ঢাকা ১৮ কার্তিক ১৪৩১, রোববার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪

লুৎফর রহমান রিটন এর ছড়া 'লালবাগের লাল বাঘ'

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:১১ পিএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ এএম
লুৎফর রহমান রিটন এর ছড়া 'লালবাগের লাল বাঘ'

লালবাগের লাল বাঘ! 
লুৎফর রহমান রিটন 

আমার মায়ের ভাই হয় বাঘ 
তাই তো সে বাঘ মামা, 
হলুদ কালো ডোরায় আঁকা 
মামার গায়ের জামা। 

মামা আমার বড্ড রাগী 
খামোখা যায় রেগে, 
রাগলে মামা সবাই পালায় 
দৌড়ে ঝড়ের বেগে। 

মামা যখন গর্জে উঠে 
হালুম হালুম করে- 
বনটা কেমন কেঁপে ওঠে 
ভয়াল থাবার ডরে! 

হরিণগুলো এদিক সেদিক 
দৌড়ে পালায় দ্রুত, 
বনের পশু-পাখিরা হয় 
বেদনা-আপ্লুত। 

বাঘ মামাকে সমঝে চলে 
বনের পশু-পাখি, 
এমনকি বোন বাঁধতে চায় না 
বাঘের হাতে রাখি... 

ও বাঘ মামা ভয় দেখিয়ে 
লাভটা কী হয় বলো! 
তারচে ভালো তুমি সবার 
বন্ধু হবে, চলো। 

বনটা তোমার একার তো নয়! 
বনটা সবার, নাকি? 
চলো সবাই মিলেমিশে 
বন্ধু হয়েই থাকি! 

তোমার পিঠে চড়ে আমি 
ঘুরব বনে বনে, 
ভয়ভীতি নয় শান্তি আসুক 
পশু-পাখির মনে। 

ও বাঘ মামা রাগটা কমাও 
এমন খুশির দিনে, 
রাগ কমালে দেবো একটা 
রঙিন জামা কিনে। 

হলুদ কালো ডোরার জামা 
পরবে তুমি কতো? 
রঙিন জামা চাও না তুমি 
প্রজাপতির মতো? 

নীল নেবে? না সবুজ নেবে? 
চাই টুকটুক লালও? 
রাগটা তোমার কমাও না প্লিজ! 
বাঘ মামা খুব ভালো। 

নেংটু তুমি? পেন্টু নেবে? 
লজ্জা পাচ্ছো মামা! 
তোমার গায়ে পরিয়ে দেবো 
টুকটুকে লাল জামা......

মোহনা জাহ্নবী

তেনালি রামার গল্প

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৫ এএম
আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪২ পিএম
তেনালি রামার গল্প
তেনালি রামা

পরিচয়: তেনালি রামকৃষ্ণ ছিলেন বিজয়নগর সাম্রাজ্যের শ্রী কৃষ্ণদেব রায়ের দরবারে একজন তেলেগু কবি, পণ্ডিত এবং উপদেষ্টা। তিনি শ্রী কৃষ্ণদেব রায়ের দরবারে আটজন বিখ্যাত তেলেগু কবির একটি দল অষ্টাদিগজদের একজন হিসেবে প্রশংসা অর্জন করেছিলেন। তিনি তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং হাস্যরসের জন্য সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন।

অপয়া রাময়া
বিজয়নগর রাজ্যে এক লোক বাস করতেন, যার নাম ছিল রাময়া। তাকে সবাই অশুভ বা অপয়া মনে করত। তারা মনে করত, সকালে উঠে প্রথমেই রাময়ার মুখ দেখলে সারাটা দিন অশুভ যাবে।
কথাটি রাজামশাইয়ের কানেও পৌঁছেছিল। ঘটনার সত্যতা জানার জন্য রাজামশাই রাময়াকে তার প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন। তিনি পরিচারকদের বলে দিলেন, রাময়ার জন্য থাকার ব্যবস্থা যেন মহারাজের ঘরের ঠিক পাশেই হয়। 
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রাজামশাই কারও মুখ না দেখে সরাসরি রাময়ার ঘরে ঢুকলেন এবং তার মুখ দেখলেন। সেদিন দুপুরে রাজামশাই খেতে বসলেন। হঠাৎ তার থালায় একটি মাছি বসল। মাছি বসায় রাজামশাই কিছুই খেতে পারলেন না। রাঁধুনিকে ডেকে আবার তার জন্য মধ্যাহ্নভোজ প্রস্তুত করার আদেশ দিলেন। রান্না হলো কিন্তু মহারাজ কৃষ্ণদেব রায়ের কোনো কিছুই খেতে ইচ্ছা করল না।
তখনই তার মনে পড়ল, সবাই রাময়া সম্পর্কে যা বলে সেটি সঠিক। সকালে ওর মুখ দেখার কারণেই তার রুচি নষ্ট হয়ে গেছে। রাজামশাই ঠিক করলেন, ওর মতো একজন অশুভ এবং অপদার্থ লোক তার রাজ্যে থাকতে পারবে না। তিনি সেনাদের আদেশ দিলেন রাময়াকে ফাঁসিতে ঝোলাতে।
স্বামীর শাস্তির কথা শুনে রাময়ার স্ত্রী তেনালি রামকৃষ্ণর কাছে সাহায্যের জন্য ছুটে গেলেন। কেঁদে কেঁদে সব কথা খুলে বললেন।
তেনালি বললেন, দেখি কী করা যায়।
পরের দিন সকালে সেনারা রাময়াকে ফাঁসিতে ঝোলাতে নিয়ে যাচ্ছিল। পথে তেনালির সঙ্গে দেখা। তেনালি রাময়ার কানে ফিসফিস করে কিছু কথা বলে চলে গেলেন।
ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে সেনারা তার শেষ ইচ্ছার কথা জানতে চাইল। রাময়া বললেন, তিনি রাজার কাছে একটি চিঠি পাঠাতে চান।
একজন প্রহরী এসে রাজামশাইকে একটা চিঠি হস্তান্তর করলেন। তাতে লেখা ছিল, যদি আমার মুখ দেখে কারও রুচি চলে যায় আর রাজামশাইয়ের মুখ দেখে কাউকে ফাঁসিতে ঝুলতে হয় তাহলে কে বেশি অশুভ? সে নাকি রাজামশাই?
রাজামশাই বুঝতে পারলেন যে রাময়া কী বলতে চাইছে। তিনি তখনই রাময়াকে মুক্তি দিলেন।

 

মেহেদী

শেয়াল ও রাজু মামা

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৬ পিএম
শেয়াল ও রাজু মামা
এঁকেছেন মাসুম

বড় পুকুরের পাশে ঘন জঙ্গল। সেই জঙ্গলে ভূত আছে! ভূত মানুষদের ভয় দেখায়। কখনো খুব জোরে শব্দ করে। কখনো পাথর ছুড়ে মারে। গ্রামের মানুষ তাই সেই জঙ্গলে যায় না। ইতি বলল, জানিস রাতুল, ভূতের জঙ্গলে একবার এক মুরগির ছানা ঢুকেছিল। সেই ছানাটা আর ফিরে আসেনি!
রাতুলের বন্ধু মিজান বলল, শুধু কি তাই, গ্রাম থেকে ধীরে ধীরে মুরগি-হাঁস উধাও হচ্ছে, সে খবর রাখিস? 
কেউ বলে সেখানে মামদো ভূতের বাস। আবার কেউ বলে শাঁকচুন্নির বাসা। কেউ বলে সেখানে ব্রাহ্মদৈত্য থাকেন।
পুকুরের ধারে বাঙ্গি চাষ হতো, পুকুরে মাছ চাষ হতো। পাশে ছিল হাঁস-মুরগির খামার। খামারিরা, চাষিরা তাই সবসময় ভয়ে থাকত। এই না কোনো ক্ষতি হয়ে যায়!
একদিন শহর থেকে রাজু মামা এলেন। তিনি এলএলবি পরীক্ষা শেষ করেছেন। এসে শোনেন, জঙ্গলের ভূত গ্রামবাসীদের খুব বিরক্ত করছে। 
রাজু মামা খুব রেগে গেলেন। বললেন, এখন কি কেউ ভূতে বিশ্বাস করে? চলো সবাই মিলে ওখানে যাই। কী আছে সেই জঙ্গলে দেখে আসি। 
রাজু মামার কথায় কেউ রাজি হলো না। মামা নিজে ব্যাপারটা নিয়ে খুব চিন্তাভাবনা করলেন। তিনি দেখলেন, প্রায় প্রতিদিন রাতে হাঁস-মুরগি উধাও হয়, পুকুর থেকে মাছ উধাও হয়, কিন্তু বাঙ্গি কেন উধাও হয়? এই পানসে বাঙ্গি মানুষই খেতে চায় না কিন্তু ভূতের এত প্রিয়! কী করে!
রাজু মামা সিদ্ধান্ত নিলেন, বাঙ্গিখেতে পাহারা দেবেন। যথারীতি তিনি পাহারায় বসলেন। 
রাজু মামা শুনতে পেলেন, ঠিক রাত ১২টায় হুক্কা হুয়াআআ আওয়াজ। কিছুক্ষণ পর পুকুরে ছলছল শব্দ। মনে হচ্ছে কে যেন পুকুরে হাঁটছে। রাজু মামা ঠাণ্ডা মাথায় চুপ করে সবকিছু শুনছেন। দেখতে পাচ্ছেন না কিছুই। কিছুক্ষণ পরে খামারের কাছে দেখা গেল দুটি চোখ। চোখ দুটি এমনভাবে অন্ধকারে জ্বলছে যে কিছু মুহূর্ত রাজু মামা বিশ্বাস করে নিলেন এখানে কিছু একটা সমস্যা তো 
নিশ্চয় আছে।
কিছুক্ষণ করে রাজু মামা দেখলেন, পাশেই দুটি চোখ জ্বলজ্বল করছে। খামারের কাছে সেই চোখ দুটি এক সময় শেয়ালে রূপ নিল। এ যে শেয়াল! রাজু মামা মনে মনে হাসলেন। সঙ্গে সঙ্গে পুকুরে লাইট মেরে দেখলেন পুকুরেও একটা শেয়াল।
গ্রামবাসী জানতে পেরে সেই জঙ্গলে ঢাকঢোল বাজানো শুরু করল। ঢোলের শব্দে শেয়ালেরা যে যার মতো প্রাণ নিয়ে পালাল। রাজু মামা বললেন, পালাবি কোথায়? তোদের ওপর আমি চুরির মামলা করব।
গ্রামবাসীরা বললেন, শেয়াল মামা পালিয়ে যায়, 
ধররে তোরা কে কোথায়!

 

মেহেদী

বাস্কেটবল খেলায়  নেট থাকে কেন

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১০ এএম
বাস্কেটবল খেলায়  নেট থাকে কেন
বাস্কেটবল খেলায় নেট থাকে

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা বাস্কেটবল। বাংলাদেশে এই খেলা ততটা জনপ্রিয় না হলেও কম-বেশি সবাই এ খেলা সম্পর্কে জানে। বাস্কেটবল খেলার একটি প্রধান উপাদান হলো নেট বা জাল। এই খেলায় কেন নেট ব্যবহার করা হয় তা আজকে জানার চেষ্টা করব।
বাস্কেটবল খেলায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের নেট দেখা যেত। কালের পরিক্রমায় তা আজকের রূপ ধারণ করেছে। বাস্কেটবল কোর্টে তিন ধরনের জাল থাকে। নাইলন, চেইন নেট, পলিয়েস্টার। যার মধ্যে নাইলনের সুতার জাল বেশির ভাগ সময় ব্যবহৃত হয়। তবে পলিয়েস্টারের নেট নাইলন থেকে বেশি টেকসই। আবার চেইন নেটে বলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বাস্কেটবল খেলায় নেট থাকার তিনটি কারণ থাকতে পারে। নেট হুপকে আরামদায়ক এবং দৃশ্যমান করে তোলে। বলটি হুপে যাচ্ছে কি না, তা অনুমান করা সহজ হয়। এতে খেলোয়াড় কত স্কোর করল তা সহজে জানা যায়। আবার অন্যতম কারণ হলো, বল শট করার পর গতি কমিয়ে দেওয়া। হুপে বল যাওয়ার পর গতি কমে যায় নেটে বল ধাক্কা লাগার কারণে। তৃতীয় আরেকটি কারণ হলো, নেটে বল স্পর্শ হওয়ার শব্দ। সুইশ শব্দ হওয়ার কারণে খেলোয়াড়রা বুঝতে পারেন বল হুপে ঢুকেছে, যা খেলোয়াড়দের কাছে শ্রুতিমধুর মনে হয়।
বাস্কেটবল নেট কি শটকে প্রভাবিত করে, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একটি গবেষণা চালানো হয়েছিল। সেখানে দেখা গেছে, নেট ছাড়া ৫৭.৭১ শতাংশ নির্ভুলতার সঙ্গে এবং নেট ইনস্টল করার পর ৫৪.৮৬ শতাংশ নির্ভুলতার সঙ্গে ফিল্ড গোল করেছেন খেলোয়াড়রা।

ভূতুড়ে ব্রিজ

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫২ পিএম
ভূতুড়ে ব্রিজ
এঁকেছেন মাসুম

এক.
‘কুলার বন্ধ হয়ে গেছে!’ চিৎকার করে উঠল শিনকু।
‘এখন উপায়?’ জানতে চাইল নিনো।
‘স্পেসশিপ নামাও। কুলার পাল্টাতে হবে। নয়তো ইঞ্জিন হিট হয়ে বার্স্ট করতে পারে।’
‘কোথায় নামাব? চারদিকে তো শুধু পানি আর পানি।’
‘আমরা আছিই নদীমাতৃক একটা দেশের ওপর। এখানে নদী আর খাল-বিলই বেশি।’
‘নদীর ওপর স্পেসশিপ নামাব?’ জানতে চাইল নিনো। মাত্র কয়েক দিন হলো স্পেসশিপ চালানো শিখতে শুরু করেছে সে। শিনকু ওর প্রশিক্ষক। ওরা দুজনেই লিবাবা গ্রহের বাসিন্দা। সেখানে সবাইকে একটা বয়সে স্পেসশিপ চালনা শিখতে হয়। বাধ্যতামূলক। প্রথম কয়েক দিন অবশ্য নিনো ওর গ্রহের আশপাশেই স্পেসশিপ চালিয়েছে। আজ একটু বেশি দূরে চলে এসেছে। 
‘খবরদার নিনো, পানিতে স্পেসশিপ নামাবে না। ডুবে যাবে।’
‘তাহলে কী করব? কোথায় নামাব স্পেসশিপ?’ নিনো চিৎকার করে জানতে চাইল। শিপের যান্ত্রিক আওয়াজ বেড়ে গেছে।
‘একটা কাজ করতে পারো। আরও নিচে নামাও শিপ।’
‘পৃথিবীর মানুষের চোখে ধরা পড়ে যাব না?’
‘ভয় নেই, এখানে এখন রাত। তুমি নিচে নামাও।’
বেশ কিছুক্ষণ চলার পর শিনকু বলল, ‘ওই যে দেখত পাচ্ছ, মাঠের ওপর পরপর পিলার- ওইখানে নামাও।’
‘ওগুলো আসলে কী?’
জবাবে হাসল শিনকু।
‘হাসছ যে!’
‘ব্রিজ বানানোর জন্য পিলার করেছিল। ব্রিজ আর বানায়নি। পিলার পড়ে আছে। ভালোই হলো, আমাদের স্পেসশিপ নামানোর জন্য একেবারে পারফেক্ট ল্যান্ডিং স্পেস।’
‘কিন্তু মাঠের মধ্যে ব্রিজ কেন? রাস্তা কই?’ নিনো জানতে চাইল।
‘সে জন্যই তো হাসছি। পৃথিবীর মানুষ পারে শুধু অপচয় করতে।’
দুই.
‘সময় অপচয় করা একদম ঠিক হবে না ভাগনে?’ বিড়বিড় করে বলল সোহান।
‘কিছু বললে মামা?’ সিফাত জানতে চাইল।
‘বললাম, যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। জলদি চল।’
মামা-ভাগনে চুরি করতে বেরিয়েছে। নিজেদের গ্রাম থেকে দূরে অন্য গ্রামে চুরি করতে যাচ্ছে ওরা। চুরি করা মালামাল নিয়ে আবার ফিরেও আসতে হবে।
‘অন্ধকারে চলতে একটু অসুবিধা হচ্ছে মামা।’ সিফাত বলল।
‘চুপ। একদম চুপ। তাড়াতাড়ি পা চালা।’ মামা ধমক দিল।
ঠিক তখনই শব্দ তুলে মাথার ওপর দিয়ে কী যেন উড়ে গেল।
একটু পরই ওদের চোখের সামনে বড় একটা অবয়ব ধীরে ধীরে নামতে শুরু করল। মাঠের মধ্যে একটা ব্রিজের দুটি পিলার অনেক দিন ধরেই পড়ে আছে। অবয়বটা ঠিক সেটার ওপর বসল।
‘মামা, এটা কী?’ ফিসফিস করে জানতে চাইল।
‘ভাগনে, এটা রেডিমেড ব্রিজ। দেশ কত উন্নত হয়েছে, দেখতেই পাচ্ছিস। রাতারাতি ব্রিজ তৈরি করে ফেলেছে। কত বড় উন্নয়ন দেখেছিস।’
‘দিনের বেলায় করল না কেন?’
‘আরে দিনের বেলায় কি অত বড় ব্রিজ আনতে পারত! পাবলিকের ভিড়ে ঠিকমতো বসাতেই পারত না।’
‘চলো মামা, কাছ থেকে দেখি।’
‘আরে, এখন এসব দেখলে চলবে। চুরি করতে যেতে হবে না।’
‘মামা, যদি এখানেই কিছু চুরি করতে পারি। কাছে গিয়ে দেখিই না কী কী আছে।
মনে মনে ভাগনের প্রশংসা করল সোহান। পায়ে পায়ে এগিয়ে চলল ওরা ‘নতুন ব্রিজ’-এর দিকে।
একটু পরই ওটার ওপর উঠে এল ওরা। তখনই আবছা একটা বাতি জ্বলে উঠল। সামনে হঠাৎ করে কী যেন খুলে গেল। আবছা আলোয় ওরা দেখল, কিম্ভূতকিমাকার দুটি চার পেয়ে প্রাণী। খোলা দরজা দিয়ে উঠে আসছে।
‘ভূ...ভ‚...ত!’ ভয় পেল দুজনে।
ওদের গলার আওয়াজ শুনে শিনকু আর নিনোও ভয় পেল।
‘মা...মা...নুষ!’
পিছিয়ে গিয়ে ঢাকনা বন্ধ করল ওরা। 
একটু পরই আলো নিভে গেল। থরথর করে কাঁপতে শুরু করল ‘ব্রিজ’। নড়ে উঠল যন্ত্র। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই উল্টে পড়ল মামা-ভাগনে। জ্ঞান হারাল দুজনেই। পরদিন সকালে ব্রিজের নিচ থেকে অজ্ঞান অবস্থায় মামা-ভাগনে দুজনকেই উদ্ধার করল গ্রামবাসী। জ্ঞান ফেরার পর দুজনেই ‘ভূত ভূত’ বলে চিৎকার করতে লাগল। তবে সেটা কেন, গ্রামবাসীর কেউই বুঝতে পারল না।

 

মেহেদী আল মাহমুদ

হরিণের গলায় চাকা

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১০ এএম
হরিণের গলায় চাকা
হরিণের গলায় চাকা

এলক এক ধরনের হরিণজাতীয় প্রাণী। আমেরিকা ও এশিয়ার বনে এদের দেখতে পাওয়া যায়। আজ আমরা আমেরিকার কলোরাডো রাজ্যের একটি এলকের কথা বলব।
তখন এলকের বয়স ২ বছর। ঠিকমতো শিং গজায়নি। একদিন সে বনের মধ্যে হেঁটে বেড়াচ্ছিল। পাশেই পড়ে ছিল একটি গাড়ির চাকা। সেই চাকাটা নিয়ে খেলতে শুরু করল সে। খেলতে খেলতেই হঠাৎ তার গলায় চাকাটা আটকে গেল। ওর তো আর হাত নেই যে গলা থেকে চাকা নামিয়ে ফেলবে। নানাভাবে সে চেষ্টা করেও সেটা গলা থেকে নামাতে পারল না। মালার মতো চাকাটা ওর গলায় ঝুলে রইল। দিন গেল। মাস গেল। তত দিনে হরিণটার শিংও গেল বড় হয়ে। ব্যস! চাকাটা স্থায়ীভাবে এলকের গলায় আটকে গেল।
এখন গলায় চাকা নিয়েই সে হাঁটে, চাকা নিয়েই খায়, ঘুমায়। এভাবে দুই বছর চলে গেল। তারপর একদিন বনের পাশের এক বাসিন্দার চোখে পড়ল ব্যাপারটা। তিনি উদ্ধারকর্মীদের খবর দিলেন। কিন্তু যতক্ষণে উদ্ধারকর্মীরা এলেন, ততক্ষণে হরিণটা আবার বনের গভীরে চলে গেছে। এবারের মতো ব্যর্থ হলেও উদ্ধারকর্মীরা কিন্তু এলকের কথা ভুলে গেলেন না। তারা খোঁজ করতে থাকলেন।


খুঁজতে খুঁজতে ঠিকই আরেক দিন পেয়ে গেলেন হরিণটাকে। ইনজেকশন দিয়ে দূর থেকে এলককে ঘুম পারিয়ে দেওয়া হলো। তারপর শুরু হলো কাঁচি দিয়ে চাকা কাটার পালা। এখানেও দেখা দিল সমস্যা। টায়ারের মধ্যে স্টিলের তার থাকে। সেগুলো কাঁচি দিয়ে কাটা যাচ্ছিল না। ওদিকে হরিণটারও চেতনা ফিরে আসার সময় হয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে তারা শিং কেটে চাকা বের করে আনলেন। 
হরিণের শিং আমাদের চুলের মতো। কাটলে ব্যথা লাগে না। শিং কাটার কিছুক্ষণের মধ্যে এলকের চেতনা ফিরে এলো। উঠে দাঁড়াল সে। টলতে টলতে ফিরে গেল বনের মধ্যে। গলায় চাকা না থাকায় এলকটা খুশি হয়েছিল কি না জানা যায়নি। তবে উদ্ধারকর্মীরা কিন্তু খুশি। একটা প্রাণীকে কষ্ট থেকে মুক্তি দিলে খুশি না হয়ে কী পারা যায়!

 

মেহেদী আল মাহমুদ