ভারতে শুক্রবার লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট হয়েছে। ১২ রাজ্য ও ১ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ৮৮টি আসনে ভোট হয়। স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে ওই আয়োজন।
ভোট হওয়া অঞ্চলগুলো ছিল কেরালা, কর্ণাটক, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মধ্য প্রদেশ, আসাম, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, জম্মু ও কাশ্মীর, মণিপুর এবং ত্রিপুরা।
লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় মোট ৮৯টি আসনে ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মধ্য প্রদেশের আসন বেতুলে বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) এক প্রার্থী মারা যাওয়ায় সেখানে ভোট স্থগিত করে ভারতের নির্বাচন কমিশন। ওই আসনে আগামী ৭ মে তৃতীয় দফা ভোটের সময় ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
দ্বিতীয় দফায় বিজেপি ও বিরোধীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন ছিল কর্ণাটক ও কেরালা। এবারের নির্বাচনে বিজেপির ৪০০ আসন পূরণের স্বপ্নও জড়িত এর সঙ্গে।
প্রথম দফার মতো দ্বিতীয় দফাতেও গরমের মধ্যেই ভোটে অংশ নিতে দেখা গেছে ভোটারদের। দেশটির আবহাওয়া বিভাগ আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিল, বেঙ্গালুরুতে শুক্রবার তাপমাত্রার পারদ গিয়ে ঠেকবে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে, মাথুরা উত্তপ্ত হয়ে উঠবে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার জন্য দাবদাহ সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।
শুক্রবার রাজস্থানের বার্মারে তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, উত্তরপ্রদেশের বৃন্দাবনে তাপমাত্রার পারদ চড়েছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কেরালার তিরুবনন্তপুরমে তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দ্বিতীয় দফায় হেভিওয়েট প্রার্থীদের আসনেও ভোট হয়েছে। এসব প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, লোকসভার স্পিকার ওম বিরলা, বলিউড তারকা হেমা মালিনী, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ শশী থারুর প্রমুখ।
এ দফায় মোট প্রার্থী ১ হাজার ২০২ জন। ভোট গ্রহণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮০৬টি কেন্দ্রে। ভারতের স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল প্রায় ৬১ শতাংশ।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে এবার লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাত দফায়। প্রায় ১০০ কোটি মানুষ অংশ নিচ্ছে ভোটে। ১ জুন লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফার ভোট অনুষ্ঠিত হবে। পরে ৪ জুন প্রকাশিত হবে ভোটের ফলাফল।
বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ
দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তিন আসনে ভোটাভুটি হয়েছে। আসনগুলো হলো দার্জিলিং, রায়গঞ্জ ও বালুরঘাট।
এর মধ্যে শিলিগুড়ির টিকিয়াপাড়া এলাকায় কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে তৃণমূল কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন দার্জিলিংয়ের বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তা। বিজেপি প্রার্থীকে দেখে বুথের সামনেই ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেন পদ্মশিবিরের নেতা-কর্মীরা।
এর পরপরই রাজুর বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তৃণমূল কর্মীরা। তারা বলেন, ‘আগে মেয়র গৌতম দেবও এই বুথে ঘুরে গেছেন। আমরা কোনো স্লোগান দিইনি। কিন্তু উনি (রাজু) কেন ভোটের পরিবেশ নষ্ট করছেন।’
গঙ্গারামপুরে গণ্ডগোল
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর বিধানসভার ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির পোলিং এজেন্টকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় বিজেপির সুকান্ত মজুমদার সেই এলাকায় গেলে ‘গো ব্যাক’ স্লোগানের মুখে পড়েন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও দলটি বলছে, শান্তিপূর্ণ এলাকায় এসে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন সুকান্ত মজুমদার।
অন্যদিকে গঙ্গারামপুরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাদিরহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রে পুলিশ অসুস্থ ব্যক্তিদের ভোট দিতে ‘সাহায্য করছে’- এমন অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন বলে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষককে জানিয়েছেন সুকান্ত।
এ ছাড়া বালুরঘাটের ২২ নম্বর ওয়ার্ডে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে বিজেপির এক নারী কর্মী লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই কর্মী দাবি করেন, সুকান্ত মজুমদারকে তৃণমূল কীভাবে হেনস্তা করছে, তা তুলে ধরতেই তার ভিডিও করা। অভিযোগ উঠেছে, ওই ভিডিও করার সময় তৃণমূলের আরেক নারী কর্মী ‘তুই কি রিপোর্টার’ বলে চড় দেন ওই বিজেপি কর্মীকে।
ইভিএম বিভ্রাট
এদিকে ভিভিপিএটি যন্ত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘ সময় ভোট-প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাট লোকসভার অন্তর্গত গঙ্গারামপুর বিধানসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ৬৮ নম্বর বুথে। সে সময় রোদে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ভোটারদের। তারা অভিযোগ করেন, ১ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ভোট-প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।
দার্জিলিংয়ের একাধিক স্থানেও ইভিএম বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে। ভারতের গণমাধ্যমের খবর বলছে, দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ফাঁসিদেওয়া, মাটিগাড়া-নকশালবাড়িসহ বেশ কিছু এলাকায় ইভিএমে প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্য দেরিতে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। সূত্র: এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস, আনন্দবাজার পত্রিকা