
কৈশোরের সুন্দর অনুভূতিগুলোর মধ্যে অন্যতম নতুন কোনো বই পড়ে রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠা। বইয়ের পাতায় কিশোরের চোখের সামনে ভেসে ওঠে ভিন্ন কোনো জাতি, সংস্কৃতি, ইতিহাসের জগৎ। যেন পড়তে পড়তেই দেখে ফেলা যায় পৃথিবীর অপর প্রান্তের চিত্র। আবার বই পড়তে পড়তে খুলে যায় কিশোর মনের ভাবনা, সৃজনশীলতার জগৎ। কৈশোরে না পড়লেই নয় এমন কিছু বই নিয়ে আজকের লেখা।
‘দ্য অ্যালকেমিস্ট’
ব্রাজিলিয়ান লেখক পাওলো কোয়েলহোর বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য অ্যালকেমিস্ট।’ উপন্যাসটি ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হওয়ার পরপরই সব বয়সী পাঠকের কাছেই সাড়া ফেলে। স্পেনের এক তরুণ মেষপালক সান্তিয়াগোকে নিয়ে এই বইয়ের গল্প। যার স্বপ্ন মিসরের পিরামিডের গোপন ঐশ্বর্য খুঁজে দেখা। বইটি কিশোর-তরুণ পাঠকদের জীবনে উদ্দেশ্য ও স্বপ্নের পেছনে ছুটে চলার গল্প বলে।
‘দ্য ডায়েরি অব আনা ফ্রাঙ্ক’
আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি মূলত জার্মান বংশোদ্ভূত এক ইহুদি মেয়ের গল্প। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী কিশোরী আনার দিনলিপির লেখায় উঠে এসেছিল যুদ্ধের বর্বরতা, ইহুদিদের ওপর হিটলারের নাৎসি আক্রমণ, পৃথিবীর মানুষের শঙ্কা, মানবেতর জীবনযাপনের বর্ণনা। এই দিনলিপি প্রকাশিত হলে তা পড়ে কেঁদেছিল সারা বিশ্ব। বইটি জানান দেয় পৃথিবীর সব মানুষেরই আছে শান্তিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকার অধিকার। কিশোরদের ভাষায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে বুঝতে ও জানতে দিনলিপিটি এক শক্তিশালী মাধ্যম।
‘দ্য গার্ল হু ড্র্যাংক দ্য মুন’
কৈশোরে কল্পনার জগতে বিচরণ করতে কে না ভালোবাসে। আর যারা ফ্যান্টাসিধর্মী বই পড়তে ভালোবাসে তাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে কেলি বার্নহিলের ‘দ্য গার্ল হু ড্র্যাংক দ্য মুন’। গল্পের প্রধান চরিত্র লুনা এক সাধারণ কিশোরী। তার বেড়ে ওঠা এক দয়ালু জাদুকরী জেনের কাছে। জেন লুনাকে চাঁদের আলোর পরশে বড় করে তুলে প্রেম ও ত্যাগের শক্তি দিয়ে। কল্পনামিশ্রিত এই গল্প শেখায় অসাধারণত্ব ও ভালোবাসার গল্প।
‘অ্যাঙ্গার ইজ অ্যা গিফট’
মার্ক অসিরোর লেখা অ্যাঙ্গার ইজ অ্যা গিফট কিশোর-তরুণদের জন্য এক শক্তিশালী উপন্যাস। গল্পের প্রধান চরিত্র মস জেফ্রিজ এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ। মস শৈশবে নিজ চোখে বাবাকে অন্যায়ভাবে পুলিশের হাতে নিহত হতে দেখে। ফলে শৈশবে মস বেড়ে উঠে এক ভয়ংকর ট্রমার মধ্য দিয়ে। বড় হতে প্রতিনিয়তই নিজের অস্তিত্ব, বিশ্বাসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয় নিজের সঙ্গে। সময়ের পরিক্রমায় এই ট্রমাই ইতিবাচক রাগে পরিণত হয়। সমাজে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিরোধের অস্ত্র হয়ে ওঠে এই রাগ।
‘এমিলি অব ডিপ ভ্যালি’
মড হার্ট লাভলেসের লেখা এমিলি অব ডিপ ভ্যালি এমিলি নামের একটি সদ্য তরুণীর গল্প। আর দশজন তরুণীর মতো মুক্ত, স্বাধীন জীবন নয় এমিলির। নিঃসঙ্গ জীবনে বৃদ্ধ দাদার দেখাশোনার একমাত্র দায়িত্ব তার। দায়িত্ব পালনে স্কুল, বন্ধুবান্ধব ছেড়ে নিজেকে বন্দি করতে হয় চার দেয়ালের ভেতরে। তবে এই দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়েই এমিলি একসময় খুঁজে পায় জীবনের এক ভিন্ন উদ্দেশ্য, শিক্ষা ও বন্ধুত্ব। অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে থেকেও কীভাবে নিজেকে উন্নত ও আনন্দদায়ক করা যায় সেই বার্তা উঠে এসেছে এই গল্পে।
‘লর্ড অব দ্য ফাইলস’
ব্রিটিশ লেখক উইলিয়াম গোল্ডিংয়ের লেখা লর্ড অব দ্য ফাইলস থ্রিলার উপন্যাস। বিমান দুর্ঘটনায় জনমানবহীন দ্বীপে একদল কিশোরের আটকে পড়ার গল্প নিয়ে এই উপন্যাস। প্রতিকূল পরিবেশে কিশোরদের টিকে থাকার লড়াই, নেতৃত্বের গুণাবলি গড়ে ওঠা, সভ্যতার টানাপোড়েন ও নৈতিকতার এক অসাধারণ গল্প বলে উপন্যাসটি।