১০ শয্যা নিয়ে ১৯৮০ সালের শেষের দিকে যাত্রা শুরু করেছিল রাঙামাটির কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। লক্ষাধিক মানুষের বিপরীতে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা সীমাবদ্ধতা নিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। তবে প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছর পর প্রসূতি স্বাস্থ্য সেবায় কাঙ্ক্ষিত মাইলফলক ছুঁতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রথমবারের মতো এক প্রসূতির সফল সিজারিয়ান অপারেশনে কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার মধ্য দিয়ে সূচনা করেছে অপারেশন থিয়েটার (ওটি)। এর ফলে এখন থেকে কোনো প্রসূতিকে আর রাঙামাটি জেলা সদর ও চট্টগ্রামে যেতে হবে না বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুরে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে কাউখালী উপজেলা সদরের কচুখালী গ্রামের প্রুইখইউ মারমার স্ত্রী নুবাইচিং মারমার প্রথম অস্ত্রোপচার করা হয়। জন্ম হয় এক কন্যা সন্তানের। বর্তমানে মা ও মেয়ে দুজনই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুইমিপ্রু রোয়াজা।
অস্ত্রোপচারে জন্ম নেওয়া শিশুটির বাবা প্রুইখইউ মারমা বলেন, ‘হাসপাতালে এটা প্রথম সিজার বলে প্রথমে কিছুটা ভয়ে ছিলাম। সুষ্ঠুভাবে সিজার হওয়ার পর খুবই উপকৃত হয়েছি। হাসপাতালে ফ্রি সেবা পেয়েছি। বাইরে সিজার করলে ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হত। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ডাক্তারদের, বিশেষ করে ডা. সুইমিপ্রু রোয়াজার প্রতি।’
জানা গেছে, অস্ত্রোপচার করেন স্ত্রী ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মাসুদুর রহমান। তার সহযোগী ছিলেন ডা. নুসরাত জাহান আজমী, ডা. হ্যাপি বিশ্বাস ও আরএমও ডা. ইফতেখার আহম্মেদ ফরহাদ।
শুরু থেকেই আধা পাকা টিনশেডে ১০ শয্যা নিয়ে চলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি সম্প্রতি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ভবনে রূপান্তর করা হয়েছে। কিন্তু পরিচালিত হচ্ছে ১০ শয্যার জনবল দিয়েই। সাধারণ চিকিৎসাসেবা চললেও প্রসূতি স্বাস্থ্য সেবায় বিশেষায়িত সেবা দেওয়া থেকে পিছিয়ে ছিল প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন সময় গাইনি ও অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ পদায়ন করা হলেও জনবলসংকট আর সমন্বয়হীনতার অভাবে অপারেশন থিয়েটার ছিল নামেমাত্র। তবে সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ অপারেশন থিয়েটারটি চালু করতে তৎপর হন। ফলে দ্রুতই অপারেশন কার্যক্রমে সফলতাও পেয়েছে।
এ সফলতাকে কাউখালী উপজেলাবাসীর জন্য আনন্দের বলে দাবি করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুইমিপ্রু রোয়াজা। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে এটা প্রথম অস্ত্রোপচার হয়েছে এবং আমরা সফল হয়েছি। অপারেশন থিয়েটার থেকে নিয়ে প্রসূতিসহ নবজাতককে হাসপাতালের কেবিনে রাখা হয়েছে। নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এখানেই প্রসূতি এবং নবজাতককে সেবা দেওয়া হচ্ছে। মা ও নবজাতক সুস্থ আছেন। এখন থেকে সিজারিয়ান অপারেশন অব্যাহত থাকবে। এটা কাউখালী উপজেলাবাসীর জন্য আনন্দের।’
উপজেলা পর্যায়ে এমন উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে ডা. সুইমিপ্রু রোয়াজা বলেন, ‘চিকিৎসক ও নানা সরঞ্জামাদির অভাবে সিজারিয়ান অপারেশন এত দিন বন্ধ ছিল। এখন সংকট কাটিয়ে সেটি আমরা চালু করতে সক্ষম হয়েছি। প্রথম সিজারেই সফল হয়েছি। এ সফলতায় হাসপাতালের সব ডাক্তার ও নার্সরা সহযোগিতা করেছেন। আগে কোনো প্রসূতি মায়ের সিজারের প্রয়োজন হলে রাঙামাটি সদর অথবা চট্টগ্রাম যাওয়া ছাড়া বিকল্প ছিল না। এ ছাড়া চিকিৎসা ব্যয় ও রোগী পরিবহন ছিল সময় সাপেক্ষ। এখন থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ব্যবস্থা চালু করায় কোনো ঝামেলা ছাড়াই সিজারিয়ান সেবা পাওয়া যাবে।’