্ণ হতে যাচ্ছে।’
আইরিনের পুরনো কথাগুলো ভেতরে হঠাৎ নড়েচড়ে উঠল।
মনে পড়ে, অনেকদিন আগের সেই কথা। আইরিন তার একটা স্বপ্নময় ইচ্ছের কথা জানিয়েছিল রকিকে। কোনো এক ভরা পূর্ণিমার রাতে দুজন মিলে লঞ্চ ভ্রমণে যেতে চেয়েছিল। দুজনের একটা স্মরণীয় স্মৃতিময় রাত বানাতে চেয়েছিল।
স্রষ্টা হয়তো আইরিনের সে প্রার্থনা মঞ্জুর করে ফেলেছিলেন সেদিনই। শুধু সময়টা পিছিয়ে দিয়েছিলেন অনেকখানি। নস্টালজিয়ায় ডুবে যায় আইরিন। কত স্মৃতি! সেই সব ভালোবাসাবাসির মোহময় দিনগুলো সামনে এসে দাঁড়ায়।
রকির সঙ্গে বিয়ে না হওয়াটা ছিল এক অনিবার্য বাস্তবতা। সে বাস্তবতা মেনে না নিয়ে উপায় ছিল না আইরিনের। রকিও মেনে নিয়েছিল আইরিনের অলঙ্ঘনীয় সীমাবদ্ধতা।
আইরিন ও রকি দুজনের কেউই অনেকক্ষণ কোনো কথা বলে না। দুজন দুজনকে দেখে। হয়তো দেখেও না। হয়তো চাঁদ দেখে। লঞ্চের গতি থেকে সৃষ্ট ঢেউয়ের সঙ্গে জোছনার রহস্যময় খেলা দেখে। হয়তো কিছুই দেখে না। চোখের সামনে পড়ে থাকা ঐশ্বর্য কখনো কখনো গৌণ হয়ে যায়। একটু দূরে, একটু পেছনে ফেলে আসা দিন চলে আসে চোখের সামনে। আইরিন ও রকিকে হয়তো এই জল ও জোছনার রুপালি গল্পের চেয়েও বেশি টানে অতীতের পাগলা হাওয়ার মাতাল দিনগুলো।
নীরবতা ভেঙে আইরিন হঠাৎ জিজ্ঞেস করে, ‘বিয়ে করেছ?’
‘নাহ।’ রকি তার দীর্ঘশ্বাস লুকাতে পারে না।
‘৬-৭ বছর তো হয়ে গেল। কেন করছ না?’
‘৬-৭ বছর নয়, ৬ বছর ৮ মাস ১৬ দিন।’
‘এই সব ডেড ইস্যুর হিসাব কষে আর কী হবে! বিয়ে করে ফেল প্লিজ।’
‘শুধু শরীর পাওয়ার জন্য কি বিয়ে করা যায়? একটা মেয়ের সঙ্গে এক বিছানায় শোব, শরীর শেয়ার করব, কিন্তু তাকে ভালোবাসতে পারব না, এটা কি অন্যায় নয়?’
‘কেন পারবে না! একটা অতীত নিয়ে সারা জীবন কেন পড়ে থাকবে! কেন নিজেকে বঞ্চিত করবে?’
‘আমি যে একজনকে ভালোবেসেছিলাম। এক জীবনে কজনকে ভালোবাসা যায় বল!’
রকির কথা শুনে আইরিনের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়। সে তো আফনানকে ভালোবাসতে পারছে। সে কি তবে ভালোবাসেনি রকিকে! সেটা কি ভালোবাসা ছিল না!
চাঁদের হাসি, ঢেউয়ে ঢেউয়ে কোলাকুলি, জল ও জোছনার রুপালি আলিঙ্গন দেখতে দেখতে, অর্ধযুগ ধরে জমে থাকা ব্যাকুল হৃদয়ের কথা বলতে বলতে, কখন যে রাত এক ভয়ংকর গভীরতার দিকে ঢলে পড়ে সে খেয়াল থাকে না দুজনের কারোই। কখন কে কার ডাকে সাড়া দিয়ে দুজনে প্রবেশ করে এক কেবিনে, সে কথাও বিবেচ্য থাকে না। নাকি দুজনেই ডেকেছিল দুজনকে সে গবেষণাও এখানে অবান্তর হয়ে ওঠে।
কেবিনে রাতের অবশিষ্ট সময়ের জন্য অপ্রত্যাশিতভাবেই আইরিন রকির হয়ে যায়। তার ভুলেও মনে পড়ে না তার জীবনে আফনান নামে কেউ একজন আছে।
সেই রাত নিয়ে আইরিনের কিছুটা গ্লানি যে হয়নি তা নয়। কিন্তু রকির ভালোবাসার কথা ভেবে এক ধরনের আনন্দও অনুভব করে সে। রকি তাকে এখনো এতটা ভালোবাসে!
গ্লানি ও আনন্দের এক অদ্ভুত অনুভূতিতে একাকার হয়ে ভোরবেলা রকির কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিল আইরিন।
পরের রাতে বরিশাল থেকে ঢাকা ফেরার পথে লঞ্চের সেই একই ভিআইপি কেবিনে অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে আফনানের সঙ্গেও একই খাটে রাত কাটে আইরিনের। তার শরীরে আগের রাতে যে সংগীতের সুর উঠেছিল, তা যেন পরের দিনও একই তালে বাজতে থাকে। আইরিনের মাথাটা বুকে রেখে তার মাথায় বিলি কাটতে কাটতে আফনান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ঘোষণা করে, ‘আমার মন বলছে, এবার তুমি মা হবে।’
কিছুদিনের মধ্যেই আইরিন বুঝতে পেরেছিল, আফনানের কথা সত্য হতে চলেছে। তার ভেতরে একটা কিছু পাল্টে যাচ্ছে। অর্ধযুগ ধরে যে ইচ্ছের পূর্ণতা দেওয়ার জন্য চেষ্টায় প্রার্থনায় চিকিৎসায় ত্রুটি করেনি আইরিন, এবার যেন তা সত্যি হতে চলেছে। কিন্তু সেই আনন্দের মাঝেও আইরিনের ভেতরে একটা মিহি কাঁটা ঢুকে চিনচিনে ব্যথা দিচ্ছে বলে মনে হয়। আইরিন প্রাণপণে ভাবতে চায়, তার উদরে যে বেড়ে উঠছে, সে অবশ্যই আফনানের রক্তের ধারাবাহিকতা। এর বাইরে আর কোনো সত্য থাকতে পারে না।
৩.
আফনান বাসায় ফিরে মেয়েটাকে কাছে টেনে নেয়। তার গায়ের গন্ধ শোঁকে। অহনার গায়ের মিষ্টি গন্ধে নিজের রক্তের গন্ধ পায়।
দশ বছরের অহনাকে একদিনেই যেন পুরোটা পুনর্পাঠ করে আফনান। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ওল্টাতে থাকে। সিজার করে বের করে আনার পর প্রথম দর্শন থেকে আজ অবধি যত কথা লেখা হয়েছে অহনার পরতে পরতে, তার পুরোটা পড়ে নেয় আফনান। না, সেখানে সে অন্য কারও ছায়া দেখে না।
তার মনে হয়, ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টটা ভুল দিয়েছে। মনে হয় বললে ভুল হবে, সে বিশ্বাস করতে চায় এটা।
আজ অহনাকে আগের চেয়ে আরও বেশি আদর আদর লাগে আফনানের। কিন্তু আইরিনের চোখে সরাসরি তাকাতে পারে না। হয়তো তাকাতে চায় না। আফনান চায় না আইরিন তার চোখে কোনো সন্দেহের ছায়া দেখুক। ভালোবাসার মানুষকে সন্দেহের চোখে দেখতে নেই।
অহনা বাবা-মার সঙ্গেই শোয়। তবু তার জন্য একটি আলাদা রুম সাজিয়েছে আফনান। অহনার পছন্দের কার্টুনের ক্যারেক্টার নিয়ে আর্ট করিয়ে, তার পছন্দের কালার ও লাইটিং দিয়ে সাজানো হয়েছে অহনার রুমটি। এই রুমটাকে অহনা বলে ড্রিম কর্নার।
ড্রিম কর্নারে বসে যখন বাপ-বেটির গল্প চলছিল, মায়ায় মাখামাখি সময় কাটাচ্ছিল, তখনই আফনানের মোবাইলে একটা ইমেইল আসার অ্যালার্ট বেজে ওঠে। মেইলটা ওপেন করে দেখে ডিএনএ ল্যাব থেকে আসা নতুন মেইল, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। গতকাল আপনার মেইলে আমরা যে রিপোর্টটি পাঠিয়েছি, সেটা আপনার নয়। আমরা আরও দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী এই কারণে যে, আপনার টেস্ট স্যাম্পলটা ল্যাবে এক্সিডেন্টলি নষ্ট হয়ে গেছে। আপনাদের আবার স্যাম্পল দিতে হবে।’
আফনান পাগলের মতো ছুটতে থাকে আইরিনের কাছে। দশ বছরের অহনাও বাবাকে অনুসরণ করতে থাকে। আফনানের কাছে খবরটা শুনে আইরিনের বুকে গতকাল থেকে চেপে বসা পাথরটাও চোখের জল হয়ে গড়িয়ে পড়ে। তার গলায় বিঁধে থাকা সেই মিহি কাঁটাটার অস্তিত্বটাও আর টের পায় না।
আফনানের দিকে না তাকিয়েই আইরিন কেমন যেন দ্বিধান্বিত গলায় জিজ্ঞেস করে, স্যাম্পল দিতে কবে যাব আমরা?
আফনান বলল, ‘আমরা আর স্যাম্পল দিতে যাব না। আমার অহনাকে নিয়ে আমি এই দুঃখী বাংলায়ই থেকে যাব।’
আইরিন তার গলা থেকে সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে শুধু বলে, ‘সেটাই ভালো।’